চীনের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মূল কথা হোল উপযোগীতা মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করা আর মার্কিন ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির মূল কথা হোল বিনিময় মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করা।
সহজ করে বললে চীনের অর্থনীতির মূল লক্ষ্য সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক এমন উৎপাদনের পরিমাণ ও মান বাড়ানো আর মার্কিন অর্থনীতির মূল লক্ষ্য মুনাফা বাড়ানো।
বাজারকে স্বাভাবিকভাবে ক্রিয়াশীল হোতে দিলে একটা সময় মুনাফার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি বাড়তে পারেনা, আর তাই মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণির হাতে যত পুঁজি সঞ্চিত হয় তত পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদন করলে সেই উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে কেনার লোক থাকেনা।
তখন সেই উদ্বৃত্ত পুঁজি নিয়ে কি করবে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণি?
মার্কিন ধনতান্ত্রিক বিশ্বে এর সমাধান হোল উদ্বৃত্ত পুঁজি সম্পত্তি কেনাবেচায় বিনিয়োগ করা।
মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণি নিজেদের মধ্যে বাড়ি, জমি, শেয়ার, বণ্ড, আঁকা ছবি কেনা বেচা করতে থাকে। কম দামে কিনে বেশি দামে বেচে দেওয়াটাই লক্ষ্য। কখনো সম্পত্তির মূল্যের পতন হোলে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণি। তখন মার্কিন সরকার সেই ক্ষতির দায় গোটা সমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সেই মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি শ্রেণিকে বেইল আউট করতে আসে।
এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের থাকার বাড়ি, জমি, ইত্যাদির খরচ বেড়ে যায়। এছাড়াও ব্যঙ্ক ও ইন্সিওরেন্স নির্ভর হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের খরচও বেড়ে যায়।
মনে রাখা দরকার মার্কিন সমাজে একজন গড় মানুষের মোট আয়ের ৭০% চলে যায় কেবল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান-এ।
চীন সরকার ২০১৭ সালেই ঘোষণা করে যে বাড়ি বানানোর লক্ষ্য হোল বাস করা, বাড়ি বানানোর লক্ষ্য কম দামে কিনে বেশি দামে বেচা নয়।
চীন সরকার আরও ঘোষণা করে ২০২১ সালে যে জন্মহার কমে যাওয়ার একটা বড়ো কারণ শিক্ষা ও বাসস্থান কেনার খরচ বেড়ে যাওয়া।
এই দুই লক্ষ্যে আমরা দেখতে পাই যে ২০২৩ সালে চীন সরকার অনলাইন শিক্ষাদানকারী মুনাফাজনক সংস্থাগুলো তুলে দেয় এবং অনলাইন শিক্ষা দেওয়াকে অলাভজনক ব্যবসা হোতে হবে বলে আইন আনে।
এই ব্যবস্থার মূল কারণ হোল শিক্ষা যেন ব্য্যবহ্যল হয়ে না ওঠে।
এর ফলে চীনের শেয়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু চীনা সরকার মনে করে মুনাফা কমে যাওয়া মানে অর্থনীতির ক্ষতি নয়।
তেমনই আলিবাবা টেন্সেন্ট বাইডু নামে বড়ো বড়ো ব্যক্তি মালিকানাধীন টেক কম্পানিগুলোর ডানা ছাঁটে চীনা সরকার এই কারণে যে এই মুনাফা সর্বস্ব সংস্থাগুলো বিপুল বিনিয়োগ করছে লাভজনক প্রযুক্তির বিকাসে যেমন ভিডিওগেমস, অথচ তারা বুনিয়াদি প্রযুক্তিতে সেভাবে বিনিয়োগ করেনি কারণ সেখানে লাভ আসে অনেক দেরীতে এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ অলাভজনক হয়।
এর পরেই চীনা সরকার বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে বুনিয়াদি প্রযুক্তিতে যেমন সেমিকণ্ডাক্টর, কোয়ান্টাম, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি।
সেরকমই বাড়ির দাম পড়ে গেলেও চীনা সরকার দাম ধরে রাখার ব্যবস্থা করেনি। এর কারণ বাড়ির মূল্য শেষ ৩০ বছরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চীনে আর তার কারণ মুষ্টিমেয় ধনীরা তাদের উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগ করে চলেছিল নতুন নতুন বাড়িতে। এই সম্পত্তির মূল্য এই ধনী শ্রেণির সঞ্চয় বাড়িয়ে তুলতো কিন্তু সাধারণ চীনাদের বাড়ি কেনার খরচ বাড়িয়ে দিত।
তাই চীনা সরকার ঠিক করেছে সাধারণ চীনাদের স্বার্থে বাসস্থান কেনার খরচ কমাতে বাড়ি তৈরির ব্যবসায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করবে।
এর ফলে ধনী চীনাদের সঞ্চয় কমে যাবে এবং তাদের শেয়ার বাজার ও বণ্ড বাজারে বিনিয়োগ কমে যাবে আর এর ফলে চীনের পুঁজির বাজার ও মুদ্রা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
কিন্তু এই কারণেই আবার সাধারণ চীনাদের কাছে বাড়ি কেনা সহজ হবে, নতুন সংসার স্থাপন করাঢ় খরচ কমবে আর তা বাচ্চা মানুষ করার খরচ কমাবে যা ভবিষ্যতে জন্মহার বাড়াতে সহায়ক হবে। আবার মাথার ছাঁদ আছে বলে সাধারণ মানুষ অনেক মন খুলে ভোগ ও বিনিয়োগ করতে পারবে। যারা বেশি ঝুঁকি নেবেনা তারাও তাদের সঞ্চয় সরকারি ব্যঙ্কগুলোতে রাখবে যা থেকে সরকারি ব্যঙ্কগুলো উপযোগীতা মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগ করবে।
অর্থাৎ চীনা অর্থনীতি আরও বেশি বেশি করে আগামী দিনে মুনাফা কম বা নেই কিন্তু সমাজের পক্ষে ভাল এমন উতপাদনে মন দেবে।
পুঁজির গতি চীনে আরও বেশি বেশি করে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং পুঁজির ভূমিকাকে আরও বেশি বেশি করে গৌণ করে দেওয়া হবে।
কমুনিস্ম অনিবার্য, তার আসাকে কেউ আটকাতে পারেনা।