রাম মন্দির নির্মাণ বুঝিয়ে দিল এখন ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ভারতের বাম ও সংখ্যালঘু অংশ ভারতীয় সাংবিধানিক পরিকাঠামোর মধ্যে দাঁড়িয়ে আর কোনও লড়াই চালাতে পারবেনা। হয় বাম ও সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক পরিকাঠামোরই বিরুদ্ধে যেতে হবে অথবা চুপচাপ হিন্দু রাষ্ট্রকে মেনে নিতে হবে। আমার ধারণা অধিকাংশ বাম ও সংখ্যালঘু মানুষই এই হিন্দু রাষ্ট্রকে মেনে নিতে বাধ্য হবে বা ভয়ে মেনে নেওয়ার ভনিতা করতে বাধ্য হবে। কারণ সাধারণ মানুষ কোনও দিনই রাষ্ট্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়তে পারেনা বা লড়াই করার দায় নেয়না। ফলে হিন্দু রাষ্ট্র বিরোধিতা ঠিক্টহাক করতে গেলে ভারতীয় সাংবিধানিক পরিকাঠামোর বাইরে গিয়ে লড়াই করা ছাড়া আর উপায় রইলনা। এর একটা সুবিধে হল ঢপবাজ স্বার্থ লোটা হিন্দু বিরোধী অংশটা শেষ হয়ে যাবে। আর সেকুলার উদারবাদী ভারতের স্বপ্ন দেখানো যাবেনা।
রাম মন্দির নির্মাণকে প্রায় উৎসব হিসেবে মেনে নিয়েছে গ্রাম পশ্চীম বঙ্গ। কোথাও দীক্ষা গুরু নিরামিষ খাবার আদেশ দিয়েছেন রাম মন্দির নির্মাণের দিন, আবার কোথাও এক সন্যাসি গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে চারটে চাল দিয়ে বলেছে খিচুরি পায়েস করে খেতে। আর মোড়ে মোড়ে রামের মূর্তি বানিয়ে গাম চালিয়ে গেরুয়া ঝাণ্ডা তুলে নাচানাচি তো আছেই। গ্রাম পশ্চীম বঙ্গের হিন্দুরা বলছে দারুণ কারণ মুসলিমরা না কি এই সব দেখে "চুপসে" গেছে। এই "চুপসে যেতে" দেখেই সাধারণ মানুষ এবার বিজেপি-কে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবে। ২০২৪-এ বড়ো জয় নিয়ে এসে "ডিলিমিটেশন ২০২৬" করে সাংবিধানিকভাবেই হিন্দি-গুজারাতি-দের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে কারণ সংসদের দুই কক্ষের সাংসদ-দের ৫২% আসবে হিন্দি প্রদেশগুলো আর গুজারাত থেকে। দুর্ভাগ্যের বিষয় লারী পূজারী পাপাচারী জাতিটা পাশের বাড়ির লোককে "চুপসে যেতে" দেখেই আনন্দে মসগুল আসল ক্ষমতাবান অর্থাৎ গুজারাতি-হিন্দিদের হাতে সব চলে যাচ্ছে তা বোঝার ক্ষমতা এদের নেই।
ভারত রাষ্ট্র সবসময় গুজারাতি-হিন্দিদের অধিকারে থেকেছে। গুজারাতি ও রাজস্থানীদের (হিন্দিদের একটা অংশ) পুঁজি আর হিন্দিভাষিদের ভোটব্যঙ্ক সবসবয় ভারতের বাকিদের থেকে বেশি শক্তিশালী থেকে গেছে। জন্মহারে বাকিদের পিছিয়ে পড়া গুজারাতি-হিন্দিদের ক্ষমতাকে আরও স্থায়িত্ব দিয়েছে ও শক্তি যুগিয়েছে। ফলে আজ আর সমাজতান্ত্রিক বা সেকুলার সাঁঝার প্রয়োজন নেই গুজারাতি হিন্দি অক্ষের। আজ তারা খোলাখুলিভাবে নিজেদের আগ্রাষণ চালাবে। একে আটকাবার শ্রেণিবাদী, ভীমবাদী নারীবাদী বা সংখ্যালঘুদের নেই। দক্ষিণ ভারতে তামিল-তেলেগু-মালোয়ালী-কণ্ণড়-টুলু দ্রাবিড়ীয় অক্ষের কাছ থেকে গুজারাতি-হিন্দি অক্ষ একটা প্রতিরোধ অবশ্যই পাবে। শিখ, কাশ্মীরি, উত্তরপূর্বের ও মধ্য ভারতের কিছু উপজাতিও কিছুটা লড়াই দেবে।
তবে আরও দুটো জায়গা থেকে গুজারাতি-হিন্দি অক্ষ ঝামেলায় পড়বে। এক, গুজারাতি ব্যবসায়ী ও হিন্দি রাজনীতিবীদদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে মোদী পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে অমিত শাহ বনাম যোগী হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। দুই, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি। চীনের উত্থান ভারতের ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়াতে কমিয়ে ফেলেছে এবং চীন ভারতের জমিও আস্তে আস্তে গ্রাস করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আটকাতে ভারতকে বলির পাঁঠা বানাতে চাইছে। গুজারাতি-হিন্দি চরিত্র ঝুঁকি প্রবণ বা দুঃসাহসী চরিত্রের নয় আর তাই মার্কিন কথায় তারা সরাসরি চীনের সঙ্গে ঝামেলায় যেতে চায়না।চীন অন্যদিকে জানে যে ভারত-কে শেষ করে দিলেই মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল খতম। তাই চীনও ভারতের আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীন দুর্বলতাগুলো ভালভাবে বুঝে নিচ্ছে। গুজারাতি-হিন্দি অক্ষের এক ভাষ এক ধর্মের ভারত চীনের কাছে ভাবী হুমকি। নিজের পাশে একটা সমান ক্ষমতাধর দেশ কোনও দেশই চায়না। ভারত আজ সত্যি এক ঐতিহাসিক দিন দেখল।
Read More
Author: Saikat Bhattacharya
Historical
Hindu
Manuvad Brahmannwad মনুবাদ ব্রাহ্মণ্যবাদ
22-January-2024
by east is rising