Socialism Communism Xi Jinping Mao USSR China

যে তিনটে নতুন বিষয় কমিউনিস্টদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

20-October-2022 by east is rising 315

১৯৬০ এর শেষে ও ১৯৭০ এর শেষে সমাজে ও অর্থনীতিতে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে।

এক, পুঁজির বিশ্বায়ণ যা পুঁজির শ্রমিকের সাথে দর কষাকষি করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ পুঁজি অনায়াসে উচ্চ মজুরির দেশের থেকে নীম্ন মজুরির দেশে চলে যেতে পারে যদি শ্রমিক শ্রেণি মজুরি বাড়াতে বা ছুটি বাড়াতে আন্দোলন করে।

প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে যে মজুরি পার্থক্য বিশাল বলেই পুঁজি এই সুযোগটা পাচ্ছে। তাই বলাই যায় এই মুহূর্তে যে কোন দেশের আভ্যন্তরীন শ্রেণী বৈষম্যের চেয়ে প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের মধ্যেকার বৈষম্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তাই দেং স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন আগে আন্তর্জাতিক বৈষম্য দূর করতে হবে, তবেই মজুরি পার্থক্য দূর হবে এবং পুঁজি আন্তর্জাতিক মজুরি বৈষম্যকে ব্যবহার করে নিজের দর কষাকষি করার ক্ষমতা বাড়াতে পারবেনা। শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা যত বেশি হবে, মজুরি বাড়ানো তত সম্ভব হবে অর্থাৎ পুঁজির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়বে।

অতএব তৃতীয় বিশ্বের যে কোন কমিউনিস্তদের প্রথম কাজ নিজের দেশের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং দেশের উৎপাদিকা শক্তিকে প্রথম বিশ্বের স্তরে নিয়ে যাওয়া।

চীন এই কাজটাই করে চলেছে শেষ ৪০ বছর। উৎপাদিকা শক্তিকে বাড়াতে প্রথম বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তি, লিকুইডিটি ও বড় বাজার বুবহার করেছে এবং দেশের শ্রমিকদের উতাপাদনশীলতা বাড়িয়েছে এবং মজুরি বাড়িয়েছে ৫-৬ গুণ।

শেষ ১০ বছরে চীন দেশের আভ্যন্তরীন বৈষম্য দূর করতেও সচেষ্ট হয়েছে কারণ চীন অতি উৎপাদন স্তরে পৌছতে পেরেছে তার আগের ৩০ বছরে (১৯৭৮-২০০৭)। তাই আগে যে কোন তৃতীয় বিশ্বের দেশকে অতি উৎপাদন স্তরে পৌছতে হবে যার পরে কেবল দেশের আভ্যন্তরীন বৈষম্য দূর করতেও সচেষ্ট হতে পারবে।

এখন মোট উৎপাদনে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান। তাই তৃতীয় বিশ্বের খনিজ সম্পদ বিক্রেতা দেশগুলোর প্রথম বিশ্বের সাথে দর কষাকষির ক্ষমতা বেড়ে গেছে। কারন পশ্চীম বা জাপান ন্যয্য মূল্য, বাজা্‌ লিকুইডিটি, প্রযুক্তি দিতে অস্বীকার করলে চীন দেবে, চীন অস্বীকার করলে পশ্চীম বা জাপান দেবে। এর ফলে এই সমস্ত তৃতীয় বিশ্বের মজুরিও বেরেছে কোন কোন সেক্টরে।

অতএব সবার আগে লড়াই করতে হবে প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে যে বৈষম্য আছে তার বিরুদ্ধে। এই বৈষম্য দূর হলেই কেবল দেশের আভ্যন্তরীন শ্রেণী দ্বন্দ্ব দূর করা সম্ভব হবে।

দুই, চীনের জন প্রতি উৎপাদন আর তার ওপর ভিত্ত করে থাকা মজুরি এখনো প্রথম বিশ্বের চেয়ে ১/৪। মানে চীনের শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা আরও বাড়াতে হবে। তাহলে এই প্রক্রিয়া আরও বাড়বে।জনপ্রতি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উদ্ভাবন দরকার। তার জন্য সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উদ্ভাবনকারীকে অর্থায়ন করা দরকার। পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির হাজারে একজন সফল উদ্ভাবক-এর অনেক রোজগার হবে আর বাকি ৯৯৯ জন উদ্ভাবক শেষ হয়ে যাবে, এই ভুল পুঁজিবাদী অর্থায়ন থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার। না হলে রিস্ক ফ্যক্টর বেড়ে যাবে উদ্ভাবকের আর তাই অনেকেই উদ্ভাবন করতে এগিয়ে আসবেনা। অন্যদিকে চীন নতুন সমাজতান্ত্রিক উদ্ভাবনের অর্থায়ন শুরু করেছে যেখানে ভাবা হয় যে রিস্ক নেওয়াটাকেই পুরস্কৃত করা দরকার। আর তাই একটা সফল উদ্ভাবনের রোজগারের অংশ অসফল উদ্ভাবকদেরও প্রাপ্য। এইভাবে সমাজতান্ত্রিক নতুন উদ্ভাবন অর্থায়ন মডেল এনেছে চীন যেখানে মানুষ উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত হবে পুজিবাদী দেশের থেকে অনেক বেশি। শ্রমিক শ্রমিক শ্রেণীর মতো একটা নতুন সমাজতান্ত্রিক উদ্ভাবক শ্রেণীও তৈরি করতে হবে।

তিন, কমিউনিস্টরা নারীকে শ্রম বাজারে নিয়ে এসেছিল নারীর মুক্তি ঘটাতে। কিন্তু ১৯৬০-এর শেষের দিক থেকে উদারবাদীরা নারীর পুরুষের সাথে যৌনতায় দর কষাকষির জায়গায় করে দিয়ে নারীকে শোষিত থেকে শোষকে পরিণত করেছে। নারী সে কোন পোষাক পরে সকল পুরুষকে প্রলুব্ধ করতে পারবে কিন্তু নারী কেবল তার পছন্দসই পুরুষের সঙ্গেই সঙ্গম/প্রেম/বিয়ে করবে। এর ফলে কেবল উচ্চ শ্রেণীর ক্ষমতাবান রূপবান পুরুষই লাভবান হবে আর অধিকাংশ গড়পড়তা পুরুষ শোষিত হতে থাকবে নারীর হাতে। যৌন দর কষাকষি করে পুরুষকে শোষণ করার এক অভিনব ক্ষমতা নারীর হাতে তুলে দিয়ে নারীকে প্রতিক্রীয়াশিল অংশ বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে স্বল্প জন্মহার সঙ্কট যার ফলে ভবিষ্যতে কর্মক্ষম বয়সের মানুষের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। অতএব নারী প্রশ্নকে নতুনভাবে ভাবার সময় এসেছে।

সুতরাং তিনটে বিষয় কমিউনিস্টদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবেঃ

১। আন্তর্জাতিক বৈষম্য দূরীকরণ দেশের আভ্যন্তরীন বৈষম্য দূর করার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পে অনুন্নত দেশকে আগে অতি উৎপাদন স্তরে পৌঁছতে হবে এবং তার পরেই কেবল আভ্যন্তরীন বৈষম্য দূর করার কথা ভাবতে পারে।

২। উদ্ভাবক শ্রেণীকে শ্রমিক শ্রেণীর সাথেই বিপ্লবী শ্রেণী বলে স্বীকার করতে হবে এবং উদ্ভাবনের সমাজতান্ত্রিক অর্থায়ন মডেল তৈরি করতে হবে।

৩। নারী যৌনতায় দর কষাকষিকে ব্যবহার করে নতুন শোষক শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে এবং স্বল্প জন্মহার সঙ্কট নারী প্রসঙ্গে নতুন চিন্তার অবকাশ তৈরি করছে।

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like