বাংলায় ব্রাহ্মণ বাদে বাকি কেউ সবর্ণ নয় - কথাটি আদতে পুরোপুরি ভুল নয়।
বাংলায় ব্রাহ্মণ পরবর্তী দুটি উচ্চজাতি হল - কায়স্থ ও বৈদ্য।
Interestingly, বাংলায় এই দুটি জাতির শৈক্ষিক মান ও শাস্ত্রীয় জ্ঞান চিরকাল ব্রাহ্মণদের প্রায় সমকক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, বাংলার প্রথম বাংলা মহাভারত রচিত কাশীরাম দেব (কায়স্থ) দ্বারা।
মালাধর বসু এর শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্য হোক - মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসে আমরা প্রচুর সংখ্যক কায়স্থ ধর্মজ্ঞাতার নাম পাই।
বাসুদেব ঘোষ গোস্বামী, নরোত্তম দত্ত ঠাকুর - এদের কথা বাদই দিলাম। ঈষৎ, পূর্বকালের কালীপ্রসন্ন সিংহ এর, বা রাজশেখর বসু এর মহাভারত হোক, কিংবা ধর্মজগতে ঋষি অরবিন্দ বা, স্বামী যোগানন্দ বা, স্বামী প্রনবানন্দ বা, স্বামী বিবেকানন্দ - এঁরা সকলেই কায়স্থ। আসামের সর্ববৃহৎ ধর্মগুরু শংকরদেব কায়স্থ। বিদ্যতীর্থ (মিত্র) এর মত কায়স্থ ব্যক্তিত্ব সংস্কৃত ও শাস্ত্রীয় টোলের আচার্য পর্যন্ত নিযুক্ত হয়েছেন অতীতে।
উল্লেখজনকভাবে, বাংলায় ব্রাহ্মণদের পরে সবথেকে অধিক সংখ্যক ধর্মশাস্ত্রজ্ঞাতা কিন্তু কায়স্থরাই।
জনসংখ্যা অনুযায়ী কায়স্থদের সংখ্যা ব্রাহ্মণদের সমতুল্য। তাই, বাংলার ধর্মীয় জগতে এত অধিক সংখ্যায় কায়স্থদের উপস্থিতি প্রমাণ করে,
যে কায়স্থ কদাপি *কেবল যোদ্ধা জ ঙ্গী Tribe নয়*,
কায়স্থ জাতির মধ্যে একটা ভীষণ Strong Brahminical Factor আছে।
পূর্বভারতে তো নয়ই, এমনকি সমগ্র উত্তর ভারতে কায়স্থ বাদে অন্য অব্রাহ্মণ কোনো জাতি খুঁজে দেখানো সম্ভব নয়, যারা ধর্মীয় বিষয়ে যুগ যুগ ধরে Involved হয়েছে, বা যারা শিক্ষায় ব্রাহ্মণদের সমকক্ষ।
কোলকাতা Medical College এর First Generation Batch এর মধ্যে ব্রাহ্মণ ছিল ৫ জন, বৈদ্য ছিল ৫ জন, কায়স্থ ছিল ১৫ জন। (পূর্বেই বলেছি, কায়স্থ জনসংখ্যা ব্রাহ্মণদের Comparable, যা জনপ্রতি কায়স্থ পরিবারে শিক্ষার হার উল্লেখজনকভাবে বেশি প্রমাণ করে। )
উক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয়, কায়স্থ জাতির মধ্যে শিক্ষার গুণ বা, "ব্রাহ্মণগুণ" সুপ্রাচীন অতীত থেকেই বিদ্যমান। অথচ, কায়স্থদের সংস্কার হয় ক্ষত্রিয় মতে।
অর্থাৎ, "ব্রাহ্মণ গুণসম্পন্ন ক্ষত্রিয় বা, ব্রাহ্মণতুল্য ক্ষত্রিয়" - কায়স্থ জাতির সামাজিক মান্যতার ব্যাখ্যা সম্ভব কেবলমাত্র এই শব্দের দ্বারা।
মিথিলার বিখ্যাত মৈথিলী ব্রাহ্মণ কবি বিদ্যাপতি এর রচনা এই যুক্তিকে আরও বলিষ্ঠ করে। বিদ্যাপতি লিখছেন - "কায়স্থ জাতি ব্রাহ্মণ অপেক্ষা নিম্নতর এবং রাজপুত অপেক্ষা উচ্চতর জাতি"।
উল্লেখ্য , রাজপুত জাতি ক্ষত্রিয় হলেও, শিক্ষিত নয় বা, ধর্মীয় বিষয়ে কোনো অবদান পাওয়া যায়না এদের। বাঙালি কায়স্থ জাতির সামরিক অবদান ও ধর্মীয় অবদান দুইই পাওয়া যায়। তাই, শুধু ক্ষত্রিয় বলা সম্ভবত কায়স্থ জাতির সামাজিক অবস্থানের কিছুটা ভুল পর্যবেক্ষণ। কায়স্থ জাতির শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যা সম্ভব - ব্রহ্মক্ষত্রিয় বা, ব্রাহ্মণ গুণসম্পন্ন ক্ষত্রিয় হিসেবে।
অন্যদিকে বদ্যিদের ক্ষেত্রেও আমরা দেখি, এরাও যথেষ্ট শিক্ষিত জাতি। এবং, ব্রাহ্মণের ন্যায় পূজার অধিকার প্রাপ্ত না হলেও, এঁরা নিজেদের ব্রাহ্মণ ও বৈশ্য মিশ্রণ বলে থাকেন।
অর্থাৎ, কায়স্থ = ব্রাহ্মণ + ক্ষত্রিয়
এবং, বৈদ্য = ব্রাহ্মণ + বৈশ্য
যা প্রমাণ করছে, বাংলার দুটি অব্রাহ্মণ উচ্চবর্ণের দুইজনের মধ্যেই Strong Brahminical Elements আছে। ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য - তিনটি জাতি জাতিগত ও বৈবাহিকভাবে আলাদা হলেও, এদের মধ্যে ব্রাহ্মণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বাংলায় ব্রাহ্মণ বাদে কোনো সবর্ণ নেই কথাটার মধ্যে তাই খুব একটা ভুল নেই, কারণ এখানে ব্রাহ্মণ বলতে জাতিব্রাহ্মণ বাদেও ব্রাহ্মণ গুণসম্পন্ন অন্য দুই উচ্চজাতিকেও Mean করা হয়েছে।