চট্টোগ্রাম কুমিল্লায় সেনাবাহিনী না কি ছাত্রদের সুরক্ষা দিচ্ছে।
হাসিনা তিন সেনাপ্রধানদের সামনে মানুষকে (আওয়ামিকে) প্রতিরোধ করতে বলেছে।
অর্থাৎ সেনাবাহিনী হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে বলেছে যে নিজের ক্ষমতায় সংগ্রাম জিতুন, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করবেননা।
আফঘানিস্তানের পরে মালদ্বীপ আর মালদ্বীপের পরে বাংলাদেশ থেকেও হয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করা হবে ভারতকে।
এই অবস্থার জন্যে ভারতের বিদেশনীতি দায়ী।
১৫ বছর ধরে একই সরকারকে কোনও বৈধ পদ্ধতি ছাড়া টিকিয়ে রাখার ফল খারাপই হয়।
শেষ ১৫ বছর ধরে বড় হওয়া গোটা প্রজন্মটাই ভারত বিরোধী।
ভারতের নীতি বাংলাদেশের জেন জেড (১৯৯৭ থেকে ২০১২-এর মধ্যে যাদের জন্ম)-কে ভারত বিরোধী করে তুলেছে।
কোনো সুযোগ দেবনা, সব সুযোগ নেবঃ এই তত্ত্ব দিয়ে জেন জেড-কে ডিল কেউ করতে পারবেনা।
জেন জেড অপেক্ষাকৃত প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হয়েছে, বকাঝাকা কম খেয়েছে, একটা বড়ো অংশ অটোসেক্সুয়াল (অর্থাৎ যৌনতার চেয়ে মৈথুন বেশি পছন্দের), কষ্ট পাওয়ার থেকে মরে যাওয়া শ্রেয় এদের কাছে, আর তাই এদের কষ্ট দিলে খবর আছে যে কারুর। এদের কাছে তথ্য যোগাড় একদম সহজ। এরা সংবাদ পত্র বা টিভি-তে কোনও গোষ্ঠির দেওয়া তথ্য পড়ে মেনে নেয়না। এরা সবার তথ্যই পড়ে। তাই এরা কোনও বিশেষ গোষ্ঠির দ্বারা প্রভাবিত হয়না। এর একটা খারাপ দিক হল এরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক যোগে কোন কাজ করতে পারেনা। কারণ এদের সবাই নেতা, সবাই বোঝে, সবাই অনেক পড়ে অনেক কিছু বোঝে।কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট খলনায়ক/খলনায়িকা পেয়ে গেলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেতেও পারে। বাংলাদেশের জেন জেড-এর জন্যে এই খলনায়ক-এর কাজটা করেছে হাসিনা ও ভারত।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। মোটামুটি ৯০% বাঙালী মুসলমান অর্থাৎ এক ধর্মের (ইসলাম) ও একই ভাষার (বাংলা)। সমাজকে ভাগ করে দেওয়ার সুযোগ কম। জেন জেড-এর গড়ে ২টো করে নিজের ভাই বোন আছে। মাস্তুত পিশ্তুত ভাই বোন তো আছেই। তাই নারীরা আগে বোন কন্যা স্ত্রী, নারী পরে। আর পুরুষেরাও আগে ভাই পুত্র স্বামী, পুরুষ পরে। এদের আত্মীয় ও প্রতিবেশিদের অনেকেই বিদেশ থাকে। এরা নিজেরাও বিদেশ যায়। ফলে পশ্চীমে পালিয়ে গেলেই যে বেঁচে যাওয়া যাবেনা কারণ সেখানকার অরথনীতিও ভালো অবস্থায় নেই তা এদের জানা। তাই নিজের দেশকে ঠিক করে সেখানেই থাকার কোনও বিকল্প নেই তারা মনে করছে। ছাত্র লীগের শাসন বাংলাদেশের জেন জেড-কে খেপিয়ে দিয়েছে (যারা বাবা মা-এর শাসনই মানেনি), ভারতের সীমান্ত সন্ত্রাস ও হাসিনাকে জোড় করে শাসনে রাখার নীতি তাদের আত্মসম্মানে ঘা দিয়েছে। কষ্ট সহ্য করার জন্য জেন জেড জন্মায়নি। "কষ্টের চেয়ে মরণ ভাল" ভাবা এই প্রজন্ম-এর প্রধান দুর্বলতা ছিল ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ছাত্র লীগ, হাসিনা, ভারতকে খলনায়ক পেয়ে তারা এক হওয়ার কাজে সুবিধে পায়, তাদের আগের দুই প্রজন্ম বুমার (১৯৪৬-৬৪-এর মধ্যে যাদের জন্ম), জেন এক্স (১৯৬৫-৭৯) ও মিলেনিয়াল (১৯৬০-৯৬-এর মধ্যে যাদের জন্ম)-দের অপদার্থতা তাদের নেতৃত্বে আসতে সুযোগ দেয়। এবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সমস্যা ছিল এই যে জেন জেড-এর সবাই নেতা। নেতা মার্কা মনন নিয়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করেছে অভিনব কায়দায়। তারা সবাই নেতা আর অনেক নেতার মধ্যে সমন্বয় ঘটায় অনেক "সমন্বায়ক"। "সমন্বায়ক" নামটাই বুঝিয়ে দেয় এই জেন জেড কতোটা এগিয়ে।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের মিলেনিয়াল, জেন এক্স ও বুমারদের কিছু উপলব্ধি। তারা বুঝেছে তারা পারছেনা। এই দুই প্রজন্মের কাছে মার্কসবাদ ইসলাম ও নারীবাদ সবচেয়ে প্রিয়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক বিভেদ। কিন্তু তারা জেন জেড-কে দেখে বুঝেছে এই বিভেদ আজকের পৃথিবীতে অর্থহীন। এরা আস্তে আস্তে একে অপরের অবস্থানকে মান্যতা দিতে শিখেছে। বাংলাদেশের ১৯৫২ সালের ভাষার জন্য আন্দোলন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ, ১৯৯০ সালের বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সেখানকার বুমার, জেন এক্স ও মিলেনিয়াল প্রজন্মকে শিখিয়েছে আন্দোলন করতে যার ধারাবাহিকতা জেন জেড-এর মধ্যেও এসেছে।
আরেকটা বিষয় বহু দলীয় গণতন্ত্র যে বারবার উচ্চবিত্ত-দের হাতে রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে ফেলছে এবং যারা ভোটে জিতছে, তারা যেই দলেরই হোক না কেন তাদের যে মিথ্যে বলা আর পয়সা ছাড়ানো ছাড়া কোনও যোগ্যতা নেই তা বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। সরকারে এমন মানুষের থাকা উচিত যাদের "মেধা" আছে এই বোধও এই আন্দোলন-এর একটা ভিত্তি।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ-এর আন্দোলন জেন জেড-এর নেতৃত্বে একটা নতুন আন্দোলন যা শুরু হয় "মেধা"-কে সামনে রেখে বা "কর্ম ও মেধা অনুযায়ী প্রাপ্তি" তত্ত্বকে মাথায় রেখে। বাংলাদেশ এক ভাষী এক ধর্মের দেশ (৯০% বাঙালি মুসলমান) হওয়ায় এখানে এই "জেন জেড-এর মেধা নিয়ে আন্দোলন" শুরু হতে পেরেছে। কিন্তু এই আন্দোলন আরও বহু জায়গায় হয়তো আগামীদিনে হবে। হবে কি না তা নির্ভর করছে জেন জেড আগামীদিনে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে পারে কিনা তার ওপর। হাসিনা সরকারের পতনের পরে অবশ্যই কোনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসবে এবং ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে নির্বাচন দেবে। জেন জেড-এর তখনকার ভূমিকাই ঠিক করবে তারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না।