বাংলাদেশ ৩৬শে জুলাই বিপ্লব

বাংলাদেশ ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের কবলে গেল কিভাবে?

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ যখন তৈরি হয় তখন মুজিব উর রহমান আওয়ামী লিগকে সমর্থন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা করলেও পরে মেনে নেয় ক্ষমতায় আসার পরেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য নেতাদের হয় নিজের দিকে নিয়ে আনে নয়তো হত্যা করতে শুরু করে মুজিব সিরাজ সিকদার সহ অজস্র মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে মুজিব একনায়ক হিসেবে শাসন করতে চান তিনি জনতাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে তিনি যুগোস্লাভিয়ার জোট নিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিকদের মতো শাসন করতে চানসেই মতো তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লিগ বা বাকশাল তৈরি করেন এবং এক পার্টি শাসন-এর দিকে এগিয়ে যান।      

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাকশাল-এর এক পার্টি শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং তার বিরুদ্ধে ক্যু করে তাকে হত্যা করে ১৯৭৫ সালে তারপর দু বছর সেনাবাহিনী পুরনো আওয়ামী লিগ-এর নেতৃত্বে সরকারকে সমর্থন করে।.১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনী প্রধান জিয়া উর রহমান (তিনিও জনপ্রিয় মুক্তিযোদ্ধা এবং অধিকাংশ বাংলাদেশির মতে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষক) বি এন পি পার্টি তৈরি করে শাসনভার হাতে তুলে নেন এবং মার্কিন পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেনতিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করেন। জিয়াকেও হত্যা করা হয় ১৯৮১ সালেবাংলাদেশের মানুষ এই হত্যার পেছনে র-এর হাত দেখে,। এরপরে এক বছর যেতে না যেতেই বি এন পি-এর প্রধান শাসক আবদুস সাত্তার-কে উচ্ছেদ করে তারপরে এক নিরপেক্ষ প্রধানকে ক্ষমতায় রাখে সেনাবাহিনী প্রায় দু বছর১৯৮৩ সালে ক্ষমতা হাতে তুলে নেন সেনা প্রধান এরশাদ তিনি শাসন করেন প্রায় বছর জাতীয় পার্টির প্রধান হিসেবে।   

১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে ১৯৯০-এর দশকের প্রথম ভাগের মধ্যে আকস্মিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় এবং ঠাণ্ডা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হয় এই সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্র নিজের এক মেরু শাসন কায়েম করাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সর্বত্র বহু দলীয় গণতন্ত্র-কে সমর্থন দিতে থাকে এমনকি তার সহযোগী সেনা শাসকদেরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু দলীয় গণতন্ত্র মানতে বাধ্য করে। যেমন - তাইওয়ান (১৯৮৭), চিলি (১৯৯০) অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপের ৮টা দেশে কমিউনিস্ট এক পার্টি শাসন উচ্ছেদ হয়ে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় সোভিয়েত পতনের পরে রাশিয়াতেও বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় এরকম বৈশ্বিক আবহাওয়ায় ১৯৯০ সালে এরশাদ-এর পতন হয় এবং বহু দলীয় গণতন্ত্র কায়েম হয় বাংলাদেশে।  

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ ক্ষমতায় থাকে বি এন পি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত থাকে আওয়ামি এই দশ বছর-কে এক মেরু বিশ্বের, নয়া উদারবাদের এবং বহু দলীয় গণতন্ত্রের স্বর্ণযুগ বলা যায় কিন্তু ২০০১ সালে ইসলামী সংগঠন আল কায়দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানে যা বাংলাদেশেও নতুন সমীকরণ তৈরি করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইসলামী শক্তিকে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বলে চিহ্নিত করে ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-কে প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা শুরু করে মার্কিন সরকার সেই সুযোগে ভারত দঃ এশিয়াতে মার্কিন সরকার-এর প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে থাকে ইসলামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফঘানিস্তানে পাকিস্তান মার্কিন সরকার-কে সমর্থনের ভান দেখিয়ে তালিবান-দের সমর্থন করতে থাকে ভেতরে ভেতরে ভারত সেই সুযোগে মার্কিন সরকারের আরও কাছাকাছি আসতে থাকে ভারত এই সময়ে মার্কিন সরকার-কে বুঝিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় যে বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাস-কে আটকাতে গেলে জামাত-কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হবে এবং বিএনপি-এর থেকে আওয়ামী বেশি ভাল করে ইসলামী সন্ত্রাসকে আটকাতে পারবে২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিএনপি-জামাত জোট সরকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ছিল। সেই আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে২০০১ সালে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর) বেশ কয়েকবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-কে নাস্তানাবুদ করে এই যুদ্ধ বাংলাদেশে রংপুরের রোউমানি যুদ্ধ বলে পরিচিত। বাংলাদেশিদের মতে সেই যুদ্ধে ৪০০-রও বেশি বিএসএফ জওয়ান নিহত হয়।       

ইতিমধ্যে ২০০১ থেক ২০০৬ এর মধ্যে ঘটা কিছু হিন্দু বিরোধী দাঙ্গা এবং বাংলা ভাই নামের ইসলামী সন্ত্রাসীর উত্থান ভারতকে সুবিধে করে দেয় মার্কিন সরকার-কে আওয়ামীপন্থী করে তুলতেবাংলাদেশিরা এখন মনে করেন বাংলা ভাই ও তার সংগঠন জামাত-এ-মুজাহিদিন আসলে "র"-এর তৈরি সংগঠন ছিল। তাদের কাজ ছিল বিএনপি-জামাত সরকারকে মার্কিন সরকারের কাছে ইসলামী সন্ত্রাসের মদতদাতা হিসেবে তুলে ধরা। তবে অনেকে এও বলেন যে শিল্পায়ণ ও নগরায়ণের সময় কৃষক উচ্ছ্বেদকালে মাওবাদী সংগঠন "পূর্ব বাংলার সর্বহারা দল" কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সেই মাওবাদীদের শেষ করতে বিএনপি-জামাত সরকারই নিয়ে আনে জামাত-এ-মুজাহিদিন-কে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকেপ্রথমে ২০০৭ সালের ২২-শে জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল অধ্যাপক ইয়াজুদ্দিন-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে। কিন্তু ৫ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লিগ ও এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বয়কট করে। বলা হয় এর পরেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাটরিশিয়া বুটেনিশ ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশের সামরিক প্রধান জেনেরাল মাইন-কে বলেন বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করতে এবং এমনভাবে নির্বাচন করতে যাতে সকল পার্টি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। ১১ই জানুয়ারি, ২০০৭ সালে জেনেরাল মইন ইয়াজুদ্দিন-এর ক্ষমতা কেড়ে নেন বন্দুকের নল দেখিয়ে। যদিও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মার্কিন পছন্দ ছিল নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনূস কিন্তু ইউনূস প্রধান হতে অস্বীকার করেন এবং বাংলাদেশ রিসার্ভ ব্যাঙ্কের সাবেক প্রধান ডক্টর ফকরুদ্দীন আহমেদ-কে প্রধান হতে অনুরোধ করেন। ফকরুদ্দীন ক্ষমতা নেন যদিও আসল ক্ষমতা জেনেরাল মইন-এর হাতেই ছিল। এই ঘটনা আজ বাংলাদেশে "১/১১"-এর সামরিক ক্যু বলে চিহ্নিত। মার্কিন সরকার এই কাজ বাংলাদেশের মানুষের চোখের সামনেই করেছিল। মার্কিন সরকারের আশা ছিল পরের নির্বাচনে জিতবে ইউনূস-এর নতুন দল "নাগরীক শক্তি"। কিন্তু  নাগরিক শক্তি সম্বন্ধে বাংলাদেশের মানুষ আগ্রহ না দেখানোয় ইউনূস রাজনীতির আসর থেকে বিদায় নেন। ভারতের বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখারজি "র"-কে এই সময় মাঠে নামান। ভারত প্রথমে মার্কিন প্ল্যানে এগিয়ে যায় এবং হাসিনা-কে ৫ই জানুয়ারি, ২০০৭-এ ২২-শে জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করতে বলে। তারপরে ইয়াজুদ্দিন-কে হটিয়ে ফকরুদ্দীনকে ক্ষমতায় বসানো সমর্থন করে। ভারত জানতো ইউনূস আদৌ সেরকম জায়গা পাবেনা নির্বাচনে। আর তখন ভারত হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী-কেই ক্ষমতায় আনবে। মার্কিন সরকারেরও তা মেনে নিতে হবে। কারণ বিএনপি ও জামাতের গায়ে ইসলামী সন্ত্রাস-কে জায়গা দেওয়ার কাদা লেগে গেছে। বাংলাদেশের সামরিক শাসক জেনেরাল মইন রাজনীতিতে ইউনূস-কে জায়গা দিতে খালেদা জিয়া, তার দুই পুত্র ও শেখ হাসিনা-কে গ্রেফতার করেন দুর্নীতির অভিযোগে। ২০০৮-এর ডিসেম্বর মাসে হাসিনার আওয়ামী লিগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এর অধীনে হওয়া নির্বাচনে বিজয়ী হয়প্রণব মুখারজি তার লেখা বই "দ্যা কোয়ালিশন ইয়ারস"-এ স্বীকার করেছেন কিভাবে তিনি জেনেরাল মইন-কে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আশ্বাস দেন যে হাসিনা জিতে ফিরে এলে মইন-কে নিরাপদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে দেবে। এবং এই আশ্বাসের পরেই জেনেরাল মইন হাসিনার জয়ের রাস্তা তৈরি করেন।         

২০০৯-তে ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর)-কে শেষ করে দেওয়া হয় বিদ্রোহ দমন করার অজুহাতে বলা হয় সেই সময় না কি ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-কে ধ্বংস করার কাজে অংশ নেয় এও বলা হয় যে বহু চীনা ঘনিষ্ঠ অফিসার-দের হত্যা করা হয় সেই বিদ্রোহ দমনের সময় এরপরে হাসিনাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি হেপাজত-এর মতো সংগঠন হাসিনার বিরোধিতা করায় তাদের হত্যা করে দমন করা হয় ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগ করে নির্বাচন না করে আওয়ামী নিজের নেতৃত্বেই নির্বাচন করে ফলে নির্বাচনের কোনও বৈধতা থাকেনা বাংলাদেশের বিরোধীরা মার্কিন পশ্চীমের কাছে বারবার অভিযোগ জানায় কিন্তু কোনও ফল হয়না ২০১৮-তেও একইভাবে নির্বাচন করায় আওয়ামী বিএনপি জামাত সহ সমস্ত বিরোধী দল মনে করতে শুরু করে যে চীনকে আটকাতে মার্কিন সরকার ভারতের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছেইসলামী সন্ত্রাস দমন-কে সামনে রেখে আওয়ামীও বিরোধী কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার গুম খুন চালিয়ে যেতে থাকে।   

২০২১ সালে ২০ বছর  ব্যাপি ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরে মার্কিন সরকার পরাজিত হয়ে লজ্জাজনক প্রস্থান ঘটায় আফঘানিস্তান থেকে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মূল দ্বন্দ্ব শুরু হয় চীন ও তার সহযোগী রাশিয়া ও ইরান-এর সাথে। ফলে ইসলাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইতি টানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলগুলোর কথায় বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লিগের ওপর চাপ দিতে থাকে সুষ্টু নির্বাচন করার। আওয়ামী ঘনিষ্ট বেশ কিছু পুলিশ ও আধা সেনার কর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চালু করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে অবশ্য মার্কিন সরকার বিরোধীদের বোঝাতে থাকে যে তারা বাংলাদেশকে ভারতের চোখ দিয়ে দেখবেনা  

এই সময় বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন  যে মার্কিন সরকার-এর আসল লক্ষ্য হল সেন্ট মারটিন দ্বীপ এবং মার্কিন সরকার বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচন করাতে নয় বরং আকাঙ্ক্ষিত সেন্ট মারটিন দ্বীপ পেতে আওয়ামী ঘনিষ্ট কর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেহাসিনা এও বলেন যে এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি তাকে বলেছেন ভবিষ্যতে ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ভেঙ্গে এক খ্রীশ্চান রাষ্ট্র তৈরি হোতে চলেছে। (মনে রাখা দরকার মিয়ানমারের চীন প্রদেশের চীন জাতি, ভারতের মিজোরাম-এর জো জাতি ও দঃ মণিপুরের কুকি জাতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যোম জাতি একই জাতির অংশ এবং তারা এই তিন অঞ্চল মিলিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র চাইছে দীর্ঘদিন ধরে এবং এই জাতির অধিকাংশই খ্রীশ্চান। মনে রাখা দরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যোম-রা সংখ্যালঘু এবং বৌদ্ধ চাকমারা সংখ্যাগুরু) এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে  ভারতের থেকে চীন অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী বলে আওয়ামী সরকার চীনের দিকে ঝুঁকেছিল নানা পরিকাঠামোগত বিনিয়োগে বাংলাদেশের সেনাও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে চলে এবং বাংলাদেশ চীনা অস্ত্রের সবচেয়ে বড় খরিদ্দার হয়ে ওঠে চীনের থেকে সরিয়ে আনাই আসলে মার্কিন সরকারের অন্যতম কারণ ছিল আওয়ামী বিরোধীতার। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস করার কোনও প্রতিশ্রুতি হয়তো আওয়ামী দিয়েছিল মার্কিন সরকারকে আর সেই জন্যেই হয়তো ২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে আওয়ামীর তত্ত্বাবধানে ২০২৪ সালে হওয়া নির্বাচনে বিরোধীদের অংশ নিতে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।      

২০২৪-এর নির্বাচনে জিতে এসেই ভারতে গিয়ে তিস্তা বিষয়ক বিনিয়োগ ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে উত্তর পূর্বাঞ্চল-কে জোড়ার জন্যে বাংলাদেশ দিয়ে রেলপথ বানানোর চুক্তিতে মৌ স্বাক্ষর করে আসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনামনে রাখা দরকার ভারত দীর্ঘ দিন ধরে তিস্তার জল বাংলাদেশকে না দেওয়ায় চীন সরকার বাংলাদেশ সরকার-এর কাছে প্রস্তাব রাখে যে চীনের ইয়াংসে কিয়াং নদীর পোলিমাটি সরাতে যেরকম বিনিয়োগ করা হয়েছে সেরকমই বিনিয়োগ তিস্তায় করার আবার চীন সরকার ভূটানের দোকালাম দিয়ে শিলিগুড়ি করিডোর দখল করে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চল-কে আলাদা করে ফেলতে চাইছে বলে মনে করে অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ। আর তারই প্রতিরোধক হিসেবে বাংলাদেশ-এর মধ্য দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চল- যাওয়ার বিকল্প রেললাইন তৈরি করতে চাইছে ভারতএছাড়াও হাসিনা সরকার ২০২৪-এ জিতে এসেই চীনা সামরিক সরঞ্জাম বাদ দিয়ে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জাম কিনতে উদ্যোত হয়। মংলা বন্দরও চীন-কে না দিয়ে দেওয়া হয় ভারত-কে।    

এদিকে ১৫ বছর ছরে বাংলাদেশে যে নতুন যুব সমাজের উদ্ভব ঘটেছে তারা একদিকে ভারতের দাদাগিরি দেখছে, অন্যদিকে দিনের পর দিন ভোট দিতে পারেনি। শাসক দলের খুন গুম অত্যাচারও তারা দেখছে। এছাড়াও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে বিশাল টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে শাসক দল আওয়ামীর বিরুদ্ধে।  শেষ ১৫ বছরে চীনের সাহায্যে জাপানের সাহায্যে আওয়ামী সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে আর সেই সুযোগে নতুন যুব সমাজ হয়ে উঠেছে অনেক বেশি ডিজিটাল নীম্নতম আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ মধ্য নীম্ন আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে শুধু তাই নয় বাংলাদেশের জন প্রতি আয় ছাপিয়ে গেছে ভারতকেও বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া পূর্ব ভারতের (পঃ বঙ্গ উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিহার ঝাড়খণ্ড) জন প্রতি আয়-কে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ এই বিষয়টা ক্রমেই ভারতের ওপর কিভাবে চাপ বাড়াচ্ছে তা নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব  তবে উন্নয়নের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতিও দেখছে বাংলাদেশ এর কারণ বিশ্ব অর্থনীতির মূল উৎপাদক চীনের শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে বহুগুণ, চীনের সঙ্গে মার্কিন ভূরাজনীতির দ্বন্দ্বে লাগাতার আমদানীতে শুল্ক পালটা শুল্ক বসানো হচ্ছে, রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে তেলের বাজারে নানা স্যাঙ্কশন করেছে পশ্চীমা দেশগুলো এবং হুথিদের লহিত সাগরে প্যালেস্তিনিদের সমর্থনে আক্রমণ জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে এই সমস্ত বিশ্ব অর্থনীতির ঝঞ্ঝা বাংলাদেশের ওপর এসে পড়ছে ফলে এক নতুন বিদ্রোহী যুব শক্তির সমাবেশ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।  

প্রথমে ২০১৭-১৮ সালের "নিরাপদ সড়োক আন্দোলন" থেকে তার যাত্রা শুরু, ২০১৮-তে সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধিতা করে তারা বাংলাদেশের সরকারকে চাপে ফেলে দেয় কোটা তুলে নিতে বাধ্য করেএই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন (ডাকসু)-এর সভাপতি ভি পি নূর। নুর-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জুনিয়র ছাত্র ছাত্রীরাই স্বাধীনভাবে নিজেরা প্রথমে গড়ে তোলে "গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি" ও আরও পরে "বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন" নামে প্ল্যাটফর্ম। ২০২৪- কোটার পক্ষে হাই কোর্টের রায়-কে সরকারের অভিসন্ধি মনে করে আবারও যুব সমাজ পথে নামে এবং তা শেষ পর্যন্ত আওয়ামী বিরোধী ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়।     

বাংলাদেশ ২০২৪ বিপ্লবের কাণ্ডারি কারা?

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার নেত্রিত্বে সংগঠিত হওয়া বাংলাদেশ ২০২৪ বিপ্লবের চরিত্র ঠিক কি তা এখনো ভালো মতো করে উদ্ঘাটন করা হয়নি। ভাষা ভাষা কিছু কথা আছে মাত্র। আমি চেষ্টা করেছি একটা বিশ্লেষণ করার।

প্রথমেই আসি এই বিপ্লবের অন্যান্য বিপ্লবের সঙ্গে মিল আছে এমন বিষয়গুলো সম্বন্ধে। দীর্ঘ সময় যাবত কোনও রাজনৈতিক দল বৈধ নির্বাচন না করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে গণক্ষোভ ও বিপ্লব যথেষ্ট স্বাভাবিক একটা ঘটনা। আওয়ামী লিগ দীর্ঘ ১৫ বছর শাসন করেছে আর তার মধ্যে শেষ ১০ বছর বা শেষ তিনটে টার্ম বৈধ ভাবে ভোট করায়নি। তাই ক্ষোভ স্বাভাবিক। তার ওপর যুক্ত হয়েছে আওয়ামীর ভারত চাটা নীতি। ফলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের দালাল হিসেবে আওয়ামীকে দেখতে শুরু করে। অপেক্ষাকৃত বড়ো প্রতিবেশি দেশ-এর সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ খুবই স্বাভাবিক।

এছাড়াও মনে রাখা দরকার বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। ২০০৮-এর বিশ্ব মন্দার পর থেকে বিশ্ব বাণিজ্যের গতি কমেছে, বিশ্ব পুঁজির চলাচল ১৬ বছর পরেও ২০০৮-এর অবস্থানে পৌছয়নি।তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের উচ্চ আয়ভুক্ত দেশ হয়ে যাওয়া যা চীনের মজুরি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে আর তাই বিশ্ব বাজারে দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। চীন মার্কিন দ্বৈরথ এবং রুশ উইক্রেইন যুদ্ধ মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশ আর এর ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমছে আর পর্যাপ্ত পরিমাণে সুদের হার না বাড়ালে ছোট দেশের অর্থনীতিগুলোকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিদেশী মুদ্রার সঙ্কটে। তৃতীয় বিশ্বের যুবক যুবতীদের প্রথম বিশ্বে গিয়ে রোজগার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে কারণ প্রথম বিশ্বেও অভিবাসী বিরোধী রাজনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। একদিকে দীর্ঘদিনের স্বল্প অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আর অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে স্বল্প জন্মহার-এর জন্য পশ্চীমের শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে অ-শ্বেতাঙ্গ অভিবাসী বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে বর্তমান প্রজন্মের যুবারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্ধিহান। আর তাই জেন-জি (যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২-এর মধ্যে) যে এই ২০২৪ সালে বিদ্রোহী মনন ধারণ করবে সেটাও স্বাভাবিক।

এবার আসি বাংলাদেশের বিপ্লবের সাথে অন্যান্য বিপ্লবের মধ্যেকার পার্থক্যে। বলা যায় বাংলাদেশ ২০২৪-এর বিপ্লব হোল জেন-জি-র নেতৃত্বে হওয়া প্রথম বিপ্লব। এই বিপ্লবের ক্ষেত্রে জেন-জি-র প্রভাব এতটাই স্পষ্ট যে তাদের তিনজনকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নেওয়া হয়েছে। তাদের থেকে মতামতও চাওয়া হচ্ছে সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গে। এই ব্যপারটা বোধহয় বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম যে নবীন প্রজন্মের থেকে শিখতে চাইছে প্রবীনেরা। নবীনেরা যেভাবে বিভিন্ন মতাবলম্বী মানুষকে একত্রিত করে এই বিপ্লব সম্পন্ন করেছে তা এক কথায় অসাধারণ। ইসলামপন্থী ও বাম্পন্থীরা এই ক্ষেত্রে এক যোগে কাজ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র সমন্বায়ক মাহফুজ আলম আবদুল্লাহ বারবার জোর দিয়েছেন এই হেপাজত-শাহবাগী বা ইস্লামপন্থী-বাম্পন্থীদের ঐক্যকরণের বিষয়টাতে। আন্দোলন কর্মসূচীর নেতাদের নেতা না বলে সমন্বায়ক বলা হয়েছে যা আন্দোলনকারীদের ও নেতাদের মধ্যেকার পার্থক্য ঘোচাতে সাহায্য করেছে। সমন্বায়কদের যে কজনকে সামনে দেখা গেছে তাদের মধ্যে সারজিশ আলম ও হাসনাত আবদাল্লাহ-এর লেখা পড়ে ও বক্তব্য দেখে মনে হয়েছে তারা ইসলামপন্থী, আবার নাহীদ-এর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে সে বামপন্থী। এভাবে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারল তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আগের প্রজন্মগুলো এইভাবে বিভিন্ন আদর্শের মানুষকে এক করতে ব্যর্থ হয়েছে। হয়তো এর কারণ লুকিয়ে আছে জেন জি-র কাছে তথ্যের প্রতুলতার মধ্যে। ইন্টারনেট থেকে যে কোনও বিষয়ে তথ্য অনায়াসে চলে আসে জেন জি-র কাছে। আগের প্রজন্মগুলো এত সহজে তথ্য পেতনা। বুমার ও জেন এক্স তথ্যের জন্যে অনেক বেশি নির্ভর করত শিক্ষলয় (অর্থাৎ সরকার), সংগঠন ও বই-এর ওপর। ফলে তারা প্রচণ্ডভাবে বিশেষ আদর্শে ইন্ডক্ট্রিনেটেড হতো। এক আদর্শের মানুষ অন্য আদর্শের মানুষের প্রতি বৈরিতামূলক মনোভাব রেখে চলত। ফলে এক সঙ্গে তারা কাজ করার কথা ভাবতে পারতনা। কিন্তু জেন জি অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন আদর্শের লেখা ও ভিডিও ইন্টারনেট থেকে পেয়ে যায় আর তাই কোনও বিশেষ আদর্শের প্রতি ঝোঁক থাকলেও অন্য আদর্শের প্রতি চরম বৈরিতামূলক মনোভাব পোষণ করেনা। এই প্রজন্মের সবাই প্রায় কম বেশি নানা আদর্শের সমাহার। শত্রু হিসেবে আওয়ামী ও ভারত যেহেতু স্থীর ছিল, জেন জি-র সকলের এক হয়ে জোট বাঁধতে অসুবিধে হয়নি। আগের প্রজন্মগুলো এই কাজটাতেই ব্যর্থ হয়েছে।

তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোল এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মেধা ভিত্তিক সরকারী চাকরী হওয়ার প্রসঙ্গে। মনে রাখা দরকার এই মেধা প্রসঙ্গে ২০১৮ সালেও ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী সরকারকে কোটা তুলে নিতে বাধ্য করেছিল। সেই কোটা হাইকোর্ট মারফত আওয়ামী সরকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করাতেই কিন্তু ছাত্র জনতা মেধার ভিত্তিতে সরকারী চাকরীর দাবীতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে। গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হোল মেধার ভিত্তিতে আন্দোলনে মানুষ যত সহজে রাস্তায় নেমেছে, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ার জন্য কিন্তু এত বড়ো আন্দোলন হয়নি। এর কারণ হয়তো এই যে বিরোধী দলগুলোর ওপরে মানুষের যথেষ্ট ভরসা ছিলনা। কিন্তু মেধা ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রতি মানুষের যথেষ্ট আস্থা আছে। তবে আন্দোলনকে পেছন থেকে অবশ্যই বিএনপি এবং জামাত তাদের ক্যাডার নামিয়ে সাহায্য করে কিন্তু দলীয় ব্যানার আনতে পারেনি।

মেধার ভিত্তিতে সরকারী চাকরী বন্টনের বিষয়টা এতোটাই শক্তিশালী বাংলাদেশের সমাজে যে নারীও ১০% যে নারী ভিত্তিক কোটা ছিল তা নিতে অস্বীকার করে। এবং আন্দোলনের দাবী মতো নারী কোটা ০% করে দেওয়া হয়। এই বিষয়টা বিশ্ব জুড়ে যে নারীর স্বশক্তিকরণ প্রক্রিয়া চলছে তার বিপরীত। দুনিয়া জুড়ে যে মতবাদ এখন প্রচলিত তা হোল নারী দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত ও অবদমিত আর তাই নারীকে সবকিছুতে পুরুষের থেকে বেশি সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এই ধারণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বাংলাদেশের জেন জি নারীরাই প্ল্যাকার্ড হাতে বলেছে "নারী যেখানে অগ্রসর, কোটা সেখানে হাস্যকর"। বাংলাদেশের জেন জি নারী জানিইয়ে দিয়েছে যে শেষ ৫৩ বছরে নারীর পক্ষে কোটা থাকার ফলে বাংলাদেশের নারীর যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে এবং ৫৩ বছর পরে আর নারীর স্বশক্তিকরণের জন্য কোটার দরকার নেই। আসলে ৫৩ বছর পরেও কোটা লাগলে বুঝতে হবে যে কোটা দিয়ে পিছিয়ে পড়া অংশকে সামনে এগিয়ে আনা যাচ্ছেনা। বাংলাদেশ ২০২৪ বিপ্লব-এ নারীর কোটা বিরোধী অবস্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা এই বিপ্লবকে বিশ্বের প্রচলিত গতি থেকে আলাদা করে। নারীর এই আন্দোলনে যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। নারীরাই প্রথমে এগিয়ে যায় এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের মার হজম করে। আর এই ঘটনাই বাংলাদেশের সমগ্র ছাত্র সমাজকে উত্তাল করে তোলে। এছাড়াও আন্দোলনে শ্লোগান দেওয়ার সময় থালা আর চামুচ বাজিয়ে মূর্ছনা আনার মতো অভিনব বিষয় নিয়ে আনে তারা।

মনে রাখা দরকার নারীর কোটা ছাড়াও বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির জন্যে কোটা রাখার প্রবণতা পশ্চীমের গণতন্ত্রগুলোতে বাড়ছে। এর একটা বড় কারণ পশ্চীমা সমাজে মূল সংখ্যাগুরু যে শ্বেতাঙ্গ জাতি তাদের জন্মহার অত্যন্ত কম এবং তাই তাদের জনসংখ্যার শেয়ার কমে যাচ্ছে। আর তাই উৎপাদন ও ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। তাই এই সমস্ত সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে দলে নিতে পশ্চীমের বহু দলীয় গণতন্ত্রগুলো তাদের জন্য কোটার ওকালতি করে। অর্থাৎ আধুনিকতার দুই বাহু যে বাহু - প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও মেধা বা যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্তি - তার এক বাহু মেধা অনুযায়ী প্রাপ্তি অকেজ হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বাঙালি মুসলমানেদের জনসংখ্যার শেয়ার বেড়েছে শেষ ৫৩ বছরে। বর্তমানে এই শেয়ার ৮৯%। আর তাই সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে খুশি করার দায় সমাজের নেই। জাতিগত ও উপজাতিগত বিভেদ কম থাকায় মেধা অনুযায়ী প্রাপ্তি তত্ত্ব খুব স্বাভাবিকভাবেই জায়গা পাচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের এই ঘটানা ইউরোপের ঐতিহাসিক গতির সাথে মিলে যায়। ১৬শ শতকের প্রথম দিক থেকে ১৭শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ক্যাথোলিক প্রটেস্টান্ট যুদ্ধ ও ভাষার প্রমিতকরণের মধ্য দিয়ে পঃ ইউরোপ জুড়ে একভাষি এক ধর্মের জাতি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। তারপরেই কেবল ১৭শ শতকের শেষে ইংল্যাণ্ড বিপ্লব এবং ১৭৭৬ সালে মার্কিন বিপ্লব ও ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লব যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্তি তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।

মেধা অনুযায়ী সরকারী চাকরী বন্টন-এর আন্দোলন কি ক্রমেই মেধাতাত্রিক সরকার গঠনের জন্য আন্দোলন শুরু করবে? অর্থাৎ শুধু সরকারী কর্মচারীরাই নয়, সাংসদদের ও মন্ত্রীদেরও মেধার প্রমাণ দিতে হবে কি? বিএনপি সভাপতি তারেক রহমান দ্বীকাক্ষিক সরকার তৈরি করার কথা বলেছেন। এবং এক কক্ষে থাকবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আর একটি কক্ষে থাকবে এমন লোকেরা যারা নির্বাচিত নন কিন্তু কোন না কোনভাবে নিজেদের মেধা প্রমাণ করেছেন। জামাত সভাপতিও বলেছেন দেশ চালাবে মেধাবীরা। অর্থাৎ বাংলাদেশ হয়তো বহু দলীয় নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে চীনের মেধাতন্ত্রকে মেলাবার চেষ্টা করবে আগামীদিনে। ছাত্ররা মেধাতান্ত্রিক সরকারের কোনও আভাস দেয়নি এখনো। এটা ছাত্রদের বিশাল ব্যর্থতা।

১৮ই জুলাই-এর পরে যখন অধিকাংশ সমন্বায়কদের কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিল আওয়ামী সরকার, যখন মনে হচ্ছিল আন্দোলনকে দমন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার, এরকম সময়েই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নতুন আন্দোলনের ঢেউ ওঠে। প্রচুর মৃত্যু বরণের মধ্য দিয়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নতুন করে আন্দোলনকে দাঁড় করিয়ে দেয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের সরকারী চাকরী নিয়ে চিন্তা থাকার কথা নয়। তাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণ বলাই যায় সরকারের দমনের ফলে যে বিশাল মৃত্যু মিছিল হয়েছে, তার বিরুদ্ধে। অপেক্ষাকৃত উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে অপেক্ষাকৃত নীম্ন ও নীম্নমধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীদের শুরু করা আন্দোলনের লাগাম হাতে নিয়ে নেয় তার নজিরও খুব বেশি বিশ্ব আন্দোলনে নেই। তবে শোনা যায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমন্বায়ক নির্বাচন শুরু হয়ে গেছিল মেধা আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে পরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে ছাত্রছাত্রীরা ভাড়া বাড়িতে থাকত সেখানেও বেসরকারী ও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা গাটছড়া তৈরি হয়ে যায়। বিপ্লব শেষে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সরকারে বা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় খুব আগ্রহ দেখায়নি। তবে অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বায়ক অবশ্য জানিয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বায়করা তাদের সরকারে যোগ দেওয়া নিয়ে কিছু জানায়নি এবং বলা যায় তাদেরকে সাইড করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এই উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির ছাত্রদের প্রাণ দিয়ে আন্দোলনকে সফল করা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর থেকে এই আন্দোলনের একটা শ্রেণিগত ও প্রজন্মগত (জেন-জি) দিক উঠে আসে যা নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।

১৮ই জুলাই-এর পরে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবল পাট ও গার্মেন্টস শিল্পের সংগঠিত শ্রমিকেরাই নন ঢাকার রাস্তার অজস্র পথশিশু (যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে) ও অজস্র পথ যুবক (যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৪-এর মধ্যে) যারা অসংগঠিত শ্রমিক, তারাও এই আন্দোলনে নামেন এবং মৃত্যু বরণ করেন। এই আন্দোলনে যে ২০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার ৬৫%ই হোল এই সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিক। তাছাড়া ঢাকার রিকসওয়ালারাও বিশাল অবদান রাখে আন্দোলনে আহতদের বিনা পয়সায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে। ঢাকার অলিতে গলিতে রিকসা। রিকসা বলা যায় ঢাকার যান চলাচলের অন্যতম ভিত্তি। তাই রিকসাওয়ালাদের সহযোগিতার ফলে আন্দোলনকারীরা চিকিৎসা পায় অনেক সহজে এবং তা আন্দোলনকারীদের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও ১৮ঈ জুলাই-এর পরে মাদ্রাসার ছাত্ররাও অনেক রক্তের বিনিময়ে এই আন্দোলন সফল করে। মূলত শ্রমিক শ্রেণির ঘরের ছেলেরাই মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কি আন্দোলনকে নীরবে সমর্থন দেওয়ার লোক ছিল? যেভাবে আন্দোলন দমনে ১৭ই জুলাই ২০২৪-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘ-এর গাড়ি ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে তাতে যথেষ্ট সন্দেহ জাগে যে রাষ্ট্রের ভেতর থেকেও অন্তর্ঘাত হয়েছে। বলা হয় ৩রা, ৪র্থ ও ৫ই অগাস্ট বহু জায়গায় সেনাবাহিনী আন্দোলনকারীদের সঙ্গী হয়ে পুলিশের সাথে গুলি বিনিময় করেছে। ডিজিএফআই (বাংলাদেশের গুপ্তচর বিভাগ) অনেক আগে থেকেই "বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন"-এর নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিল। অন্যতম সমন্বায়ক মাহফুজ আলম ছিল ফারহাদ মাজহার-এর রাজনৈতিক ক্লাসের রেগুলার ছাত্র। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অঙ্গ আসিফ নজরুল, আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম না কি "ছাত্র শক্তি" বলে এক সংগঠন চালিয়ে আসছিল এক বছর ধরে। এই আসিফ নজরুল যিনি কি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তিনি এক সময় আওয়ামীর পক্ষে জামাতের বিরুদ্ধে "ঘাতক নির্মূল কমিটি"-এর অন্যতম মুখ হিসেবে কাজ করেছেন। আবার সমন্বায়ক সারজিস আলম আগে ছিল ছাত্র লীগ-এর নেতা। অজস্র ছাত্র লীগের নেতা বিপ্লবের পরে নিজেদের গুপ্ত জামাত কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এরপরে আসি কিছু ইউটিউবার-এর কথায় যাদের এই বিপ্লবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নিয় ইয়র্ক থেকে প্রায় ৭ বছর ধরে হাসিনা বিরোধী প্রচার চালাতেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। তার সঙ্গে যে হাসিনা বিরোধী ডিজিএফআই কর্মীরা যুক্ত ছিল তা তার তদন্তমূলক সাংবাদিকতা দেখলেই বোঝা যায়। তিনি আওয়ামী নেতা ও আমলাদের যৌন কেচ্ছা ও আর্থিক দুর্নীতি দারুণভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হন বাংলাদেশের মানুষের কাছে। এর পরেই নাম আসে পিনাকী ভট্টাচার্যের। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সদস্য কিন্তু দারুণভাবে ইসলামী আন্দোলনের বাচন ও ন্যারেটিভের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে কথা বলতে পেরেছেন। প্যারিস থেকে উনি ইউটিউবে প্রচার চালাতেন। মালদ্বীপের ভারত হটাও আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারতের পণ্য বর্জনের ডাক দেন এবং এই ডাকের বাংলাদেশের মানুষকে ভারত বিরোধী করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কোটা বিরোধী আন্দোলন ৪ঠা জুলাই শুরু হওয়ার পর থেকে পিনাকী বাবু এই আন্দোলনকে হাসিনার ভারত হটাও আন্দোলন থেকে মোড় ঘোড়ানোর আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু আন্দোলন যখন সফল হোতে থাকে তখন পিনাকী বাবু এই আন্দোলনের পক্ষে চলে আসেন। তিনি ছাত্র সমন্বায়কদের ব্লকেড শব্দ ব্যবহারকে কলকাতা মুখীনতা বলায় সমন্বায়ক মাহফুজ আলম আব্দুল্লাহ=এর সঙ্গে ফেসবুকে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ১১ই জুলাই। এর ফলে ছাত্র সমন্বায়কদের অনেকেই তাকে অপছন্দ করে। আর তার ভিডিও দেখে অনেকেই তার সঙ্গে হেফাজত-এ-ইসলাম-এর যোগাযোগ খুঁজে পান। নিউ ইয়র্ক থেকে কণক সারোয়ার নামক সাংবাদিকও বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী বিরোধী করে তুলতে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখেন। এরা তিনজন আওয়ামীর পক্ষে থাকা মূল্ধারা মিডিয়া (প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, জমুনা, একাত্তর)-কে রীতিমতো গুরুত্বহীন করে দেয় বাংলাদেশীদের কাছে।

বিদেশী শক্তির হাত ছিল কি না সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বারবার বলে আসছে ৫ই অগাস্টের বিপ্লবের পেছনে কাজ করছে পাকিস্তান, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মালদ্বীপে "ভারত হটাও" আন্দোলন করে নির্বাচন জিতে ক্ষমতায় আসে মইজু। তিনি ভারতের সেনা ও হেলকপ্টার মালদ্বীপের মাটি থেকে সরিয়ে দেন। ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর তখন বলেন কিছু শক্তি ভারত বিরোধী আন্দোলনের পেছনে আছে এবং আরও কিছু শক্তি এই পেছনে থাকা শক্তির পেছনে আছে। এখানে জয়শঙ্কর বলার চেষ্টা করেছিলেন যে ভারত বিরোধী আন্দোলনের পেছনে চীন আছে আর চীনের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আছে। কিছু দিন ধরেই খালিস্তানী নেতাদের কানাডার মাটিতে হত্যা করা নিয়ে কানাডা ও মার্কিন সরকার ভারতের ওপর রেগে আছে। এমনকি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আজিত দোভাল-এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারি করেছে মার্কিন সরকার। ভারতের বর্তমান শাসক মোদীর অন্যতম কাছের ব্যবসায়ী আদানীর বিরুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে চলেছে একের পর এক পদক্ষেপ। অথচ এই আদানীর বন্দর ব্যবসা-কে মনে করা হচ্ছিল চীনের বন্দর ব্যবসার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগী। আদানী ইসরাইল-এর হাইফা বন্দরে কাজ শুরু করে মার্কিন সরকার চীনের কোম্পানীকে হাইফা বন্দর দিতে ইসরাইল-কে নিষেধ করায়। আদানী ভিয়েতনামেও চীনের কাছে বন্দর বানাচ্ছে যা মার্কিন সরকারকে খুশি করার কথা। তবে মোদী সরকার উইক্রেইন যুদ্ধ উপলক্ষ্যে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে অস্বীকার করার ফলেই মার্কিন সরকার ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন অনেকেই মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় শক্তিশালী গোষ্ঠী আছে তারা ট্রাম্প সমর্থক এবং তারা বর্তমানে মার্কিন শ্বেতাঙ্গবাদী ও জায়নবাদী গোষ্ঠীর সাথে মিলিত হয়ে ডেমোক্র্যাট মেনিফেস্টোর বিরোধীতা করছে। এমনকি তারা রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিন-এর সাথেও গোপনে যুক্ত। অর্থাৎ ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার বদল ও সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে যুক্ত। আর তাই ভারতের শাসন থেকে হিন্দুত্ববাদীদের হটাতে চায় মার্কিন ডেমোক্র্যাট সরকার। আবার অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ভারত চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়না বরং চীনের জুজু দেখিয়ে মার্কিন সরকারের থেকে প্রযুক্তি পুঁজি ব্যবসা হাতিয়ে নিতে চায়। আর এই মনোভাব বুঝতে পেরেই মার্কিন সরকার ভারত সরকার-কে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে হয় চীনের সাথে লড়াই-এর জন্য প্রস্তুত হও, নয়তো ভারতকে নানাদিক থেকে কোণঠাসা করে ফেলা হবে। যেই কারণেই হোক ভারতকে কোণঠাসা করতে বাংলাদেশের ৫ই অগাস্ট বিপ্লবে মার্কিন ভূমিকা থাকতেও পারে। ২০০৭ সালের ১/১১ ক্যু-এর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইউনূস-কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল তাতে এমন ধারণা হতেই পারে। তবে এও ঠিক যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ইউনূস সর্বজন গ্রাহ্য। তাই তাকে প্রধান হতে অনুরোধ করাটা স্বাভাবিক। মনে রাখা দরকার তার নাম প্রস্তাব করেছিল "বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন"-এর নেতৃত্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দঃ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ডোনাল্ড লু বর্তমান সরকারকে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কিনতে বলেছে। এবার দেখার বিষয় চীনকে সরিয়ে মার্কিন সরঞ্জাম কেনে কিনা বর্তমান ইউনূস সরকার। কিন্তু শোনা যাচ্ছে ইউনূস সরকার চীনের থেকেই ১৬টা ৪র্থ প্রজন্মের জে-১০সি নামক সামরিক জেট বিমান কিনতে চলেছে। তাহলে কি চীনই ৫ই অগাস্ট বিপ্লবের নেপথ্যে। মনে রাখা দরকার শেখ হাসিনা চীনে গেছিলেন চার দিনের জন্যে। কিন্তু দু দিনের মাথায় ১০ই জুলাই তিনি ফিরে আসেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায় যে হাসিনাকে রাষ্ট্রপতির প্রাপ্য প্রোটোকল চীন দেয়নি। তবে কি চীন জানতো হাসিনা আর প্রধান থাকবেনা বাংলাদেশের? শেখ হাসিনা যেভাবে ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল লাইন তৈরি করতে দিয়েছিলেন তাতে চীনের যথেষ্ট রেগে যাওয়ার কারণ ছিল। এই রেল লাইন হয়ে গেলে চীনের ডোকালাম দিয়ে চিকেন নেকের ঘাড়ে নিশ্বাস নেওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যেত। আর বাংলাদেশের সামরিক বিভাগে চীনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি ছিলই। বাংলাদেশ সেনা কোনও দিনই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমায়নি শেষ ১৫ বছরে বরং বাড়িয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায় যে "র" না কি হাসিনা-কে বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান সম্পর্কে সাবধান করেছিল এই বলে যে ওয়াকার চীনের অত্যন্ত কাছের লোক।

কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার তৈরি হয়েছে তার অন্যতম দায়িত্ব হোল নতুন সংবিধান সৃষ্টি এবং বেশ কিছু সংস্কার। ছাত্র নেতারা চাইছেন সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনে যেতে আর প্রধান দলগুলো যেমন বিএনপি ও জামাত-এ-ইসলামী চাইছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন। বিএনপি ও জামাত মনে করে যে ইউনূস ও ছাত্ররা "নাগরিক শক্তি"র মতোই কোনও নতুন দল গোছাতে সময় নিচ্ছে আর তা চাইছে সংস্কারের ছুতো ধরে। ভারতও চাইছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন। আর এখানেই অনেকে ছাত্র নেতা ও বিপ্লবী জনতা মনে করছে যে বিএনপি জামাত ভারতের সাথে হাত মিলিয়ে নিয়েছে। বিএনপি নেতাদের নামে অভিযোগ তারা বহু আওয়ামী নেতাদের লুকিয়ে রেখেছে টাকার বিনিময়ে, সামরিক কর্তারা নাকি টাকার বিনিময় অনেক আওয়ামী নেতাদের ভারতে পালাতে সাহায্য করেছে এবং জামাত নাকি বহু আওয়ামী নেতা কর্মীদের নিজেদের দলে ঢোকাচ্ছে। শুধু তাই নয় বিএনপি ও জামাত চাইছে আওয়ামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। ছাত্র ও বিপ্লবী জনতারা চাইছে আওয়ামী লীগ-কে ব্যান করতে। বিএনপি চাইছে সংবিধানের মূলধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে আর ছাত্রজনতা চাইছে সংবিধানের আমূল পরিবর্তন। ছাত্র নেতারা ছাত্র লীগকে ব্যান করতে সক্ষম হোলেও আওয়ামীকে ব্যান করাতে বা রাষ্ট্রপতি চুপ্পু-কে অপসারণ করতে ব্যর্থ হয়। মাঠে বিএনপি এখন যে ক্যাডার সমাগম করতে পারছে, ছাত্র নেতারা তা পারছেনা। ফলে বিএনপি-কে অস্বীকার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলতে পারছেনা। ছাত্র সমন্বায়কদের এই ব্যর্থতার কারণ নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।

বর্তমান ইউনূস সরকার আসলে পুরনো দলগুলো এবং নতুন ব্যবস্থা চাওয়া ছাত্র জনতার মধ্যে একটা সমঝৌতা স্থাপনকারী। কিন্তু এখানে মূল প্রশ্ন পুরনো দলগুলো কি ধরে রাখতে চাইছে আর কেন আর নতুন ব্যবস্থা চাওয়া মানুষ কি নতুনত্ব চাইছে? (এখানে মনে রাখা দরকার যে নতুন ব্যবস্থার দাবি পুরনো দলগুলোর মধ্যেও আছে।) পুরনো দলগুলো ঠিক কি ধরে রাখতে চাইছে তা বুঝতে গেলে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসে। বাংলাদেশে এখন ৮৯% বাঙালি মুসলমান, ৮% বাঙালি হিন্দু ও ৩% অন্যান্য জাতি। ইরানের সিস্তান প্রদেশ থেকে আসা ইলিয়াস শাহ ব্রাক্ষণ কন্যা পুষ্পবতী ভট্টাচার্য-এর পাণি গ্রহণ করেন এবং ১৩৫৩ সালে তিনি স্বাধীন বাংলা সালতানাত তৈরি করেন দিল্লির সুলতানকে একডালার যুদ্ধে পরাস্ত করে। বাঙালি মুসলমান তখন থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের পিয়াসী। ১৫৭৫ সালে শেষ স্বাধীন বাংলার সুলতান দাউদ খান কুররাণি দিল্লির মোঘলদের কাছে রাজমহলের যুদ্ধে পরাজিত হন। ১৭০৭ সালের পরে মোঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে তারা আস্তে আস্তে স্বাধীনতার দিকে পা বাড়াচ্ছিল কিন্তু শেষমেশ ব্রিটিশদের হাতে পরাভূত হয়। বাঙালি হিন্দু ব্যবসায়ীরা ব্রিটিশদের সাহায্যে বাংলার জমিদারী কিনে বসে। ব্রিটিশ ও বাঙালি হিন্দু জমিদার ঐক্যের সামনে তীতু মীর বা দুধু মিয়ার লড়াই টিকতে পারেনি বেশি দিন। কিন্তু পশ্চীমি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি হিন্দুর সঙ্গে ১৮৭০ সাল থেকে যখন দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশদের, তখনও বাঙালি মুসলমান বাংলার স্বাধীনতাকে সবার ওপরে তুলে ধরে। ১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন হিন্দিকে ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে চান তখন বাঙালি মুসলমান ভাষাবিদ ডঃ শহীদুল্লাহ সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলার দাবি পেশ করেন। ১৯২৬ সালে কোলকাতার ইসলামীয়া কলেজের ছাত্র নির্বাচনে বাঙালি মুসলমান ছাত্ররা উর্দুভাষী মুসলমান ছাত্রদের পরাজিত করে। বাঙালি মুসলমানদের লক্ষ্য ছিল একদিকে বাঙালি হিন্দু জমিদারী উচ্ছ্বেদ আর অন্যদিকে বাংলা ভাষা ও রাষ্ট্রের স্বাধীন ঐতিহ্য যা ইলিয়াস শাহ তৈরি করেন তা অক্ষুণ্ণ রাখা। ১৯৪৭-এ যুক্ত বাংলার মুসলমান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রায় সকলেই যেখানে স্বাধীন যুক্ত বাংলার পক্ষে ভোট দেন সেখানে পঃ বঙ্গের হিন্দু প্রতিনিধিরা বাংলা ভাগের পক্ষে রায় দেন। ফলে পশ্চীম ও পূর্ব দুই বাংলাই যথাক্রমে হিন্দি ও উর্দু খপ্পরে পড়ে। এই জন্যেই ছাত্র সমন্বায়ক (ইউনূসের মতে মাস্টারমাইণ্ড) মাহফুজ আলম আবদাল্লাহ বলেছেন যে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন যুক্ত বাংলা তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে বাঙালি মুসলমানের পাকিস্তানের আকাঙ্খা ছিলনা, বরং ছিল পূর্ব পাকিস্তানের আকাঙ্খা যার মূল উদ্যেশ্য ছিল জমিদারি প্রথার উচ্ছ্বেদ। এই জন্যে বাঙালি নীম্ন বর্ণের হিন্দুরাও পূর্ব পাকিস্তানকে সমর্থন করে। একথাও সত্য যে পশ্চীম পাকিস্তানে আজও পাঞ্জাব ও সিন্ধে জমিদারেরা শক্তিশালী এবং উর্দু জমিদারেরাই মূলত মুসলিম লীগের পৃষ্টপোষক ছিল। তাই বলাই যায় পূর্ব পাকিস্তানের আকাঙ্খা ও পশ্চীম পাকিস্তানের আকাঙ্খা প্রথম থেকেই আলাদা ছিল। পশ্চীম বঙ্গ-এর বাঙালিরা ব্যবসা ও ভোট ব্যাঙ্ক দুই দিক দিয়েই হিন্দিভাষিদের আধিপত্যের মুখে পড়ে। পূর্ব বঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান-এর বাঙালিরা ভোট ব্যাঙ্কের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জাতি ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রে কিন্তু ব্যবসার দিকে পাঞ্জাবী সিন্ধী বিহারীরা এগিয়ে ছিল। সুতরাং বলা যায় ১৯৪৭-এ বাঙালি মুসলমান বাঙালি নীম্ন বর্ণের হিন্দুদের সাথে নিয়ে বাঙালি উচ্চ বর্ণের জমিদারদের উচ্ছ্বেদ করে আর ১৯৭১-এ পাঞ্জাবী সিন্ধি বিহারী সহ সমস্ত উর্দুভাষীদের হটিয়ে তাদের ব্যবসা দখল করে। এভাবে দুই বার আদি পুঁজির সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশে গড়ে ওঠে একটা লুটেরা বাণিয়া পুঁজিপতি শ্রেণি যাদের পুঁজির উৎস উৎপাদন নয়, বরং লুট বাণিজ্য তোলাবাজি মজুতদারি। ১৯৭১ সাল থেকে এই শ্রেণিটাই ক্ষমতায় আছে। এই মজুতদার বাণিয়া লুটেরা পুঁজিপতিরাই আবার ভারতের বাণিয়া পুঁজি ও বিশেষ করে কোলকাতার মাড়োয়াড়ি বাণিয়া-দের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হয় তারাও জিয়া উর রহমান-এর ২৭-শে মার্চ-এর স্বাধীনতা ঘোষণার সময় থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে। ১৯৭৫ সালে মুজিবুর রহমান-এর জনপ্রিয়াতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল মজুতদারির ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি। জানুয়ারি, ১৯৭৫ সালে সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার কারণও ছিল তার মজুতদারদের ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা। মেজর ডালিম শেখ মুজিব-কে হত্যা করেন। যদিও কথিত আছে যে মুজিব-এর বড়ো ছেলে শেখ কামাল ডালিম-এর সুন্দরী স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গেছিল বলেই ডালিম এবং সেনাবাহিনীর একটা অংশ তার প্রতিশোধ নেয়, কিন্তু অনেকেই বলেছেন যে সিরাজ সিকদার-এর সঙ্গে মেজর ডালিম-এর যোগ ছিল বলেই তাকে শিক্ষা দিতে কামাল তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যান। যাই হোক, ১৯৭৫ সালের ক্যু ছিল কিছু বিদ্রোহী সেনা অফিসারের এই মজুতদার শ্রেণি ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। মানুষের নিঃশব্দ সমর্থন থাকলেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলনা তাতে। ফলে মজুতদার শ্রেণি ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এদিকে আস্তে আস্তে বাংলাদেশে একটা উৎপাদক বুর্জোয়া শ্রেণিও গড়ে ওঠে। বিশ্বায়ণের প্রভাবে গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিকস, জাহাজ কাটার ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। বিশ্ব পুঁজির সাথে হাত মিলিয়ে ক্রমেই নারীর শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ দারুণভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় তারা। বর্তমানে ৩৫% থেকে ৪০% বাংলাদেশি নারী শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ করে। ভারতে মাত্র ১৮% নারী শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ করে থাকে। বাণিয়া লুটেরা মজুতদার শ্রেণি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য উচ্চ রাখলেও চাষীদের আয় হয় সামান্য। ফলে গ্রাম থেকে কৃষি ছেড়ে শহরে শিল্প শ্রমিক হয়ে আসার প্রবণতাও খুব বেশি থাকে বাংলাদেশে। ফলে লুটেরা বাণিয়া পুঁজি, উৎপাদক পুঁজি ও বিশ্ব পুঁজির মধ্যে একটা ঐক্য ছিল। কিন্তু ক্রমেই বাংলাদেশ উন্নয়নের এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যখন উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি শহর থেকে গ্রামে ফিরতে বাধ্য করছে শ্রমিকদের। একে তো বিশ্ব বাজারের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি আবার তার সাথে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট। এর সাথে মজুতদারির প্রভাবে ও ভারতীয় স্বার্থে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টা উৎপাদক পুঁজি ও বিশ্ব পুঁজি আর মেনে নিতে রাজি নয়। তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তাতে বিশ্ব পুঁজি উৎপাদন করার জন্য চীন প্লাস কৌশল নিতে বাধ্য হচ্ছে। এর অর্থ হল উৎপাদনের শেষ ধাপ চীন ব্যতিক্রমে অন্য কোনও দেশ থেকে করিয়ে আনা। এই ক্ষেত্রে পুঁজির পছন্দ এমন দেশ যার শুল্ক হার কম, উচ্চ শতাংশে শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ, নীম্ন মুদ্রাস্ফীতি ও ভূগলিক অবস্থান চীন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটে। এর ফলে চীন সহজেই শেষ ধাপের উৎপাদন পাঠিয়ে দিচ্ছে ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্বোডিয়া, থাইল্যাণ্ড, মালেয়াশিয়া ও মেক্সিকোতে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চললেও চীনের বর্ডার থেকে কাছিন, চীন হয়ে রাখাইন বা আরাকান এখন কাছিন ইণ্ডীপেন্ডেন্ট আর্মি (কে আই এ), চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সি এন এফ) ও আরাকান আর্মি (এ এ)-এর দখলে। এই সমস্ত অঞ্চল মূলত পাহাড়ি জঙ্গল অঞ্চল এবং জনঘনত্ব বামেরদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু বাংলাদেশ ১৮ কোটি থেকে ২০ কোটি জনতার দেশ। সেখানে শুল্ক হার কম, উচ্চ শ্রম বাজার অংশগ্রহণ শতাংশ আছে, এবং চীন থেকে খুব দূরে নয়। এবার দেশিয় লুটেরা বাণিয়া মজুতদার পুঁজির বিষ দাঁত ভাঙ্গতে পারলেই বাংলাদেশকে চীন প্লাস কৌশলে আরও বেশি করে আনা যাবে। চীন প্লাস কৌশল ছাড়াও চীন চাইছে কম মূল্য যোগ করে এমন শিল্পগুলোকে কম জনপ্রতি আয়ের দেশে পাঠাতে এবং নিজে ইভি, সোলার প্যানেল, সেমিকণ্ডাক্টর, এ আই-এর মতো উচ্চ মূল্য যোগকারী শিল্পে মনোযোগ দিতে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকুক বা না থাকুক তারা ৫ই অগাস্ট বিপ্লবকে স্বাগত জানাচ্ছে।

ভারত অন্যদিকে উচ্চ শুল্ক হারের দেশ, শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ কম আর ভূগলিক অবস্থান পূর্ব চীন (বিশ্ব উৎপাদনের প্রাণ কেন্দ্র পূর্ব চীন আর পঃ চীন মূলত মরুভূমী আর জনঘনত্ব অত্যন্ত কম আর তাই বিশ্ব উৎপাদনেরও উপযোগী না) বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকটে নয়। ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যা তাই ভোক্তা হিসেবেই আদর্শ, শ্রমিক হিসেবে ততোটা নয়। চীন প্লাস কৌশল-এর সুবিধে তাই ভারত নিতে পারছেনা- এই কথা বলছে ভারতের "নীতি আয়োগ" নিজেই। এর সঙ্গে ভারতের আর একটা সমস্যা হল চীনের সঙ্গে তার ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা যার পরিণাম চীন উৎপাদনের শেষ ধাপ ভারতে বিনিয়োগ করতে চাইছেনা। চীন মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের একটা বিষয় হল চীন প্লাস কৌশলের সুযোগ কোন দেশ নিতে পারবে তা নির্ণয় করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে চেয়েছিল চীনকে বাদ দিয়ে এমন দেশ খুঁজে নেওয়া যার সাথে তার ভূরাজনৈতিক ঐক্য হতে পারে। চীন শেষ ধাপের উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে এমন দেশে যার সাথে তার ভূরাজনৈতিক বিরোধ নেই। চীন এই লড়াইতে জিতছে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-কে বা ফিলিপিন্স-কে আদর্শ উৎপাদন ক্ষেত্র বানাতে ব্যর্থ কিন্তু চীন মেক্সিকো, মালেয়াশিয়া, থাইল্যাণ্ড, লাওস, কাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম-কে আদর্শ উৎপাদক বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের "নীতি আয়োগ" জানিয়েছে যে ভারতের উচিৎ ভিয়েতনাম ও থাইল্যাণ্ড-এর মতো চীনা বিনিয়োগের সাহায্যে চীন প্লাস কৌশলের সুবিধে নেওয়া কারণ চীনের থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে উচ্চ শুল্ক বসিয়ে দেশে উচ্চ মূল্যের উৎপাদন করে ভারত এগিয়ে যেতে পারছেনা। কারণ সেই দ্রব্যের মূল্য বিশ্ব বাজারের মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। মানে চীন ভারতের যেই ক্ষেত্রের বিকাশ চাইবে কেবল সেই ক্ষেত্রের বিকাশই হওয়া সম্ভব, ভারত তার ইচ্ছে মতো ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাতে পারবেনা। ইন্দোনেশিয়াও চীনের বিনিয়োগ টানার পথেই এগোচ্ছে। মিয়ানমার অস্থিতিশীল বলেই হয়তো কাছিন, চিন প্রদেশ ও আরাকান বিদ্রোহীদের দিয়ে ক্রমেই স্বাধীন রাষ্ট্র করার দিকে এগোচ্ছে চীন। (মনে রাখা দরকার কাছিন, চীন, আরকান, ওয়া, ট্যাং, শান ইত্যাদি বিদ্রোহী নেতারা সবাই চীনে অবস্থান করে এবং চীন থেকেই অস্ত্র পায়। চীন মিয়ানমার জুন্টা সরকারকেও অস্ত্র দেয়। এবং এই স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী ও জুন্টা সরকারের মধ্যে মিমাংসা ঘটায়। চীন মনে করে যদি মিয়ানমারের ৬৫% যে বামের জনগোষ্ঠি তারা বর্তমানে পশ্চীম পন্থী ন্যাশনাল ইউনিটি গভারনমেন্ট ও মিলিটারি জুন্টা তত্মেদাও-এর মধ্যে দ্বন্দ্বরত। বাকি ৩৫% অধিকাংশ বিদ্রোহী জনগোষ্ঠীকেই নিয়ন্ত্রণ করে চীন। এবং এদের নিয়ন্ত্রণ করেই বামেরদের নিয়ন্ত্রণে রাখে চীন।)

৫ই অগাস্টের ফলে বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের পক্ষে তার উঃ পূর্বে বাণিজ্য করাই প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। মিয়ানমার হয়ে মণিপুরে যাওয়ার জন্যে যে কালাদান প্রজেক্ট ভারতকে করতে দিয়েছিল মিয়ানমার জুন্টা সরকার তা আরাকান আর্মি প্রথমে আটকে দেয়। বলা যায় চীনের বিরুদ্ধে গিয়ে জুন্টা ভারতকে কালাদান প্রজেক্ট দিলে আরাকান আর্মিকে দিয়ে চীন সেই প্রজেক্ট আটকিয়ে দেয়। ফলে ভারত সরকার আরাকান, কাছিন ও পশ্চিম পন্থী ন্যাশনাল ইউনিটি গভরনমেন্ট-কে ডাকে দিল্লিতে আলোচনা করতে। আরাকান আর্মি যদিও বলেছে খাজনা পেলে তাদের কালাদান প্রজেক্টে সমস্যা নেই কিন্তু এই বিষয়টা ঠিক করার লক্ষ্যেই হয়তো ডোভাল চীন যাত্রা করেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ৫ই অগাস্ট বিপ্লবের ফলে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে উঃ পূর্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এখন অনেকটাই চীনের দয়ার ওপর নির্ভরশীল। বলাই বাহুল্য নাগা বিদ্রোহী নেতারাও চীনে থাকে। মিয়ানমারের চিন, দঃ মণিপুরের কুকি ও মিজো এবং নাগা নেতারা মিলে ভারতের উঃ পূর্বাঞ্চলে ভারতকে রীতিমত চাপে ফেলে দিতেই পারে।

উৎপাদক পুঁজি ও শ্রমিক শ্রেণির ঐক্য বনাম লুটেরা বাণিয়া পুঁজি

আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের ৫ই অগাস্ট-এর বিপ্লব হল উৎপাদক পুঁজির লুটেরা বাণিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে এবং তার মদতদাতা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে করা বিপ্লব। সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিক শ্রেণি এই বিপ্লবকে সমর্থন করে। বিশ্বায়ণের যুগে পুঁজি এক দেশ থেকে অন্য দেশে অনায়াসে গমণ করে আর তাই বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণির দর কষাকষির ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায়। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে মার্কিন চীন বাণিজ্য যুদ্ধ ও প্রযুক্তি যুদ্ধের ফলে পুঁজির ইচ্ছে মতো বিভিন্ন দেশে গমণ করার স্বাধীনতা আগের থেকে কমে গেছে। আবার চীনের মজুরি শেষ ৩০ বছরে ৭ গুণ বেড়েছে আর অন্য কোথাও শ্রমিক শ্রেণির উৎপাদনশীলতা (শ্রমিক পিছু উৎপাদন) চীনের মতো না। তাই পুঁজির সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষমতা কিছুটা হলেও শ্রমিক শ্রেণি ফিরে পাচ্ছে। তাই দুনিয়া জুড়েই শ্রমিক আন্দোলন ও সংগঠন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির এই ক্ষমতা বৃদ্ধিকে হাতিয়ার করেই বাংলাদেশে উৎপাদক পুঁজি বাজিমাত করেছে। বিশ্ব পুঁজিও এই বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়েছে নিজেদের স্বার্থেই। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস এই কারণেই শ্রমিক শ্রেণির মজুরি বাড়িয়েছেন ৯% এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অর্থনৈতিক স্থায়িত্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। অর্থাৎ মজুতদার বাণিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সবচেয়ে বড়ো বিষয় বাণিয়া পুঁজিকে কোণঠাসা করতে সরকারী কৃষি বাজার তৈরি করা হবে। ইউনূস হাসিনার আমলের বাংলাদেশের ব্যবস্থাকে ক্লেপ্টোক্রাটিক ক্যাপিটালিস্ম বা লুটেরা পুঁজিবাদ বলে চিহ্নিত করেছেন। আগেই আলোচনা করেছি যে বাংলাদেশ শেষ ৫৩ বছরে আরও বেশি একভাষি ও এক ধর্মের হয়ে ওঠায় সমাজে মেধা বা যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্তি-র তত্ত্ব অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ফলে উৎপাদক পুঁজি ও শ্রমিক শ্রেণির ঐক্য মহবুত হয়েছে। পুরনো দল বিএনপি বা জামাত মানেই লুটেরা বাণিয়া পুঁজি এমন ধারণা ঠিক না। এই সমস্ত দলের মধ্যেও উৎপাদক পুঁজির পক্ষের লক আছে। আবার আমলাতন্ত্র ও সামরিকবাহিনীর মধ্যেও লুটেরা বাণিয়া পুঁজির সমর্থক ও উৎপাদক পুঁজির সমর্থক দুইই আছে। ছাত্র নেতারা এখনও কৃষক শ্রমিক ছোট ব্যবসায়ী-দের সঙ্গে নিয়ে তোলাবাজ নেতা বা মজুতদার ব্যবসায়ী-দের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। আর এখানেই উৎপাদক পুঁজি তার দুর্বলতা দেখাচ্ছে। আর এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই লুটেরা বাণিয়া মজুতদার পুঁজি ভারতের সাহায্যে ফিরে আসার চেষ্টা করছে বা করবে। কৃষি বাজার তৈরির যে কথা ইউনূস বলেছেন তা ওপর থেকে রাষ্ট্র দ্বারা চাপানো হলে খুব একটা সফল হবেনা, ছাত্রদের নেতৃত্বে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে কৃষি বাজার তৈরি করলে তা সফল হবে কারণ লুটেরা পুঁজির বিরুদ্ধে একটা জাগ্রত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তা কাজ করবে। ছাত্রদের উচিৎ শ্রমিক ইউনিইয়ন ও ছোট ব্যবসায়ীদের নিয়ে সংগঠন বানিয়ে তোলাবাজি মজুতদারি বন্ধি করা। ইউনূসের "সামাজিক ব্যবসা" তত্ত্ব ব্যবহার কেও এই কাজ ছাত্ররা করতে পারে। কিন্তু ছাত্র সমন্বায়করা এখনো উৎপাদন ও অর্থনীতিতে ঢোকার দিকে মনোযোগ দেয়নি। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে নিয়ে ছাত্র ঐক্য তৈরিতেও তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আর তাই বর্তমান সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বায়করা মানুষকে আর রাস্তায় নামাতে পারছেনা।

উঃ পূর্ব, পঃ বঙ্গ ও বাংলাদেশ

ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ ৫ই অগাস্ট বিপ্লবের ফলে যথেষ্ট কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তার উঃ পূরবাঞ্চলের নিরাপত্তা এখন চীনের দয়ার ওপর নির্ভর করছে। স্বাভাবিকভাবেই ভারত চীনের সঙ্গে ঝামেলা ত্যাগ করে মিটমাটের চেষ্টা করছে। পেন্টাগন স্যাটেলাইট ছবি দিয়ে বলেছে চীন লাদাখ থেকে সরেনি অথচ মোদী সরকার বলছে চীন ২০২০ সালের অবস্থায় ফিরে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে চীন ভারতকে ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলতে সক্ষম হয়েছে এবং মার্কিন সরকারকে রাগিয়ে কোনও কাজ ভারতের পক্ষে করা হবে বিপজ্জনক। ভারতের ভূরাজনৈতিক বিপদের সময় বাংলাদেশ চাইছে ভারতের পঃ বঙ্গ ও উঃ পূর্বে নিজেদের প্রভাব বাঁড়াতে। উঃ পূর্বের সবচেয়ে নিকটবর্তী বন্দর হল বাংলাদেশের বন্দরগুলো। ফলে ভারতের উঃ পূর্ব বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। আবার পঃ বঙ্গের মোট জনসংখ্যার ৩২% শতাংশ ও আসামের ৪০% এখন মুসলিম। ঢাকা আর দিল্লি দুজনেই জানে পঃ বঙ্গ ও আসাম ও ত্রিপুরার বাঙালি হিন্দুদের একটা অংশকে নিজেদের পক্ষে এনেই ঢাকা বাজিমাত করে দিতে পারে। তাই বাঙালি হিন্দুদের ৫ই অগাস্ট বিপ্লবের প্রতি বিষিয়ে তুলতে লাহামছাড়া মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় নিচ্ছে দিল্লি। এর থেকে বোঝা যায় যে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ সত্যি বৃহৎ বাংলা-র ভূত এখনো দেখে। বলা বাহুল্য ১৯৫১ সালের জনগণনায় দেখা যায় পঃ বঙ্গের মোট জনসংখ্যার ৭৮% ছিল বাঙালি হিন্দু, ১৮% ছিল মুসলিম (বাঙালি ও উর্দু মিলিয়ে), অন্যান্য ছিল ৪%। ২০১১ সালের জনগণনায় পাওয়া যাচ্ছে ৫৮% বাঙালি হিন্দু, ২৯% মুসলিম (২৭% বাঙালি মুসলিম ও ২% উর্দু), ৭% হিন্দিভাষি (বিহারী ৩%, মাড়োয়াড়ি ৩%, অন্যান্য ১%), সাঁওতাল ৩%, নেপালী ২% ও অন্যান্য ১%। অর্থাৎ পঃ বঙ্গে বাঙালি হিন্দুদের জনসংখ্যার শেয়ার কমেছে ২০%। বর্তমানে ২০২৪ সালে এক্সট্রাপোলেট করলে দেখা যাবে বাঙালি হিন্দু ৫৩%, মুসলিম ৩৩% ও হিন্দি ১০%। অর্থাৎ পঃ বঙ্গে বাঙালি হিন্দু ক্ষয়িষ্ণু জাতিতে পরিণত হয়েছে। এর সাথে আমরা দেখি যে ১৯৪১ সালে ৩০% হিন্দু ছিল পূর্ব বঙ্গে এবং আজ তা ৮% অর্থাৎ হ্রাস পেয়েছে ২২%। বাঙালি হিন্দুদের মোট জনসংখ্যার শেয়ারে ২০% থেকে ২৫%-এর মতো পতন দুই বাংলাতেই লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ দুই বাংলাতেই বাঙালি হিন্দুদের জনসংখ্যার শেয়ারে হ্রাস ঘটেছে একই হারে। তাই বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছেনা। বরং দুই বাংলাতেই বাঙালি হিন্দুর জন্মহার কম বলেই এমন হয়েছে বলা যায়। ক্ষয়িষ্ণু বাঙালি হিন্দু জাতি নিজের ক্ষয়িষ্ণুতার কারণ খুঁজলে তা দিল্লির কাছে অস্বস্তি বাড়াবে বৈ কমাবেনা। মনে রাখা দরকার ১৯৭২ সালেই ভাসানি বলেন পঃ বঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা সব বাংলাদেশের। অর্থাৎ উর্দু ব্যবসা দখলের পর থেকেই বৃহৎ বাংলার স্বপ্ন দেখে চলেছে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানেরা। বাঙালি হিন্দু ও অহমিয়া হিন্দুদের স্বল্প জন্মহার, বাংলাদেশের পুঁজির বিকাশ পঃ বঙ্গ ও উঃ পূর্বাঞ্চল অপেক্ষা বেশি হওয়া এবং চীনের উত্থান ও মার্কিন চীন বাণিজ্য যুদ্ধ বৃহৎ বাংলার স্বপ্নকে সামনে নিয়ে এনেছে। এছাড়া মার্কিন চীন দ্বৈরথ ও চীনের মজুরি বৃদ্ধি পুঁজির বিশ্ব গমণের স্বাধীনতা হ্রাস করছে যা শ্রমিক শ্রেণির দর কষাকষি করার ক্ষমতা আগের থেকে খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মডেল অনুসরণ করে অন্যান্য বহু দেশে বা প্রদেশে উৎপাদক পুঁজি ও শ্রমিক শ্রেণির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হতেই পারে। এছাড়াও মনে রাখা দরকার ২০১৮ তে "নিরাপদ সড়ক আন্দোলন" ও "কোটা বিরোধী আন্দোলন" প্রথম ছাত্র আন্দলোনের ঢেউ, ২০২৪ -এর ৫ই অগাস্ট বিপ্লব দ্বিতীয় ঢেউ যা করে পরবর্তী প্রজন্মের ছাত্ররা। সেরকম ভাবে বাংলাদেশে লুটেরা পুঁজি ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বিএনপি বা জামাতের বা অন্য কোনও দলের হাত ধরে ফিরে আসতে চাইলে আবার একটা তৃতীয় আন্দোলনের ঢেউ তৈরি করতে পারে পরবর্তী প্রজন্মের ছাত্ররা এবং তা হতে পারে আরও শক্তিশালী।
 

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Theoretical General 30-December-2024 by east is rising