শিবিরকে নিয়ে কিছু কথা
সম্প্রতি নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর ইন্ধনে শুরু হয়েছে ‛শিবির ব্যাশিং/ট্রলিং’ কর্মসূচি। নির্দিষ্ট ওই গোষ্ঠী ছাড়াও শিবিরের সাথে ব্যক্তিগত বা মতাদর্শগত বিরোধ থাকা অনেক জ্ঞানী-গুণী পলিটিক্যাল-এপলিটিক্যাল ব্যক্তিবর্গও উক্ত কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তারা মক করে নিজেদেরকে শিবিরের অমুক তমুক নানা পদধারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং একটি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছেন যেন শাহবাগের পর থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া শিবির নিজেরাই ‛আমি শিবিরের অমুক ওয়ার্ড সভাপতি ছিলাম’― টাইপের লিখালিখি দেখে নিজেরাই ল্যাজ নাড়তে নাড়তে সামনে চলে আসে এবং মনে করতে থাকে ‛ও মা গো টুরু লাভ'
বাট দ্যা ম্যাটার অফ সরো দ্যাট- 'ইটস এ ট্র্যাপ'। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, ইহা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিবিরের ব্রেইনচাইল্ডদের বের করে আনার এক নিনজা ট্যাকনিক।
যুদ্ধনীতি নিয়ে লেখা আমার অনেক লিখায় আমি একটা গ্রিক ওয়ার টেকটিক্সের কথা প্রায়শই বলে থাকি “Train the tiger to come out of the mountain”
এর অর্থ হলো- শত্রুকে তার শক্ত অবস্থান থেকে বের করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে এনে ঘায়েল করা।
নির্দিষ্ট ওই গোষ্ঠী শিবিরের সেই সমস্ত ব্রেইনচাইল্ডদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে বের করে আনার চেষ্টায় মগ্ন।
শিবির এবং ঐ গোষ্ঠী দুটোই আদর্শিক শক্তি। কিন্তু ওই গোষ্ঠীটি জানে না আগামীকাল কি ঘটতে যাচ্ছে। কারণ আগামীকালের উপর তার কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ নেই। অপরদিকে শিবির জানে যে আগামীকাল সে কি করবে। সেকারণে আগামীকালের ঘটনার উপর সর্বদাই তার প্রভাব থাকে। ব্যাপারটা এমন নয় যে শিবির আগামীকাল কি ঘটবে সেটা জানে। তবে বিভিন্ন বাস্তবতার উপর নির্ভর করবে যে সে আগামীকাল কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। পার্থক্য এখানেই যে, ওই গোষ্ঠীর আদর্শের ভিত্তিপ্রস্তর খুবই নড়বড়ে।
আপনারা অনেকেই মনে করতে পারেন, এই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড কিংবা ব্রেইনচাইন্ড মাহফুজ আলম, যিনি কেন্দ্রের সমন্বয়কদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, কর্মসূচি দেওয়া এবং কর্মসূচির নাম বাস্তবায়ন সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ইয়েস আমিও আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। মাহফুজ সাহেব একজন অত্যন্ত ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ। তিনি প্রচুর জ্ঞান রাখেন কিন্তু তিনিই যদি ওয়ান এন্ড অনলি ব্রেইনচাইল্ড হবেন তাহলে এত সহজে এবং দ্রুত পর্দার সামনে আসলেন কেন?
কারন তিনি একজন এপলিটিক্যাল পার্সন, তার কোনো পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ নেই। দ্যাটস হোয়াই তাকে সব জায়গা থেকে অভিবাদন জানানো হচ্ছে। খুব সহজেই এবং দ্রুততম সময়ের মাঝে তিনি ইউনুস সাহেবের ইনার সার্কেলে আসতে পেরেছেন। যদিও তাকে নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছে তবে সেই প্রসংগে যাচ্ছি না।
অন্যদিকে আপনি আমি সহ কয়জন পর্দার আড়ালে থাকা শিবিরের সেইসব ব্রেইনচাইল্ডদের নাম জানি বা তাদের আন্দোলনের প্রসিডিওর জানি? আমি নিজেও জানিনা খুব একটা, তবে অল্পকিছু জানতে পেরেছি বিভিন্ন মারফতে। এটুকু জানলেই বুঝতে পারবেন কেন ডেমোক্রেসির ফোর্থ এস্টেট বা পিলার খ্যাত মিডিয়া জামাত শিবিরকে এত বেশি হাইলাইট করছে
আচ্ছা আপনারা তো সবাই 'ছদ্মনাম' শব্দটার সাথে পরিচিত তাইনা? বিভিন্ন গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে গিয়ে আমরা সবাই জানতে পারি যে গোয়েন্দারা কখনও আসল নাম ব্যবহার করে না। ঠিক তেমনি রয়েছে ‛ছদ্মবার্তা’ নামে আরেকটি টার্ম। যেটাকে এসপিওনাজ জগতে বলা হয় 'Pen message'
আন্দোলনের পুরোটা সময় জুড়ে শিবিরের ব্রেইনচাইল্ডরা তৈরি করে প্রায় ৪০-৪৫ টি পেন ম্যাসেজ। যেগুলো পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন সময় অনেক হাত ঘুরে এপলিটিক্যাল ব্রেইনচাইল্ড খ্যাত মাহফুজ আব্দুল্লাহ কিংবা কখনও কখনও সমন্বয়কদের ইনার সার্কেলে পৌঁছে যেত। পুরোটা সময় জুড়ে শিবিরের এই ব্রেইনচাইল্ডদের প্রধান শত্রু ছিল এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলি কমিউনিকেশন সেন্টার)। এনটিএমসিকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিটা পেন ম্যাসেজ জায়গামত পৌঁছে দিতে পারা ছিল অবিশ্বাস্য। কারন একবার ডিটেক্ট হলে পুরো উইং শেষ।
সব জানা সম্ভব না হলেও দু তিনটি পেন ম্যাসেজ আপনাদের সাথে শেয়ার করি চলুন
* All birds have feathers and all Robin's are birds. Therefore Robin's have feathers
* All brown dogs in the park today are small dogs. Therefore all small dogs must be brown
* When it rains, the grass get wet. The grass is wet, it must have rained.
এধরনের পেন ম্যাসেজ অনেকটা উর্দু শের শায়েরীর মত। ছোট্ট একটা লাইন কিন্তু ব্যাখ্যা বড়। শুধু বুঝতে হবে।
এছাড়াও শিবিরের সেইসব ব্রেইনচাইল্ডরা তৈরি করেছিল শাপলা, আলফা, ব্রাভো, সিগমা নামে বিভিন্ন টিম। ফিল্ডে যাদের প্রত্যেকের কাজ আলাদা করা ছিল। যা এখনও অধিকাংশ মানুষ জানেই না। কারন এরা তো চ্যারিটি ফার্ম খুলে বসেছিল, ক্রেডিট নেওয়ার কোনোরকম লিপ্সা তাদের মাঝে দেখা যায়নি (এক্সেপশনাল থাকবেই)
শিবিরের সেইসব ব্রেইনচাইল্ডরা এখন অব্দি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছেন। তারা কেউ ট্রাপে পা দেননি। কিন্তু 'আমি কে তুমি কে...রাজাকার রাজাকার' স্লোগানের জন্মদাতা ঢাবি সূর্যসেন হলের ছাত্রদল নেতা অলরেডি নিজেকে জনসম্মুখে এনেছেন। এটা অবশ্য খারাপ কিছু না।
কিন্তু আপনি আপনার কমনসেন্স খাটিয়ে একটু চিন্তা করুন, দেশ যদি সত্যিই স্বাধীন হত তাহলে এপ্লিটিক্যাল ব্রেইনচাইল্ডদের পাশাপাশি পলিটিক্যাল ব্রেইনচাইল্ডদেরও বুক ফুলিয়ে তাদের কন্ট্রিবিউশন জানান দেওয়ার কথা ছিল। কই তারা তো সেটা পারছে না। উল্টো তাদের ব্যাশিং করা, ট্রাপে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।