মহরম একটা মাসের নাম ( ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস ) আর কারবালা একটা জায়গা যেটি ইরাকে অবস্থিত। এখানে ১০শে অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ( ১০শে মহরম ৬১) একটি ঘটনা হয়েছিল। একটা যুদ্ধ, অসম যুদ্ধ। এই যুদ্ধের পেছনের প্রেক্ষাপট বা ইতিহাস একটু দীর্ঘ তাই তার বিবরণ আর দিচ্ছি না। তবে এটা প্রায় সবাই স্বীকার করে যে এজিদের বাবা, নিজে খলিফা থাকা কালে, নিজের স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করেন ও নিজ পুত্র এজিদ কে অন্যায্য ভাবে খলিফা করেন। কিনতু খলিফা হবার কথা ছিলো প্রথমে হাসানের। হাসান কে বিষ খাইয়ে মেরে দেবার পর তার ছোট ভাই হোসেনের।
এজিদ ছিলো একজন অত্যাচারী রাজা । খলিফা হবার পরে সে স্বাভাবিক ভাবেই হোসেনের আনুগত্য দাবী করে। যা হোসেন দিতে অস্বীকার করে। মক্কা থেকে দূরে কুফার পথে যাবার সময় এজিদের সৈন্য হোসেনের পথ আটকায়। হোসেনের সাথে তখন তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা । বাচ্চা ও মহিলাদের বাদ দিলে অস্ত্র ধরবার মতো সাকুল্যে ৭২ জন। এজিদের হয়তো ধারণা ছিলো আনুগত্য স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া হোসেনের কাছে আর কোন পথ নেই।
এজিদের হাজারের বেশী সসস্ত্র বাহিনী কারবালার প্রান্তরে শুধু হোসেন কে ভয় দেখিয়ে আনুগত্য চেয়েছিল। হোসেনের কাছ থেকে এজিদের প্রতি আনুগত্য। ফুরাত নদীর পাড়ে সসস্ত্র সেনা বাহিনী দাঁড় করিয়ে দেয়, যাতে হোসেন ও তার পরিবার জল খেতে না পায়। তিন দিন আটকে থাকার পরও জল না পেয়ে হোসেনের কাছে যুদ্ধ ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। হারবো জেনেও একটা যুদ্ধ - মারা যাবো জেনেও অন্যায়ের সাথে আপোস না করার মনোভাব । ৭২ জনের সবাই মারা যাবে জেনেও আপোস করে নি , যুদ্ধের ময়দান ছাড়েনি। সত্যকে অবলম্বন করে বেঁচেছে, সত্যর জন্য মারাও গেছে।
অথচ আপোসের রাস্তাটা কতো সোজা ছিলো। কিছু লাগবে না, শুধু একজন কে শাসক বলে মেনে নিতে হতো। একজন অন্যায্য ভাবে ক্ষমতা পাওয়া লোককে, একজন অত্যাচারী কে শাসক বলে মেনে নিতে হতো। তাহলেই সব সেট হয়ে যেত, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যেত। তুমি তোমার মতো থাকো, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও ।
আসলে আজও আমরা হোসেনের নামে বুক চাপড়াই কেন জানেন - কারণ আমরা কেউ হোসেন হতে পারি না । আমরা সব সময় সোজা পথ টা বেছে নিই। কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল ? সেটা ভাবি না - আমাদের বিচার্য কোনটা ?আমার কি? ভুল জেনেও আমরা রোজ আপোস করি। চাকরীর জন্য ঘুষ, উন্নতির জন্য তেল আমাদের মজ্জায়। তাই আমরা "হায় হোসেন !" বলে বুক চাপড়াই। রাস্তা ঘাটে রোজ লাগাম হীন অনিয়ম ও অন্যায় - আমরা রোজ করি বা হতে দিই। সেই দুঃখে আমরা ' হাই হোসেন বলে বুক চাপড়াই ' ।
আজ কের দিনে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় এই রকম না হয়ে পৃথিবীর সব গ্রাম আর শহর যদি একদিনের জন্য কারবালা হতো আর দিনটা ১০ ই মহরম ৬১ । শুধু একটা দিনের জন্য আমাদের শিরদাঁড়া টা থাকতো হোসেনের মতো । আর আমরা সবাই বলতে পারতাম অন্যায়ের সাথে একবিন্দু আপোস করবো না । মরে গেলে ও না।
আমরা সবাই যদি একদিনের জন্য হোসেন হোতে পারতাম!
যদি প্রতিদিন, প্রতিটি স্থানে কারবালা হতো, আর আমার সবাই রোজ হোসেন হতাম। তাহলে হয়তো আর "হায় হোসেন!" বলে বুক চাপড়াতে হতো না !!