feminism

যৌনতার প্রশ্নে নারীর স্বার্থ আর স্ট্র্যাটেজী কি?

13-September-2022 by east is rising 269

যৌন উদারবাদী যৌন রক্ষণশীল এই দুইয়ের বিতর্কে আমাদের গ্রুপ গুলি উত্তাল যৌন রক্ষণশীলদের সবকটা যুক্তি আমি ভালো করে পড়েছি মূলত 'আমাদের প্রথায়/ধর্মে এটা নেই' আর 'এতে পুরুষ আইডেন্টিটি নষ্ট হচ্ছে' এই দুইয়ের বাইরে কিছু নেই একটাই যুক্তি পেয়েছি যেটাকে যুক্তি হিসাবে ধরা যায় সেটা হলো যৌনতার বাজারে নারী পুরুষের তুলনায় অনেক শক্তিশালী সুতরাং পুরুষের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যৌন স্বাধীনতা একটা ভ্রম মাত্র নারী সবসময় এখানে পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে এখানে একটা সুপ্ত অনুমান আছে সেটা নিয়ে পরে বলছি কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই সিদ্ধান্তটার সাথে একমত হতে পারছি না যে পুরুষকে নারী চায়, তার পায়ে পরে যেতে দ্বিধা করে না আরো অনেক কিছু করে যা দেখলে সেই কমেন্টকারী অবাক হয়ে যাবেন আর পুরুষের যৌন অভিজ্ঞতা একটা আবশ্যিক চাহিদা, নারী আবশ্যিক চাহিদা নয় কোনো নারীর সাধ্য নেই শুধু যৌনতা দিয়ে বা না দিয়ে কোনো সচেতন পুরুষকে নিয়ন্ত্রন করে

তবে একটি জায়গায় কমেন্টকারীর অনুমান ঠিক। যৌনতার মুক্তবাজারে অধিকাংশ পুরুষ লুজার হবে। নারীর হাইপারগ্যামীর জন্য ডেটিং এর কার্ভ সবসময় টপ লেভেল পুরুষের দিকে মারাত্বকভাবে হেলে থাকবে। নারীর উপর আর্থ-সামাজিক চাপ যত কম, নারী তত বেশী হাইপারগ্যামাস। এটা এমনকি সমীক্ষা দ্বারা প্রমানিত। সুইডেনের মতো ইগালাটারিয়ান সমাজে যেখানে সব কিছুতে সোস্যাল সিকিউরিটি আছে সেরকম জায়গায় সমীক্ষা করে দেখা গেছে নারীর হাইপারগ্যামী সেখানে অনান্য ইউরোপীয় দেশ আমেরিকার থেকে বেশী। অর্থ্যাৎ লেফট লিবারাল ইগালিটারিয়ান সমাজ গড়ে তোলা এই সমস্যার সমাধান নয়। সম্ভবত পুরুষরাও অবচেতনভাবে এটা বোঝে। ওইজন্য যৌনতার উদারীরকণের যেকোনো প্রস্তাবে একটা বড় অংশের পুরুষের থেকে তীক্ষ প্রতিক্রিয়া আসে। তারা ভয় পায় বিবাহ প্রথা একেবারে উঠে গেলে তাদের যৌনতা পাওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না। পেলেও সাতঘাট ঘোরা মেয়ে পাবে, তার সাথে অভিজ্ঞতা কখনই একরকম হবে না

কিন্তু তাহলে কি করা উচিত। এখন যেরকম চলছে সেরকম চলতে দেওয়া উচিত কি? এখনো পুরুষরা একইরকম ভাবে লুজার হচ্ছে। অন্তত তখন কখন খুশী যেমন খুশী ধর্ষণের কেস খেয়ে জেলে যেতে হবে না। আর পরকীয়া স্ত্রীকে সারাজীবন খাওয়াতেও হবে না। এটাই একমাত্র যুক্তিযুক্ত অবস্থান। আমাদের আন্দোলন যদি নারীবাদি আন্দোলন হতো তারা সিদ্ধান্ত নিতে এক ফোঁটা সময় নষ্ট করতো না। নারীর স্বার্থ তাদের কাছে শেষ কথা। কিন্তু যৌনতার প্রশ্নে নারীর স্বার্থ আর স্ট্র্যাটেজী কি? বেশিরভাগ পুরুস কনফিউসড এসব ব্যাপারে

প্রাচীন গ্রীক নাট্যকার অ্যারিষ্টফেনসের 'এক্লেসিয়াজৌসাই' নামে একটা নাটক আছে। এই নাটকে এথেন্সের নারীরা বিদ্রোহ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতা দখল করে প্রথম আইন বানায় যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরুষটিকে সব নারীর সাথে সঙ্গম করতে হবে। সে শুরু করবে সবচেয়ে কুৎসিত নারী দিয়ে। এই হলো নারীর যৌন স্বর্গ। অ্যারিষ্টফেনসের নারীর যৌন মনস্তত্ব নিয়ে যে কোন আধুনিক গড়পড়তা পুরুষের চেয়ে বেশী ধারণা ছিল। নারী তার কাছে উপলব্ধ সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরুষটিকে চায়। বাকিদের চায় না। যে কোন সুন্দরী আকর্ষণীয়া নারীকে লক্ষ্য করুন। তার সামাজিক এফোর্ট বেশিরভাগ যায় অনাকাঙ্খিত পুরুষদের অবাঞ্ছিত মনোযোগ এড়াতে। অন্যদিকে পুরুষের যৌন ফ্যান্টাসি কি? অফুরন্ত যৌনসঙ্গী এবং অবাধ যৌনতা। রেফারেন্সের জন্য বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে স্বর্গের বর্ণনা পড়তে পারেন।

১৯৬৮ প্যারিসের ছাত্র আন্দোলনের দাবী ছিল মেয়েদের হস্টেলে ছেলেদের অবাধ প্রবেশাধিকার। এই আন্দোলনকে ৬০ ৭০ এর দশকের 'sexual revolution' সূচনা বলে ধরতে পারেন। আমার একটা কথা প্রায়ই মনে হয়। আজকে এরকম কোনো আন্দোলন হওয়া সম্ভব কি? সম্ভব না হলে কেন নয়। যৌন ডায়নামিক্সে ঠিক কি পরিবর্তন ঘটেছে। আজকে কেউ এরকম দাবীতে আন্দোলন শুরু করলে নারীবাদিরা তাকে সমর্থন করা তো দূরের কথা তাকে সম্ভাব্য যৌন অপরাধী এবং নারীর পরিসরে অবাঞ্ছিত প্রবেশকারী হিসাবে অ্যাখ্যা দেবে। সমাজ, আইন প্রশাসন সেই পুরুষের সাথে কৃমিকীটের মতো ব্যাবহার করবে। আন্দোলন সফল হওয়া তো দূরের কথা শুরু পর্যন্ত্য হবে না। কারণ নারীর যৌন স্ট্র্যাটেজিতে ওটার আর প্রয়োজন নেই। তখন নারীর যৌন আকাঙ্খার বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক প্রথার আগল ভাঙার প্রয়োজন ছিল

নাহ গেল নারীর দিক। কিন্তু পুরুষরা কেন ৬৮ ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল? তারা হয়তো ভেবেছিল কোন untapped যৌনতার ভান্ডার পরে আছে। সামাজিক প্রথার আগল ভাঙলেই বাঁধ ভাঙা জলের মতো চলে আসবে। পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রমান করেছে এই প্রত্যাশা কতটা ভুল ছিল। তার পরেই এলেন ক্যাথারিন ম্যাককিনন আর অ্যান্ড্রিয়া ডোয়ার্কিন - শুরু হলো "All men are rapist', "All heterosexual sex is rape" সেই রেপ অবসেশন এখনো চলছে। আমেরিকায় date rape আর এখানে প্রতিশ্রতি দিয়ে ধর্ষন। আমেরিকায় দেখা গেছে এই প্রজন্ম আগের প্রজন্মের থেকে অনেক কম সেক্স পাচ্ছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নারীবাদ হলো নারীর যৌন স্ট্র্যাটেজি। নারীর যৌন স্ট্র্যাটেজির লক্ষ্য হলো নারীর যৌনতাকে যতটা বেশী সম্ভব মুক্ত রেখে পুরুষের যৌনতার উপর যতটা সম্ভব বেশী রেস্ট্রিকশন চাপানো। ৬০ এর দশকের যৌন বিপ্লব নারীর যৌনতাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে এসেছে। আর পুরুষের যৌনতা যাতে মুক্ত না থাকে পরবর্তী নারীবাদি আন্দোলন সেটা নিশ্চিত করেছে।

আমাদের দেশে এইগুলো উপরোক্ত সময়ে হয় নি। উল্লিখিত দুটি পৃথক প্রবণতা একসাথে এখন আসছে। এবং আমাদের রক্ষণশীল বন্ধুরা পশ্চিমের মতোই নির্বোধ শত্রু হিসাবে নারীবাদকে তার লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করছেন। পুরুষের যৌন স্বাধীনতার উপর কোনো ধরণের নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করার আগে ভাবুন নারীবাদ কি নারীর উপর কোনো যৌন নিয়ন্ত্রন মেনে নেয়

Author: Arunava Kar


You may also like