ভূমিকা
একজন মানুষের উপার্জনকারী হতে হতে যেহেতু এখন ২৫ বছর হয়ে যায় এবং জীবনদায়ী ঔষধ আবিষ্কারের ফলে মৃত্যুহার অনেক কমে গেছে তাই উচ্চ জন্মহারের প্রয়োজন সমাজের কাছে ফুরিয়েছে। তাই নারীদেরও আর বাচ্চার জন্ম ও লালন পালনে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়না। তাই নারীও উপার্জন করার মানসিকতা নিয়েই পড়াশুনা করছে এবং শ্রম বাজারে ঢুকছে। নারী অর্থনৈতিকভাবে যত স্বাধীন হয়েছে স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। আইনও সেইভাবে তৈরি হয়েছে যেখানে নারীর অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে আরে পুরুষের বিশেষ করে স্বামী বা প্রেমিক হিসেবে পুরনো অধিকারগুলো খর্ব করা হয়েছে।
রাষ্ট্র ও নারীবাদ
উচ্চ আয় বৃদ্ধির হার আর নীম্ন জন্মহার একসঙ্গে থাকলে জন প্রতি আয় বৃদ্ধি পায় দ্রুত এবং উচ্চ আয়কে করভুক্ত করে রাষ্ট্রও তার আয় ও শক্তিকে বাড়াতে সক্ষম হয়। তাই পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রই (কিছু ধর্মীয় প্রভাবাধীন দেশ ও অঞ্চল বাদে) নারীর অধিকার বাড়াতে আর পুরুষের পুরনো অধিকারগুলো কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগে যায়। অর্থাৎ রাষ্ট্র নারীর পুরনো অধিকারগুলো বজায় রেখে (যেমন স্বামী বা প্রেমিক ব্যতিরেকে অন্য পুরুষ কোন নারীর সাথে যৌনতায় লীপ্ত হতে চাইলে তা অন্যায়) নারীকে নতুন অধিকার দিতে থাকে (স্বামী বা প্রেমিকও নারীর অসম্মতিতে যৌনতায় লীপ্ত হতে চাইলে তা অন্যায়)। অন্যদিকে পুরুষের পুরনো অধিকারগুলো তো কেড়ে নেওয়া হয়ই (স্ত্রীর ওপর শারীরিক বা অর্থনৈতিক জোড় খাটানো যাবেনা) আবার নতুন অনেক বিধিনিষেধ আসতে থাকে (নারী মনে করলেই কোন পুরুষের নামে যৌন নির্যাতনের কেস করতে পারে)। আবার পুরুষের ঘাড় থেকে পুরনো দায়িত্বগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলছেনা।
নীম্ন জন্মহার সঙ্কট রোধে বিভিন্ন দেশের চিন্তা
নীম্ন জন্মহার ক্রমেই বয়স্কদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে কর্মক্ষম অল্পবয়সীদের তুলনায় যা অর্থনীতির আয় বৃদ্ধি ভয়ঙ্করভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে রাষ্ট্রগুলো পুনরায় নারীকে শ্রম বাজার থেকে সরিয়ে সংসারে ফেরত পাঠাবার চেষ্টা করতে পারে। যেমন রাশিয়াতে আলেকজাণ্ডার ডাগিন-এর সমাজতত্ত্ব মেনে সংসার পুনর্গঠনে রুশ রাষ্ট্র মন দিয়েছে। চীনও বিবাহ বিছেদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং রাষ্ট্র কার্যক্রমে সংসার পুনর্গঠনকে গুরুত্ত্ব দেওয়া হয়েছে। চীন রাশিয়া বাচ্চাদের ক্রেশের সংখ্যা বাড়িয়ে ও বেশি সন্তান হলে দম্পতিদের অর্থদান করে জন্মহার বাড়াবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ব এবং খ্রীশ্চান ধর্ম প্রভাবাধীন দেশগুলোও চীন-রাশিয়ার মতো করেই ভাবছে। পশ্চীম সংসার পুনর্গঠনে বিশ্বাস করেনা তবে ক্রেশের সংখ্যা বাড়াচ্ছে এবং নারীদের অর্থদান করছে অধিক অন্তান নিলে। পশ্চীম তৃতীয় বিশ্ব থেকে কর্মক্ষম অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়িয়েও এই সমস্যার মোকাবিলা করছে।
ভারতের সঙ্কট
ভারতের মতো বহু তৃতীয় বিশ্বের দেশ অবশ্য এখনো নীম্ন জন্মহারের সঙ্কট নিয়ে অবগত নয়। যুগের তুলনায় পিছিয়ে থাকাই এর মূল কারণ। আরেকটা কারণ হল এই সমস্ত দেশে পশ্চীমী প্রভাব যা এই সমস্ত দেশের উচ্চ শিক্ষিতদের শিখিয়েছে নারীর অধিকার বৃদ্ধি যে কোন মূল্যে করে চলাই প্রগতিশীলতা। বস্তুগত অবস্থান কোন বিচার্য বিষয়ই না। জন্মহার বা অর্থনীতি কোন কিছু বোঝার দরকার নেই, আইনের ভুল প্রয়োগ হচ্ছে কি না ভাবার প্রয়োজন নেই, স্রেফ পশ্চীমের শেখানো বুলি বলে যাওয়াই ধর্ম। তাই ভারতের মতো দেশগুলো পশ্চিমকে নকল করে চলবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। চীন রাশিয়া বা ধর্ম প্রভাবাধীন দেশগুলোর মতো সংসার পুনর্গঠনে মন দেবেনা ভারতের মতো দেশগুলো। এছাড়াও চীন রাশিয়ার সংসার পুনর্গঠন এখনো গবেষণার স্তরে আছে। এর থেকে ফল পাওয়া যাবে কি না তা এখনো অজানা।
ভারতে পুরুষাধিকার আন্দোলন
তাই ভারতে পুরুষাধিকার আন্দোলনকারীদের সংসার পুনর্গঠনে কোন আইন আসবে এমন আশা না করাই ভাল। বরং তাদের পুরনো কর্তব্যগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথাই ভাবতে হবে। যারা আইন বদলাতে চাইছেন তারা লড়াই জারি রাখুন কিন্তু তাদেরও স্বীকার করতে হবে পুরনো দায়িত্ব ছুঁড়ে ফেলাতে এই মুহূর্তে কোন অসুবিধে নেই। পুরনো কর্তব্য ছুঁড়ে ফেলার চরমপন্থী রূপ হল বিয়ে বা নারীর সাথে প্রেম এড়িয়ে চলা। আর মধ্যপন্থী রূপ হল বিয়ে করলেও রোজগেরে স্ত্রীকে সংসারে অর্থদান করতে বাধ্য করা এবং গৃহিণী স্ত্রীকে গৃহকর্ম ঠিকমতো করতে বাধ্য করা। মনে রাখা দরকার যে আইন মধ্যপন্থী পুরুষদের পক্ষে থাকবেনা। তাই ব্যক্তিগত স্তরে স্ত্রীর সাথে সেরকম আদর্শগত সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত বুদ্ধি ব্যবহার করতে পারলেই কেবল এটা সম্ভব। এই মধ্যপন্থী আদর্শ প্রচারে অনেক পুরুষাধিকার আন্দোলনকারীই এগিয়ে আসতে পারে। এই চিন্তা চীন-রাশিয়ার সংসার পুনর্গঠন তত্ত্বকেও সাহায্য ও সমৃদ্ধ করতে পারে। চরমপন্থী আদর্শের প্রচার চালানো জরুরি। পালক পিতা (foster father)-এর আদর্শও সমাজে প্রচার করা দরকার যা বিয়ে বা প্রেমের সন্তানলাভে প্রয়োজনীয়তা শেষ করে দেবে। যৌন পরিষেবাকে আইনী ও সামাজিক বৈধতা দেওয়ার আন্দোলনও দরকার। দরকার যৌন রোবট ও যান্ত্রিক গর্ভের প্রচার এবং এই সমস্ত নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ।
উপসংহার
পুরুষাধিকার আন্দোলনকারীদের বুঝতে হবে যে সমাজে অনেক ধরণের মানুষ আছে। সবার পক্ষেই বিয়ে/প্রেম বয়কট করা সম্ভব নয়। আবার অনেকের পক্ষেই বিয়ে/প্রেম বয়কট সম্ভব। দুজনেরই দুজনকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং দুজনেরই দুজনকে সাহায্য করতে হবে। কেউ এই ভেবে বিয়ে করতে পারে যে সে তার স্ত্রীকে আইনের বাইরে গিয়ে নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলতে বাধ্য করতে পারবে। কেউ ভাবতেই পারে আইনের বাইরে গিয়ে স্ত্রীকে কোন পথে চলতে বাধ্য করা অসম্ভব। কিন্তু দুটো চিন্তাই আছে আর থাকবে, এইটুকু দুজনকেই বুঝতে হবে। কেউ সন্তানলাভকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতেই পারে আবার কেউ সন্তানকে কেবল ঝামেলা ভাবতে পারে। কিন্তু দুটো ভাবানাই যে স্বাভাবিক তা দুজনকেই মেনে নিতে হবে। আমরা ভবিষ্যৎ কি তা জানিনা কিন্তু অবশ্যই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস করতে পারি। পশ্চিম বনাম চীন রাশিয়ার দ্বন্দ্ব কোথায় গিয়ে শেষ হবে আমার অজানা, কবে যৌন রোবট ও যান্ত্রিক গর্ভ সাধারণ মানুষের আয়ত্বে আসবে তা আমরা জানিনা, কত দ্রুত "পুরুষের জন্য পণ্য" বাজার দখল করবে আমরা জানিনা, কত সংখ্যক পুরুষ বিয়ে/প্রেম করবে আর কতজন তা এড়াবে তাও অজানা। তাই বিভিন্ন ধারায় বয়ে যেতে থাকুক পুরুষাধিকার অন্দোলন নিজেদের মধ্যে মিত্রতা বজায় রেখে।
Author: Saikat Bhattacharya
Social Sex War 10-September-2022 by east is rising