বাঙালী হিন্দুর পতনের কারণ 5

গত পর্বে পরিলক্ষিত হয়েছিল যে বাঙালী হিন্দু আদতে একটি গোলাম জাতি। এই পর্বে এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা করব।

বাঙালী হিন্দুর অফিসিয়াল ইতিহাস শুরু হয় ঊনবিংশ শতকে। এটি বাঙালী নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। ঊনবিংশ শতকের কতগুলো অতিসাধারণ ব্যাক্তিকে নিয়ে বাঙালী হিন্দু রীতিমত ধর্মীয় কাল্ট বানিয়ে ফেলেছে এবং তাদের নিয়ে কিছু শুনলেই একদম খড়গহস্ত হয়ে ওঠে (যদিও প্রকৃত শত্রু দেখিলে আবার গর্তে ঢোকে)। এই সময়েই নাকী ‘নবজাগরণ’ ও বাঙালী হিন্দুর গব্বের সময়। যদিও 1870 পর্যন্ত কিছু বাঙালী পুঁজিপতির বিকাশ হয়েছিল তবে তা 1870 এরপরে থেকে পিছু হঠতে শুরু করে। আর সব থেকে বড় কথা এইসময়ে বাঙালী হিন্দু ছিল ঔপনিবেশিক শাসনে পরাধীন। নিতান্ত আহাম্মক জাতি না হলে ঔপনিবেশিক পরাধীনতার সময়কে ভালো বলে কোন মুখ্খে। অথচ বাঙালী হিন্দুর ন্যারেটিভটাই হল এমন, আগে আমাদের কোন অস্তিত্ব ছিলনা, শুধু সতীদাহ আর বাল্যবিবাহ হত, নারীরা খুব অত্যাচারিত হত, আমরা পড়াশুনা করতে জানতামনা ইত্যাদি ইত্যাদি। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ এসে আমাদের উদ্ধার করে দিয়েছেন। আদতে ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক শাসন পরিচালনার জন্যে প্রচুর বাবু-কেরানীর দরকার ছিল। সেটি তৈরী করতেই ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যাবস্থা প্রচার করা হয়েছিল। আর মোগলদের হাতে বাংলার সার্বভৌমত্ব চলে যাবার পরে অনেক অবক্ষয় ঘটেছিল বাংলার, তাই সেগুলির প্রভাব ব্রিটিশ আগমনের সময়েও ছিল। সতীদাহরোধ ও বিধবাবিবাহ চালুর খুব সহজ কারণ দিয়ে দেওয়া যেত জন্মহার বাড়িয়ে ডেমোগ্রাফি শক্তিশালী করার। কিন্তু সেটা না করে হল উল্টো, যেহেতু বাঙালীর মস্তিষ্কে যুক্তিবুদ্ধির বিকাশ হয়নি এবং মূলত আবেগে চলেতাই তার নারী পুজাই শেষ কথা বলল। এবং সে তার নারী পুজাকেই তত্ব বানিয়ে নারীবাদী হয়ে উঠল যার প্রভাবে ধীরে ধীরে ডেমোগ্রাফিকালি দূর্বল হতে শুরু করল। এছাড়াও যেহেতু ঊনবিংশ শতক থেকেই বাঙালীর ভূমিকা ছিল মূলত বাধ্য চাকর হিসাবে, ফলে গোলামিও বাঙালীর মজ্জাতে ঢুকে গেল। এছাডাও বাঙালী স্বভাবতই নিশ্চিত জীবন চায় এবং স্থিতাবস্থা চায়। ফলত পরাধীনতায় সুরক্ষিত থাকাকেই তারা বেছে নিল। এইভাবে বাঙালী ধীরে ধীরে মেরুদণ্ড খুইয়ে নতমস্তক ক্রীতদাসে পরিণতহল। সমসাময়িক বাঙালীর তথাকথিত আইকনদের রচনাতেও বাঙালীর গোলাম হওয়াকেই মোক্ষ বলেছেন। ‘সুবোধবালক’ হওয়া থেকে ‘ভারতের মহামিলনের তীর্থে’ বিলীন হওয়ার মাধ্যমে বাঙালী হিন্দু একটি আপাদমস্তক গোলাম জাতি তৈরী হল। বাংলা সাহিত্যে ও বিজাতীয়দের নায়ক ও বাঙালী শাসকদের খলনায়ক বানিয়ে হীনমন্যতা ঢুকিয়ে দেওয়া হল।

অথচ বাঙালী হিন্দু যখন রাজনৈতিক ধাক্কা খেল, দেশভাগে বিপর্যস্ত হল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিহার সবেতেই কচুকাটা হল তখন কিন্তু এই কবিতা, গদ্য, সাহিত্যের ঝুড়ি ঝুড়ি জ্ঞান তাদের বাঁচাতে আসেনি। বাঙালী হিন্দু যে শশাঙ্ক, দেবপালদের বিস্মৃত করে দিয়েছিল তার মাসুল দিতে হল।

বর্তমানেও বাঙালী হিন্দু একটি গোলাম গোষ্ঠী এবং এটাই আশা করে যে রাষ্ট্র তাদের ঢেলে ঢেলে চাকরি দেবে এবং স্থিতাবস্থা বজায় রেখে নিশ্চিন্তে মধ্যবিত্তের জীবন কাটাবে। এর ফলে ভৃত্য হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

বাঙালী হিন্দুর নেতা ও সেই হয় যে আরামে নিরাপদে বসে ফাঁকায় বুলি ঝাড়বে এবং অন্যদের বিনামূল্যে গাড্ডাতে ফেলবে। বিপদ আসলে সেই নেতাই চম্পট দেয়।

এর কারণ বাঙালি হিন্দু মেরুদণ্ডযুক্ত পুরুষকে সহ্য করতে পারেনা। ফলে ভেড়ুয়া ও ধান্দাবাজরাই দখল নেবে এবং নিজেদের ক্ষুদ্র ব্যাক্তিস্বার্থ গোছাবে।

ভারতের সকল জাতিই ইতিহাস সচেতন কেবল বাঙালী বাদে। এর ফলে বাঙালী অন্য জাতির কাছে ভ্যালিডেশন খোজে ও তাদের সাথে একাত্ম হতে চায়। কিন্তু ছিন্নমূল চাকরদেরকে পাত্তা দেবে।

যে নিজেকে সম্মান করে না, যার মেরুদণ্ড সোজা নয়, যে টিকে থাকার জন্যে পরনির্ভর, যে সর্বদাই অপরকে তুষ্ট করাকে মোক্ষ ভাবে তার কপালে তো ভোগান্তি আছেই।

Read More

Author: Purandhar Khilji

Historical Hindu 19-August-2022 by east is rising