২০২৯-৩১ হবে আসল বাংলা বিপ্লব : শুরু হবে তৃতীয় প্রজন্মের বিপ্লব

৩৬শে জুলাই আন্দলনের শ্রেষ্ঠ পাওয়াঃ ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ তৈরি। ১৯৪৭-এ পূর্ব পাকিস্তান-এর ও জমিদারী বিরোধী আকাঙ্ক্ষা ছিল, যুক্ত পাকিস্তানের আকাঙ্ক্ষা ছিলনা। অর্থাৎ ১৯৭১-এর বীজ ১৯৪৭-এই ছিল। তেমনই ২০২৪-এর ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বীজ ছিল ১৯৭১ ও ১৯৪৭-এ। ৪৭-৭১-২৪ একটাই ধারা।

৩৬শে জুলাই আন্দলনের শ্রেষ্ঠ চেষ্টাঃ শেহবাগ (বাম) ও হেফাজত (ইসলামপন্থী)-দের এক জায়গায় আনা। এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে কারণ কোনো বস্তুবাদী তত্ত্ব দিয়ে এই ঐক্যের চেষ্টা করা হয়নি, হয়েছে সাময়িক হাসিনা বিরোধী ও ভারত বিরোধী অবস্থান ব্যবহার করে। এই চেষ্টা দুনিয়াতে কোথাও এখনো অবধি সফল নয়, কিন্তু বাংলা এগিয়ে থাকল প্রথম চেষ্টা করে, হয়তো পরে কখনো সফল হবে।

৩৬শে জুলাই আন্দলনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাঃ অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকা। এর ফলে এই আন্দোলনের নেতারা সঠিক রাজনৈতিক পথ খুঁজে পায়নি এবং এদের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে হাস্যকর রসিকতায় পরিণত হবে। এদের আইডল হয়েছে কেজরিওয়াল, ইমরান খান ও এরদোয়ান যারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভিষণভাবে ব্যর্থ। এরদোয়ান ভূরাজনীতিতে কিছুটা সফল মূলত তুর্কির সমর শিল্পের জন্যে যা আপাতত তৈরি করা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব। কিভাবে সম্ভব করবে তা নিয়েও সমন্বায়ক-দের কোনও ধারণা নেই। নেতৃত্ব মেধার অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে দুবার সফল হওয়ার পরেও চরম মেধার প্রাপ্য অধিকার বিরোধী বুর্জোয়া বাম অন্তর্ভুক্তি আন্দোলনে ঢুকে গেছে। নিজেদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী বলে, অথচ স্বঘোষিত নাজিবাদী-যাওয়নবাদী ইলন মাস্ক-কে নিয়ে নাচানাচি করে। এরা এতটাই নির্বোধ। আওয়ামী যেরকম ৭১-কে খিল্লি বানিয়ে ফেলেছে ভারতের পদতলে নিয়ে গিয়ে, এই নেতৃত্ব সেরকম ২৪-কে খিল্লি বানিয়ে ফেলবে পশ্চীমের পদতলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে আওয়ামী ভারতের পদতলে আশ্রয় পেয়েছিল, কিন্তু এরা পশ্চীমের পদতলে আশ্রয় পাবেনা কারণ ক্ষয়িষ্ণু পশ্চীমের বাংলাদেশে কোনও পদই থাকবেনা।

প্রথমবার বাংলাদেশের মানুষ এদের ওপর বিশ্বাস রাখবে। ক্ষমতায় গিয়ে অন্তর্ভুক্তি রাজনীতির নামে নারী কোটা চালু করবে আর প্রকৃতি রক্ষা করার অঙ্গীকার করবে। এভাবে নারী স্বাধীনতার নামে জন্মহার কমিয়ে ফেলবে আর প্রকৃতি রক্ষার নামে উৎপাদন ও রাজস্বের ক্ষতি করে ফেলবে। বাংলাদেশের শক্তিশালী মজুতদার লুটেরা ওলিগারকি পুঁজিকেও আটকাতে পারবেনা। এদের ইসলামপন্থী অংশ ক্রমেই এদের বুর্জোয়া বাম প্রবণতায় অতিষ্ট হয়ে উঠবে এবং আলাদা হয়ে যাবে। এদের নেতৃত্ব চীনের সমাজতন্ত্র-কে আলাদা করে বোঝেনা আর তাই চীনের সাহায্য ঠিকঠাক নিতে পারবেনা। এরা পশ্চীম মুখাপেক্ষী হয়ে চীনের সাহায্য নিতে ব্যর্থ হবে আর ভারতের সাথে বারবার আপোষ করতে যাবে পশ্চীমের পরামর্শে। ৪-৫ বছরের মাথায় এরা মুখ থুবড়ে পড়বে। প্রথমে যদি জামাত এদের সাথে নিয়ে ক্ষমতায় যায়ও শেষ পর্যন্ত জামাত এদের সাথে থাকবেনা। ফলে পতন আরও আগে হয়ে যেতে পারে ৩ বছরের মাথতেই। কোনও নেতার দুর্নীতির অভিযোগ এলে তো আর কথাই নেই।

যদি ২০২৬-এ নতুন সরকার আসে তাহলে ২০২৯-৩১-এর মধ্যে আর একটা বড় আন্দোলন দেখবে বাংলাদেশ। ২০২৪-এর আন্দোলনকারীদের ব্যর্থতা ভারত ও আওয়ামী-দের পুনরায় ক্ষমতাইয় ফিরে আসতে উদবুদ্ধ করবে। তারা বাংলাদেশ-কে অতীতের অধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইতে পারে, তবে বিএনপি-ও এই সময় ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে। তবে তা এলেও ২০২৪-এর আন্দোলন অনেকটাই বৈধতা হারিয়ে ফেলবে বাংলাদেশের মানুষের চোখে।

তাই আমি বলব ২০২৪-এর আন্দোলনকারী মানুষের একটা অংশ আরেকটা বিপ্লবী প্রজন্মকে তৈরি করতে থাকুন। ২৪-এর নেতৃত্বের ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ স্বীকার করুন, বর্তমান পৃথিবীর স্বল্প জন্মহারের সমস্যাকে মাথায় রেখে লিঙ্গ স্বাধীনতাকে ব্যখ্যা করে বাম ও ইসলাম্পন্থীদের এক মঞ্চে আনার প্রয়াস জারি রাখুন। ভূরাজনীতিতে চীনের উত্থান-কে ব্যখ্যা করুন এবং তা থেকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোধ তৈরি করুন। ২৪-এর নেতৃত্ব ২০২৯-৩১-এর মধ্যে ধ্বসে পড়ার আগেই যেন নতুন বিপ্লবী প্রজন্ম তৈরি হয়ে যায়। মনে রাখা দরকার ২৪-এর নেতৃত্ব-এর ব্যর্থতা যেমন ভারতী সাম্রাজ্যবাদ-কে ফিরে আসার সুযোগ দিতে পারে, চীনের উত্থান তেমন ভারতকে বাংলাদেশ থেকে দূরে ঠেলতে পারে। ক্ষয়িষ্ণু পশ্চীম হয় ভারতকে ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর মতোই পেছন থেকে সমর্থন যোগাবে নয় তো ভারত-চীন দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ থাকবে। ট্রাম্প যদি চীনের সঙ্গে বিশ্ব প্রভাব ভাগাভাগি করতে রাজি থাকে তবে অবশ্যই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ-কে ২০২৯-৩১-এ রোখা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। আর যদি ট্রাম্প চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে দেয় তাহলে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে রোখা কঠিন হবে ওই সময়ে। লেনিন রুশ বিপ্লব সফল করতে শুধু জার- জার্মান দ্বন্দ্বই কাজে লাগায়নি, তিনি খুব চমৎকারভাবে এংলো স্যাক্সন পুঁজিপতিদের একটা অংশকেও লোভ দেখিয়ে নিজের দিকে নিয়ে এনেছিলেন। এই পুঁজিপতিদের অংশটা বহুদিন অবধি মনে করেছিল লেনিন বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার নামে জার্মানির সাথে যুদ্ধ জারি রাখবে। ২০২৫ সালে পশ্চীমের যেই অংশটা চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চায় তারা ভারতের বন্ধু আর যারা চীনের সঙ্গে সহাবস্থান চায় তারা বাংলার বন্ধু। সমস্ত বন্ধুদের ছলে বলে কৌশলে যুদ্ধে সাথে পাওয়াই হবে লক্ষ্য।

বাংলাদেশের বিপ্লব বিংশ বা অষ্টাদশ শতকের বিপ্লব নয়, একবিংশ শতকের বিপ্লব। তা মার্কিন বা রুশ বিপ্লব নয় অথবা ফরাসী বা চীন বিপ্লব নয়, তা বাংলার বিপ্লব। এখন অষ্টাদশ বা উনবিংশ শতকের বুর্জোয়ারাও নেই, রুশ বা চীনের বিপ্লবের সংগঠিত শ্রমিক বা কৃষকও নেই। মার্কিন ফরাসী বিপ্লব যদি প্রথম প্রজন্মের বিপ্লব হয়, রুশ চীন তবে দ্বিতীয় প্রজন্মের বিপ্লব। আর বাংলা হবে তৃতীয় প্রজন্মের বিপ্লব। প্যারিস কমিউন যেমন প্রথম আর দ্বিতীয় প্রজন্মের বিপ্লবের মধ্যেকার যোগসূত্র, ইরান বিপ্লব হয়তো দ্বিতীয় আর তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যেকার যোগসূত্র। ইতিহাসকে মিমিক্রি করে বিপ্লব হয়না, বিপ্লব মানেই ইতিহাসকে নতুনভাবে দেখা ও পর্যালোচনা করা।

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Theoretical General 21-February-2025 by east is rising