পশ্চীমের ইতিহাস ২ ত্রয়োদশ শতকঃ প্রাচ্যের সান্নিধ্য

05-November-2021 by east is rising 349

ত্রয়োদশ শতক থেকেই ক্যাথোলিক চার্চ ও খ্রিষ্ট ধর্ম সম্পর্কে মোহ কমতে শুরু করে পশ্চীমাদের। তারা বোঝে যে শুধুমাত্র ঈশ্বরের নাম নিয়ে যুদ্ধে জেতা যায়না। এশিয়ার প্রাচুর্য, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, দর্শন পশ্চীমাদের আকর্ষণ করতে থাকে। ইতালি প্রথম নতুন পথের দিশা দেখায় পশ্চীমকে। তারা ক্রুসেডের নামে ব্যাবসায়িক প্রতিপত্তি বাড়াবার দিকেই মন দেয় এবং শেষ পর্যন্ত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী গ্রীক বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যকে দখল করে। বাজান্টাইন দিয়েই ইউরোপে এশিয়া থেকে পণ্য ঢুকত আর তাই ইতালির শহরগুলো যথা ভেনিস, নেপ্লস, জেনোয়া, ফ্লোরেন্স, পিসা, ইত্যাদি ফুলে ফেঁপে ওঠে বাজান্টাইন দখল করে। ইতালিয়দের সুযোগ আরও বেঁড়ে গেল যখন মোঙ্গলরা চীন থেকে শুরু করে হাঙ্গেরি পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলল। এতদিন আরব, তুর্কি, পার্সি নিয়ন্ত্রিত “রেশম পথ” ছিল এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যের প্রধান পথমোঙ্গল সাম্রাজ্যের ফলে চীন থেকে রাশিয়া হয়ে ইউরোপ অবধি একটি নতুন বাণিজ্য পথ রচিত হয়। ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই মার্কো পোলো সুদূর ইতালি থেকে চীন-ভারত যাত্রা করেন এবং ইতালিতে ফিরে এসে চীনের ও ভারতের উন্নত জীবনযাত্রা, উৎপাদন ও প্রযুক্তির কথা তুলে ধরেন। এর ফলে ইউরোপীয়দের সুদূর প্রাচ্যের উন্নত রাজ্যগুলোতে যাওয়ার ইচ্ছে আরও প্রবল হয়। চীন থেকে প্রিন্টিং যন্ত্র, বারুদ, ঘড়ি, রেশম ইউরোপে নিয়ে এনে ইতালিয়রা অনেক মুনাফা করতে থাকে। ইতালিয় শহরগুলোতে ব্যাবসায়ীরাই প্রধান শাসক হয়ে ওঠে। তাদের প্রিষ্টপোষকতায় আধুনিক চিন্তা ক্রমেই দানা বাঁধে ইতালিয় সমাজে যা নবজন্ম (Reneissance) নামে ইতিহাসে বিখ্যাতক্যাথোলিক চার্চের ঈশ্বরে বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে যুক্তিহীনভাবে সবকিছু মেনে নেওয়ার ধারণাকে প্রশ্ন করতে শেখাল আধুনিকতাবাদ। আরব, চীন, ভারত, পার্সি, গ্রীক ও প্রাচীন রোম বিষয় পড়াশুনো শুরু করে ইতালিয়রা যা ক্রমেই গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ইংল্যণ্ডে। ক্রুসেডের জন্য ইংরেজ কৃষক, কারিগর, সামন্তদের অনেক খাজনা দিতে হয়েছিল রাজাকে। ক্রুসেড শেষ হওয়ার পরেও খাজনা বেঁড়েই চলছিল ১২১৫ খ্রীষ্টাব্দে রাজার খাজনা বসানোর প্রতিবাদে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বেশ কিছু সামন্ত ও পাদ্রি। তাদের দাবী মেনে একটা সনদ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় রাজা যা “ম্যাগনা কার্টা” নামে পরিচিত। এর ফলে রাজার ইচ্ছে মতো খাজনা বসানোর ক্ষমতা খর্ব করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে রাজাকে গ্রেট কাউন্সিল-এর সভায় সামন্ত ও পাদ্রিদের সাথে আলোচনা করেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ১২৬৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা গ্রেট কাউন্সিল-এর সভা না ডাকায় বিদ্রোহ হয় এবং শেষ পর্যন্ত রাজা বাধ্য হয় দ্বিতীয় গ্রেট কাউন্সিল গ্রহণ করতে যা পার্লামেন্ট নামে পরিচিত। পার্লামেন্ট ত্রয়োদশ শতকে ইংল্যান্ডে সামন্তদের ক্ষমতাই বৃদ্ধি করেছিল। সামন্ততন্ত্র বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পার্লামেন্ট গড়ে ওঠেনি।

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like