অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে সারা বিশ্বে রাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। বৈদ্যুতিক তারের ইনসুলেশন , সাইকেল ও গাড়ির টায়ার যুদ্ধাস্ত্র ও ভারী যন্ত্রপাতি তৈরি করতে রাবারের প্রয়োজন হতো। কয়েক টুকরা রাবারের অভাবে অনেক সময় ভারী যন্ত্রপাতির উৎপাদন আটকে যেত।
সিন্থেটিক রাবার আবিষ্কারের আগে বৈশ্বিক চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ হতো আমাজন জঙ্গলের রাবার গাছ থেকে। একক পরাশক্তি হিসেবে বৃটেনের রাবারের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। রাবারের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ব্রিটেন সিদ্ধান্ত নেয় রাবার উৎপাদনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন স্থাপনের।
এই উদ্দেশ্যের লন্ডনের রয়েল বোটানিকাল ইনস্টিটিউট 1876 সালে হেনরী উইকহ্যাম নামে এক ব্রিটিশ পর্যটককে দায়িত্ব দিয়ে আমাজনে পাঠায়। নৌকা নিয়ে আমাজনের গভীরে ঢোকার পর তিনি পায়ে হেঁটে যেখানে সবচেয়ে ভালো রাবার গাছ জন্মায় সেখানে পৌঁছান।
তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের অর্থের লোভ দেখিয়ে হাতে বোনা ঝুড়িতে রাবার বীজ সংগ্রহ করতে থাকেন। সমুদ্রে দীর্ঘযাত্রার ধাক্কা এড়াতে ঝুড়িগুলোকে কয়েক স্তরের কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া হয়।
এভাবে প্রায় 70,000 বীজ নিয়ে তিনি বৃটেনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ভিন্ন নামে একটি ট্রেডিং লাইসেন্স ব্যবহার করে ও বীজগুলিকে একাডেমিক স্যাম্পল ঘোষণা দিয়ে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে সক্ষম হন।
দীর্ঘযাত্রার ধকল পেরিয়ে লন্ডনে পৌঁছানোর পর মাত্র 2,700 বীজ অঙ্কুরোদগমের উপযোগী পাওয়া যায়। একটা পরিকল্পিত প্লান্টেশন শুরু করার জন্য এই পরিমাণ বীজ যথেষ্ঠ ছিল। চারাগুলিকে পরে বিভিন্ন ব্রিটিশ কলোনি যেমন মালয়েশিয়া , শ্রীলংকা , বাটাভিয়া , ট্রপিক্যাল আফ্রিকায় পাঠানো হয়।
এশিয়ার পরিবেশে চারাগুলি বেশ ভালোভাবেই বেড়ে ওঠে এবং আমাজনের মূল গাছ থেকে বেশি পরিমাণ রাবার দিতে থাকে। এই রাবার বাজারে আসার পর ধীরে ধীরে আমাজনের রাবার বাজার দখল করে ফেলে।
জঙ্গল থেকে রাবার সংগ্রহ করা ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাজনের রাবার কেন্দ্রিক শহরগুলি আস্তে আস্তে মৃত শহরে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে রাবার বাজারের উপর বৃটেনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।
এই কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ রানী ভিক্টোরিয়া হেনরী উইকহ্যামকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। এই রোমাঞ্চকর ঘটনাটি নিয়ে জো জ্যাকসন নামে একজন লেখক পরে ''The Thief at the End of the World: Rubber, Power, and the Seeds of Empire '' একটি বিখ্যাত বই লেখেন।
বিশ্বে বায়ো পাইরেসির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে চীন থেকে পরিকল্পিতভাবে রেশম পোকা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিটিশরা চীনের একচেটিয়া চায়ের বাজার দখল করার জন্য চীন থেকে চায়ের গাছ জোগাড় করে ভারতবর্ষে পরীক্ষা করেছিল।
বাউন্টিতে বিদ্রোহ বইটি পড়লে বা মুভি দেখে থাকলে জানবেন যে ব্রিটিশরা পলিনেশিয়া থেকে রুটি ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে চাষাবাদের জন্য।