শরত চন্দ্র বসু

আজ বাংলার নেতা শরৎ চন্দ্র বসুর জন্মদিন। ইনি এমন এক নেতা, যার নাম বাঙালীকে দিল্লী ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে, কিন্তু ১৯৪৭এর পরে নেহেরু তার উপর ২৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা নজরদারি করে গেছে। শুধু ১৯৪৭ এর পর থেকে বাংলা ভাগের পর যে আড়াই বছর উনি বেঁচে ছিলেন, তার মধ্যেই ১৮২৪ পাতার গোয়েন্দা রিপোর্ট শুধু ওনাকে নিয়ে! ইনি ১৯৪৭এর আগে একাধিকবার বাংলার কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসুর নিজের দাদা। এবং কুখ্যাত ফিরিঙ্গী পুলিশ কর্তা চার্লস টেগারট তার সম্বন্ধে বলেছিলেন যে তিনি "সুভাষ বসুর পিছনে আসল শক্তি"। এছাড়াও ব্রিটিশরা তাকে "ঘাসে আসল সাপ (রিয়েল স্নেক ইন দা গ্রাস)", "সরকারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিরোধী" বলে আখ্যায়িত করে। বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সহিংস পক্ষের সাথেও তার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল, দিতেন সাহায্যও। যখন বাংলা ভাগ হতে চলেছে, তখন বাংলার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের যে নেতৃবৃন্দ স্বাধীন যুক্ত বাংলার প্রস্তাব করেন, সেই প্রস্তাবকদের মধ্যে তিনি অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। ইনি বাংলা ভাগের পরেও বারে বারে বলেছেন যে বাঙালী, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী বুঝছে না, তার রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কত বড় দাসত্ব বরণ করতে হল এর ফলে। ১৯৪৯ এর জুনে মাসে তিনি দক্ষিণ কলকাতা আসনে নেহেরুর কংগ্রেসের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী বাঙালীদের যুক্ত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং সমগ্র প্রচার চালান দিল্লী কি ভাবে বাংলাকে ধ্বংস করছে, এই মর্মে। এই নির্বাচনে বাঙালী বিপুলভাবে তাকে জেতায়, নেহেরুর কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাস্ত করে। ১৯৫০-এর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা মায়ের এই মহান সন্তানের মৃত্যু হয়। কেন তাঁর পুণ্যস্মৃতিকে দিল্লী মুছে দিয়েছে, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আজকে বাংলা ও বাঙালির দরকার তার নিজেদের নেতাদের নিজেদের চোখ দিয়ে চেনার, দিল্লীর দেওয়া চশমা ফেলে দিয়ে।

১৯৪৭-এর ২০ মে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার পক্ষপাতী নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্তগুলি ছিল নিম্নরূপ:

১. বাংলা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।

২. স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের সংবিধানে যুক্ত নির্বাচন ও বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে আর সে সঙ্গে হিন্দু ও মুসলমান জনসমষ্টির সংখ্যানুপাতে আসন সংরক্ষিত থাকারও ব্যবস্থা থাকবে। কোনো প্রার্থী তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলে এবং একইভাবে প্রদত্ত অন্য সম্প্রদায়গুলির ২৫ শতাংশ ভোট পেলে তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। যদি কোনো প্রার্থী এ শর্তাবলি পূরণ না করতে পারেন তাহলে যিনি তাঁর সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন।

৩. স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের মন্ত্রিসভায় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের (তফশিলি হিন্দু ও হিন্দুসহ) সমান সংখ্যক সদস্য থাকবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী এ হিসেবের বাইরে থাকবেন। এ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলিম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হবেন একজন হিন্দু।

৪. নতুন সংবিধানের আওতায় একটি আইন পরিষদ ও একটি মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত পর্যায়ে গঠিত হওয়া সাপেক্ষে ইত্যবসরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন (তফশিলি হিন্দুসহ) ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন চাকরিতে সমান অংশের অধিকারী হবেন। আর এসব চাকরি-বাকরি করবেন বাঙালিরা।

এসব ইতিহাস। ইতিহাস বদলানো যায়না। কিন্তু ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা ও বাঙালির অধিকারের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা শরৎচন্দ্র বসু।

প্রণাম, প্রিয় নেতা।

#জাতীয়বাংলাসম্মেলন

ছবি: কেওড়াতলা মহশ্মশানে শরৎ চন্দ্র বসু স্মৃতি সৌধতে মাল্যদান।

 

 
 

 

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Historical General 07-September-2023 by east is rising