ইতিহাস ফিসফিস কথা কয় ফেসবুক পেজ থেকেঃ
কোরিয়াকে একসময় "হারমিট কিংডম" (Hermit Kingdom) বা নিঃসঙ্গ রাজ্য বলা হতো, কারণ তারা বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে রেখেছিল। এই নীতি মূলত জোসন রাজবংশ (Joseon Dynasty, 1392-1897)-এর সময় কার্যকর ছিল, যখন কোরিয়া কনফুসীয় নীতিকে কঠোরভাবে অনুসরণ করত এবং বিদেশি প্রভাবকে তাদের সমাজের জন্য হুমকি হিসেবে দেখত।
জোসন রাজবংশের শাসকরা নিও-কনফুসীয় দর্শন (Neo-Confucianism) অনুসরণ করত, যা সামাজিক শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং ঐতিহ্যের প্রতি অনুগত্যের উপর জোর দেয়। তারা মনে করতো, বিদেশি পশ্চিমা মতাদর্শ, সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। ফলে, তারা বাইরের বিশ্বের সাথে সংযোগ এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করে।
কোরিয়া ঐতিহাসিকভাবে চীনের মিং সাম্রাজ্যের (Ming Dynasty, 1368-1644) অধীনস্থ একটি উপনিবেশমূলক রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করত। কিন্তু ১৬৪৪ সালে চীনে কিং সাম্রাজ্য (Qing Dynasty) প্রতিষ্ঠিত হলে কোরিয়া মানচুদের শত্রু মনে করে এবং নতুন রাজবংশকে স্বীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক ছিল। যদিও পরবর্তীতে কোরিয়া কিং সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করে, তবুও তারা বিদেশি শক্তির সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
১৮শ ও ১৯শ শতকে, চীনের মাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্ম কোরিয়ায় প্রবেশ করে এবং তা ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে। কিন্তু কনফুসীয় নীতির সাথে ক্যাথলিক বিশ্বাসের বিরোধ ছিল—কারণ ক্যাথলিক ধর্ম রাজাকে স্বর্গীয় প্রতিনিধির পরিবর্তে সমান মর্যাদার মানুষ হিসেবে দেখে। ফলস্বরূপ, জোসন সরকার খ্রিস্টধর্ম নিষিদ্ধ করে।
১৮৬৬ সালে, USS General Sherman নামে একটি আমেরিকান বাণিজ্যিক জাহাজ অনুমতি ছাড়াই কোরিয়ায় প্রবেশ করলে কোরীয়রা সেটিকে ধ্বংস করে এবং ক্রুদের হত্যা করে। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ১৮৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ায় একটি সামরিক অভিযান চালায়, যা "শিনমিও যুদ্ধ" (Shinmiyangyo) নামে পরিচিত।
১৮৭৬ সালে জাপান কোরিয়াকে "গ্যাংহাওয়া চুক্তি" স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে, যার ফলে কোরিয়া তাদের বন্দর খুলতে বাধ্য হয়।
এটি ছিল কোরিয়ার স্বেচ্ছা-বিচ্ছিন্নতার সমাপ্তির প্রথম ধাপ।
১৮৯৭ সালে কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে "কোরিয়ান সাম্রাজ্য" (Korean Empire) ঘোষণা করে এবং রাজা গোজং সম্রাট হন।
কিন্তু ১৯১০ সালে জাপান কোরিয়াকে সম্পূর্ণরূপে দখল করে নেয় এবং কোরিয়া পরবর্তী ৩৫ বছর জাপানের উপনিবেশে পরিণত হয়।