পুরুষবাদী আন্দোলন ক্রমেই দুটো ভাগে ভাগ হচ্ছেঃ এক দল ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছে। আর এক দল অতীতের দিকে তাকাচ্ছে। ভবিষ্যতবাদীরা বলছেঃ ট্রাডিসানাল অধিকার ফেরত চাইছিনা, কিন্তু ট্রাডিসানাল কর্তব্যও আর পালন করবনা। অতীতবাদীরা বলছেঃ ট্রাডিসানাল কর্তব্য পালন করছি করব এবং অধিকারগুলোও ফেরত চাই।
আসলে আদীম সমাজ ব্যবস্থা (শিকারী সংগ্রহকারী অর্থনীতি) থেকেই নারীর জীবনকে পুরুষের তুলনায় বেশি মূল্যবান ভাবা হয়েছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজেও (গবাদি পশু ও কৃষি কেন্দ্রিক অর্থনীতি) এই ধারণা থেকেই গেছে। তাই যুদ্ধ, শিকার, ইত্যাদির মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো পুরুষের কাঁধে চাপানো হয়েছে।মহামারী, পশুর আক্রমণ, পোকামকড়ের কামড়, খাদ্যের বিষ, আবহাওয়া, পরিবেশ, যুদ্ধ ইত্যাদি অনেক মৃত্যু ডেকে আনত আগের সমাজে। তাই উচ্চ জন্মহার রাখা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর যে সমাজে নারীর সংখ্যা বেশি সেই সমাজে জন্মহার হবে বেশি। তাই নারীর জীবনকে বেশি মূল্যবান ভাবাতে শিখিয়েছে ট্রাডিসানাল সমাজ ।
কিন্তু ট্রাডিসানাল সমাজ (শিকারী সংগ্রহকারী গবাদি পশু ও কৃষি কেন্দ্রিক অর্থনীতি) পুরুষের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দায়িত্ব যেমন দিয়েছিল, পুরুষকে অনেকবেশি অধিকারও দিয়েছিল। শিকারী সংগ্রহকারী সমাজে পুরুষের যৌন অধিকারকে স্বীকার করা হত। গবাদি পশু ও কৃষি কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে মানুষ অনেক কম বয়সেই উৎপাদক হয়ে ওঠে শিকারী সংগ্রহকারী অর্থনীতির তুলনায়। আর তাই আরও বেশি উচ্চ জন্মহার লাভজনক হয়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবেই নারীদের বাচ্চার জন্ম দেওয়া ও লালন করার দায়িত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বাকি বাইরের কাজ পুরুষের হাতে চলে যায়। এই ব্যবস্থা টিকে ছিল কারণ উচ্চ জন্মহার রাখতে এই সমাজ সক্ষম হয়েছিল।
শিল্প বিপ্লবের ১০০ বছর পরে উনবিংশ শতকের শেষের দিকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। একদিকে জীবন দায়ী ওষুধ আবিষ্কারের ফলে মহামারী, ক্ষরা, বন্যাজাত মৃত্যুর হার কমতে শুরু করে। আবার অন্যদিকে শিল্পোন্নত সমাজে সন্তানকে বড়ো করার খরচ অনেক বেড়ে যায়। স্কুল কলেজ পাঠিয়ে সন্তানকে রোজগারের উপযোগী করার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয় আর তাই সন্তানের রোজগেরে হতে হতে বয়স অনেক বেড়ে যায়। এই দুই-এর প্রভাবে জন্ম হার কমাতে বাধ্য হয় সমাজ কারণ বেশি সন্তান হয়ে যায় দায়।
কম সংখ্যার বাচ্চা মানুষ করতে হচ্ছিল বলে নারীর হাতে অনেকটা সময় থেকে যায়। ফলে নারী শ্রম বাজারে ঢুকতে শুরু করে। কম সন্তান দিতে হচ্ছে বলে নারী অনেক বয়স অবধি পড়াশুনা করে বিয়ে করতে পারছিল। দুনিয়া জুড়ে শিল্পোন্নয়ন যত বাড়তে থাকে এই প্রবণতা বাড়তে থাকে। নারীকে শ্রম বাজারমুখী করতে পারলে সরকার দেখল যে জন্মহারও কমছে আবার শিল্পন্নয়নের গতিও বাড়ছে। ফলে সরকার আরও বেশি নারীকে শ্রম বাজারে আনার চেষ্টা করতে থাকে। ফল দাঁড়ায় নারী রোজগেরে হোয়ে ওঠে। রোজগেরে নারী স্বামীর কথা মেনে চলতে বাধ্য নয়। সরকারও আইন তৈরি করে ট্রাডিসানাল অধিকারগুলো পুরুষের কাছ থেকে কেড়ে নিতে থাকে। আইন ও নারীর রোজগার শেষমেশ পুরুষের কাছে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটাকে অলাভজনক করে ফেলে।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে নারীবাদী অন্দোলনের বুনিয়াদ হল এই বিষয়টা যে শিল্পোন্নত সমাজে উচ্চ জন্মহার রাখাটা অলাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ জন্মহার অলাভজনক হয়ে গেছে দুটো কারণেঃ এক, বাচ্চা মানুষ করার খরচ বেড়ে যাওয়া আর দুই, জীবন দায়ী ওষুধ আবিষ্কৃত হওয়া। অতীতবাদী পুরুষাধিকার বন্ধুরা যখন বলেন যে ট্রাডিসানাল অধিকার ফেরত চাই তারা কিন্তু উচ্চ জন্মহারের পক্ষেই সওয়াল করেন। এবং ঘুরিয়ে নারীর জীবনের মূল্য পুরুষের জীবনের চেয়ে বেশি তা মেনে নেন। যেহেতু তারা অর্থনীতি ও প্রযুক্তির পথ অতীত মুখী করতে পারবেননা, তাই তারা উচ্চ জন্মহার বিশিষ্ট সমাজও ফিরে পাবেনা। কেবল ট্রাডিসানাল কর্তব্যগুলোই পালন করে যেতে হবে। আর সংসারের ঘেরাটোপে গুমড়ে মরবে পুরুষ।
অন্যদিকে ভবিষ্যতবাদীরা অর্থনীতি ও প্রযুক্তির গতিকে স্বীকার করছে এবং নারীবাদের যেটা বুনিয়াদ (অর্থাৎ শিল্পোন্নত সমাজে উচ্চ জন্মহার রাখা অলাভজনক হয়ে যাওয়া) সেটাকেই ব্যবহার করে বলছে যে নারীর জীবনকে আর পুরুষের জীবনের থেকে বেশি মূল্যবান ভাবার কারণ নেই কারণ উচ্চ জন্মহারের প্রয়োজন নেই। পুরুষ তাই আর ট্রাডিসানাল কর্তব্যগুলো পালন করবেনা। অর্থাৎ ভবিষ্যতবাদী পুরুষাধিকার বন্ধুরা নারীবাদকে তারই অস্ত্র শেষ করে দিচ্ছে। পৌরুষের (বলা ভাল ট্রাডিসানাল কর্তব্য-এর) দায়মুক্ত পুরুষ তাই অনায়াসে বলবে "পুরুষও ধর্ষিত হতে পারে কোন নারী ধরষিকার হাতে", "পুরুষও মার খেতে পারে কোন নারীর হাতে", "পুরুষের দেশ ধর্ম জাতি রক্ষা করার একার দায় নেই", "পুরুষের নারীকেও রক্ষা করার দায় নেই", "পুরুষও ক্রেতা হতে পারে", "পুরুষও আয়নার সামনে সময় কাটাতে পারে" এবং "যদি মন চায়, হ্যা, যদি মন চায়, পুরুষ যে কোন ঝুঁকিও নিতে পারে"।
সময় সামনের দিকেই এগোবে, পেছনের দিকে যাবেনা।
Read More
Author: Saikat Bhattacharya
Social
Sex War
20-August-2022
by east is rising