বাংলা সালতানাতের সুলতান বংশগুলোর আদি নিবাস কোথায় ছিল?

অনেকে প্রায়ই প্রশ্ন করে থাকেন যে বাংলার সুলতানরা বায়োলজিক্যালি কোন জাতির ছিলেন? আবার অনেকের মধ্যে বদ্ধমূল একটি বড়ো রকমের ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, বাঙ্গালা সালতানাতের সুলতানরা নাকি তুর্কী ছিলেন!

আজ সে বিষয় নিয়েই খোলাখুলিভাবে আলোচনা করতে চলেছি। এর উত্তর হলো- স্বাধীন বাংলা সালতানাতে রাজত্বকারী কোনো রাজবংশই তুর্কী ছিলো না, বাংলার একজন সুলতানও তুর্কী ছিলেন না, একজনও নয়।

মহান বাঙ্গালা সালতানাতে (১৩৫২-১৫৩৯, ১৫৫৪-১৫৭৬) টি রাজবংশ রাজত্ব করেছে। যথা- () ইলিয়াস শাহী বংশ, () রাজা গণেশের পরিবার বা কানস শাহী বংশ, () হাবশী বংশ () হোসেন শাহী বংশ, () মুহাম্মাদ শাহী বংশ এবং () কররানী রাজবংশ `|| ~

() এর মধ্যে বাংলা সালতানাতের সূচনাকারী ইলিয়াস শাহী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ্ ছিলেন একজন পার্শিয়ান, আরও নির্দিষ্ট করে বললে তিনি ছিলেন সিস্তানী। সিস্তানীরা হলো ইরানে বসবাসকারী একটি স্বতন্ত্র সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী, ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে যাদের বাস।

সিস্তানীরা ইউরেশিয়ার শক জাতির বংশধর, সিস্তানীরা সুপ্রাচীনকাল থেকে ছিলো যোদ্ধা জাতি।

সুলতান ইলিয়াস শাহ্ ছিলেন একজন পার্শিয়ান ( সিস্তানী) বংশোদ্ভুত ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর মাতৃভাষা ছিলো পার্শিয়ান সিস্তানী (ফার্সী ভাষার সিস্তানি উপভাষা)

সুতরাং যেহেতু সুলতান ইলিয়াস শাহ পার্শিয়ান ছিলেন, তাই তার প্রতিষ্ঠিত ইলিয়াস শাহী বংশ এথনিক্যালি পার্শিয়ান (সিস্তানি)

আর ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতানরা সকলেই ধর্মান্তরিত বাঙালি নেটিভ বিয়ে করতেন। ইলিয়াস শাহর স্ত্রী সুলতানা ফুলওয়ারা বেগম (ফুলমতী বেগম) ছিলেন বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে, ইসলাম গ্রহণের আগে তাঁর নাম ছিলো- পুষ্পবতী ভট্টাচার্য। তিনি সুলতান সিকান্দার শাহর আম্মা এবং ইলিয়াস শাহর সংগ্রামময় সাফল্যমণ্ডিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের অংশীদার

ইলিয়াস শাহের সম্রাজ্ঞী সুলতানা ফুলওয়ারা বেগম থেকে শুরু করে সকল ইলিয়াস শাহী সম্রাজ্ঞীই ছিলেন বাঙ্গালী নেটিভ। ইলিয়াস শাহী বংশের রীতি ছিলো নেটিভ বিয়ে করা। ২য় সুলতান সিকান্দার শাহ থেকে আরম্ভ করে জালালউদ্দিন ফতেহ শাহ অবধি ইলিয়াস শাহর সব বংশধর ছিলেন বাঙ্গালী নেটিভ মায়ের সন্তান। আর যেহেতু তারা নেটিভ বাঙালি মায়ের সন্তান, তাই তাদের মাতৃভাষা (মায়ের ভাষা) অবশ্যই বাংলা!

ইলিয়াস শাহ এক অসাধারণ রীতির প্রচলন করেন। ইলিয়াস শাহী সুলতানেরা সবাই বাঙালি বিয়ে করতেন। রাজপরিবারের সদস্যরা নেটিভ বিয়ে করায় রাজপরিবারের দেখাদেখি বহিরাগত অভিজাত মুসলিম আমির-ওমরাহ, সমরনায়ক, সৈনিক মন্ত্রীগণও বাঙালি বিয়ে করা শুরু করেন বাংলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ফলে দলে দলে বাংলার অজস্র মানুষ ইসলামের সাম্যের বাণী গ্রহণ করে মুসলিম হতে থাকে। আর এভাবেই বাংলায় ইসলামের ব্যাপক বিস্তার ঘটে এবং, বহিরাগত মুসলিমরা ধীরে ধীরে বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার সাথে মিশে একাকার হয়ে যান। এভাবেই বহিরাগত মুসলিমরা বাংলা জনজাতির সাথে মিশে যাওয়া শুরু করেন, তারা পরিণত হন বাঙ্গালীতে

তাই যেহেতু সিকান্দার শাহ থেকে শুরু করে সব সুলতানের মা- ছিলেন নেটিভ বাঙালি, তাই ইলিয়াস শাহী বংশ ছিলো- "সিস্তানী বাঙালির মিশ্রিত ধারা"

() রাজা গণেশের পরিবার বা কানস শাহী বংশ বায়োলজিক্যালি নেটিভ বাঙালিই ছিলো- সবারই জানা।

গণেশের পুত্র সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মাদ শাহর রাজত্বকালে বাংলায় সবচেয়ে বেশি ইসলামের বিস্তার ঘটেছিলো। এটি প্রায় সবারই জানা যে, রাজা গণেশের পরিবার জাতিগতভাবে বাঙ্গালিই। গণেশ ছিলো বারেন্দ্রী ব্রাহ্মণ, দিনাজপুরের জমিদার। সে ইলিয়াস শাহী সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগে ক্ষমতার দখল নিয়ে মুসলিমদের উপর অত্যাচার করা শুরু করে দিয়েছিলো। আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজকুমার যদু ইসলাম গ্রহণ করেন পিতা ছোটভাইকে হত্যা করে ইসলামি সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন

() হাবশীরা ছিলো আবিসিনিয়ান বা ইথিওপিয়ান। তাদেরকে বারবাক শাহর আমলে পঙ্গপালের মত নিয়ে আসা হয়েছিলো সেনাবাহিনী, প্রশাসনে নিযুক্তির জন্য। এরা একসময় ইলিয়াস শাহী বংশকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয় ছয় বছর চরম দুঃশাসন চালায়

উল্লেখ্য, হাবশিদের সাথে বাঙালির কোনো মিশ্রণ ঘটেনি। কারণ, হাবশি দাসদের পাশাপাশি অনেক হাবশী দাসীকেও আনা হয়েছিলো। ক্রীতদাসদের সাথে আবিসিনিয় দাসীদের- বৈবাহিক সম্পর্ক হয়েছিলো। কোনো বাঙালিকে তারা বিবাহ করেনি কখনো এবং হাবশিদের উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করার পর সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ তাদেরকে বাংলা থেকে চিরতরে বহিষ্কার করেছিলেন

() হোসেন শাহী বংশ এথনিক্যালি বাঙালি নেটিভই ছিলো

বুকাননের মতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সন্তান

যৌবনে গৌড়ের আধিকারিক সুবুদ্ধি রায়ের কর্মচারী ছিলেন তিনি

অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয় যে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ আরব ছিলেন। ধারণা করার কারণ তাঁর নামের পূর্বে 'সৈয়দ' (সৈয়দ হোসেন) তাই বলা হয়ে থাকে অনেকক্ষেত্রে যে, তিনি নাকি মক্কার শরিফের সন্তান - রাসুল (সা.) এর বংশধর। রাসুল (সা.) এর বংশধরের নামের পূর্বে সৈয়দ/সায়্যিদ ব্যবহারের রীতি এসেছে শিয়াদের থেকে।

কিন্তু হোসেন শাহ ছিলেন সুন্নি। তাই রমেশ্চন্দ্র সাহার এই "সৈয়দ তত্ত্ব' গ্রহণযোগ্য নয়। আরবিতে সৈয়দ অর্থ জনাব, হোসেন শাহ উত্তরবঙ্গের নেটিভ সৈয়দ পরিবারের ছিলেন।

এছাড়া তিনি গৌড়ের সুবুদ্ধি রায়ের অধীনে কাজ করেছেন যৌবনে। একজন শরিফের সন্তান বাংলায় এসে নিম্নপদে তাও অমুসলিমের অধীনে কাজ করবেন- এটি অনেকটাই ভ্রান্ত ধারণা

হোসেন শাহ তাঁর উস্তাদ চাঁদ কাজীর কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন বলে শক্ত মত রয়েছে।

এই সকল কিছু

বিবেচনায় প্রমাণিত হয় যে, তিনি নেটিভ বাঙালি ছিলেন, হোসেন শাহী রাজবংশ নেটিভ। এছাড়া হোসেন শাহী বংশও ইলিয়াস শাহী বংশের মতোই বংশানুক্রমে বাঙালি নেটিভই বিবাহ করতেন। তাঁর প্রমাণ হিসেবে অনেক পুঁথিতে গ্রাম সম্পর্কে চৈতন্যকে হোসেন শাহর শ্যালক বলা হয়েছে।

হোসেন শাহ নিজে নেটিভ বিবাহ করেছিলেন। তাঁর সম্রাজ্ঞী নেটিভ ছিলেন...এছাড়া নুসরত শাহ নেটিভ ছাড়াও দিল্লীর সুলতান ইব্রাহিম লোদীর কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন।

() মুহাম্মাদ শাহী কররানী বংশ দুইটাই পাঠান। মুহাম্মাদ শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ খান শূর কররানী বংশের প্রতিষ্ঠাতা তাজ খান কররানী

দাউদ শাহ কররানীর পতনের পর তাঁর পুত্র শাহজাদা হাসান পরিবারবর্গ সিলেটে আশ্রয় গ্রহণ করেন। শাহজাদা হাসানের পুত্র দ্বিতীয় বায়েজিদ কররানী সিলেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে ভাটিরাজ ঈসা খাঁর অধীনে মুগল প্রতিহতকরণে যোগ দেন। পরবর্তীতে বারো ভূঁইয়াদের পতনের পরও বাংলায় আসা আফগানরা বাংলাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন এবং নেটিভ বিবাহ করে বাস করতে করতে বাংলার সাথে মিশে যান।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে বাংলা সালতানাতের কোনো সুলতানই তুর্কী ছিলেন না, একজনও না। ইলিয়াস শাহী বংশ সিস্তানি বাঙালির মিশ্রিত ধারা, গণেশের পরিবার বাঙালি, হোসেন শাহী বংশ বাঙালি, এবং মুহাম্মাদ শাহী কররানী বংশ পাঠান

তাই যারা বলে থাকেন বাংলা সালতানাত তুর্কীদের শাসন, কথাটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত

তাহলে তুর্কী কারা ছিলেন? তুর্কী ছিলেন বখতিয়ার খলজী গৌড়ে নিযুক্ত দিল্লীর সুলতানের গভর্নররা। তারা কোনো সুলতান ছিলেন না, বখতিয়ার খলজি খলজিরা কোনো সুলতান ছিলেন না,তিনি ছিলেন কুতুব উদ্দিন আইবেকের গভর্নর। দিল্লী সালতানাতের অধীনস্থ বাংলার গভর্নররা লখনৌতির বলবানী শাসকেরা ছিলেন তুর্কী (১২০৪-১৩৩৮) ,, তারা বাংলা সালতানাতের কেউ ছিলো না।

বাংলা সালতানাত প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী বাংলার শাসকেরা ছিলেন তুর্কী, তখন বাংলা সালতানাত ছিল না,, ছিল দিল্লীর প্রদেশ ( ১২০৪-১২৮৭, ১৩২২-১৩৩৮) এবং বলবানী সুলতানদের শাসন (১২৮৭-১৩২২)

বাংলা সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয় ১৩৫২ সালে ইলইয়াস শাহ কর্তৃক পুরো বাংলা জয়ের মাধ্যমে।

বাঙ্গালা সাম্রাজ্যের সুলতানরা কেউই তুর্কী ছিলেন না, ছিলেন পার্শিয়ান, বাঙালি পাঠান এবং তারা এথনিক্যালি যাই হয়ে থাকেন না কেন, বাঙালি জনজাতির সাথে মিশে তারা বাঙালিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন কালক্রমে। আর জেনে রাখা ভালো-

ইলিয়াস শাহ থেকে শুরু করে বাংলার সুলতানেরা সবাই নিজেকে পরিচয় দিতেন "বাঙ্গালী" নামে। শুধু সুলতানেরাই নয়, বাংলা সালতানাতের সব অভিজাত কর্মকর্তারাই নিজেদের পরিচয় দিতেন "বাঙ্গালি" নামে, সে তারা আরব, তুর্কি,পাঠান, বালুচ, ইরানি, তাজিক যাই হয়ে থাকুক না কেনো- বহির্বিশ্বে তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিতেন 'বাঙ্গালী' নামে। ইরানি বংশোদ্ভুত ইলিয়াস শাহ্ নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন "শাহ--বাঙ্গালিয়ান" (বাঙালির সম্রাট) নামে। যিনি বাংলার তিনিই বাঙালি- তিনি এথনিক্যালি আরব না তুর্কি না অন্যকিছু সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। তিনি আরব বা তিনি পাঠান, বাংলার অধিবাসী যিনি তার নাগরিক পরিচয় তিনি বাঙ্গালী। আর এভাবেই শুরু হয় বাংলার মানুষের জাতিগত স্বতন্ত্র পরিচয় বা বাঙ্গালি পরিচয়ের

বাংলার সুলতানেরা নিজেকে পরিচয় দিতেন "শাহ--বাঙ্গালিয়ান" নামে এবং বাংলা সালতানাতের সৈন্যরা দিল্লীসহ সারাবিশ্বে পরিচিত হয় "পাইক--বাঙ্গালাহ" হিসেবে। বাঙালি নামে যে আলাদা একটা রাজনৈতিক শক্তি আছে, তা ১৩৫২ সালের আগে ছিলোইনা, বাঙ্গালী জাতিপরিচয়ের স্রষ্টা সুলতান ইলিয়াস শাহ গাজী (রহঃ)

শায়খ নূর কুতুব উল আলম ছিলেন শাহী বাংলা সাম্রাজ্যের প্রধান ইসলামিক স্কলার। বিশ্বে তিনি পরিচিত ছিলেন "শেখ নূর বাঙ্গালী" নামে [যদিও তিনি ছিলেন এথনিক্যালি আরব]

বাংলা নামে যে আলদা কোনো জাতি আছে তার স্রষ্টাই হয়েছে বাংলা সালতানাতের মাধ্যমে। তার আগে পৃথিবী বাংলাকে জাতিপরিচয়ের ভিত্তিতে চিনতোইনা। উল্লেখ্য, এর আগে কখনো এই অঞ্চলের মানুষ নিজেদের বাঙালি পরিচয় দিতেন না, না দিতেন পরাক্রমশালী সুশাসক পাল সম্রাটেরা, না দিত দক্ষিণ ভারত থেকে আগত ---দা- শত শত শূদ্র বৌদ্ধের হত্যাকারী সেনরাজারা, না দিতো ধর্মান্ধ শশাঙ্ক,না দিতো দিল্লীর তুর্কি গভর্নররা (১২০৪-১৩৩৮)

মুঘল আমলে বাংলার সুবাদার অভিজাতরা নিজেদের হিন্দুস্তানী বলে দিতেন- বাঙ্গালি নামে তারাও পরিচয় দিতেন না নিজেকে। মুঘল বাদশাহ অফিসাররাও নিজেদের পরিচয় দিতেন হিন্দুস্তানী নামে। এভাবে 'হিন্দুস্তানী' পরিচয় নির্মাণে যেমন মুঘলরা ভূমিকা রেখেছিলো,

তেমনি বাঙ্গালি পরিচয় নির্মাণে ভূমিকা রেখেছিলেন কেবলমাত্র শাহী বাঙ্গালার সুলতানেরা

বাংলা সালতানাত তাই বিশ্বে পরিচিত হয় বাঙ্গালি সাম্রাজ্য নামে এবং বাংলার সুলতানকে সারাবিশ্ব চিনতো বাঙালির সুলতান নামে, বাঙালির বাদশাহ নামে, সে তিনি হোক নেটিভ বা হোক ইরানি বা হোক পাঠান..

They were Bengali not because they were born in Bengal but because Bengal was born in them...

এই বাংলাভূমিকে তাঁরাই করেছিলেন পরাশক্তি - করেছিলেন "দারুল ইসলাম", তাই আজ সারা ভারত হিন্দু অধ্যুষিত হয়েও আমাদের বাংলা আজ মুসলিম অধ্যুষিত। আলহামদুলিল্লাহ!

 

উৎস:

) তারিখ--মুবারাক শাহী

) তারিখ--দাউদি

) আইন--আকবরী

) রিয়ায উস সালাতিন

) তারিখ--ফিরিশতা

) "ভারতজনের ইতিহাস" - শ্রীবিনয় ঘোষ

) চৈতন্যপুরাণ

) মধ্যযুগে বাংলার শাসক- আসকার ইবনে শাইখ

----------------------®-------------------------------------------

Read More

Author: Rajit Tahmid Jeet

Historical General 06-August-2022 by east is rising

'লর্ড মেকলের' বাঙালি (মূলত বাঙালি হিন্দু) সম্পর্কে বিশ্লেষণ

"বাঙ্গালীদের শারীরিক গঠন মেয়েলি ভঙ্গুর বলা চলে এরা বাষ্পস্নানে অভ্যস্থ নির্জনতা প্রিয় দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অশক্ত, চলাফেরা নিস্তেজ নির্জীব যুগের পর যুগ তারা বিদেশী শাসকদের দ্বারা পদদলিত হয়েছে ক্ষীণ দেহ বলে এরা সাহস রাখে না, স্বাতন্ত্র্যবোধ এদের নেই এবং এরা কখনো সত্যবাদী হয় না এদের মন দেহ অভিন্ন এরা পুরুষোচিত প্রতিরোধে অপারগ, দুর্বল দেহের জন্য অসহায়বোধ করে কিন্তু এদের নমনীয়তা চাতুর্য প্রশংসা নিন্দা উভয়ই প্রাপ্য বস্তুত ভিন্ন জলবায়ুর লোকেরা এদের যেমন ভক্তি করে, তেমনি ঘৃণা করে একটা দূর্বল জাতির আত্মরক্ষার্থে যেসব কৌশল প্রয়োজনে অবলম্বন করতে হয় তার সবগুলি এদের জানা আছে জুভেনালের সময় আওনীয়দের  কিংবা মধ্যযুগে ইহুদিদেরও এত কৌশল জানা ছিলো না মহিষের কাছে সিং-এর যে মূল্য, বাঘের কাছে থাবার যে গুরুত্ব, মৌমাছির যেমন হুল, পুরনো গ্রীক কবিতা অনুসারে নারীর জন্য সৌন্দর্য যা, বাঙালির কাছে প্রতারনা সেরকম মূল্যবান এরা লম্বা- লম্বা প্রতিজ্ঞা করে, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার সুন্দর অজুহাত দেখায়, প্রতারনা, মিথ্যা হলফ, জালিয়াতি এসব তারা আত্মরক্ষার্থে কিংবা অন্যের ক্ষতি করার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না গাঙ্গেয় নিম্নাঞ্চলের লোকদের স্বভাবই এরকম বঙ্গে কয়েক মিলিয়ন বাঙালি বাস করে অথচ এদের একজনও কোম্পানির সেনা বিভাগে নাম লেখায়নি কিন্তু সুদের ব্যবসা, পোদ্দারি এবং মোক্তারিতে প্রতিযোগিতায় কোন জাতি এদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না আবার বাঙ্গালীরা নমনীয় চরিত্রের হলেও এদের মতো নির্দয় অদম্য শত্রু অন্য কোন জাতির মধ্যে দেখা যায় না এরা মানুষের প্রতি করুণাশীল হতে জানে না স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ক্লান্তিহীনভাবে লেগে থাকতে জানে এবং বিপদের আশঙ্কা দেখা না দিলে ক্ষান্ত হয় না"

এরকম আরও গুন বচন পড়তে চাইলে আগ্রহীরা দেখতে পারেন-

Memories of the life of Warren Hastings, first Governor-General of Bengal By Lord Macle, London: 1841.

লেখক মনে করে মেকলে সাহেব ঠিকই বলেছেন মূলত বাঙালি হিন্দু সম্পর্কে। বাঙালি মুসলমানদের ধরলে চরিত্র অনেকটাই আলাদা হবে যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে মিলেও যাবে। কিন্তু লেখক মনে করে বাঙালি হিন্দুদের যে ভাল গুণগুলো মেকলে তুলে ধরেছে যেমন ব্যবসা করার ক্ষমতা বা কোন বিষয় বিপদ না থাকলে লেগে থাকার ক্ষমতা তা উনবিংশ শতকের মধ্যভাগের বাঙালি হিন্দুদের জন্যেই প্রযোজ্য। উনবিংশ শতকের শেষভাগের,  বিংশ শতাব্দীর, এবং বিশেষ করে বর্তমান সময়ের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে  ব্যবসা করার ক্ষমতা বা কোন বিষয় লেগে থাকার ক্ষমতা একেবারেই নেই। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি হিন্দু নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন ছিল এবং গায়ের জোড় ও সাহসের কমতি চাতুর্য দিয়ে ও ধৈর্য দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করত।

লেখক মনে করে বঙ্কিম চন্দ্রের লেখনীর সময় থেকে মানে ১৮৬৬ সাল থেকে বাঙালি হিন্দু নিজেদের দুর্বলতাকে রাজপুত ও মারাঠা সাহসিকতার গল্প (অধিকাংশেই যা ছিল মিথ্যা) দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছে। এভাবেই বাঙালি হিন্দু রাজপুত ও মারাঠাদের (যারা অতীতে বাঙালি হিন্দুদের লুট করতে আসত এবং শত্রু বলে অভিহিত হত) নিজেদের আরাধ্য বানিয়েছে এবং হিন্দু জাতিয়তা ও ভারতীয় জাতিয়তার দিকে গাঁ ভাসিয়েছে। গিতা পড়ে বম্ব বেঁধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে লড়াই করতে গেছে। আসলে মনে মনে নিজেকে হীন মনে করে সেই হীনতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে গেছে। সাম্রাজ্যের সাথে লড়ে স্বাধীন রাষ্ট্র বানাবার অর্থ কি তা বাঙালি হিন্দু বোঝেনি আর তাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যখন শেষ হল বাঙালি হিন্দুরা তখন উদ্বাস্তু হল আর হিন্দিভাষীদের গোলামে পরিণত হল। 

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical Hindu 06-August-2022 by east is rising