পশ্চীমের ইতিহাস ৪ পঞ্চদশ শতকঃ প্রাচ্যের খোঁজে

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ওসমানীয় তুর্কিদের ইউরোপ বিজয় শুরু হয়তারা কনস্টান্টিনোপল দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য যাওয়াও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইতালিয়ারা ব্যাবসা হারাতে থাকে আরও বেশী। এর ফলে ইতালিতে সামন্ত শ্রেণী পুনরায় শক্তিশালী হয়ে যায়। ক্রমেই উত্তর ইতালির একটা বড় অংশ ক্যাথোলিক চার্চের প্রধান শক্তি পবিত্র রোম সাম্রাজ্য (Holy Roman Empire, অধুনা অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ-পশ্চীম জার্মানি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, চে্‌ক, স্লোভাকিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি)-এর হাতে চলে যায়।

আইবেরিয়া পেনিনসুলাতে (অধুনা স্পেন ও পর্তুগাল) আরবদের হটিয়ে পর্তুগাল ও কাস্তিল নামে দুই রাজ্য মাথাচারা দিতে থাকে। তুর্কিরা এশিয়ার পণ্য চলাচলে বাঁধা দেওয়ায় পর্তুগাল নতুন ব্যাবসার পথ খুঁজতে থাকে। তারা আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে পশ্চীম আফ্রিকার উপকূল ঘুরে ভারত মহাসাগর পেড়িয়ে ভারত, চীন ও জাভা-বালি-সুমাত্রা-মালয় যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। এই সুদূর প্রাচ্যের দেশগুলোই ছিল তৎকালীন বিশ্ব উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্রতাই সেখানকার পণ্য পাওয়া গেলে তুর্কিদের বাঁধাকে অস্বীকার করা যাবে আর ইতালিয়দের ওপরও নির্ভরশীল থাকতে হবেনা। পর্তুগালের যুবরাজ হেনরি দ্যা নেভিগেটর এই উদ্যেশ্যে বিশ্বের প্রথম নৌ-সেনা ও সমুদ্র অভিযানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলেন সেখানে উন্নত জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি প্রস্তুত করে পর্তুগাল। প্রায় একশত বছরের প্রচেষ্টায় পঞ্চদশ শতকের শেষ দশকে পর্তুগালের নাবিক ভাস্কো ডা গামা ভারতে পৌঁছোতে সক্ষম হন এবং মশলা বোঝাই জাহাজ নিয়ে আনেন। ইতিমধ্যে কাস্তিল রাজ্য পর্তুগাল বাদে আইবেরিয়া পেনিনসুলার বাকি অংশ দখল করে এবং তার নাম হয় স্পেন। কলম্বাস নামক এক ইতালিয় চাইছিলেন গোলাকার পৃথিবী ঘুরে আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে আরও পশ্চীম দিকে গিয়ে জাপান, চীন, ভারত-এ পৌঁছতে। ওনাকে স্পেনের রাজা অর্থ দেন এই যাত্রার জন্য। উনি চীন-ভারতের বদলে আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছে যান যাকে ষোড়শ শতাব্দী থেকে পশ্চীমারা “নতুন বিশ্ব” (New World) বলে ডাকতে থাকে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দশকের এই দুই নতুন সমদ্র পথ আবিষ্কার ষোড়শ শতাব্দীতে পশ্চীমাদের বিশ্ব ইতিহাসের মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত করে। মনে রাখা দরকার পর্তুগাল ও স্পেনের এই দুই সমুদ্রপথ সেখানকার সামন্ত শ্রেণীর অর্জন আর তাই প্রাথমিকভাবে এই দেশগুলোর সামন্ততন্ত্রকেই শক্তিশালী করে।

অন্যদিকে এশিয় পণ্য ইউরোপে আসা বন্ধ হওয়ায় উত্তর ইউরোপিয়রা নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা তৈরি করতে থাকে আরও বেশি করে। এর একটা ফল হল এই শতাব্দীর মধ্যভাগে জার্মানিতে গুটেনবারগ-এর চলমান ছাপানোর যন্ত্র (movable printing machine) আবিষ্কারএই আবিষ্কারের জন্য ছাপানোর কাজ অনেক সস্তা হয়ে যায় এবং তাই বাইবেল পড়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়এর পরিণতি হল ক্যাথোলিক চার্চ বহির্ভূত বাইবেল-এর স্বাধীন ব্যখ্যা বৃদ্ধি পায়। লাতিন ভাষার কৌলীন্য অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন মাতৃ ভাষায় বই লেখার ও পড়ার প্রবণতাও বাড়তে থাকে অন্যদিকে ইংল্যান্ডে হেনরি টিউডর বা সপ্তম হেনরি নামে এক ব্যবসায়ী সিংহাসনে বসেন ১৪৮৫ সালে। টিউডর রাজারা ইংল্যান্ডের সামন্তদের স্বাধীন সেনাবাহিনী রাখার ও বারুদ বানাবার অধিকার কেঁড়ে নেন এবং তাদের বাণিজ্য করতে উৎসাহ দেন। ফলে ইংল্যান্ডে সামন্তদের জায়গায় বণিকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান হয়। সুতরাং এই শতকে সামন্ততন্ত্র দক্ষিণ ইউরোপে শক্তিশালী হয় আর উত্তর ইউরোপে দুর্বল হয়।     

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 05-November-2021 by east is rising

পশ্চীমের ইতিহাস ৩ চতুর্দশ শতকঃ শ্রেণী দ্বন্দ্ব

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালিয়াদের থেকে পাওয়া এশিয়ার পণ্য ইউরোপের সামন্তদের ও বণিকদের জীবনযাপনের মান বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু চতুর্দশ শতকে মোঙ্গল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায় এবং ওসমানীয় তুর্কিদের উত্থান শুরু হয়। এর ফলে ইতালিয়দের জাঁকজমক এবং এশিয়া থেকে আগত পণ্যের পরিমাণ কিছুটা কমেপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউরোপে নতুন সামাজিক বিকাশ দেখা দেয়। এশিয়া থেকে পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় সেখানে শহরগুলোতে শুধু বাণিজ্য নয়, কারিগরি শিল্প উৎপাদন ব্যাবস্থাও গড়ে উঠতে শুরু করে। বাল্টিক অঞ্চলে (অর্থাৎ বর্তমান জার্মানি, পোল্যান্ড, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্টনিয়া) বণিকদের বাড়বড়ন্ত দেখা যায়। বণিকরা অনেকগুলো শহরের মূল স্তম্ভ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাবসায়িক স্বার্থ কায়েম রাখতে ৯০টা শহর মিলে “হ্যান্সিয়াটিক লীগ” গড়ে তোলে ১৩৫৬ সালেলীগ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সরকারের কাছ থেকে অনেক ব্যাবসায়িক সুবিধে ছিনিয়ে নেয় আর স্কান্ডানাভিয়ায় যুদ্ধ করে সামন্তদের কাছ থেকে অনেকগুলো দুর্গ দখল করে। এইভাবে লীগ উত্তর ইউরোপে একটা বিশাল শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। তবে লীগ আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে ভেঙ্গে পড়ে শতাব্দীর শেষের দিকে। লীগের পতনে উত্তর ইউরোপের সামন্তরা হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচে। এই দ্বন্দ্বের একটা কারণ ছিল ব্যাবসা ও কারিগরি শিল্পৎপাদন ততদিনে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সেও ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এই নতুন প্রতিযোগিতার মুখে লীগের পক্ষে কায়েমী স্বার্থগুলোকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এশিয়া থেকে আমদানি করা পণ্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সামন্তদের বাজারজাত পণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। ফলে এক দিকে বণিকদের বিকাশ হয়, আর অন্যদিকে সামন্তদের কৃষকের থেকে, বণিকের থেকে ও কারিগরের থেকে চাওয়া খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সামন্তরা নগদ অর্থ চাইতে থাকে এবং নগদ অর্থের বিনিময়ে অনেক ভূমীদাসকে মুক্তি দিতে থাকেকিন্তু স্বাধীনভাবে কৃষিকাজ করার আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বহু কৃষক জমি হারায় এবং মজুর কৃষকে পরিণত হয়। “ব্ল্যাক ডেথ”-এর প্রকোপে ইউরোপের জনসংখ্যা কমে যায় একতৃতীয়াংশ। এর ফলে মজুরি বেড়ে যায় বহু গুণ। মজুরির পরিমাণ নির্দিষ্ট স্তরে বেঁধে দেয় সামন্ত শাসকরা। ইংল্যান্ডের সামন্ত ও বড় কৃষকরা ছোট কৃষকদের জমি কেঁড়ে নিয়ে বেড়া দিতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে “এনক্লোসার মুভমেন্ট” বলা হয়। (“এনক্লোসার মুভমেন্ট” ইংল্যান্ডের আদি পুঁজির সঞ্চয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তী কালে শিল্পবিপ্লবের প্রাথমিক শর্ত হয়ে দাঁড়ায় আদি পুঁজির সঞ্চয়) এর ওপর যুক্ত হয় নরম্যান্ডির ওপর দাবীকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের “একশ বছর ব্যাপী যুদ্ধ”শহরের বণিক ও কারিগর আর গ্রামের কৃষকদের ওপর ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। ফ্রান্সে বণিক নেতা মার্শালের নেতৃত্বে ১৩৫৮ সালে জেকুয়ারী বিদ্রোহ দেখা দেয় আর ১৩৮১ সালে ইংল্যান্ডে ললারড সম্প্রদায়ের ওয়াট টাইলরের নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়। কিন্তু ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সামন্ত শাসকরা বিদ্রোহ দমন করতে সমর্থ হয়। সামন্ত শাসকরা জয়ী হয় বটে, কিন্তু যুগ যে বদলাচ্ছে তার ইঙ্গিতও পাওয়া যায় এই শতকে।   

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 05-November-2021 by east is rising

পশ্চীমের ইতিহাস ২ ত্রয়োদশ শতকঃ প্রাচ্যের সান্নিধ্য

ত্রয়োদশ শতক থেকেই ক্যাথোলিক চার্চ ও খ্রিষ্ট ধর্ম সম্পর্কে মোহ কমতে শুরু করে পশ্চীমাদের। তারা বোঝে যে শুধুমাত্র ঈশ্বরের নাম নিয়ে যুদ্ধে জেতা যায়না। এশিয়ার প্রাচুর্য, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, দর্শন পশ্চীমাদের আকর্ষণ করতে থাকে। ইতালি প্রথম নতুন পথের দিশা দেখায় পশ্চীমকে। তারা ক্রুসেডের নামে ব্যাবসায়িক প্রতিপত্তি বাড়াবার দিকেই মন দেয় এবং শেষ পর্যন্ত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী গ্রীক বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যকে দখল করে। বাজান্টাইন দিয়েই ইউরোপে এশিয়া থেকে পণ্য ঢুকত আর তাই ইতালির শহরগুলো যথা ভেনিস, নেপ্লস, জেনোয়া, ফ্লোরেন্স, পিসা, ইত্যাদি ফুলে ফেঁপে ওঠে বাজান্টাইন দখল করে। ইতালিয়দের সুযোগ আরও বেঁড়ে গেল যখন মোঙ্গলরা চীন থেকে শুরু করে হাঙ্গেরি পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলল। এতদিন আরব, তুর্কি, পার্সি নিয়ন্ত্রিত “রেশম পথ” ছিল এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যের প্রধান পথমোঙ্গল সাম্রাজ্যের ফলে চীন থেকে রাশিয়া হয়ে ইউরোপ অবধি একটি নতুন বাণিজ্য পথ রচিত হয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই মার্কো পোলো সুদূর ইতালি থেকে চীন-ভারত যাত্রা করেন এবং ইতালিতে ফিরে এসে চীনের ও ভারতের উন্নত জীবনযাত্রা, উৎপাদন ও প্রযুক্তির কথা তুলে ধরেন। এর ফলে ইউরোপীয়দের সুদূর প্রাচ্যের উন্নত রাজ্যগুলোতে যাওয়ার ইচ্ছে আরও প্রবল হয়। চীন থেকে প্রিন্টিং যন্ত্র, বারুদ, ঘড়ি, রেশম ইউরোপে নিয়ে এনে ইতালিয়রা অনেক মুনাফা করতে থাকে। ইতালিয় শহরগুলোতে ব্যাবসায়ীরাই প্রধান শাসক হয়ে ওঠে। তাদের প্রিষ্টপোষকতায় আধুনিক চিন্তা ক্রমেই দানা বাঁধে ইতালিয় সমাজে যা নবজন্ম (Reneissance) নামে ইতিহাসে বিখ্যাতক্যাথোলিক চার্চের ঈশ্বরে বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে যুক্তিহীনভাবে সবকিছু মেনে নেওয়ার ধারণাকে প্রশ্ন করতে শেখাল আধুনিকতাবাদ। আরব, চীন, ভারত, পার্সি, গ্রীক ও প্রাচীন রোম বিষয় পড়াশুনো শুরু করে ইতালিয়রা যা ক্রমেই গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ইংল্যণ্ডে। ক্রুসেডের জন্য ইংরেজ কৃষক, কারিগর, সামন্তদের অনেক খাজনা দিতে হয়েছিল রাজাকে। ক্রুসেড শেষ হওয়ার পরেও খাজনা বেঁড়েই চলছিল ১২১৫ খ্রীষ্টাব্দে রাজার খাজনা বসানোর প্রতিবাদে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বেশ কিছু সামন্ত ও পাদ্রি। তাদের দাবী মেনে একটা সনদ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় রাজা যা “ম্যাগনা কার্টা” নামে পরিচিত। এর ফলে রাজার ইচ্ছে মতো খাজনা বসানোর ক্ষমতা খর্ব করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে রাজাকে গ্রেট কাউন্সিল-এর সভায় সামন্ত ও পাদ্রিদের সাথে আলোচনা করেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ১২৬৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা গ্রেট কাউন্সিল-এর সভা না ডাকায় বিদ্রোহ হয় এবং শেষ পর্যন্ত রাজা বাধ্য হয় দ্বিতীয় গ্রেট কাউন্সিল গ্রহণ করতে যা পার্লামেন্ট নামে পরিচিত। পার্লামেন্ট ত্রয়োদশ শতকে ইংল্যান্ডে সামন্তদের ক্ষমতাই বৃদ্ধি করেছিল। সামন্ততন্ত্র বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পার্লামেন্ট গড়ে ওঠেনি।

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 05-November-2021 by east is rising

পশ্চীমের ইতিহাস ১ঃ পশ্চীমের জন্ম

পশ্চীমের জাতিগুলো মূলত তৈরি হয়েছে রোম সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের ওপরক্ষয়িষ্ণু রোম সরকারের নির্দেশ অস্বীকার করে জার্মান উপজাতিগুলো যেমন গথ, ফ্রাঙ্ক, অ্যাংলো, স্যাক্সন, লোম্বারড, ইত্যাদি রোম সাম্রাজ্যে প্রবেশ করতে শুরু করে চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে। এই উপজাতিগুলো তখনও পর্যন্ত প্রাক কৃষি বর্বর স্তরে রয়ে গেছিল। ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে তারা কৃষি সমাজে প্রবেশ করা শুরু করে এবং খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। দাস ভিত্তিক রোম সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ার পরে পশ্চীমারাই গড়ে তোলে ভূমিদাস ভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক সমাজ। ভৌগলিক ও ঐতিহাসিক কারণে পশ্চীম ইউরোপের এই নতুন কৃষি সভ্যতা এশীয়া ও উত্তর আফ্রিকার পুরনো সভ্যতাগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। পুরনো সভ্যতাগুলো প্রায় খ্রিষ্ট পূর্ব ৪০০০ সাল থেকেই কৃষি সভ্যতায় প্রবেশ করেছিল। তারা তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগ পেরিয়ে লৌহ যুগে প্রবেশ করে খ্রিষ্ট পূর্ব ১০০০ সালে তাই বলাই যায় এই পুরনো সভ্যতাগুলো পশ্চীমের তুলনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে থেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, উৎপাদন ব্যাবস্থা, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শ্রেণী বিন্যাস, ধর্ম ও সংস্কৃতি। সপ্তম শতকের মধ্যভাগ থেকে পশ্চীম এশীয়ায়, ভূ-মধ্যসাগরে ও উত্তর আফ্রিকায় আরবদের উত্থান পশ্চীমাদের আরও কোণঠাসা করে দিয়েছিল। অষ্টম শতকের প্রথম দিকে আরবরা আইবেরিয়া পেনিনসুলা (অধুনা স্পেন ও পর্তুগাল), সিসিলি ও দক্ষিণ ইতালির দখল নেয়। উত্তর ইউরোপের স্কান্ডানাভিয়া থেকে ভাইকিং বর্বরদের আঘাত পশ্চীমাদের ব্যাতিব্যাস্ত করে তোলে। তাই দশম শতাব্দী পর্যন্ত পশ্চীমারা নীম্নমানের কৃষি ভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক সভ্যতার বেশি কিছু গড়ে তুলতে পারেনি। সেখানে শিল্প ও শহরের সংখ্যা ছিল খুব কম। তাদের ব্যাবসা বাণিজ্য করার প্রবণতাও কম ছিলকিন্তু একাদশ শতাদীর গোড়ার দিকে থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি পরিবর্তিত হয়। আরবদের অবক্ষয় আর তুর্কিদের উত্থান শুরু হয়। ভাইকিংরাও খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে পশ্চীমা সভ্যতার সাথে মিশে যেতে থাকে এবং তাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। এরকম সময়েই পশ্চীমারা ক্ষয়িষ্ণু আরবদের ওপর আঘাত হানে। একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগেই পশ্চীমারা আরবদের থেকে সিসিলি, দক্ষিণ ইতালি ও আইবেরিয়া পেনিনসুলা (অধুনা স্পেন ও পর্তুগাল)-এর একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নেয়। আর একাদশ শতকের শেষের দিকে তুর্কিদের সাথে আরব ও গ্রীকদের বৈরিতার সুযোগ নিয়ে পশ্চীমারা ধর্ম যুদ্ধ ক্রসেড শুরু করে। প্রথম দিকে জয়ী হলেও ক্রমেই পশ্চীমারা আরব ও তুর্কিদের উন্নত প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও অধিক জনসংখ্যার কাছে হার মানে। পুরনো সভ্যতা হিসেবে গ্রীকরা খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী হওয়া স্বত্ত্বেও মুসলমান আরব, কুরদ ও তুর্কিদের সাথে হাত মিলিয়ে পশ্চীমাদের পরাজিত করে। দ্বাদশ শতকের শেষ দশকে ক্রুসেডারদের পরাজয় সম্পূর্ণ হয়।  

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 05-November-2021 by east is rising