
বাংলার সাথে তাইমূরীদের শত্রুতা অর্ধশত বছরের প্রাচীন। মূলত বাবুরের হিন্দুস্তান বিজয়ের সাথে সাথেই ১৫২৬ ঈসায়ীতে এর আরম্ভ হয় এবং এর প্রাথমিক অংশের শেষ হয় ১৫৭৬ সালে।
বাংলা বিজয়ের স্বপ্ন বাবুরের সত্য হয়নি, তাকে কেবলমাত্র ১টি সীমান্ত যুদ্ধে(গোগরার যুদ্ধ ১৫২৯ ঈঃ) জয়লাভ করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো।
বাবুরের পুত্র সম্রাট হুমাইয়্যূন বাংলা অধিকারে সমর্থ হন ১৫৩৯ সালে, যদিও বাংলার সুলতানের কাছ থেকে নয়, হানাদার শের শাহ্'র হাত থেকে।
হুমাইয়্যূনের পুত্র সম্রাট আকবার ষড়যন্ত্র ও দাগাবাজীর মাধ্যমে বাংলার রাজধানী অধিকারে সমর্থ হন ১৫৭৬ সালে- আগ-মাহালের যুদ্ধের মাধ্যমে।
অর্থাৎ বাংলার রাজধানী অধিকার করতেই তাইমূরীদের লেগেছিলো ৫০ বছর!
যদিও রাজধানীকে স্থায়ীভাবে অধিকার করতে না পেরে রাজধানীই সড়িয়ে নেয়া হয়- আগ-মাহালে।
তদুপরি বাংলা থেকে কোন কর আদায় করতে পারেননি- সম্রাট আকবার! যার মূল কারণ ছিলেন ঈসা খান ও উনার মদদপুষ্ট ছোট ছোট রাজন্যবর্গ।
উপরন্তু আকবারকে দ্বিগুণ বেতন, ভাতা ও জায়গীর দিতে হতো বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় অবস্থানরত তাইমূরী সৈন্যদের!
সমস্থ স্বাধীনতাকামী শক্তিগুলোকে পর্যুদস্থ করে বাংলা অধিকার করতে তাইমূরীদের সময় লেগেছিলো আগের ৫০ বছর+ ১৫৭৬-১৬১২ ঈঃ পর্যন্ত আরও ৩৬ বছর! অর্থাৎ মোট ৮৬ বছর!
১৬১২ সালের পরও বাংলা থেকে কোন কর আদায় করতে পারেননি সম্রাট জাহাঙ্গীর! যতোদিন না সুবাহ্দার হয়ে আসেন জাহাঙ্গীরের শ্যালক ইব্রাহীম খান ফাতিহ্ জাঙ্গ!
১৬১৭ সালে ইব্রাহীম খান বাংলার সুবাহ্দার হয়ে আসেন ও ১৬১৮ সালে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর জন্য ১০ লাখ টাকা প্রেরণ করে। যদিও সে যুগের ১০ লাখ একালের ১০ হাজার কোটি টাকার সমান।
বাংলা থেকে এই ১ম নগদ অর্থ প্রেরিত হলো তাইমূরী সাম্রাজ্যের কোষাগারে! অর্থাৎ শত্রুতার ৯২ বছরে ১ম অর্থ আদায় করতে পেরেছিলেন বাংলা থেকে!
জহাঙ্গীরের পুত্র শাহ্ জাহান ১৬২৮ সালে সিংহাসনে আরোহণ করে বাংলাকে নিয়মের অন্যান্য প্রদেশের মতোই একই নিয়মে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি কাসিম খান জুঈনীকে বাংলার সুবাহ্দার নিযুক্ত করে প্রেরণের সময় তৃণমূল পর্যায়(গ্রাম) থেকে কর নির্ধারণ ও আদায় করে তা প্রেরণের নির্দেশ দেন। তারই ফলশ্রুতিতে ১৬৩০ সালে ১ম বাংলা থেকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কর প্রেরিত হলো সম্রাটের কাছে।
অর্থাৎ সম্রাট বাবুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পূরণ হতে তাইমূরীদের লেগেছিলো মোট ১০৪ বছর! এ দিক দিয়ে শাহ্ জাহান-ই ১ম সার্থক তাইমূরী সম্রাট!
Author: Abdur Rahman