Mohammad Ishrak
eosdorStpn641iu1a0cgg9g47faau9mig91c1hi4351h3gaca60tfa8hcg6m ·
জুলাইয়ে মাহফুজদের একটা ইউনিক কন্ট্রিবিউশন আছে যেটা সাদিক কায়েমদের কারও নাই।
ক্যাম্পাসসহ দেশের "বামপন্থী" মহলের সাথে লিয়াজো মেইনটেইন মাহফুজরাই করেছে।
২০১৫ থেকে মাহফুজের নিজস্ব ব্যক্তিগত সাধনায় এই নেটওয়ার্ক ও আস্থা-বিশ্বাসের জায়গায় সে নিজেকে নিয়ে গেছে। এজন্য মাহফুজকেও এক ধরণের ট্রান্সফরমেটিভ প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
পরবর্তীতে আকরাম, আখতার, নাহিদ, আসিফরাও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে তবে মাহফুজের মত এতটা বেশি না। তারা সবাই সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন মতাদর্শের, রাজনীতির বিভিন্ন দোকানের অলিগলি বিচরণ করে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আস্থা-নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরী করেছে।
মাহফুজের অবদান এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী। অনেক "বামপন্থী" মনে করে মাহফুজ তো তাদেরই লোক। আবার শিবির মনে করে মাহফুজ তো "আমাদের ভাই"। আমি ছাত্রদলের কিছু ছেলেকে বলতে শুনেছি মাহফুজ তাদের লোক। এটা কিন্তু বিশাল একটা ব্যাপার।
জুলাই বিপ্লবে শিবির নেপথ্যে থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এটা নি:সন্দেহে সত্য। লজিস্টিক্স, ম্যানপাওয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ডিসিশন নেওয়ার কাজটা শিবির করেছে।
কিন্তু শিবির কয়েকটা ক্রুশিয়াল জিনিস করে নাই। এটা কেবল এবং কেবলমাত্র মাহফুজরাই করেছে।
প্রথমত, কোটাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন করা দরকার এই বুদ্ধিটা মাহফুজের মাথাতেই সবার আগে এসেছে। মাহফুজই শিবিরের সাথে যোগাযোগ করে আন্দোলন শুরু করে। কাজেই ইনিশিয়েটর হিসাবে আন্দোলনের ক্রেডিট বা মাস্টারমাইন্ড কিন্তু মাহফুজই।
দ্বিতীয়ত, "বামপন্থী" বিভিন্ন গ্রুপকে আন্দোলনকে ঔন করানোটা জরুরী ছিল। শাহবাগীদের দ্রোহযাত্রা বা প্রোফাইল পিকচার লাল করাটা আজকে খুবই ছোটখাটো ব্যাপার মনে হচ্ছে। কিন্তু বছরের পর বছরের সাধনার ফসল হিসাবে মাহফুজদের এই আন্দোলনটা ওদেরকে দিয়ে ঔন করানো গেছে। তানাহলে আরও অনেক শাহাদাত ও কোরবানি লাগত সফল হতে। এমনকি সফল নাও হতে পারত। শাহবাগীদের সামনের সারিতে রেখেই শাহবাগী রেজিমের পতন ঘটানো কোন ছোটখাটো ঘটনা ছিল না।
এই ব্যাপারটা মোটেই সহজ কোন বিষয় ছিল না। মাহফুজসহ বহু মানুষকে কমফোর্ট জোনের বাইরে আসতে হয়েছে। শিবির যে মাহফুজের ওপর মানসিক নিপীড়ন করেছে, সামাজিকভাবে তাকে একঘরে করে দিয়ে ওর মনে গভীর ক্ষত তৈরী করেছে এটা তো সত্য। আপনি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে বুঝতেন এটা কত ভয়াবহ দু:খ।
সিগারেট খেতে হয়েছে, শাহবাগীদের লাত্থিগুতা খেতে হয়েছে, চূড়ান্ত হোস্টাইল এবং ইসলামোফোবিক পরিবেশে থিয়েটার, গান, সংস্কৃতি করতে হয়েছে। প্রেম করতে যেয়ে একটা পর্যায়ে হয়ত কেউ সেক্স এডিক্ট হয়ে গেছে, কিন্তু শুরুতে ইনোসেন্স হারানোর যে গিল্ট এবং মেন্টাল ট্রমা সেটার মধ্য দিয়ে কিন্তু ঠিকই যেতে হয়েছে।
নো ডিজরেস্পেক্ট টু সাদিক কায়েম- কিন্তু সাদিক যখন পড়াশোনা করেছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য তখন মাহফুজরা মাজারে মাজারে রাত কাটিয়েছে, কল্কি টেনে ও মাজারিদের সাথে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছে। আজকে এই কথা বলে আপনি মাহফুজকে ট্রল করতে পারেন। কিন্তু এসবের মাধ্যমে মাহফুজ সমাজের বিভিন্ন গোত্রের সাথে একটা অর্গানিক সম্পর্ক তৈরী করেছে।
এই অর্গানিক সম্পর্ক ছাড়া এই বিপ্লব সফল হওয়া কঠিন ছিল। এই যে এখনও গোটা শাহবাগী এস্টেবলিশমেন্ট বিপ্লবের বিপক্ষে চলে যায় না, প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা করছে না এর কৃতিত্বের খানিকটা দুর্নীতির টাকা এবং পদ-পদবীর লোভ দেখিয়ে ওদেরকে কিনে নেওয়া, আর খানিকটা মাহফুজদের এই অর্গানিক সম্পর্ক যার দরুন ওরা আস্থা পায়, বিপ্লবটাকে ঔন করে।
নি:সন্দেহে সামিনা লুতফা একজন শাহবাগী এবং শাপলা গণহত্যার উসকানীদাতা। বিচারিক হত্যাকাণ্ডর সাথে যুক্ত। উর্দু বলা যাবে না এরকম ফার-রাইট ন্যাশনালিস্ট বিবৃতিও সে টাটকা দিয়েছে। কিন্তু এইরকম আগাগোড়া শাহবাগী/ফ্যাসিস্ট একজন মানুষও জুলাইয়ের আন্দোলনে এসেছে, আন্দোলনকে এখন পর্যন্ত ঔন করে যাচ্ছে কারণ মাহফুজদের দেখে সে আস্থা পায়।
শিবিরের দুই-একজন ছাত্রলীগে ঢুকে ইনফরমেশন পাস করে এবং স্যাবোটাজ ঘটিয়ে বিপ্লবে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে- এটা যেমন আমাদের স্বীকার করতে হবে, তেমনি মাহফুজরাও যে শাহবাগীদের অন্দরমহলে ঢুকে যেয়ে অর্গানিকালি ওদের সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন করে ওদেরকে বিপ্লবের পক্ষে নিয়ে এসেছে। দুইটার একটাকেও তো খাটো করে দেখার সুযোগ নাই।
প্লিজ, এই অবদানটাকে আপনারা মোটেই ছোট করে দেখবেন না। আমার এক বন্ধু যে শিবিরের সাথী ছিল। ও মূলধারায় যেয়ে লড়বে এই পন করে। এজন্য সে মদ-গাঁজা-সিগারেট থেকে শুরু করে ক্যাজুয়াল সেক্স হেন কিছু নাই যা করে নাই। ২০১৯ সালে আমি দেশ ছাড়ার কয়েকদিন আগে ওর সাথে দেখা হয়। ও ততদিনে আরেক মাহফুজ।
দেখা করে ও লিট্রেলি কাঁদতে শুরু করে- ওর লস্ট ইনোসেন্স, লস্ট মডেস্টি। কি বিশাল বিলাপ! কিন্তু এরপরও ও ফাইট কন্টিনিউ করেছে। হাল ছাড়ে নাই। শাহবাগীদের মাইন্ডসেট চেঞ্জ করা, তাদেরকে নানান ক্রুশিয়াল মোমেন্টে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা নেওয়া থেকে বিরত রাখা- এসবে ওর অবদান ছিল।
আপনারা এই কন্ট্রিবিউশনগুলি একনলেজ করেন। ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতা স্বীকার করার জন্য হলেও করেন। কি হারকিউলিয়ান এফোর্ট দরকার হয়েছে, কত মুসলমান ছেলে হিন্দুর মত জীবনযাপন করেছে এই ফ্যাসিবাদকে হঠানোর জন্য - এই কোরবানির কথা তো লেখা থাকতে হবে। এইটার স্বীকৃতি তো দরকার। জেনোসাইড তো শুধু মানুষের দেহের ওপর হয় না। কালচারের ওপর হয়। সেইটার ভয়াবহতা, সেইটার স্বীকৃতি কিভাবে আসবে যদি ওদের অবদানকে স্বীকার না করেন?
সাজ্জাদুর রহমানের বর্তমান নাম রাখাল রাহা এটা জেনে আপনি আমোদিত হন। কিন্তু কখনো কি জিজ্ঞেস করেছেন যে কি ভয়াবহ জুলুমতন্ত্রের কারণে একটা মানুষ নিজের বাপ-দাদার পরিচয় গুম করে ফেলতে বাধ্য হয়?
জুলাইয়ে ফেরত আসি।
জুলাইয়ে শিবিরের অবদান নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে, হবে। শিবিরের অবদানগুলি খেয়াল করেন। ম্যানপাওয়ার দেওয়া, লজিস্টিক সাপ্লাই দেওয়া, স্ট্রিট ফাইটে নেতৃত্ব দেওয়া, রাস্তায় প্রথম সারির সমন্বয়কদের প্রোটেকশন দেওয়া, সেইফ হোমের ব্যবস্থা করা বা ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে ফরমাল যোগাযোগ করা।
এইখানে কয়েকটা জিনিস মিসিং। সেইটা হচ্ছে ন্যারেটিভ তৈরী। এবং বিভিন্ন কালচারাল এবং এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সাথে কোলাবরেশন-কোঅর্ডিনেশন। রাষ্ট্রচিন্তার সাথে তো মাহফুজরাই কথা বলেছে, শিবির বলে নাই। সামিনা লুতফা তো মাহফুজদেরকেই চিনত, শিবিরকে চিনত না। এইগুলি তো খুবই ক্রুশিয়াল অবদান ছিল।
রাস্তার আন্দোলনই তো সব না। আন্দোলনকে মধ্যবিত্তের কাছে নিয়ে যেতে আনুষ্ঠানিক শিবিরের ভূমিকা তো খুবই সীমিত। এক্ষেত্রে শিবিরের অবদান বলতে যা আছে তার সিংহভাগ জামাত ফ্যামিলির নাস্তিক ছেলে কিংবা বখে যাওয়া সাবেক শিবিরের সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডদের।
সবকিছু তো সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহ, এবং ফরহাদ করে নাই।
শিবির মনে করছে তাদের যেটুকু কন্ট্রিবিউশন সেটুকুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একারণেই তারা মাস্টারমাইন্ড। কিন্তু না। আমি যথাসম্ভব ডিসপ্যাশনেটলি চিন্তা করে দেখেছি। মাস্টারমাইন্ড বলে যদি কিছু থেকেই থাকে তাহলে সেটা মাহফুজদের টিমটাই। এর কারণ এটা না যে ওদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হচ্ছে ওরা আন্দোলনের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্টেকহোল্ডারের সাথে কানেক্টেড ছিল। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে ওদের সম্পর্ক ছিল, ওরা সবাইকে ইউজ করতে পেরেছে।
জুলাইয়ের পর থেকে শিবির যে বেকায়দায় পড়েছে এর কারণও শিবিরের সেই গতানুগতিক কার্যক্রম। ফরমাল শিবির তো নিজস্ব বলয় ছাড়া কারও সাথে মিশে যেতে পারে না। সাদিকের সাথে ব্যক্তিগত আলাপরিচতায় বসু সাদিকের অবদান স্বীকার করে। কিন্তু বসুর সাথে সাদিকের সম্পর্কটা অনেকটাই ফরমাল। অন্যদিকে মাহফুজের সাথে বসুর একটা অর্গানিক সম্পর্ক আছে (যদিও বসু সম্ভবত সুযোগ পেলেই মাহফুজকে খতম করে দুনিয়া থেকে একতা শিবির কমাবে- সেটা ভিন্ন আলাপ)।
প্রতিটা মাহফিলের একটা আদব আছে। মাহফুজ শর্ষিনায় যেয়ে সেখানকার আদব অনুসারে বক্তব্য দিতে পারে। মিল্লাতে যেয়ে সে এমনভাবে বক্তব্য দিতে পারে যেটা মিল্লাতের আদবের সাথে যায়। মাজারের গাঞ্জুট্টিরা মাহফুজকে আপন ভাবে। ফরহাদের ডেরায় মাহফুজকে আউটসাইডার মনে হয় না। আবার হুজুরদের কাছে যেয়েও মাহফুজ হুজুরদের ভাষায় কথা বলতে পারে।
এটা তো একটা বিশাল যোগ্যতা। শিবিরের একজনেরও এই যোগ্যতা আছে? নাই। কেবলমাত্র নিজস্ব ঘরানা ছাড়া অন্য একটা ঘরানাতেও শিবিরের কেউ এট হোম ফিল করতে ও করাতে পারে না। দেওবন্দি একজনের পাশে একজন শিবির নেতাকে বসিয়ে দেন- দেখবেন তেল ও জলের মত তফাত ভেসে উঠছে। একইভাবে ফরহাদের ডেরায় ফরমাল কোন শিবির নেতা গেলে মনে হবে ওখানে কেউ অফিশিয়াল ভিজিটে গিয়েছে, কোন অর্গানিক সম্পর্ক ওখানে নাই।
শিবিরের নেতাকর্মীদের উচিত এই বিষয়গুলি রিয়ালাইজ করা এবং মাহফুজদের যতটুকু স্বীকৃতি প্রাপ্য সেটুকু দেওয়া। এমনকি মাহফুজরা যদি অসততা করে এরপরও নিজে সত থাকা।
এটা শুধু ঐতিহাসিক সত্যতার জন্য জরুরী তাই না, শিবিরের নিজের স্ট্রেংথ-উইক্নেস এনালাইসিসের জন্যও জরুরী।
জাশি একটা খচ্চরের মত। একদিকে জাশি ক্যাডারভিত্তিক লেনিনিস্ট সংগঠন। অন্যদিকে জাশি বিপুল জনপ্রিয় ভোটের রাজনীতি করা সংগঠন। একটা ক্যাডারভিত্তিক দলের পাপ একটা ননক্যাডারভিত্তিক দলের পাপের সমান না। বিএনপিতে চোর-ধর্ষক থাকবে এটা সবাই ধরেই নেয়। কিন্তু জাশির কেউ গালি দিবে এটাও কেউ প্রত্যাশা করে না।
জাশির আশু কর্তব্য হচ্ছে তাদের লোকজন এবং সমর্থকদের আচার-ব্যবহারে বিনয়ী হতে বলা। জাশির অধিকাংশই মূর্খ। ফলে, আর্টিস্টিক ওয়েতে কিভাবে ভারবাল এটাক করতে হয় এটাও জাশি জানে না। অধিকাংশই কথায় কথায় ম বর্গীয় চ বর্গীয় গালিগালাজের বাইরে কিছু বলতে পারে না। কুলাঙ্গারের মত অবসলিট এবং খ্যাত গালি ব্যবহার করে। মিরপুর বাংলা কলেজে পড়ে আইবিএর মেয়েদের ভুল ধরতে চায়।
জাশি যেহেতু খচ্চর হয়েই থাকবে, তাই জাশির উচিত তাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের চুপ করানো। প্রয়োজজে আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া। নিজেদের জুলুমের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা ছাড়া জাশি কিছুই করছে না। জাশির প্রতিটা এক্টিভিটি তার সকল শত্রুকে ঐক্যবদ্ধ করছে, ভীত করছে এবং জাশির স্ট্রেংথ দেখে তারা শক্ত দমননীতি হাতে নিচ্ছে। তৌহিদি জনতা এবং শাহবাগ ঐক্যবদ্ধভাবে জাশির বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে।
আর যদি জাশি প্রকাশ্য রাজনীতি করতে চায়, তাহলে জাশিকে ফেরেশতার মুখোশ ছেড়ে বের হয়ে আসতে হবে। চেইন অব কমান্ডসহ নানান বিষয় নিয়ে জাশির যে ফাঁকা গৌরব আছে, সেগুলি বন্ধ করতে হবে। স্বীকার করতে হবে যে জাশি অন্য সবার মত ভুলে-ভ্রান্তিতে ভরা একটা সংগঠন।
Read MoreAuthor: Saikat Bhattacharya
mythical General 17-March-2025 by east is rising