মাহিষ্য জাতি এবং বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

পশ্চিম বঙ্গের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী চাষী কৈবর্ত ।সংখ্যায় প্রায় 34%-37%।ইতিহাস বলছে- -বর্ণহিন্দুদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে,ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কালে,খাঁটি শুদ্র থেকে এরা জলচল শূদ্রে উন্নীত হয় এবং চাষা চাষা গন্ধটাকে গা থেকে ঝেড়ে মুছে ছদ্মনাম মাহিষ্য ধারণ করে ।

স্বাধীনতা আন্দোলনের কালে মাহিষ্য সমাজের অগ্রগণ্য নেতা প্রখ্যাত ব্যারিস্টার দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল কলকাতার মেয়র পদে প্রায় নির্বাচিত হয়েও, বর্ণহিন্দু নেতা শরৎ বসু ও চিত্তরঞ্জন দাশের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন।মেদিনীপুর থেকে একটা ক্যাওট এসে কলকাতা বাসিকে শাসন করবে! তা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না ।ফলে পদটি সদ্য ICS ত্যাগ করে আসা সুভাষ চন্দ্র বসু প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লাভ করে ।শুদ্র হওয়ার অপরাধে বর্ণহিন্দুদের থেকে পাওয়া এই অপমানের জ্বালাটা তিনি এক ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মিটিয়ে ছিলেন ।একথা পরবর্তী কালে তাঁর ডায়েরিতে অত্যন্ত মর্মবেদনার সঙ্গে তিনি তা স্বীকার করে গিয়েছেন।

তাঁর ভুল সিদ্ধান্তটা ছিল---- বাবাসাহেব ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর তাঁর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন 'পিছিয়ে পড়া শুদ্র জাতি' হিসেবে তফশিলি বর্গে নাম লেখাতে ।কিন্তু কলকাতা মেয়র পদে নির্বাচিত না হওয়ার অপমানের বদলা হিসেবে তিনি দম্ভের সঙ্গে বলেছিলেন- -- আমার জাতি জেনারেল বর্গের মধ্যে থেকেই নিজেদের প্রতিভা ও যোগ্যতা দেখিয়ে দেবে, কোন রকম সংরক্ষণের আওতায় আসবে না ।

প্রতিভা ও যোগ্যতা যতই থাক ,জাতের নামে শোষণ বঞ্চনা, জাতের নামে নীচ-হীন প্রতিপন্ন করা, জাতের নামে অযোগ্য ঘোষণা করা, জাতের নামে বদনাম করা ,জাতের নামে একচেটিয়া ভোগ দখলের নির্লজ্জ ইতিহাসটা সেকালে বাবাসাহেবের মতো আর বোধ হয় কেউ ঠিক তেমন করে বুঝে উঠতে পারে নি।

তাই কংগ্রেস ও মি. গান্ধীর প্ররোচনায় " জল অচল শূদ্র " থেকে " জলচল শূদ্র" হয়ে এবং বাবাসাহেবের কথা মতো তফশিলি ভুক্ত না হয়ে তিনি যে ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ও স্বজাতির প্রতি অবিচার করেছিলেন, সে কথা অত্যন্ত মর্মবেদনার সঙ্গে বার বার উল্লেখ করেছেন তাঁর ডায়েরি তে।লেখাগুলি পরবর্তী কালে তাঁর ছেলে বিমলানন্দ শাসমল "স্বাধীনতার ফাঁকি " গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন ।

আসলে তিনি গান্ধী ও কংগ্রেস কে বিশ্বাস করেছিলেন ।গান্ধীবাদ তফশিলিদের মৃত্যু ফাঁদ বা গান্ধী যে দলিত বহুজন সমাজের ধোঁকা দিচ্ছে, এ কথা বাবাসাহেবের মতো করে বুঝতে তিনি অক্ষম ছিলেন ।

তবে জেনারেল বানিয়ে রেখে নিজেদের দল ভারি করে,পরবর্তী কালে বর্ণবাদিদের মেধার নামে স্বজন পোষণের নির্লজ্জতা ও মাহিষ্যদের প্রতি পদে পদে বঞ্চনা করার যন্ত্রণা, স্বজাতি দরদী সচেতন অবিসংবাদী নেতা হিসেবে তাঁর জীবনকে ক্ষত বিক্ষত করেছে, মোহভঙ্গ করেছে ।তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে,মাহিষ্যদের জেনারেল বানিয়ে রেখে নিজেদের দল ভারি করাটা একটা চালাকি ছিল ।তাদের কে বঞ্চিত করে তাদের ভাগের ভাগ খেয়ে ফেলছে বর্ণহিন্দুরাই।যারা হাজার হাজার বছর ধরে পরাজিত শুদ্র বানিয়ে তাদের শিক্ষার অধিকার কেড়েছে,ধন সঞ্চয়ের অধিকার হরণ করেছে,স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার পর্যন্ত দেয় নি।আজ নবরূপে তারাই আবার তাদের উপর শোষণ বঞ্চনার খাঁড়া নামিয়ে এনেছে।মর্মবেদনার যন্ত্রণায় তিনি শুধু কাতরেছেন কিন্তু জাতির জন্য করতে পারেন নি কিছুই ।

তবে পরবর্তী কালে 1990 সালে বিন্ধ্যেশ্বরী প্রসাদ মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিশনের সুপারিশে পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে চাষী কৈবর্তরা OBC তালিকা ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় ।কিন্তু স্বজাতি চেতনার অভাবে, নিজেদের জাত লুকিয়ে চলার হীন মানসিকতার জন্য, আর এসসি এসটি মানে নীচু জাত এই মানসিকতার বশবর্তী হয়ে তাদের ঘৃণা করার অপদস্থ করার হীন মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে তাদের সঙ্গে জোট বাঁধার মানসিকতা তৈরি না হওয়ার কারণে, একে একে ক্ষমতায় আসা দল গুলো আজও তাদের জেনারেল বানিয়ে রেখে বঞ্চিত করছে ।OBC সার্টিফিকেট দিতে চাইছে না ।তবে আশার কথা, এ ব্যাপারে মাহিষ্য বা চাষী কৈবর্তদের একাংশ সজাগ হয়েছে,OBC হওয়ার জন্য আওয়াজ তুলছে । এরা দলবদ্ধভাবে একত্রিত হলে , বর্ণহিন্দুদের গড়া দল কে ছেড়ে সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের দল বানালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হিসেবে আগামী দিনে চাষী কৈবর্তরাই হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের শাসক গোষ্ঠী, ভাগ্য বিধাতা।আর মনুবাদীদের বাড়া জাত্যাভিমান ত্যাগ করে যদি এরা অন্যান্য বহুজন দলিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক হতে পারে তো কথাই নেই।

জাগো! জাগো শুদ্র তথা OBC তথা চাষী কৈবর্ত তথা মাহিষ্য ।

স্বস্তি সরদার ভৌমিক

নন্দন ভৌমিক ।

Read More

Author: Rudra Prasad Mandal

Historical General 08-May-2023 by east is rising

নারী শক্তি

সাকিব হাসান, কলকাতা:
কাকতালীয় হলেও এটা সত্যি যে, বিশ্বজুড়ে অশ্লীলতা, নগ্নতা ও Pornography - এর ব্যবসা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় অনুঘটকের কাজটি করেছে নারী প্রজাতি। কিছু বছর আগে গ্রাম থেকে প্রলুব্ধ করে মেয়েদের শহরে এনে বিক্রি করার কথা অনেক পুরনো হয়ে গেছে। বর্তমানে রয়েছে পুরো দল। যেখানে আছে স্টুডিও, লোকেশন, ক্যামেরাম্যান, মেক আপ আর্টিস্ট এবং সমস্ত সাজসরঞ্জাম। যেখানে "নারী" নামক প্রজাতিকে বিভিন্ন কোণে এবং প্রতিটি শৈলীতে শুটিং করা হয়। তাদের রেটিং হয়, তাদের রেটিং অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাগে রাখা হয়।

সানি লিওন বা উরফি জাভেদকে বাধ্য হয়ে সব কিছুর শুটিং করতে হয়েছে এমন কথা কোথাও শোনা যায়নি। সম্প্রতি, একজন মহিলা ব্লাউজ ছাড়াই শাড়িতে ক্যামেরার সামনে তার অনুষ্ঠান করছিলেন। মানুষেরা ব্লাউজের জন্য তাকে অর্থ দান করেছিল। নারী স্বাধীনতার নামে শরীরের দুই-তিনটি অংশের প্রদর্শনীর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেও রয়েছে সফট ও সেমি নামক আলাদা আলাদা ক্লাস।

আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রতিটি শহরের নতুন আধুনিক ও নতুন ধনী নারীরা তাদের অনুকরণ করে ঘুরে বেড়ান, এমনকি তাদের শিশু কন্যাদেরও‌ সেই রকম পোশাক পরান। খোলা বাজারে এমন পোশাক পরিধিত নারীদের উপরে শুধু পুরুষদেরই নয়, নারীদেরও দৃষ্টি পড়ে। আর তারা যেন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু মুখ ফুটে কেউ বলে ফেললে উত্তর একই আসে - পুরুষেরা যেন তাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন করে। খুব অল্প বয়সী এক তরুণী উঠে এসেছে, নাম - উরফি জাভেদ। প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবে নগ্ন হয়ে নিজের নগ্নতার রেকর্ড ভাঙছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে শত শত ক্যামেরা তাকে প্রতিদিন কভার করছে। এটাই হলো নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব। যখন জ্ঞান হয়েছে, আমি ভেজ এবং নন-ভেজ কথাই শুনেছি। কিন্তু এখন ক্লিভেজ হচ্ছে ট্রেন্ড।

হাই নেক, ডিপ নেক, ব্যাকলেস, এগুলো পরে শুধু মহিলারাই ঘুরে বেড়ান, কোনও পুরুষ পরে ঘুরে বেড়ান না। অতএব, সবকিছুতে পুরুষদের দোষারোপ করা এবং তিরস্কার করার পুরোনো অভ্যাসটি পরিবর্তন করা হলে ভাল হবে। আর এই যুগ হলো জাগতিক, সাংসারিক মানুষের যুগ, যেখানে জীববিজ্ঞানের সব নিয়ম প্রযোজ্য, অতএব কাকে থামাবেন! সভ্যতার নির্মাণে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আর লেখার অবকাশ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার রিল এবং শর্ট ফিল্ম গুলো দেখলে আর Login করার ইচ্ছা হয় না। আর তারা এখন এটিকে ব্যাপকভাবে তৈরিও করছে।

Read More

Author: তাহা আলী খান

Social Sex War feminism 08-May-2023 by east is rising