ভারত কিভাবে বাংলাদেশে পুনরায় ফিরে আসতে পারে

জিন্দেগীতে রাজনীতি না করা বিজ্ঞজনদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ছবক দেই।

১৯৭৫/ সব রাজনৈতিক প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ তখন তরুণ সেনা অফিসার মুজিবকে উৎখাত করলো।

২০২৪/ ঈদের পরে সব আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরে ছাত্ররা অবিশ্বাস্যভাবে হাসিনাকে উৎখাত করে ফেললো।

১৯৭৫/ তরুণেরা অভিজ্ঞ খন্দকার মুশতাককে ক্ষমতায় বসালো।

২০২৪/ ছাত্ররা অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রফেসর ইউনুসকে ক্ষমতায় বসালো।

১৯৭৫/ তরুণ মেজরদেরকে কোনঠাসা করে ফেললো ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্ট। দেশ ছাড়া তরুণ সেনা কর্মকর্তারা।

২০২৪/ ছাত্রদের কোনঠাসা করে ফেলছে এস্টাব্লিশমেন্ট আর প্রচলিত রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

১৯৭৫/ খন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে ভারত পন্থী সেনাদের ক্যু। খন্দকার মোশতাকের পতন। জেল। তাকে নির্বাচনের বাইরে রাখা।

২০২৪/ ওয়ায়ারের হুমকি।

এরপরে নানা হাত ঘুরে একসময়ে জিয়া নিহত। দুর্বল সাত্তার প্রেসিডেন্ট। অরাজকতা আর ভারতপন্থী এরশাদের ক্ষমতা দখল। তারপরে কয়েক টার্ম নির্বাচনি খেলা খেলে হাসিনার দীর্ঘমেয়াদে ফ্যাসিবাদী শাসন যা মুজিবের শাসনের শিক্ষা নিয়ে আরো রোবাস্ট। আরো নির্মম। আরো শক্তিশালী।

পরের অংশটা এমন হবে।

২০২৫ এর ডিসেম্বরে নির্বাচন। বিএনপির দুর্বল সরকার ক্ষমতা নেয়া। অর্থনৈতিক সমস্যা, ভারতের চাপে দিশেহারা দেশের ভিতরে আর বাইরে। গনবিক্ষোভে আওয়ামী লীগের অংশ নেয়া।

বিএনপির সরকারের পতন। আবার নির্বাচন।

কোনটা বেশী বাস্তবের কাছাকাছি মনে হচ্ছে? এইটাই ভারতের প্লে বুক। আগেও খেলেছে। এবারো তাই খেলবে।

পিনাকী কাঙ্গালের কথা বাসি হয়ে আগেও ফলেছে। এইবারো ফলবে যদি বেকুবদের ভুদ্দিজীবি ভাবেন আর তাদের চিন্তার খপ্পড়ে পড়েন।

১৯৭৫ এর চাইতে এইবারে পরিস্থিতি ভিন্ন জনগনের এজেন্সি আছে। পিনাকী ইলিয়াসের মতো বেপরোয়া লোকেরা আছে। বাংলাদেশকে আমরা হারতে দেবোনা।

Read More

Author: Pinaki Bhattacharya

mythical General 26-February-2025 by east is rising

দ্বিজাতি তত্ত্বের মূলে হিন্দুত্ববাদ, মুসলিম লীগ নয়

দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্য স্যেকুলারপন্থীরা জিন্নাহ আর মুসলিম লীগকে দায়ী করে। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগেই হিন্দু জাতির ধারণার উদ্ভব হয়। হিন্দু শব্দটা জাতি শব্দের সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হতে থাকে। এই হিন্দুত্বের ধারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন সাভারকার। তিনি “হিন্দু” শব্দকে ডিফাইন করেন এভাবে “He who considers India as both his Fatherland and Holyland” এর মানে “ভারতকে পবিত্রভুমি এবং পিতৃভূমি হিসেবে যারা বিবেচনা করে তারাই হিন্দু জাতি”। Koenraad তার Decolonizing the Hindu mind বইয়ে বলেছেন এই সংজ্ঞা সকল আব্রাহামিক ধর্ম যেমন মুসলমান, খ্রিষ্টান, ইহুদীদের হিন্দু জাতিসত্বার বাইরে ঠেলে দিল। ধরে নেয়া হল তাঁরা বিদেশী। এই হিন্দু জাতি গঠনের বাইরে যাদের রাখা হল তাদেরকে তো সাভারকারই আলাদা আরেকটা জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। হিন্দু জাতির ধারণা প্রতিষ্ঠা করার ফলেই ভারতে তার পাল্টা একাধিক জাতির ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার অনুকুল পরিবেশ গড়ে উঠলো।

এই হিন্দুত্বের জাতিকল্পনাই এক মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্ম দিয়েছে। হিন্দু ধর্ম আর জাতি যদি অভিন্ন হয় তাহলে নেপাল বলে তো কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই থাকতে পারেনা। নেপাল, যা হিন্দুপ্রধান একটা দেশ যা ভারত নয় সে তো কোনভাবেই নিজেকে হিন্দু পরিচয় দেয়ার জন্য ভারতকে পিতৃভূমি আর হোলি ল্যান্ড ভাবতে পারেনা। ভারতের সাথে হিন্দু প্রধান নেপালের সমস্যার একটা ঐতিহাসিক সুত্র এখানেও থাকতে পারে। তবে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অন্য সম্প্রদায়ের সাথে মিলে রাষ্ট্র গঠন এই হিন্দুত্বের সংজ্ঞার জন্য মানসিকভাবে কার্যত খুব জটিল হয়ে যায়। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে তাঁদের পলিটিক্যাল এজেন্ট হিসেবে ভারত রাষ্ট্র একটা সম্ভাবনা হয়ে বিরাজ করতে থাকে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মুল বক্তব্য ছিলো; পৃথিবীতে হিন্দু জাতি বলে বহু প্রাচীন গরিমায় দীপ্ত এক মহান স্বতন্ত্র জাতি আছে। হিন্দু জাতির ধর্ম স্বতন্ত্র, ভাষাও স্বতন্ত্র। হিন্দু জাতি সম্পর্কিত এই ভাবনাই হিন্দুত্বের জন্ম দেয়, যার পলিটিক্যাল এক্সপ্রেশন ছিলো দ্বিজাতি তত্ত্ব, আর সেটাই হয়ে দাড়ায় ভারতভাগের কারণ। এই হিন্দু জাতীয়তাবাদই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ব্যাকবোন।

এদিকে আমরা যদি দেখি মুসলমানদের আলীগড় আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আহমেদ এমনকি ১৮৮৩ সালেও বলেছেন ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে ভারতবর্ষে বসবাসরত সকলেই “একটি জাতি”। এমনকি এর অনেক পরেও ছিলো জিন্নার মুখে ঐক্যের সুর। ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে এক সর্বদলীয় সন্মেলনে বলেন, We are all sons of this land. We have to live together…. Belive me, there is no progress for India until the Musolmans and Hindus are united. আমরা সকলেই এই মাটির সন্তান। আমাদের একসাথেই বাঁচতে হবে…। বিশ্বাস করুন ভারতের কোন অগ্রগতি হবেনা যদি হিন্দু আর মুসলমানেরা ঐক্যবদ্ধ না হয়।

১৯৩৭ সালে আহমেদাবাদে হিন্দু মহাসভার ১৯ তম অধিবেশনে সাভারকার বলেন, “There are two antagonistic nations living side by side in India”, India cannot be assumed today to be a unitarian and homogenous nation. On the contrary, there are two nations in the main: the Hindus and the Muslims, in India…. several infantile politicians commit the serious mistake in supposing that India is already welded into a harmonious nation, or that it could be welded thus for the mere wish to do so”

“দুটি পরস্পরবিরোধী জাতি ভারতে পাশাপাশি বাস করে এসেছে, ভারতকে কখনোই একশিলা সমসত্ব জাতি হিসেবে বিবেচনা করা যাবেনা। বরং উল্টোভাবে ভারতে প্রধানত দুইটি জাতি; হিন্দু এবং মুসলমান…। কিছু বালকসুলভ রাজনীতিবিদেরা এই মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণা পোষন করে যে, ভারত এরমধ্যেই একটি সুসমসত্ব একটি জাতি হিসেবে তৈরি হয়েছে বা তৈরি করা যেতে পারে।”

এই সভার প্রায় সতেরো বছের আগেই এসেন্সিয়ালস অফ হিন্দুত্ব নামে সাভারকারের একটা পুস্তকে দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়। এবং হিন্দুদেরকে একটি জাতি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এই সভার তিন বছর পরে লাহোর অধিবেশনে অল ইণ্ডিয়া মুসলিম লীগের সভার জিন্নাহও সাভারকার উত্থাপিত হিন্দু মহাসভার দ্বিজাতি তত্ত্ব গ্রহণ করে।

ঘটনার পরম্পরা বিবেচনা করলে পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে দ্বিতীয় অবদান ভারতীয় মুসলমানদের। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে দেন সাভারকার তার হিন্দু জাতির তত্ত্ব দিয়ে।

নেহেরু তার অটোবায়োগ্রাফিতেও লিখেছেন “Socially speaking, the revival of Indian Nationalism in 1907 was definitely reactionary” সামাজিকভাবে বলতে গেলে ১৯০৭ সালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান অবশ্যই প্রতিক্রিয়াশীল ছিলো।

হিন্দু মহাসভার হিন্দুত্বের চর্চাই মুসলিম লীগের প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে। রমেশচন্দ্র মজুমদার যিনি কোনভাবেই মুসলমান প্রেমী ছিলেন না, তিনিও স্ট্রাগল ফর ফ্রীডম বইয়ে লিখেছেন, The outburst of Hindu Mohasova served to strengthen the power and influence of Muslim League. “হিন্দু মহসভার বিস্ফোরণই মুসলিম লীগের ক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিলো।”

দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক জিন্নাহ নয়; হিন্দুত্ববাদী সাভারকার। অথচ কি আশ্চর্য ভারত এবং বাংলাদেশের স্যেকুলারেরা এই দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্ম দেয়ার জন্য জিন্নাহ আর মুসলিম লীগকেই তুলোধোনা করে সবসময়।

Read More

Author: Pinaki Bhattacharya

Historical Hindu 12-September-2022 by east is rising

আধুনিক হিন্দী ভাষার উদ্ভব--মূলে হিন্দু মহাসভা ও ইংরেজ জেমস গিলক্রীষ্ট

আধুনিক হিন্দী ভাষার বয়স ১৫০ বছরের কাছাকাছি। এই ভাষাকে স্থানীয় অনেক ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। ভারতে নেশন স্টেট বানানোর জন্য যে তিনটি মুল স্তম্ভকে বেছে নেয়া হয়।

তার একটি হিন্দু ধর্ম, একটি হিন্দি ভাষা , আরেকটি হিন্দুস্তান বলে একটি কাল্পনিক ভুখণ্ড। এই ভাষার উদ্ভব এবং বিকাশের সাথে জড়িয়ে আছে হিন্দু মহাসভার নাম।

দিল্লি এবং এর পাশের অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যে ভাষা ছিলো তাকে হিন্দি বলয়ের বাইরের মানুষেরা বলতো হিন্দবি বা হিন্ধি। আর নিজেরা এই ভাষাকে বলতো খড়ী বোলি বা চালু ভাষা।

দিল্লি ছাড়া উত্তর ভারতের অন্যান্য অংশে ব্রজভাষা, ডিঙ্গল, মেওয়ারি, আবধী, মাগহি, ভোজপুরি, মৈথিলি এই ভাষাগুলো ব্যবহৃত হতো। সবগুলোই খুব সমৃদ্ধ ভাষা ছিলো।

কবীরের বচন ছিলো ব্রজভাষায় রচিত, মীরার ভজন ডিঙ্গলে, আবধীর কবি ছিলেন বিখ্যাত তুলশি দাস, মৈথেলি ভাষায় বিদ্যাপতি আর গোবিন্দ। কিন্তু আপনি আজকে কোন ভাষাই আর খুঁজে পাবেন না। হিন্দি সব ভাষাকে সিস্টেমিকভাবে মুছে দিয়েছে। মুছে দিয়েছে তাঁদের অমুল্য সাহিত্যের কথাও।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে হিন্দির আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভব হয় কোলকাতাতেই আর আজকে এই কোলকাতাতেই হিন্দির দাপটে বাঙলার ত্রাহি ত্রাহি দশা। হিন্দি ভাষার প্রসার এবং তাকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়া হয় হিন্দু মহাসভার মাধ্যমে।

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ইংল্যান্ড থেকে আগত ইংরেজ কর্মচারিরা এখানকার চাপরাশি, সহিস, জমাদার এইধরনের ভৃত্যস্থানীয় কর্মচারিদের সাথে ও দোকানদার, ফেরিওয়ালা এদের সাথে কথা বলার জন্য যে ভাষার চর্চা করতো তা ছিল এই দিল্লির খড়ি বোলি, ইংরেজরা তাকে হিন্দি বলতো।

এই কথ্য ভাষাকে সংস্কার করে লিখিত ভাষার রূপ দেন জেমস গিলগ্রিস্ট নামের এক ইংরেজ। কলকাতা শহরেই প্রথম হিন্দি পত্রিকা প্রকাশিত হয় “উদন্ত মার্তণ্ড” নামে। তখনো পর্যন্ত হিন্দির জন্য বিশেষ কোন লিপি স্বীকৃত বা গৃহীত হয়নি।

ব্রাহ্মসমাজের কেশবচন্দ্র সেন যখন তার নতুন মতবাদ প্রচারের জন্য সারা ভারত ঘুরছিলেন তখন তিনি উপলব্ধি করেন সারা দেশের মানুষ নানা বিচিত্র ভাষায় কথা বলে, এক অঞ্চলের ভাষা আরেক অঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারেন না।

তিনি আশ্রয় করেন হিন্দি ভাষার এবং “সুলভ সমাচার” পত্রিকার মাধ্যমে হিন্দিতে তার মতবাদ সারা ভারতে প্রচার করতে শুরু করেন। এরপরে কোলকাতায় আসেন আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী একটা বক্তৃতা দিতে। তিনি ছিলেন গুজরাটি কিন্তু শিক্ষিত সমাজের মাঝে বক্তৃতা দিতে হলে বক্তৃতা দিতেন সংস্কৃতে।

এসে দেখলেন এখানে কেশবচন্দ্র সেন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সবাই হিন্দিকে সামাজিক স্বীকৃতি দিচ্ছেন। এটা দেখে দয়ানন্দ সরস্বতী কোলকাতায় নিজের বক্তৃতাটা দেন হিন্দিতে। এরপরেই তিনি প্রস্তাব করেন হিন্দি নাগরি লিপিতে লেখা যেতে পারে। নাগরি লিপি হচ্ছে সেই লিপি যা দিয়ে গুজরাটি ব্রাহ্মণেরা সংস্কৃত চর্চা করতেন।

হিন্দির এই সর্বব্যাপী আগ্রাসনের ফলেই ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানের কাছে উর্দু হয়ে দাঁড়ালো তাঁদের আত্মপরিচয়, আর পাকিস্তান রাষ্ট্রকল্প তাঁদের কাছে হয়ে দাঁড়ালো হিন্দির দাপট থেকে মননের মুক্তাঞ্চল।

Read More

Author: Pinaki Bhattacharya

Historical General 05-August-2022 by east is rising