দ্বিজাতি তত্ত্বের মূলে হিন্দুত্ববাদ, মুসলিম লীগ নয়

দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্য স্যেকুলারপন্থীরা জিন্নাহ আর মুসলিম লীগকে দায়ী করে। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগেই হিন্দু জাতির ধারণার উদ্ভব হয়। হিন্দু শব্দটা জাতি শব্দের সমার্থক হিসেবেও ব্যবহৃত হতে থাকে। এই হিন্দুত্বের ধারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন সাভারকার। তিনি “হিন্দু” শব্দকে ডিফাইন করেন এভাবে “He who considers India as both his Fatherland and Holyland” এর মানে “ভারতকে পবিত্রভুমি এবং পিতৃভূমি হিসেবে যারা বিবেচনা করে তারাই হিন্দু জাতি”। Koenraad তার Decolonizing the Hindu mind বইয়ে বলেছেন এই সংজ্ঞা সকল আব্রাহামিক ধর্ম যেমন মুসলমান, খ্রিষ্টান, ইহুদীদের হিন্দু জাতিসত্বার বাইরে ঠেলে দিল। ধরে নেয়া হল তাঁরা বিদেশী। এই হিন্দু জাতি গঠনের বাইরে যাদের রাখা হল তাদেরকে তো সাভারকারই আলাদা আরেকটা জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। হিন্দু জাতির ধারণা প্রতিষ্ঠা করার ফলেই ভারতে তার পাল্টা একাধিক জাতির ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার অনুকুল পরিবেশ গড়ে উঠলো।

এই হিন্দুত্বের জাতিকল্পনাই এক মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্ম দিয়েছে। হিন্দু ধর্ম আর জাতি যদি অভিন্ন হয় তাহলে নেপাল বলে তো কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই থাকতে পারেনা। নেপাল, যা হিন্দুপ্রধান একটা দেশ যা ভারত নয় সে তো কোনভাবেই নিজেকে হিন্দু পরিচয় দেয়ার জন্য ভারতকে পিতৃভূমি আর হোলি ল্যান্ড ভাবতে পারেনা। ভারতের সাথে হিন্দু প্রধান নেপালের সমস্যার একটা ঐতিহাসিক সুত্র এখানেও থাকতে পারে। তবে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অন্য সম্প্রদায়ের সাথে মিলে রাষ্ট্র গঠন এই হিন্দুত্বের সংজ্ঞার জন্য মানসিকভাবে কার্যত খুব জটিল হয়ে যায়। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে তাঁদের পলিটিক্যাল এজেন্ট হিসেবে ভারত রাষ্ট্র একটা সম্ভাবনা হয়ে বিরাজ করতে থাকে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মুল বক্তব্য ছিলো; পৃথিবীতে হিন্দু জাতি বলে বহু প্রাচীন গরিমায় দীপ্ত এক মহান স্বতন্ত্র জাতি আছে। হিন্দু জাতির ধর্ম স্বতন্ত্র, ভাষাও স্বতন্ত্র। হিন্দু জাতি সম্পর্কিত এই ভাবনাই হিন্দুত্বের জন্ম দেয়, যার পলিটিক্যাল এক্সপ্রেশন ছিলো দ্বিজাতি তত্ত্ব, আর সেটাই হয়ে দাড়ায় ভারতভাগের কারণ। এই হিন্দু জাতীয়তাবাদই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ব্যাকবোন।

এদিকে আমরা যদি দেখি মুসলমানদের আলীগড় আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আহমেদ এমনকি ১৮৮৩ সালেও বলেছেন ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে ভারতবর্ষে বসবাসরত সকলেই “একটি জাতি”। এমনকি এর অনেক পরেও ছিলো জিন্নার মুখে ঐক্যের সুর। ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে এক সর্বদলীয় সন্মেলনে বলেন, We are all sons of this land. We have to live together…. Belive me, there is no progress for India until the Musolmans and Hindus are united. আমরা সকলেই এই মাটির সন্তান। আমাদের একসাথেই বাঁচতে হবে…। বিশ্বাস করুন ভারতের কোন অগ্রগতি হবেনা যদি হিন্দু আর মুসলমানেরা ঐক্যবদ্ধ না হয়।

১৯৩৭ সালে আহমেদাবাদে হিন্দু মহাসভার ১৯ তম অধিবেশনে সাভারকার বলেন, “There are two antagonistic nations living side by side in India”, India cannot be assumed today to be a unitarian and homogenous nation. On the contrary, there are two nations in the main: the Hindus and the Muslims, in India…. several infantile politicians commit the serious mistake in supposing that India is already welded into a harmonious nation, or that it could be welded thus for the mere wish to do so”

“দুটি পরস্পরবিরোধী জাতি ভারতে পাশাপাশি বাস করে এসেছে, ভারতকে কখনোই একশিলা সমসত্ব জাতি হিসেবে বিবেচনা করা যাবেনা। বরং উল্টোভাবে ভারতে প্রধানত দুইটি জাতি; হিন্দু এবং মুসলমান…। কিছু বালকসুলভ রাজনীতিবিদেরা এই মারাত্মক ভ্রান্ত ধারণা পোষন করে যে, ভারত এরমধ্যেই একটি সুসমসত্ব একটি জাতি হিসেবে তৈরি হয়েছে বা তৈরি করা যেতে পারে।”

এই সভার প্রায় সতেরো বছের আগেই এসেন্সিয়ালস অফ হিন্দুত্ব নামে সাভারকারের একটা পুস্তকে দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়। এবং হিন্দুদেরকে একটি জাতি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এই সভার তিন বছর পরে লাহোর অধিবেশনে অল ইণ্ডিয়া মুসলিম লীগের সভার জিন্নাহও সাভারকার উত্থাপিত হিন্দু মহাসভার দ্বিজাতি তত্ত্ব গ্রহণ করে।

ঘটনার পরম্পরা বিবেচনা করলে পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে দ্বিতীয় অবদান ভারতীয় মুসলমানদের। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে দেন সাভারকার তার হিন্দু জাতির তত্ত্ব দিয়ে।

নেহেরু তার অটোবায়োগ্রাফিতেও লিখেছেন “Socially speaking, the revival of Indian Nationalism in 1907 was definitely reactionary” সামাজিকভাবে বলতে গেলে ১৯০৭ সালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান অবশ্যই প্রতিক্রিয়াশীল ছিলো।

হিন্দু মহাসভার হিন্দুত্বের চর্চাই মুসলিম লীগের প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে। রমেশচন্দ্র মজুমদার যিনি কোনভাবেই মুসলমান প্রেমী ছিলেন না, তিনিও স্ট্রাগল ফর ফ্রীডম বইয়ে লিখেছেন, The outburst of Hindu Mohasova served to strengthen the power and influence of Muslim League. “হিন্দু মহসভার বিস্ফোরণই মুসলিম লীগের ক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিলো।”

দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক জিন্নাহ নয়; হিন্দুত্ববাদী সাভারকার। অথচ কি আশ্চর্য ভারত এবং বাংলাদেশের স্যেকুলারেরা এই দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্ম দেয়ার জন্য জিন্নাহ আর মুসলিম লীগকেই তুলোধোনা করে সবসময়।

Read More

Author: Pinaki Bhattacharya

Historical Hindu 12-September-2022 by east is rising

কেন রক্ষণশীলতার উপর ভরসা করা যাবেনা?

কারণ রাষ্ট্রের নাম ভারত। তার মধ্যে আবার একটি জাতি বাঙালী তাও এখানে সার্বিকভাবে বলব। ইহাদের ট্রাডিশনটি ঠিক কীরকম? ইহাদের সমাজ কারা পরিচালনা করে? উত্তরটা এখানেই আছে। 
ভারতীয় সমাজ কোন ethical code ভিত্তিক সমাজ নয়। ওটার বিকাশ এখানে হয়নি। তাই এখানে ন্যায়, অন্যায়বোধ বলে কিছু নেই, যে যার ধান্দাতে চলে, জোর যার মুলুক তার নীতি প্রযোজ্য, সুযোগ পেলেই অপরের সর্বনাশ করতে এরা পিছপা হয়না। এরা প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ককেই একমাত্র মান্যতা দেয়। তাছাড়া মূল জীবনদর্শন হল 'আমি, আমার পরিবার, বাকি সব বেকার'। ফলে কোন সামাজিক-অর্থনৈতিক গ্রিড বলে কিছু নেই যেটা সাপোর্ট সিস্টেম হিসাবে কাজ করবে। ফলত ট্রাডিশন জিনিসটা বিপদে কাজে আসেনা। ভারতীয়রা বাইডিফল্ট নারীচাটা হয় এবং বয়স্কদের মাথায় তোলে। কারণ কর্মরত পুরুষদের এখানে গবাদিপশু ব্যতীত কিছু মনে করা হয়না। ভারতীয়দের মধ্যে ইনসেন্টিভ ধারণার বিকাশ হয়নি, ফলত এরা বলপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে কার্যসিদ্ধি করে। এছাড়াও পুরুষের যৌনতাকে  এরা দানবরূপে দেখে এবং যেকোন সেক্সকেই এরা মাভুনের সম্মানহানি রূপে দেখে। তাই এরা যেকোন যৌনসম্পর্ককেই ধর্ষণ হিসাবে দেখতে পারে। 
এই হল টিপিকাল ভারতীয় সমাজ। এখানে তো আবার ধর্মের মধ্যেই নারীপূজা এবং অবলা নারীকে উদ্ধার করা রয়েছে। সুতরাং ইহারা বিশ্বাসগতভাবেও নারীবাদীই হবে। 
এবার দেখা যাক ভারতীয় সমাজ চালায় কারা। ভারতীয় সমাজ পরিচালিত হয় বেনিয়া, বাবু মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্রমালিক, ভূস্বামী এইসকল শ্রেণীর দ্বারা। নারীবাদ না থাকলে এদের ক্ষমতার ভিত নড়ে যাবে। ভারতের শাসকরাও মাগনা শাসন করতে চায় ফলত প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষ তৈরী হবার সম্ভাবনাকেই শেষ করতে চায়। এছাড়াও এরা কর্মদক্ষ পুরুষদের চূড়ান্ত শোষণ করে ফায়দা তুলতে চায় ফলত নারীবাদের পৃষ্ঠপোষকতাই করবে এরা। 

ফলত দেখা যাচ্ছে যে ভারতের সমাজের যে brief overview পাচ্ছি তাতে ইহারা নারীবাদের পক্ষেই অবস্থান করবে। ফলত রক্ষণশীলতার উপর ভরসা করলে পুরুষাধিকার আন্দোলনের কোন ফলপ্রাপ্তি হবেনা। বরঞ্চ চরম আধুনিকতাবাদী হয়ে প্রতিষ্ঠিত সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধাচারণ করলেই পুরুষাধিকারের সাফল্য আসবে।

Read More

Author: Purandhar Khilji

Social Sex War 12-September-2022 by east is rising

ভবিষ্যতবাদী MRA বুঝতে হবে যে পরম্পরাবাদী MRAদের জায়গা অবশ্যই থাকবে

রক্ষণশীল ও উদারবাদী আজকের দুনিয়ায় অচল। উদারবাদীরা আজকাল নিজেদের জাগ্রত (woke) বলছে কারণ পুরনো উদারবাদী তত্ত্ব দিয়ে আর আজ চলছেনা। রক্ষণশীলদেরও অনেকে নিজেদের নয়া রক্ষণশীল বলছে কারণ পুরনো রক্ষণশীল তত্ত্ব দিয়ে আজকের দুনিয়াকে বোঝা যাচ্ছেনা।

আমি পুরুষাধিকারের পক্ষে থাকা বন্ধুদের বিশ্বাস ও ধারণাকে দুভাগে ভাগ করিঃ
পরম্পরাবাদী ও ভবিষ্যতবাদী
আমরা যেন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করি।

পরম্পরাবাদীরা চাইছে পরম্পরা মেনে পুরুষের পক্ষে থাকা অধিকারগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। আর তাই পরম্পরা মেনে পুরুষের ওপর আরপিত দায়িত্বও পুরুষকে পালন করতে হবে। পরম্পরা মেনে নারীর অধিকার ও দায়িত্বও নির্দিষ্ট করা থাকবে। এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া পুরুষত্ব ও নারীত্ব ধারণাগুলোকেও অটুট রাখতে হবে।তাই তারা কেউ সমকামীতাকে ও লীঙ্গ পরিবর্তনকে মান্যতা দেবেনা।

মনে রাখতে হবে যে পরম্পরাবাদীদের কাছে চ্যলেঞ্জ হল পুরুষের পক্ষে থাকা পুরনো আইনগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। এর জন্য তাদের রাজনীতি করতে হবে। হয় ভেতর থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হবে নয়তো যুদ্ধ করে বর্তমান রাষ্ট্রকে হটিয়ে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।যারা রাষ্ট্রীয় সংঘাত ও রাজনীতি এড়াতে চাইছেন তারা পরম্পরাবাদকে ধরে রাখতে শক্তিশালী সামাজিক নিয়মকে ব্যবহার করতে পারেন।

ভবিষ্যতবাদীরা ভাবেন যে বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরনো অধিকার ফিরে পাওয়া যাবেনা। আইন, প্রযুক্তি, অর্থনীতি সবকিছুই পুরনো পুরুষের পক্ষের আইনগুলোর বিপক্ষে। তাই পুরনো অধিকার ফেরত না চেয়ে বরং পুরনো দায়িত্বগুলো কাধ থেকে ঝেড়ে ফেলা যাক। সমাজের মধ্যে যে ধারণা এখনো বদ্ধমূল আছে যে পুরুষ মানেই কর্তব্য সেই ধারণা থেকে সমাজকে ও পুরুষকে বের করে আনাই প্রধান কাজ। ভবিষ্যতবাদীদের রাজনীতি করার দরকার নেই। কারণ তারা সমাজ বদল না করে, নিজেদেরই বদলে নিতে চান।

এই ভাবধারার মধ্যে একদল বিবাহ/প্রেম বিমুখ আর এক দল বিয়ে/প্রেমে রাজি হলেও চায় স্ত্রী/প্রেমিকাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কর্মরতা স্ত্রী সংসারে সমান খরচ করবে যতটা স্বামী করবে আর গৃহিণী স্ত্রীকে সংসারের কাজ ভাল করে করতে হবে।

ভবিষ্যতবাদীদের অনেকেই মনে করেন পুরুষ যখন পুরনো অধিকার পাচ্ছেনা আর দায়িত্ব পালন করছেনা তখন পুরনো পুরুষত্ব ও নারীত্ব ধারণাগুলোকেও স্বীকার করার কোন কারণ নেই। আবার অনেক ভবিষ্যতবাদী ভাবেন যে পুরুষ পুরনো দায়িত্ব পালন না করলেও পুরনো পুরুষত্ব ও নারীত্ব ধারণাগুলোকে টিকিয়ে রাখা জরুরি। তাই এদের কেউ সমকামীতাকে ও লীঙ্গ পরিবর্তনকে মান্যতা দেবে আর কেউ মান্যতা দেবেনা।

পরম্পরাবাদীদের অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে হবে আর ভবিষ্যতবাদিরা অনেক বেশি ব্যক্তি স্বাধীনতা মেনে চলবে। তাই ভবিষ্যতবাদীদের মধ্যে বিভিন্নতা বেশি হবে। ভবিষ্যতবাদীদের নিজেদের মধ্যেকার বিভিন্নতাকে এবং পরম্পরাবাদীদের অস্তিত্বকে মান্যতা দিতেই হবে। যদি অর্থনীতি প্রযুক্তি এগিয়ে চলে পরম্পরাবাদীরা এমনিই দুর্বল হয়ে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু একথা মানতেই হবে যে আমাদের মতো দেশে যেখানে প্রযুক্তি পিছিয়ে অর্থনীতি দুর্বল, যেখানে চাকরী পাওয়া কঠিন এবং সোসাল ওয়েলফেয়ার নেই সেখানে আইন সবসময় শেষ কথা বলেনা আর সামাজিক নিয়মের গুরুত্ব আছে। তাই পরম্পরাবাদীদের পুরোপুরি অস্বীকার করার জায়গা নেই। তার ওপর আগামী ৫-১৫ বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাপ্রবণতা বেশি থাকবে। তাই পরম্পরাবাদীদের জায়গা অবশ্যই থাকবে।

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Social Sex War 12-September-2022 by east is rising