পশ্চিমের ইতিহাস ৬ সপ্তদশ শতকঃ বাণিজ্য পুঁজিবাদ

06-November-2021 by east is rising 328

সপ্তদশ শতাব্দীতে পশ্চীম প্রাচ্যের থেকে উৎপাদন ছাড়া অন্য সমস্ত বিষয়ে প্রবলভাবে ছাপিয়ে যায়। আসলে বিশ্বকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করে পশ্চীম এই শতক থেকেই। বোরেলির মাইক্রোস্কোপ ও লেন্স আবিস্কার, বলের গ্যাসের চাপ তত্ত্ব, গ্যালিলিওর উন্নত টেলিস্কোপ আবিস্কার যা কোপারনিকাস-এর তত্ত্বকে সঠিক বলে প্রমাণ করে, কেপলারের গ্রহের গতি নিয়ে তত্ত্ব, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব, রায়ের সিস্টেমিক্স, হুকের কোষ তত্ত্ব, ডেস্কারটিসের বিশ্ব ব্রাহ্মান্ডকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র হিসেবে ব্যক্ষা :- সপ্তদশ শতক শুধু পশ্চীমকেই বিজয়ী বানায়নি, বিজ্ঞানকেও বিজয়ী করেছিল ধর্মের সঙ্গে দ্বন্দ্বে।

“ত্রিশ বছরের যুদ্ধ”-এর শেষে (১৬১৮-১৬৪৮) পশ্চীমী সামন্ততন্ত্রের দুই প্রধান রাষ্ট্রযন্ত্র- পবিত্র রোম সাম্রাজ্য ও স্পেন “ওয়েস্টফালিয়া চুক্তি” করে এবং প্রোটেস্টান্ট দেশ হল্যান্ডের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়। উত্তর ও পূর্ব জার্মানিতেও প্রোটেস্টান্ট রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি পায়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ব্র্যান্ডেনবারগের প্রাশিয়া। প্রাশিয়া রাষ্ট্র পরবর্তীকালে জার্মান জাতির ঐক্যকরণ ঘটিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে দুর্বল করতে এবং পরোক্ষভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিত্তি স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল।

ইংল্যান্ডে এই শতকে পার্লামেন্টপহ্নী বনাম রাজাপহ্নীদের মধ্যে ব্যপক সংঘর্ষ হয়। যে পার্লামেন্ট ছিল সামন্তদের রাজার ক্ষমতা খর্ব করার মাধ্যম, তা হয়ে দাঁড়ায় সাধারণ জনগণের রাজার ক্ষমতায় লাগাম টানার হাতিয়ার। এই সময়েই ইংল্যান্ডে জন লক (ইতিহাসে উদারবাদের জনক বলে চিহ্নিত) শ্রম অনুসারে প্রাপ্তি তত্ত্বকে তুলে ধরেন। এই তত্ত্ব শুধু অর্থ লোলুপ ব্যবসায়ীকেই নয়, সাধারণ কৃষক ও কারিগর উৎপাদকদেরও সামন্তদের থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিনিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করে। বিশ্বের ইতিহাসে ইংল্যান্ডে প্রথম উৎপাদনকারী পুঁজি রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার কাজে লীপ্ত হয়। ছোট স্বাধীন কৃষকরা (ইউম্যানরি) পার্লামেন্টের মূল সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করে। যদিও মজার বিষয় পার্লামেন্ট বিজয়ী হওয়ার পরে ছোট কৃষক উচ্ছেদ আরও বৃদ্ধি পায়। উচ্ছেদ হওয়া কৃষক হয় শহরের মজুরে পরিণত হচ্ছিল, নয় উপনিবেশবাদের সেনা, নয় আমেরিকা মহাদেশে পলায়নকারী।

তবে হল্যান্ড এই শতকে সকলকে ছাপিয়ে গেছিল। তারা জাতি রাষ্ট্রকে সরাসরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দখলের কাজে ব্যবহার করে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বানিয়ে তাকে একচেটিয়া অধিকার দেয় এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য করার। আবার ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থের যোগানের জন্য হল্যান্ড বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম শেয়ার বাজার তৈরি করে। শেয়ার ছেঁড়ে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার প্রথম পুঁজি তোলেহল্যান্ড পর্তুগালকে ভারত মহাসাগরে পরাস্ত করে, এশিয়ার বহু বন্দর পর্তুগালের কাছে থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে উপনিবেশ বানিয়ে সেখানকার শাসক হয়ে দাঁড়ায়। আপেক্ষিকভাবে উন্নত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিজেদের মুনাফার স্বার্থে কাজে লাগাতে শুরু করে হল্যান্ড। সপ্তদশ শতকের হল্যান্ড ছিল বাণিজ্য পুঁজিবাদের পথিকৃৎ।

এই শতকের শেষের দিকে ওসমানীয় তুর্ক সাম্রাজ্যের ও ভারতের মোঘল সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণুতা প্রকট হয়। ওসমানীয়রা ভিয়েনাতে পরাস্ত হয় ১৬৮৩ সালে আর হাঙ্গেরি ছেঁড়ে দিতে বাধ্য হয় ১৬৯৯ সালে। ভারতের মোঘল সাম্রাজ্যও নানা বিদ্রোহে দুর্বল হয়ে পড়ে। চীন সাম্রাজ্য তার শক্তি বজায় রেখেছিল এবং ডাচদের বেশ কিছু নৌযুদ্ধে পরাস্তও করেছিল।    

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like