পশ্চিমের ইতিহাস ৭ অষ্টাদশ শতকঃ উৎপাদনকারী পুঁজি বিজয়ী হল

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারত ইংল্যান্ডের উপনিবেশ হয় স্বাভাবিকভাবে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না পেরে ইংল্যান্ড আইন বানিয়ে জোড় করে ভারতীয় শিল্পগুলোকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয় মার্কিন স্বাধীনতা সংগ্রাম শ্রম অনুসারে প্রাপ্তি তত্ত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। ফরাসি বিপ্লব সামন্তপ্রভুদের উচ্ছেদ করে ভূমি সংস্কার কর্মসূচী পালন করে উৎপাদনকারী শক্তি বাড়িয়ে তোলে। ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব শুরু হয়। শিল্পবিপ্লবের পরে বস্তুগত অবস্থা উৎপাদনকারী পুঁজিবাদের পক্ষে আসে। উৎপাদনকারী পুঁজি একদিকে সামন্তদের আর অন্যদিকে বাণিজ্য পুঁজি-কে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়।

এইভাবে ছয় শতাব্দী ধরে লড়াই করে পুঁজিবাদ জয়ী হয়। প্রথম শতকে সামন্ততান্ত্রিক পশ্চীমের কেবল প্রাচুর্য সম্পর্কে ধারণা হয়। দ্বিতীয় শতকে কারিগরি শিল্পের বিকাস হয় এবং তার ফলে শ্রেণী সংগ্রাম তীব্র হয়, যদিও শাসক সামন্ত শ্রেণীর জয় হয়। তৃতীয় শতকে প্রাচ্য থেকে আসা বাঁধাকে দক্ষিণ ইউরোপের সামন্ত শাসকরাই সৃষ্টিশীলতা দিয়ে অতিক্রম করে নিজেদের শক্তি বাঁড়ায় আর উত্তর ইউরোপে বণিক ও কারিগররা সৃষ্টিশীলতা দিয়ে সামন্ততন্ত্রের শক্তি কমায়
চতুর্থ শতকে উত্তর ইউরোপে সামন্ত শ্রেণীর দর্শনকে আঘাত করা হয় এবং বণিক শ্রেণির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় পঞ্চম শতকে বিশ্বের ইতিহাসে উত্তর ইউরোপে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে প্রথম বণিক শ্রেণীর সাথে উৎপাদনকারী পুঁজি একত্রিত হয়ে পুঁজিবাদী দর্শনকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেশেষ শতকে উৎপাদনকারী পুঁজি শিল্পবিপ্লব করে বস্তুগত অবস্থা নিজের পক্ষে নিয়ে আনতে সক্ষম হয় এবং সম্পূর্ণরূপে জয়ী হয়এই চলার পথে তৈরি করতে হয়েছে নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নানা আবিষ্কার, নানা দর্শন। এবার দেখা যাক মাত্র দুই শতাব্দীতে কমিউনিস্ম ও পুঁজিবাদের লড়াই কিরকম বিকাশ লাভ করেছে   

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 06-November-2021 by east is rising

পশ্চিমের ইতিহাস ৬ সপ্তদশ শতকঃ বাণিজ্য পুঁজিবাদ

সপ্তদশ শতাব্দীতে পশ্চীম প্রাচ্যের থেকে উৎপাদন ছাড়া অন্য সমস্ত বিষয়ে প্রবলভাবে ছাপিয়ে যায়। আসলে বিশ্বকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করে পশ্চীম এই শতক থেকেই। বোরেলির মাইক্রোস্কোপ ও লেন্স আবিস্কার, বলের গ্যাসের চাপ তত্ত্ব, গ্যালিলিওর উন্নত টেলিস্কোপ আবিস্কার যা কোপারনিকাস-এর তত্ত্বকে সঠিক বলে প্রমাণ করে, কেপলারের গ্রহের গতি নিয়ে তত্ত্ব, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব, রায়ের সিস্টেমিক্স, হুকের কোষ তত্ত্ব, ডেস্কারটিসের বিশ্ব ব্রাহ্মান্ডকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র হিসেবে ব্যক্ষা :- সপ্তদশ শতক শুধু পশ্চীমকেই বিজয়ী বানায়নি, বিজ্ঞানকেও বিজয়ী করেছিল ধর্মের সঙ্গে দ্বন্দ্বে।

“ত্রিশ বছরের যুদ্ধ”-এর শেষে (১৬১৮-১৬৪৮) পশ্চীমী সামন্ততন্ত্রের দুই প্রধান রাষ্ট্রযন্ত্র- পবিত্র রোম সাম্রাজ্য ও স্পেন “ওয়েস্টফালিয়া চুক্তি” করে এবং প্রোটেস্টান্ট দেশ হল্যান্ডের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়। উত্তর ও পূর্ব জার্মানিতেও প্রোটেস্টান্ট রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি পায়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ব্র্যান্ডেনবারগের প্রাশিয়া। প্রাশিয়া রাষ্ট্র পরবর্তীকালে জার্মান জাতির ঐক্যকরণ ঘটিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে দুর্বল করতে এবং পরোক্ষভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল।

ইংল্যান্ডে এই শতকে পার্লামেন্টপহ্নী বনাম রাজাপহ্নীদের মধ্যে ব্যপক সংঘর্ষ হয়। যে পার্লামেন্ট ছিল সামন্তদের রাজার ক্ষমতা খর্ব করার মাধ্যম, তা হয়ে দাঁড়ায় সাধারণ জনগণের রাজার ক্ষমতায় লাগাম টানার হাতিয়ার। এই সময়েই ইংল্যান্ডে জন লক (ইতিহাসে উদারবাদের জনক বলে চিহ্নিত) শ্রম অনুসারে প্রাপ্তি তত্ত্বকে তুলে ধরেন। এই তত্ত্ব শুধু অর্থ লোলুপ ব্যবসায়ীকেই নয়, সাধারণ কৃষক ও কারিগর উৎপাদকদেরও সামন্তদের থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিনিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করে। বিশ্বের ইতিহাসে ইংল্যান্ডে প্রথম উৎপাদনকারী পুঁজি রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার কাজে লীপ্ত হয়। ছোট স্বাধীন কৃষকরা (ইউম্যানরি) পার্লামেন্টের মূল সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করে। যদিও মজার বিষয় পার্লামেন্ট বিজয়ী হওয়ার পরে ছোট কৃষক উচ্ছেদ আরও বৃদ্ধি পায়। উচ্ছেদ হওয়া কৃষক হয় শহরের মজুরে পরিণত হচ্ছিল, নয় উপনিবেশবাদের সেনা, নয় আমেরিকা মহাদেশে পলায়নকারী।

তবে হল্যান্ড এই শতকে সকলকে ছাপিয়ে গেছিল। তারা জাতি রাষ্ট্রকে সরাসরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দখলের কাজে ব্যবহার করে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বানিয়ে তাকে একচেটিয়া অধিকার দেয় এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য করার। আবার ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থের যোগানের জন্য হল্যান্ড বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম শেয়ার বাজার তৈরি করে। শেয়ার ছেঁড়ে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার প্রথম পুঁজি তোলেহল্যান্ড পর্তুগালকে ভারত মহাসাগরে পরাস্ত করে, এশিয়ার বহু বন্দর পর্তুগালের কাছে থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে উপনিবেশ বানিয়ে সেখানকার শাসক হয়ে দাঁড়ায়। আপেক্ষিকভাবে উন্নত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিজেদের মুনাফার স্বার্থে কাজে লাগাতে শুরু করে হল্যান্ড। সপ্তদশ শতকের হল্যান্ড ছিল বাণিজ্য পুঁজিবাদের পথিকৃৎ।

এই শতকের শেষের দিকে ওসমানীয় তুর্ক সাম্রাজ্যের ও ভারতের মোঘল সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণুতা প্রকট হয়। ওসমানীয়রা ভিয়েনাতে পরাস্ত হয় ১৬৮৩ সালে আর হাঙ্গেরি ছেঁড়ে দিতে বাধ্য হয় ১৬৯৯ সালে। ভারতের মোঘল সাম্রাজ্যও নানা বিদ্রোহে দুর্বল হয়ে পড়ে। চীন সাম্রাজ্য তার শক্তি বজায় রেখেছিল এবং ডাচদের বেশ কিছু নৌযুদ্ধে পরাস্তও করেছিল।    

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 06-November-2021 by east is rising

পশ্চিমের ইতিহাস ৫ ষোড়শ শতকঃ সামন্ততন্ত্রের চেতনায় আঘাত

ষোড়শ শতাব্দীর সূচনাতে পঞ্চম চার্লস পিতার দিক থেকে স্পেন-এর আর মায়ের দিক থেকে পবিত্র রোম সাম্রাজ্য-এর সম্রাট হয়ওনার নেতৃত্বে স্পেন আমেরিকা মহাদেশ জয় করে এবং সেখান থেকে বিপুল সোনা আমদানি করতে থাকে ইউরোপে। চার্লস হয়ে দাঁড়ায় ইউরোপের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ও সমগ্র বিশ্বের একজন অন্যতম ক্ষমতাবান শাসককিন্তু পর্তুগাল চার্লসকে সমুদ্র পথে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দিচ্ছিল। পর্তুগাল এশিয়ার বন্দরগুলো দখল করতে থাকে এবং ভারত মহাসাগরে আধিপত্য কায়েম করে। এভাবে পর্তুগাল এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যেকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। আবার অন্যদিকে ওসমানীয় সুলতান সুলাইমান-এর নেতৃত্বে তুর্কিরা হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া দখল করে নেয়। চার্লস যখন পর্তুগাল ও তুর্কিদের সাথে লড়াইতে ব্যাস্ত তখন তাকে আরেকটা বিপদের মুখে পড়তে হয়। বাইবেল-এর স্বাধীন ব্যক্ষা বেড়ে গেছিল প্রিন্টিং সস্তা হয়ে যাওয়ায়। নতুন বিশ্ব ও নতুন সমুদ্র বাণিজ্য থেকে আগত অর্থ পশ্চীমের মানুষকে অর্থমুখী করে তোলে। আর তাই ক্যাথোলিক চার্চের অর্থোপার্জনে নানা বিধিনিষেধ তাদের পছন্দ হচ্ছিলনা। তাই ক্যাথোলিক চার্চের বাইবেল বিশ্লেষণকে নাকচ করে স্বাধীন ব্যক্ষার পক্ষে কথা বলতে থাকেন উত্তর ইউরোপের মারটিন লুথার ও ক্যালভিনএই আন্দোলনকে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একদিকে অ-লাতিন জার্মান শেকড়জাত মাতৃ ভাষা্র জাতিগুলো প্রোটেস্টান্ট হয়ে যেতে শুরু করে কারণ ক্যাথোলিক চার্চ কেবল লাতিনকেই কুলীন ভাষা বলে মনে করতআর অন্যদিকে রাজারা প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনের মধ্যে খুঁজে পায় ক্যাথোলিক চার্চ ও পোপের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতার ইন্ধন। চার্লস জার্মানিতে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলন দমন করতে চেষ্টা করেন কিন্তু নির্মূল করতে ব্যর্থ হন। ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, স্কান্ডেনাভিয়ায় প্রোটেস্টান্টরাই জয়ী হয়।

চার্লস-এর মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ফিলিপ সম্রাট হন। ফিলিপ স্পেন ও পবিত্র রোম সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেনউনি ১৫৭১ সালে তুর্কিদের বিরুদ্ধে নৌযুদ্ধে বিজয়ী হন এবং পর্তুগালকে স্পেনের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য করান ১৫৮০ সালে। কিন্তু হল্যান্ডের প্রোটেস্টান্ট অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা ঠেকাতে ব্যর্থ হন ১৫৮১ সালেহল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলন পশ্চীমে জাতিরাষ্ট্র-এর ভিত্তি রচনা করে। ১৫৮৮ সালে ফিলিপ নৌযুদ্ধে ইংল্যান্ডের কাছে পরাস্ত হনএরপর থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে পশ্চীমের সামন্ততন্ত্রের প্রধান শক্তি স্পেনের আধিপত্য শেষ হয় এবং বাণিজ্য পুঁজিবাদী (merchantile capitalist) ইংল্যান্ড ও হল্যান্ডের আধিপত্য শুরু হয়।

প্রোটেস্টন্ট আন্দোলনের ফলে পোপের কর্তৃত্ব শেষ হয়, মাতৃভাষার বিকাশ হয়, জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি শক্তিশালী হয়, পয়সা করার জন্য যেকোন কাজ এমনকি সুদের কারবারও সামাজিক স্বীকৃতি পায় ফলে কৃষক উচ্ছেদ করে জমি গ্রাস করায় আর কোন সামাজিক বাঁধা থাকলনা আর তাই ইংল্যান্ডে “এনক্লোসার মুভমেন্ট” আরও বৃদ্ধি পায়। এই শতকেই ইংল্যান্ডে সেক্সপিয়ার ইংরিজি ভাষার বিকাশ ঘটান তার নাটক রচনার মধ্য দিয়ে।

ষোড়শ শতাব্দীর শেষে পশ্চীমারা গোটা বিশ্বের সমস্ত মহাসাগরের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এবং স্বাধীন বিজ্ঞান, দর্শন, প্রযুক্তি চর্চায় প্রাচ্যের সমকক্ষ হয়ে ওঠে। সমুদ্র শাসন করলেও জমিতে তারা তখনও ভারতের মোঘল সাম্রাজ্য ও ওসমানীয় তুর্কি সাম্রাজ্য-এর সাথে পেরে উঠছিলনা। চীন সাম্রাজ্যের সাথে তারা নৌযুদ্ধেও পরাস্ত হচ্ছিল। চীন, ভারত, জাভা-বালি-সুমাত্রা-মালয়-এর উৎপাদন ব্যস্থা অনেক উন্নত ছিল পশ্চীমের তুলনায়। আর তাই এশিয়ার সাথে পশ্চীমের বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে যেত। এই ঘাটতি পূরণ করতে পশ্চীমারা দাস ব্যবসা, লুণ্ঠন এবং জলদস্যুগিরির আশ্রয় নিতে শুরু করে।    

এছাড়াও কোপার্নিকাস নামক পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন যে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে যা বাইবেলের শিক্ষার বিরোধী ছিলবলা বাহুল্য প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনের জনক মারটিন লুথার ও ক্যালভিন কোপারনিকাসের পাশে দাড়াননি।

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 06-November-2021 by east is rising