নারীর সবচেয়ে বড় শক্তি সে আয়নায় নিজেকে দেখেই সময় কাটিয়ে দিতে পারে। নারীর কোন সামাজিক ভ্যালিডেশনের দরকার পড়েনা। আগে ছিল নারীকে "মা" হতেই হবে নয়তো সমাজের নিন্দা শুনতে হবে। এখন সমাজ মনে করেনা যে "মা" হওয়া ততোটা গুরুত্বপূর্ণ আর তাই "মা" না হলে বা হতে না পারলেও সমাজের নিন্দা শুনতে হবেনা। একটু যদি গুঞ্জন ওঠেও তাকে প্রগতিশীল বকুনি দিয়ে চুপ করানো খুব সোজা।
অন্যদিকে পুরুষকে দেখুন। সন্তান না দিয়ে বউ/প্রেমিকা কুকুর/বিড়াল পুষলেও পুরুষের নাকি একটা বউ/প্রেমিকা লাগবেই নিজেকে পুরুষ বলে প্রমাণ করতে। নারীকে জয় করে আনার পুরনো তত্ত্ব পুরুষের ঘাড় থেকে আর নামছেইনা। আগে পুরুষকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হত নারীর বাবা/পরিবার/গোত্র-কে। অনেক সন্তান দেওয়ার দরকার বলে অল্প বয়সেই পরিবার থেকে নারীর বিয়ে হয়ে যেত আগে। নারী ওই অল্প বয়সে কোন পুরুষ ভাল কোন পুরুষ মন্দ তা বোঝার মতো অবস্থায় ছিলনা। তাই নারীর পছন্দসই হওয়ার দায় পুরুষের ছিলনা। সমাজের চাহিদা মতো জাতি, রোজগার আর সুস্বাস্থ্য অনুযায়ী নারীর বাবা/পরিবার/গোত্র-এর সাথে চুক্তি করে নিত পুরুষ। স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের মধ্যে ভাল রোজগার করে ভাল নারী পাওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠেছে।
কিন্তু সময় বদলেছে। নারীর ওপর আর অনেক সন্তান দেওয়ার চাপ নেই, নারী তাই অনেক বয়স অবধি পড়াশুনো পরছে, চাকরী করছে, তারপরে বিয়ে করছে। সন্তান ধারণে উপযোগী হওয়া আর বিয়ের করার মাঝে অনেকটা সময় নারী অতিবাহিত করছে ভাল পুরুষ বেছে নিতে। একদিকে পুরুষের মধ্যে ভাল রোজগার করে ভাল লারী পাওয়ার পুরনো মানসিকতা লারীকে রোজগার না করেও বেঁচে থাকার সুবিধে দিচ্ছে। আবার অন্যদিকে একটা সন্তান দিলেই চলে বলে ৩০ বছর অবধি সে বিয়ে না করে ক্যারিয়ারে সময় দিতে পারছে। আগেকার দিনের অল্প বয়সী, পড়াশুনো কম জানা, রোজগার না করার নারী বাবা/পরিবারের পছন্দ মেনে নিত। আজ বয়স্কা, পড়াশুনো জানা, রোজগেরে নারীর পছন্দ আকাশছোঁয়া। আজ নারী চাইছে শুধু ভাল রোজগার নয়, ভাল দেখতে, কথা শুনে চলবে, সঙ্গ উপভোগ্য হবে এমন এক পুরুষ। ভাল দেখতে নারী উচ্চতর বিত্তের পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য ছুটে চলে। সাধারণ মানের অধিকাংশ নারীই উচ্চতর বিত্তের পুরুষ পাবেনা। তাই তারা নিজের বিত্তের পুরুষই পাবে। অতএব রোজগার একটু উনিশ বিশ খুব পার্থক্য থাকেনা। গুরুত্বপূর্ণ হয় পুরুষের রূপ, পুরুষের তোয়াজ করার মানসিকতা এবং সঙ্গ উপভোগ্য কিনা সেটা।
একদিকে পুরুষের ওপর ভাল রোজগার করে নারীকে জেতার পুরনো চাপ আর অন্যদিকে নারীর কাছে আকর্ষণীয় হওয়ার চাপ। ভাল মধ্যবিত্ত রোজগার করেও পুরুষ পেতে পারে সাধারণ নারী কারণ ভাল মানের নারী উচ্চবিত্ত পুরুষকে পাওয়ার প্রতিযোগীতায় চলে গেছে। মধ্যবিত্ত সাধারণ পুরুষকে এবার সাধারণ মানের নারীর মন পেতে নিজের রূপ বাড়াতে হবে, তোয়াজ করা শিখতে হবে, সঙ্গকে উপভোগ্য করে তুলতে হবে। এর ওপর বিয়ের পরেও সেই নারী রান্না করে খাওয়াবেনা, রজগার করলেও সংসারে টাকা দেবেনা। অর্থাৎ অনেক কষ্ট করে খুব সামান্য কিছুই আজ পাবে একজন মধ্যবিত্ত পুরুষ। স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের বিয়ের প্রতি আকর্ষণ কমছে দুনিয়া জুড়ে।
পুরুষাধিকার আন্দোলনকে যা যা করতে হবে তা হলঃ
১। রোমান্স বিরোধী মনন তৈরি করতে হবে পুরুষের মধ্যে সিনেমা, সিরিস, ছোট সিনেমা, ছোট গল্পের মধ্য দিয়ে।
২। একা জীবনকে উপভোগ করা শেখাতে হবে পুরুষদের।
৩। শুধু পুরুষের জন্য পণ্যে ভরিয়ে দিতে হবে বাজার।
৪। বিয়ে করার লাভ ক্ষতির পরিমাপ করতে শেখাতে পুরুষদের।
৫। আইন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে পুরুষদের।
৬। যুগ যুগ ধরে আদীম সমাজ থেকে নারী কি কি সুবিধে পেয়ে আসছে সন্তান ধারণ করে বলে এবং আজ সন্তান ধারণের গুরুত্ব কমেছে বলে কি কি সুবিধে পাওয়া নারীর অনুচিত তার সম্পর্কে পুরুষদের শেখানো দরকার।
৭। মেটাভারসে যৌনতা ও রোবটের সাথে যৌনতা পুরুষদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা দরকার।
৮। পুরুষের পণ্যে, মেটাভারসে যৌনতায়, যৌন রোবটে বিপুল বিনিয়োগ দরকার আর তাই পুরুষকে এই সকল বিষয়ে ও কম্পানীতে বিনিয়োগ করতে এবং গবেষণা করতে উৎসাহিত করা দরকার।
৯। দেশ জাতি ধর্ম- এই সকল বায়বীয় বিষয় থেকে পুরুষকে দূরে ঠেলা দরকার। এই সকল বায়বীয় বিষয় রক্ষার দায় যে পুরুষের নয় তা প্রচার করা দরকার।
১০। ফস্টার ফাদার হওয়াকে সকল পুরুষের জন্য আইনী স্বীকৃতি দিতে হবে।
১১। উচ্চ মানের নারীদের ডিম্বাণু বিক্রির প্রক্রিয়াকে আইনী ও সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে। মনে রাখা দরকার নারী পূর্ণ বয়স্কা হলে তার কাছে গচ্ছিত থাকে ৩০০-৪০০ ডিম্বাণু যার অধিকাংশই নষ্ট হয়।
১২। নারী পুরুষের সম্পর্ককে যতটা পারা যায় চুক্তিভিত্তিক এবং ব্যবসামুখী করে তুলতে হবে।
এভাবে চলুক ১৫-২০ বছর। স্বয়ংক্রিয় গর্ভ বা সন্তান ধারণে সক্ষম রোবট আবিস্কার হলে তো ভাল। না হলে স্বল্প জন্মহারের তীব্রতা বাধ্য করবে রাষ্ট্র এবং পুঁজি উভয়কেই নারী স্বাধীনতায় লাগাম টানতে। নারী স্বাধীনতায় লাগাম টানবে কিনা তা রাষ্ট্রের চিন্তা। কিন্তু নিজের স্বাধীনতায় লাগাম পরিয়ে রাখব কিনা তা পুরুষের চিন্তা। পুরুষকে আগে নিজেকে স্বাধীন হতে হবে পুরনো সমাজের লাগাম থেকে যেমন - বেশি রোজগার করে ভাল লারী পাওয়া, লারী পাওয়াকে যোগ্যতা ভাবা, জাতি দেশ ধর্ম বাঁচানোর চিন্তা করা।