পৃথিবীতে আজ বাঙালির সংখ্যা কত?
প্রায় ৩০-৩৫ কোটি তো হবেই।
হুন চীনাদের পরে ২য় বৃহত্তম জাতিস্বত্বা!
কতজন বাঙালি জানে এটা?
উপমহাদেশের ২০-২৫ টি মেজর জাতির মাঝে একমাত্র বাঙালিরই একটি রাষ্ট্র রয়েছে। কতজন খেয়াল করেছেন এটা?
আজকে আপনাদের একটা গল্প বলবো। ঠিক গল্প না।
নিজের আত্মপরিচয়ের বাস্তব গল্প।
আপনাদের কারো মনে কী কোনো দিন একটা প্রশ্ন উঠেছে যেঃ জাতি হিসেবে আমাদের বাঙালি বলা হয় কেনো? এর শুরুটা কীভাবে?
-চলুন সেটাই বলা যাক।
চলে যাই সুদূর অতীতে, যখন ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটেছে কয়েকশ বছর হয়ে গেছে। উত্তর ভারত দিয়ে প্রবেশ করে ওরা একে একে সব অঞ্চল জয় করে নিচ্ছিল। ফলত, দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী ক্রমশ ভারতের দক্ষিণে সরে যেতে লাগলো। [এই বিষয়টা খেয়াল করলে আজও উপলব্ধি করতে পারবেন। দক্ষিণ ভারতের মানুষগুলো, উত্তর ভারতীয়দের তুলনায় কিছুটা ডার্ক হয়।] সেসময় ভারতের পূর্ব অঞ্চল জয়ের প্রচেষ্টাও তারা চালাচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই পারছিল না।
সেজন্য ওরা নানা উপায়ে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছিল।
যেমনঃ কোনো আর্য সন্তান এই ভূমিতে পা রাখলে য়ার জাত যেতো। ওরা আমাদের বলতো 'বয়াংশি' অর্থাৎ এই অঞ্চলের(বঙ্গ) মানুষজনের পা পাখির মত সরু এবং এরা পাখির মত কিচিরমিচির করে।
এই 'বয়াংশি' শব্দটা সর্বপ্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যক নামক গ্রন্থে এবং শব্দটা থেকে ক্রমে ক্রমে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি।- ১টি মতাবাদ অনুযায়ী।
২য় মতবাদ অনুযায়ী, বং নামক একটি ট্রাইবের থেকে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি।
তবে, বলে রাখি 'বঙ্গ' বলতে আজ আপনি যা বুঝেন অতীতে তেমন ছিল না। নিচের ম্যাপটা দেখুন। তখন বঙ্গ বলতে সেটুকুই বুঝাত।
বাংলার প্রথম সার্বভৌম নৃপতি শসাঙ্ক বাংলার ক্ষমতায় আরোহন করার আগে এই বাংলা অনেকগুলো জনপদে বিভক্ত ছিল। যেমনঃ বঙ্গ, সমতট(কুমিল্লা সমতটে ছিল। আর সমতটের রাজধানী ছিল দেবীদ্বারের বরকামতা), হরিকেল, চন্দ্রদ্বীপ, গৌড়, রাঢ়.........
(মহাভারতে আমরা পুন্ড্ররাজ ও বঙ্গরাজের উপস্থিতি দেখতে পাই)।
এই ছোটো ছোটো অঞ্চলগুলোকে এক করে শসাঙ্ক নামকরণ করেন 'গৌড়'। যার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।
এবং তিনি 'গৌড়াধিপতি' উপাধি নিয়েছিলে। তাঁর পর মৎসন্যায়,পাল যুগ, সেন যুগ এবং ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমল অব্ধি সমগ্র বাংলায় গৌড় নামটি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। এই বিশাল সময় গৌড় নামটি রাষ্ট্রীয় ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার দরুন আধুনিক যুগ অব্ধি ছিল। উদাহরণঃ রাজা রামমোহন রায় বাংলায় রচিত বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থের নাম দিয়েছিলেন 'গৌড়ীয় ব্যাকরণ'। অর্থাৎ তিনি বাংলা ভাষাকে গৌড়ীয় ভাষা বলেছেন।
ফফখরুদ্দীন মোবারক শাহের পর কী এমন ঘটলো যে আমরা গৌড়ীয়, সমতটী, রাঢ়ী, হরিকেলী না হয়ে বাঙালি হলাম?
এর নেপথ্যে রয়েছেন সুলতান শমস-উদ্দিন ইলিয়াস শাহ। তিনিই প্রথম বাংলার সবগুলো জনপদ কে এক করে নাম রাখেন 'বাঙ্গালাহ' এবং মানুষজন 'বাঙ্গালী' হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর আমলে দিল্লির সেনাকে বলা হতো মুসলমান সেনা, আর তাঁর সেনা কে বলা হতো বাঙ্গালী সেনা। তিনি নিজেও পরিচিত ছিলেন 'শাহী বাঙ্গালী' নামে।
এই কারণেই তিনি বাঙালির ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ পঠন এবং চর্চায় তিনি সবসময়ই আলোচিত হয়ে থাকেন।
-
সূত্রঃ
১) বাঙ্গালার ইতিহাস
-রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
২) বাংলাদেশের ইতিহাস
- রমেশচন্দ্র মজুমদার
লিখেছেন - জাহেদুল হক হমি