একটা পিরামিডে ব্যবহার হয়েছে প্রায় 23 লাখ লাইম স্টোন ব্লকস । একেকটা ব্লকের ওজন ৫০ থেকে ৭০ টন । অর্থাৎ ১০ থেকে ১৪ টা পাঁচ টনী ট্রাক লাগবে এক একটা স্টোন বহন করতে । আর এ স্টোনগুলা আনা হয়েছে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে তোরা নামক স্থান থেকে । অর্থাৎ ৫০/৭০ টনের এক একটা লাইম স্টোন ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে আনা হয়েছে, আর এরকম স্টোন ২৩ লাখ, তাও আবার একটা পিরামিডের জন্য ।
.
এত গেল টেনে আনার কথা, এবার এগুলো উপরে উঠানো নিয়ে বলি । একটা পিরামিড প্রায় 480 ফিট উচূ । এর থেকে নিচুও আছে ।
আমরা দাবি করি মানব সভ্যতায় আমরাই সবচেয়ে প্রযুক্তিতে এগিয়ে আছি । আমাদের অত্যাধুনিক ক্রেণগুলো, সর্বোচ্চ 20 টন ওঠাতে পারে । তাহলে 4000 বছর আগের আমাদের থেকে পিছিয়ে পড়ারা কি দিয়ে ৭০ টনের একটা ব্লক উঠালো, তাও আবার 480 ফিট উপরে ? আর শুধু কি উঠিয়েছে ? গাণিতিক আর জ্যামিতিক নিয়ম মেনে একেবারে নিখুঁতভাবে একটার পর একটা বসিয়েছে।
.
আর এই পাথরগুলো লাইমস্টোন বলা হলেও এগুলো তা থেকে আলাদা কিছু । এবং এরকম পাথর পৃথিবীতে আর কোথাও নেই । এবং এগুলো ভীষণ শক্ত । কতটা শক্ত ধারণা করতে পারেন ? একটা ধারণা দেই, দ্বাদশ শতকে সুলতান আল আজিজ পিরামিড ধ্বংস করতে আসেন । ১০০০ সৈনিক ৮ মাস চেষ্টার পর মাত্র দুটো পাথর পিরামিড থেকে খসাতে পেরেছিল । পিরামিডের গায়ে খসে যাওয়া দুটো পাথরের ওই গর্ত এখনো বিদ্যমান । সুলতানা আর সাহস না করে রাজপ্রাসাদে আরামের জন্য চলে গেলেন ।
.
এবার আসেন ওরিয়েন্ট কোরিলেশন থিউরিতে । মিশরীয়রা তিন তারকাকে দেবতা মানতো । এই তিনটা তারার নাম হল Almitak, Alnilam, Mintaka । তারা যে দেবতার পুজো করতো তার নাম ছিল ওয়াইরিশ । সে ছিল মৃত্যু আর জন্মের দেবতা । তাদের ধারণা ছিল তাদের এই দেবতা এই তিন তারকায় বসবাস করত ।
.
বড় তিনটার পিরামিড নিয়ে আমরা কথা বলছি। যেগুলো রাতে এ তিনটা তারার সাথে এদের মাথা নিখুঁতভাবে এলাইন করা । যেন উপর থেকে কেউ আকাশের তারার সাথে সমন্বয় করে নিখুঁতভাবে অ্যালাইন করে মাটিতে তিনটি পিরামিড বসিয়েছে । যেটা এরিয়েল ভিউ ছাড়া অসম্ভব ।
.
আর তা কিভাবে সম্ভব এরোপ্লেন উড়োজাহাজ আর স্যাটেলাইট তো এ যুগের গল্প । শুধু পিরামিডের মাথা নয়, পিরামিডের ভিতরে যে তিনটি চেম্বার (কিংস চেম্বার, কুইন্স চেম্বার, বেজ চেম্বার ) আছে, ওই চেম্বার থেকে সুরঙ্গ গুলো বাহিরের দিকে আসার যে পথ, সে পথ এই তিনটি তারকার সাথে এলাইন করা ।
.
এতে এত বেশি সুরঙ্গ আর অ্যাঙ্গেল আছে যে সবগুলো সুরঙ্গ এখনো বের করা সম্ভব হয়নি । আবার সুরঙ্গের ভেতরে আছে গ্রানাইটের চত্বর । অধিকাংশের মত এটা মমি রাখার স্থান । যদিও কোন পিরামিডের ভিতরেই কোন মমি পাওয়া যায়নি । যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো এগুলো হয়তো বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র ছিল ।
.
আর গ্রানাইটের এত বড় স্কয়ার বার কিভাবে এত চিকন সুরঙ্গ দিয়ে সেখানে পৌঁছানো হলো । আর এই গ্রানাইট এত নিখুঁতভাবে কিভাবে কাটা সম্ভব হল আজ থেকে চার হাজার বছর আগে, আমাদের এই অত্যাধুনিক যুগের লেজার কাটার ছিল না তখন । অথচ গ্রানাইট পৃথিবীতে ডায়মন্ডের পরে সবচাইতে শক্ত পদার্থ ।
.
আর সুরঙ্গের ভেতরের সুরঙ্গ খুঁজতে গিয়ে আরেক মজার কাহিনী , রিমোট কন্ট্রোল ক্যামেরা আর অত্যাধুনিক গ্রিল দিয়ে সুরঙ্গ ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে একটা সময় ক্যামেরা কোন কারণ ছাড়াই অফ হয়ে যায় । মিশরীয় গভর্নমেন্ট এরপর এই প্রজেক্ট বন্ধ ঘোষণা করে । পিরামিডের রহস্যময় সব সুরঙ্গ আবিষ্কার এখনো অধরাই রয়ে আছে ।
.
জেনে অবাক হবেন পিরামিড গুলো যেখানে গড়ে উঠেছে এ স্থানগুলো পৃথিবীর একেবারে মধ্যভাগে অবস্থিত ।
কম্পাস আবিষ্কার হয়নি তখনও, তখনও মানুষ জানতো না পৃথিবীর গোল, কেউ কেউ বলতো পৃথিবী চ্যাপ্টা । মানুষ পথ চলতো তারকা ধরে । কিভাবে একেবারে হিসাব করে পৃথিবীর মাঝখানে পিরামিড বসলো , তাও আবার নর্থপোলকে তাক করে । আর এত ভারী পিরামিড বসানোর জন্য প্রয়োজন ছিল খুব শক্ত ভুমির এবং পৃথিবীর ওই জায়গাটাই সবচেয়ে শক্ত ।
.
এবং ওই জায়গাটা একেবারেই সমতল । আপনি পানি ঢাললে সর্বত্র পানি সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়বে । আর সমতল না হলে অত ভারী পিরামিড এত বছর ধরে এত ঝড় ঝাপটা ভূমিকম্পে এত বছর ধরে বসে থাকবে কেন ।
.
সমালোচকরা বলবে এগুলো এমনি এমনি হয়েছে । আচ্ছা এ প্রশ্নের জবাব কিভাবে দিবেন ? আমরা জানি একুশে জুন পৃথিবীতে দিন সবচেয়ে বড় আর রাত সবচেয়ে ছোট । এই দিন বিকেল বেলা সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে সূর্যের অবস্থান হয় দুই পিরামিডের মাঝামাঝি, সেখানে অবস্থিত তাদের স্ফিংস দেবতা, ঠিক মাথার উপরে । আর স্ফিংসতো আরেক আশ্চর্য ব্যাপার, এত বড় একটা মূর্তি একটা পাথরে তৈরি, যা পৃথিবীর আশ্চর্যতম মূর্তিগুলোর একটি ।
.
পিরামিড তৈরি হয়েছে অধুনা আবিষ্কৃত বল এবং সকেট থিওরি ধরে । তার মানে হল তাপের সাথে বস্তু যেমন বেড়ে যায় এটা তা না ,পিরামিড তাপ বিস্তার প্রতিরোধ করে, গরমে তা বাড়ে না । আর পিরামিডে রয়েছে শক প্রুফ টেকনোলজি । আজকের অত্যাধুনিক যুগের ভূমিকম্পেও ভাঙবে না এরকম অত্যাধুনিক বাড়ির মত । আমরা কিন্তু ঘটনা বলছি ৪০০০ বছর আগের । আমাদের মত তারা অত্যাধুনিক ছিল না ! যারা অত্যাধুনিক ছিল আমাদের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি । হিসাব তাই বলে ।
.
পিরামিড গড়ে উঠেছিল 20 বছরে 20000 শ্রমিকের পরিশ্রমে । 481 ফুট মানে ৪৮ তলা বিল্ডিং এর সমান । আর ওজন ৬০ লক্ষ টন, যা প্রায় বারোটা বুর্জ খলিফার সমান । এর প্রত্যেকটা কর্নার ৫১.৫° অ্যাঙ্গেল ধরে করা । আর ৫০ থেকে ৭০ টন এক একটা পাথর আনা হয়েছে দেড়শ কিলোমিটার দূর থেকে । ব্যবহার করা হয়েছে দড়ি, কাট, নৌকা আর শ্রম বল ।
.
তাহলে যদি ২০ বছরে ২০ হাজার শ্রমিক একটা পিরামিড তৈরি করে তাহলে অত দূর থেকে অত ভারী ওজনের একটা পাথর এনে, মাটি থেকে ৪২১ ফিট উঠাতে এবং জায়গামতো নিখুঁতভাবে বসাতে তারা সময় নিয়েছে দেড় মিনিট । নূন্যতম বুদ্ধিসম্পন্ন নিরক্ষর মানুষও বলবে এটা তো অসম্ভব । তাহলে কি বলবেন মানবজাতির ইতিহাসে আমরাই সেরা ? নাকি আমাদের চেয়েও সেরা কেউ ছিল ।
.
কেউ কেউ বলে তাদের সাথে যোগাযোগ ছিল এলিয়েনদের । সে ধারণাকেও মিথ্যে করে দেয় পিরামিডের ভেতরে সুরঙ্গ আর চেম্বারে পড়ে থাকা মানুষের কঙ্কাল । ধারণা করা হয় এগুলো সেই শ্রমিকদের কঙ্কাল যারা পিরামিড তৈরি করতে গিয়ে মারা যায় । এবং কংকালে আঘাতের চিহ্ন আছে অর্থাৎ পিরামিড তৈরি করতে গিয়ে তারা ব্যথা পেয়েছিল এবং তার চিকিৎসা করা হয়েছিল । গবেষণায় তাই উঠে এসেছে ।
.
মিশরে একটা অদ্ভুত টেম্পল আছে যার নাম ডেন্ডারা লাইট । এখানে রয়েছে অত্যাশ্চর্য আর অদ্ভুত সবকিছু। একটা উদাহরণ দেই, সেখানে দেয়ালে আঁকা রয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্বের চিত্র । আজ থেকে চার হাজার বছর আগের আমাদের থেকে পিছিয়ে পড়া অশিক্ষিতরা বিদ্যুতের ব্যবহার জানতো !!!
.
পিরামিড নিয়ে লেখা শেষ হবে না । আর একটা মজার তথ্য দিয়ে শেষ করছি । পিরামিডের ভেতরটা পুরোটাই এসি, কোন প্রকার এয়ারকন্ডিশন মেশিন ছাড়াই । পিরামিডের দাঁড়িয়ে আছে, উত্তপ্ত মরুভূমির উপরে । এমন ভাবে তৈরি করা, ওখানে বাতাসের এমনভাবে আনাগোনা যে তার ভিতরে সব সময় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী থাকে । যা সব চাইতে আরামদায়ক তাপমাত্রা ।
.
আমাদের চেয়েও সেরা জাতি পৃথিবীতে এসেছিল , সেটা বলেছেন আমাদের রব পবিত্র কোরআনে ।
যার সমতুল্য কোন দেশে সৃষ্টি করা হয়নি । (সূরা ফজর : ০৮)
.
এ পিরামিড তাদের গল্প, যাদের কথা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বারবার বলেছেন : ফেরাউন এবং মুসা আঃ ।
পিরামিড অক্ষত হয়ে আজব আর আশ্চর্য বিষয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজো । আর ফেরাউনও শায়িত আছে সেখানে, খুবই যত্নের সাথে সুরক্ষা নিয়ে ।
.
ফেরাউন রয়ে যাবে দৃষ্টান্ত হয়ে এমনটাই বলেছেন আমাদের রব,
‘আজ আমি তোমার দেহকে (বিনষ্ট হওয়া থেকে) বাঁচিয়ে দিলাম, যাতে তুমি পরবর্তীকালের মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারো। আর নিশ্চয়ই অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন ’ ।
(সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৯২)
© Golam Rabbani
Read MoreAuthor: Ahmed Rafique Barki
mythical General 03-November-2022 by east is risingঅষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে সারা বিশ্বে রাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। বৈদ্যুতিক তারের ইনসুলেশন , সাইকেল ও গাড়ির টায়ার যুদ্ধাস্ত্র ও ভারী যন্ত্রপাতি তৈরি করতে রাবারের প্রয়োজন হতো। কয়েক টুকরা রাবারের অভাবে অনেক সময় ভারী যন্ত্রপাতির উৎপাদন আটকে যেত।
সিন্থেটিক রাবার আবিষ্কারের আগে বৈশ্বিক চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হতো আমাজন জঙ্গলের রাবার গাছ থেকে। একক পরাশক্তি হিসেবে বৃটেনের রাবারের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। রাবারের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ব্রিটেন সিদ্ধান্ত নেয় রাবার উৎপাদনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন স্থাপনের।
এই উদ্দেশ্যের লন্ডনের রয়েল বোটানিকাল ইনস্টিটিউট 1876 সালে হেনরী উইকহ্যাম নামে এক ব্রিটিশ পর্যটককে দায়িত্ব দিয়ে আমাজনে পাঠায়। নৌকা নিয়ে আমাজনের গভীরে ঢোকার পর তিনি পায়ে হেঁটে যেখানে সবচেয়ে ভালো রাবার গাছ জন্মায় সেখানে পৌঁছান।
তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের অর্থের লোভ দেখিয়ে হাতে বোনা ঝুড়িতে রাবার বীজ সংগ্রহ করতে থাকেন। সমুদ্রে দীর্ঘযাত্রার ধাক্কা এড়াতে ঝুড়িগুলোকে কয়েক স্তরের কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া হয়।
এভাবে প্রায় 70,000 বীজ নিয়ে তিনি বৃটেনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ভিন্ন নামে একটি ট্রেডিং লাইসেন্স ব্যবহার করে ও বীজগুলিকে একাডেমিক স্যাম্পল ঘোষণা দিয়ে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে সক্ষম হন।
দীর্ঘযাত্রার ধকল পেরিয়ে লন্ডনে পৌঁছানোর পর মাত্র 2,700 বীজ অঙ্কুরোদগমের উপযোগী পাওয়া যায়। একটা পরিকল্পিত প্লান্টেশন শুরু করার জন্য এই পরিমাণ বীজ যথেষ্ঠ ছিল। চারাগুলিকে পরে বিভিন্ন ব্রিটিশ কলোনি যেমন মালয়েশিয়া , শ্রীলংকা , বাটাভিয়া , ট্রপিক্যাল আফ্রিকায় পাঠানো হয়।
এশিয়ার পরিবেশে চারাগুলি বেশ ভালোভাবেই বেড়ে ওঠে এবং আমাজনের মূল গাছ থেকে বেশি পরিমাণ রাবার দিতে থাকে। এই রাবার বাজারে আসার পর ধীরে ধীরে আমাজনের রাবার বাজার দখল করে ফেলে।
জঙ্গল থেকে রাবার সংগ্রহ করা ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাজনের রাবার কেন্দ্রিক শহরগুলি আস্তে আস্তে মৃত শহরে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে রাবার বাজারের উপর বৃটেনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।
এই কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ রানী ভিক্টোরিয়া হেনরী উইকহ্যামকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। এই রোমাঞ্চকর ঘটনাটি নিয়ে জো জ্যাকসন নামে একজন লেখক পরে ''The Thief at the End of the World: Rubber, Power, and the Seeds of Empire '' একটি বিখ্যাত বই লেখেন।
বিশ্বে বায়ো পাইরেসির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে চীন থেকে পরিকল্পিতভাবে রেশম পোকা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিটিশরা চীনের একচেটিয়া চায়ের বাজার দখল করার জন্য চীন থেকে চায়ের গাছ জোগাড় করে ভারতবর্ষে পরীক্ষা করেছিল।
বাউন্টিতে বিদ্রোহ বইটি পড়লে বা মুভি দেখে থাকলে জানবেন যে ব্রিটিশরা পলিনেশিয়া থেকে রুটি ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে চাষাবাদের জন্য।
Read MoreAuthor: Ahmed Rafique Barki
Technology news General 15-October-2022 by east is rising