
২০১৫ সালে মাতৃভূমি ট্রেন আটকানোর আন্দোলন তৈরি করার পরে রাষ্ট্রীয় প্রত্যাঘাত যখন বড় রকম ভাবে নেমে এল আন্দোলনের ওপর আমি ঠিক করি যে নতুনভাবে আন্দোলনের কর্মসূচী নিতে হবে। যদিও আন্দোলন প্রচণ্ড রকম খবর হয় এবং ইটিভিতে আমি নেতা হিসেবে বাইট দি, কিন্তু আমি বুঝতে পারে এভাবে এগনো যাবেনা। কিন্তু সবার আগে বুঝতে হবে নারীবাদ কি এবং কেন? তাই নারীবাদ, নৃতত্ত্ব, সমাজ বিজ্ঞান এবং জনসংখ্যার অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে পড়াশুনো শুরু করি ২০১৫ থেকে।
আমি মোটামুটি যা বুঝেছি তা হলঃ
১। জন্মহারের সামাজিক অপটিমাম (optimum)-এর ওপর নির্ভর করে নারীর "মা" চরিত্র বেশি গুরুত্ব পাবে নাকি অন্যান্য চরিত্র যেমন "কর্মী" বা "কামিনী" চরিত্র বেশি গুরুত্ব পাবে।
২। মানুষ কোন বয়সে উৎপাদনশীল হয়ে ওঠে তার ওপর নির্ভর করে সামাজিক অপটিমাম (optimum) জন্মহার কতো হবে।
৩। সমাজের মৃত্যুর হারের ওপরও সামাজিক অপটিমাম (optimum) জন্মহার কতো হবে নির্ভর করে।
৪। উন্নত জীবন মানেই বাচ্চাদের মানুষ করার খরচ বেড়ে যাওয়া, পুরুষের বলপূর্বক নারীকে ছিনিয়ে আনার প্রবণতা কমে যাওয়া এবং পুরুষের নারীকে লোভ দেখিয়ে কাছে পাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। ফলে জন্মহারও কমবে অর্থাৎ নারির "মা" চরিত্রের গুরুত্ব হ্রাস পাবে আবার নারীর পুরুষের সাথে দর কষাকষির ক্ষমতাও বেড়ে যাবে অর্থাৎ নারীর "কামিনী" চরিত্র বৃদ্ধি পাবে।
৫। যুগে যুগে দেখা গেছে মানব সভ্যতা যখন এগিয়েছে, যুদ্ধ কমে গেছে, ভোগবাদ বেড়েছে, মৃত্যুহার কমেছে, সামাজিক অপটিমাম (optimum) জন্মহার কমে গেছে অর্থাৎ সমাজ মনে করেছে জন্মহার কমে গেলেই ভাল। তাই নারীর "মা" চরিত্রের গুরুত্ব কমে গেছে এবং নারীর "কর্মী" বা "কামিনী" চরিত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রোম সাম্রাজ্যের শেষ ২০০ বছর (২৫০-৪৫০ খ্রীষ্টাব্দ) এবং দশম শতকের বাঘদাদ সম্পর্কে আমরা এইরকম প্রবণতা গড়ে উঠেছে এমনটা দেখতে পাই তৎকালীন বহু লেখায়। রোমানরা যুদ্ধের দায়িত্ব জার্মান উপজাতিদের ওপর দিয়ে নিজেরা আমোদ প্রমোদে মেতে ওঠে ওই সময়। নারীদের "মা' চরিত্রের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার কথা ও তাদের বেশি করে "কামিনী" হয়ে ওঠার কথা রোমান সাহিত্য ও ঐতিহাসিকরা তুলে ধরেছে। বাঘদাদে আবার "মা"-এর পরিবর্তে কর্মী হিসেবে নারীর ভূমিকা বেড়ে যায় এবং আরবরা তখন যুদ্ধ ছেড়ে আমোদ প্রমোদ করতে থাকে। তুর্কিদের হাতে প্রথমে সামরিক বিষয়গুলো চলে যায় এবং পরে তুর্কিরা রাজনীতিও আরবদের থেকে ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও অজস্র ধর্ম গ্রন্থে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
৬। কিন্তু এখানে একটা বিষয় হল আগে উন্নতি আসত একটা বড় সাম্রাজ্যের প্রধান একটা শহরে। সাম্রাজ্যের মধ্যকার গ্রাম বা ছোট শহর বা সাম্রাজ্যের বাইরের যে বনভূমি বা তৃণভূমি- সেখানে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ বসবাস করত তাদের উন্নয়ন স্পর্শ করতোনা। আর তাই সেখানে উচ্চ জন্মহার বজায় রাখা ও নারীর "মা" হিসেবে গুরুত্ব অটুট থাকত। তাই উন্নত রোমানদের সহজেই সামরিক ও রাজনৈতিক ভাবে হারাতে সক্ষম হয় বনভূমির জার্মান উপজাতিরা ও বাঘদাদী আরবদের হারাতে সক্ষম হয় স্তেপ তৃণভূমির তুর্কিরা। সংখ্যালঘু উন্নত জাতিগুলো সহজেই শেষ হয়ে যেত এবং কষ্ট সহিষ্ণু জীবনের গুরুত্ব ও উচ্চ জন্মহারের গুরুত্ব ও নারীর "মা" হিসেবে গুরুত্ব অপরিসীম হিসেবে বিবেচিত হত।
৭। শিল্প বিপ্লবের ১০০ বছর পরে (১৮৭০-এর দশক) একটা মৌলিক পার্থক্য আসে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন অনেক জীবন দায়ি ওষুধ বানায় যা মহামারী জাত মৃত্যু কমিয়ে দেয়। আবার যাতায়াত করা সহজ হওয়ায় ও উন্নত প্রযুক্তি আসায় বন্যায়, খরায় মৃত্যুও অনেক কমে যায়। ফলে মৃত্যু হার গোটা বিশ্ব জুড়ে কমতে থাকে।
৮। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব (১৮৭০-১৯৬০) সূচনাকাল থেকেই মানুষের আয় করার উপযুক্ত বয়স অনেক বেড়ে যায়। কারণ স্কুল, কলেজ গিয়ে কোন বিশেষ উৎপাদনে দক্ষ হতে হয় মানুষকে। তবেই সে উৎপাদনশীল হয় এবং আয় করতে পারে। ফলে বাচ্চা মানুষ করার খরচ বেড়ে যায় বিশ্ব জুড়ে।
৯। যারা শিল্পোন্নত ছিলনা তারা শিল্পোন্নতদের দাসে পরিণত হয়। এর ফলে শিল্পে অনুন্নত জাতিগুলোর জন্যে শিল্পে উন্নত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৮৬৫ সালের পরে মার্কিনীরা দ্রুত শিল্প বিকাশ ঘটানোর সাথে সাথে ২ কোটি রেড ইণ্ডিয়ান উপজাতিদের শেষ করে দেয়, শিল্পোন্নত ইউরোপীয় দেশগুলো আফ্রিকা ও চীনকে ভাগাভাগি করে নিতে থাকে, ব্রিটিশরা ভারতকে লুট করে গরীব বানিয়ে দেয়। তখন শিল্পে অনুন্নতরা বুঝে যায় শিল্প ছাড়া গতি নেই এবং এর ফলে শিল্প বিপ্লবের ফলগুলোকেও তারা স্বীকার করতে থাকে।
১০। মৃত্যু হার কমে যাওয়ায় আর উৎপাদনশীল হওয়ার বয়স বেড়ে যাওয়ায় শিল্পোন্নত পশ্চীমি দেশগুলোয় ১৮৭০ সাল থেকে দ্রুত জন্মহার কমতে থাকে। বেশি বাচ্চা মানুষ করতে হচ্ছেনা বলে নারীও সুযোগ পায় শ্রমবাজারে ঢোকার। আস্তে আস্তে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বাড়ে, স্বামীর ওপর নির্ভরতা কমে, তারা ১৯১৭ সাল থেকে শ্রম বাজারে ঢোকার স্বাধীনতা ও ভোট দানের অধিকার পেতে থাকে।
১১। রাষ্ট্র বুঝতে পারে শিল্পোন্নত সমাজে দক্ষতা ছাড়া মানুষ কাজ করতে পারবেনা। মানুষের দক্ষতা বাড়াতে একেক জন মানুষ পিছু অনেক পরিকাঠামো বাড়াতে হবে যেমন স্কুল, কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রাস্তা, রেলপথ, থাকার জায়গা, সেতু (বর্তমানে আবার ডিজিটাল পরিকাঠামোও লাগবে যেমন ওয়াইফাই ৫জি ইত্যাদি), ইত্যাদি। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির হারের থেকে জন্মহারের বৃদ্ধি কম রাখতে হবে। অতএব কম জন্মহার জন প্রতি পরিকাঠামো বাড়াবে এবং মানুষকে দক্ষ করে তুলবে। তাই নারীর "মা" ভূমিকা কমিয়ে "কর্মী" ভূমিকা বাড়াতে হবে। এছাড়াও কর্মী সংখ্যা বাড়োলে উৎপাদন ও খাজনা দুইই বাড়বে রাষ্ট্রের।
১২। পুঁজিও দেখল নারী সংসারে কম সময় দিয়ে শ্রম বাজারে বেশি সময় দিলে তারা একদিকে উৎপাদন বাড়াতে পারবে আর অন্যদিকে পুরুষ শ্রমিকের পুঁজির সাথে দর কষাকষির ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে মুনাফার হার বাড়াতে পারবে।
১৩। শিল্পোন্নত সমাজ ক্রমেই এক নতুন ধরণের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়ে। তা হল অতি উৎপাদনের সঙ্কট। অর্থাৎ উৎপাদন বৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে সমাজের ক্রয় ক্ষমতা সেই হারে বাড়ছেনা আর তাই যোগানের তুলনায় চাহিদা কম। অতএব চাহিদা বাড়ানোর দিকে পুঁজি ও রাষ্ট্রের মন গেল। নারীর ক্রয় করার সহজাত প্রবণতাকে পুঁজি ও রাষ্ট্র ব্যবহার করতে শুরু করে। পুরুষ যুগ যুগ ধরে স্ত্রী সন্তান ও মা-বাবার জন্য খরচ করা শিখেছে। নিজের জন্য খরচ মানে সে বোঝে মূলত নেশা করার কিছু জিনিস। আর নারীর জন্যই যেন বিপুল পণ্যের সমাহার। তাই নারীর ক্রেতা হিসেবে গুরুত্ব বেড়ে গেল সমাজে।
১৪। কর্মী ও ক্রেতা হিসবে নারীর ক্ষমতা বাড়ল, ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ল, স্বামীর ওপর নির্ভরতা শেষ হল। এইবার নারী পুরুষের সঙ্গে যৌনতায় দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে এগোল। শিল্পোন্নত সমাজের সভ্য পুরুষ ততদিনে বল পূর্বক নারীকে অর্জন করার ক্ষমতা হারিয়েছে। তাই নারীকে পয়সার লোভ দেখিয়ে কাছে টানার প্রবণতা প্রথমে বাড়ে পুরুষের মধ্যে। কিন্তু নারীও যখন রোজগার শুরু করেছে তখন মধ্যবিত্ত সাধারণ পুরুষের পক্ষে আর পয়সার লোভ দেখিয়ে নারী লাভ সম্ভব হয়ে উঠলনা। স্বাভাবিকভাবেই আরও তোয়াজের দিকে মন দিল পুরুষ। নারীর সব দোষ মেনে নিয়ে নারীসঙ্গ লাভের প্রবণতা বাড়তে থাকল।
১৫। নারীও এই সুযোগে বাচ্চা না নেওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিল আর এর ফলে জন্মহার এতই হ্রাস পেতে শুরু করল যে সমাজে কর্মী সংখ্যা ও ক্রেতা সংখ্যা কমে গেল। ফলে আস্তে আস্তে শিল্পোন্নত সমাজে রাষ্ট্র নারীর "মা" হিসেবে ভূমিকা বাড়ানোর কথা ভাবতে শুরু করেছে। এই প্রবণতা বাড়বে বলেই আমার ধারণা যদি না স্বয়ংক্রিয় গর্ভ বা গর্ভ ধারণ করতে পারে এমন রোবোট আবিস্কার না হয়।
১৬। নারীকে চরমভাবে তোয়াজ করতে রাজি নয় এমন পুরুষ সংখ্যা বাড়ছে এবং তারা পুরুষাধিকার আন্দোলন শুরু করেছে। পুরুষের ক্রেতা হতে শেখানো ও বিয়ে/প্রেম কমিয়ে জন্মহার কমানো হবে পুরুষাধিকার আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পুরুষের জন্য যৌন রোবোট ও মেটাভারসে যৌনতাও বাড়ানোর দিকে মন দিতে হবে পুরুষাধিকার আন্দোলনকে। এগুলোর বাজার তৈরি করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১৭। পুরুষাধিকার কর্মীদের ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ বদলে দেওয়ার কাজও করতে হবে। শিকারী সংগ্রহকারী সমাজে মানুষের উৎপাদনশীল হয়ে উঠতে যতটা বয়স লাগতো কৃষি গবাদি পশু কেন্দ্রিক সমাজে মানুষ উৎপাদনশীল হয়ে উঠত তার চেয়ে অনেক কম বয়সেই। তাই কৃষি গবাদি পশু কেন্দ্রিক সমাজে জন্মহার বাড়ানো লয়াভজনক হয়ে ওঠে আর তাই নারীর "মা" ভূমিকা বেড়ে যায়। নারীর কোন ভূমিকাকে সমাজ গুরুত্ব দেবে "মা" নাকি "কর্মী" নাকি "কামিনী" তা নির্ভর করে সমাজের অপটিমাম জন্মহার কেমন তার ওপর। এটা কখনোই পুরুষের শোষণ বা দমনের ফল নয়।
Author: Saikat Bhattacharya