অর্থের বিনিময়ে যৌনতায় খারাপ কিছু তো নেইই বরং তা খুব স্বাভাবিক পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই। আপনি বাজারে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে অনেক পণ্য ও পরিষেবা কেনেন। আপনি কেন অর্থ দিয়ে কেনেন? কারণ আপনার যেই জিনিসটা দরকার সেটা দোকানদারের কাছে আছে বটে কিন্তু দোকানদারের যেটা দরকার সেটা আপনার কাছে নেই। আবার আপনি যেই পরিষেবা বা পণ্য বিক্রি করছেন তার ক্রেতার কাছেও আপনার আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটা নেই। তাই অর্থ এসেছে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে। যাতে ক্রেতার কাছে বিক্রেতার প্রয়োজনীয় জিনিসটা না থাকা সত্তেও দুজনেই বিনিময় করতে পারে।
এবার যৌনতাকেও একটা পরিষেবা হিসেবে ভেবে দেখুন। আমাদের সকলেরই নারী পুরুষ নির্বিশেষে একটা যৌন আকর্ষক সূচক আছে। আমরা পুরুষ হিসেবে কোন নারীর কাছে আকর্ষণীয় আবার কোন নারীর কাছে আকর্ষণীয় নয়। এর অর্থ পুরুষটির থেকে যৌন আকর্ষক সূচকে যে নারীটি পিছিয়ে সে ওই বিশেষ পুরুষটিকে সে আকর্ষণীয় ভাববে। পুরুষটির থেকে যৌন আকর্ষক সূচকে যে নারীটি এগিয়ে সে ওই বিশেষ পুরুষটিকে সে আকর্ষণীয় ভাববেনা। যৌন আকর্ষক সূচকে পুরুষটির সমান যে নারী সে নিরপেক্ষ থাকবে পুরুষটির বিষয়ে। একটি বিশেষ নারীর ক্ষেত্রেও তাই। তার থেকে সূচকে নীচের পুরুষের কাছে সে আকর্ষণীয়, তার থেকে সূচকে ওপরের পুরুষের কাছে সে আকর্ষণীয় নয় আর সমান পুরুষদের কাছে নিরপেক্ষ। এর অর্থ এটাই যে কোন বিশেষ পুরুষের কাছে যে আকর্ষণীয় নারী, সে নারীর কাছে ওই পুরুষ আকর্ষণীয় নয়। আবার সেই বিশেষ পুরুষের কাছে যে নারী আকর্ষণীয় নয় সেই নারী ওই পুরুষটিকে পেতে চাইবে। যৌনতাকে যদি বাজারের পরিষেবা বানানো যায় তবে দেখা যাবে ওই পুরুষটি অর্থের বিনিময়ে তার থেকে সূচকের ওপরের নারীটিকে পেতে চাইছে আর তার থেকে সূচকের নীচের নারীটি ওই পুরুষটিকে অর্থের বিনিময়ে পেতে চাইছে। শুধুমাত্র নিরপেক্ষ সূচকের ক্ষত্রেই অর্থ ছাড়া বিনিময় হওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যৌনতা তিনটি ক্ষেত্রে হতে পারে এবং তার মধ্যে দুটি ক্ষত্রেই অর্থের বিনিময় যৌনতা স্বাভাবিক আর কেবল একটি মাত্র ক্ষেত্রে অর্থ ছাড়া যৌনতা স্বাভাবিক। অর্থ ছাড়া যৌনতা আসলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের সকলের যৌন সঙ্গী নির্বাচনকে অনেক বেশি সঙ্কুচিত করে তোলে। সূচকে ওপরের যৌন সঙ্গী পাওয়ার আকাঙ্খা মানুষকে অনেক বেশি কর্মক্ষম করে তোলে। মানুষ অর্থোপার্জনে অনেক বেশি উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে। তাহলে অর্থের বিনময়ে যৌন পরিষেবা দেওয়া নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ন্যায়সঙ্গত।
এবার আসা যাক কেন সমাজ এতদিন ধরে অর্থের বিনময়ে যৌনতাকে খারাপ চোখে দেখেছে। যৌন আকর্ষক সূচকের ক্ষেত্রে অর্থবল বয়েস এবং সৌন্দর্য ছাড়াও ব্যবহারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নারী যেহেতু সন্তান ধারণ করে তাই বিবর্তনের নিয়মে নারীর দেহ সৌন্দর্য ও বয়স বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ যেহেতু বহুবছর পর্যন্ত সন্তান উৎপন্ন করতে সক্ষম তাই পুরুষের ক্ষেত্রে অর্থবল বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে ঐতিহাসিকভাবে। আর নারী সন্তান ধারণ করে বলে সে অর্থোপার্জনে বেশি সময় দিতে পারেনি সেই জন্যেও ঐতিহাসিকভাবে পুরুষের অর্থ ও নারীর বয়স ও সৌন্দর্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে জনবিষ্ফোরণের জন্য জন্মহার কমাতে তৎপর হয়ে ওঠে সমাজ। সমাজ নারীকে কম সন্তান ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং নারীকেও অর্থোপার্জন করতে উৎসাহ দিতে থাকে। এছাড়াও সন্তানকে লালন পালন করা শিল্পোন্নত সমাজে খুবই ব্য্যবহুল হতে থাকে। কারণ একটি নির্দিষ্ট বয়স অবধি পড়াশুনা করে যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা অর্জন করেই কেবল অর্থোপার্জন সম্ভব হতে থাকে। এই জন্যেও সন্তান কম নেওয়াকে ও স্ত্রী্র অর্থোপার্জ করাকে মেনে নিতে শুরু করে সংসারের পুরুষেরাও। একবিংশ শতাব্দীতে এসে দেখা যাচ্ছে নারী অর্থোপার্জন করতে শুরু করেছে এবং জন্ম হার অনেক কমে গেছে। প্রজননের জন্য যৌনতা কমে গেছে আর আনন্দের জন্য যৌনতা বেড়ে গেছে।তাই বর্তমান যুগে যৌন সঙ্গী বদলাবার ইচ্ছেও প্রবল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হচ্ছে অল্পদিনের সম্পর্ক। নারীও পুরুষের মতোন বেশি বয়সে বেশি অর্থোপার্জন করে কম বয়েসি পুরুষের সান্যিধ্য কামনা করছে। অতএব বলাই যায় বর্তমান পৃথিবীতে যৌন পরিষেবা কেনা ও বেচা পুরুষ ও নারী উভয়ের পক্ষেই স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত হয়ে উঠেছে। মনে রাখা দরকার আজ প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের সমস্যা কাটিয়ে উঠছি। কিন্তু আকাঙ্খিত যৌন সঙ্গী আজও একটি প্রস্তর যুগের মতোই দুর্লভ। হয়তো প্রযুক্তি রোবট ও মেটাভারস এনে এই দুর্লভতাও দূর করতে সক্ষম হবে। কিন্তু যতদিন না হচ্ছে ততদিন যৌনতাকে বাজারের পরিষেবা বানানো ভীষণ দরকার। কারণ পুরনো আমলের সংসার নামক প্রতিষ্ঠান ক্রমেই অকেজ হয়ে পড়ছে।
Read More
Author: Saikat Bhattacharya
Social
Sex War
26-January-2022
by east is rising