বিজয়ী জাতির পুরুষ (M), বিজিত জাতির পুরুষ (m), বিজয়ী জাতির নারী (F), বিজিত জাতির নারী (f)ঃ এই চারজনের মধ্যে সম্পর্কটা কেমন হওয়ার কথা


আন্তর্জাতিক স্তরে চীন মার্কিন হেজিমনিকে শেষ করছে।

ভারতীয় জাতীয় স্তরে বাঙালি জাতিয়াতাবাদের উত্থান হচ্ছে।

বাঙালি সমাজিক স্তরে (অন্যান্য জাতির সামাজিক স্তরে যেখানে নারী রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও যৌন স্বাধীনতা পেয়েছে) পুরুষ ক্রমেই বাংলার নারী পূজারী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলছে।

এই তিনটে স্তরেই লাগাতার সংঘর্ষ চলছে।

এই তিনটে সংঘর্ষ একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয় এবং কোলকাতার দুর্গা পুজোর রমরমার যেমন সম্পর্ক আছে।

আসলে বিভিন্ন জাতির ভেতরের সংঘর্ষ এবং পুরুষ-নারীর ভেতরের সংঘর্ষের মধ্যে একটা সহজ সম্পর্ক আছে।

একটা বিজয়ী জাতির পুরুষ (M), একটা বিজিত জাতির পুরুষ (m), একটা বিজয়ী জাতির নারী (F), একটা বিজিত জাতির নারী (f)।

এই চারজনের মধ্যে সম্পর্কটা কেমন হওয়ার কথা।

তা ছকে বেঁধে বলা যায়।

M m-কে হয় মেরে ফেলবে নয় তো দাস রাখবে আর বংশ পরম্পরায় দাসত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে m-কে বংশবৃদ্ধিও করতে দেবে কিন্তু m-এর বেঁচে থাকা ও বংশবৃদ্ধি করতে পারার সর্ত M দেবে।

M f-কে ব্যবহার করবে দাসী হিসেবে। দাসী হিসেবে f-কে F এবং M উভয়েরই সেবা করতে হতে পারে। f-দের মধ্যে সুন্দরী অংশটা স্বাভাবিকভাবেই M-এর যৌন দাসী হবে আর f-দের মধ্যে আসুন্দরী অংশটা মূলত অন্যান্য দাসীর কাজ করবে। নারীর হাইপারগ্যামী চরিত্র অনুযায়ী f চেষ্টা করবে M-কে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে, তার থেকে উপহার পেতে চাইবে এমনকি সুযোগ পেলে সন্তানও চাইবে কারণ বিজয়ী পুরুষ M-এর জিন শক্তিশালী বলে বিবেচিত এবং সে সম্পদশালীও। M ও f-এর এই দরকষাকষির খেলায় যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল M f -কে কতোটা আকর্ষণ বোধ করবে। বিজয়ী আর বিজিত জাতির মধ্যে যতো মিল থাকবে ততো M-এর f-কে দেখে আকর্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা। 

M ও F-এর মধ্যেকার সম্পর্ক অনেকটাই f-এর ওপর নির্ভরশীল। f-এর মধ্যে সুন্দরী অংশটা F-এর M-এর সঙ্গে দর কষাকষি করার ক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দেবে। F M-কে যৌনতা দিতে রাজি না হলে M f-এর কাছে চলে যাবে যৌনতা নিতে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে M F ও f উভয়ের সাথেই যৌনতা করবে, F ও f-কে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করাবে কিন্তু শুধু F-এর সন্তানকেই সম্পত্তির মালিকানা দেবে আর f-এর সন্তানকে সম্পত্তির মালিকানা দেবেনা। M ও f-এর সন্তান না হওয়াই শ্রেয় M-এর জন্যে।

m ও f-এর সম্পর্ক M ও F-এর সম্পর্কের বিপরীত। f-এর ক্ষমতা m-এর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ f যৌনতার জন্য M ও m উভয়ের কাছেই যেতে পারে,

m-এর বিরুদ্ধে M-এর কাছে নালিস করতে পারে। m বেঁচে থাকার তাগিদে f-এর ক্ষমতা স্বীকার করে নেবে। বরং f M-এর থেকে উপহার তা নিয়ে m-এর গর্ব হবে এবং তা থেকে লাভ করার কথা ভাববে।

m ও F-এর সম্পর্ক নারী লিঙ্গের হাইপারগ্যামী দিয়ে নির্ধারিত। বিজিত পুরুষ বিজিত কারণ তার জীন দুর্বল। তাই F রাজি হবেনা m-এর সাথে সম্পর্ক করতে। সন্তান তো নেবেই না। m-কে কিছু ক্ষেত্রে যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে F।

তাহলে দেখা যাচ্ছে বিজয়ী জাতির মধ্যে পুরুষ নারীর ওপর কর্তৃত্ব করে (M>F)।

কিন্তু বিজিত জাতির মধ্যে নারী পুরুষের ওপর কর্তৃত্ব করে (f>m)।

এবার মিলিয়ে দেখুন দুর্বল বাঙালি জাতিতে নারীর ক্ষমতা বেশি পুরুষের তুলনায়।

হিন্দিভাষি সমাজে আবার পুরুষের জোর নারীর চেয়ে বেশি।

হিন্দিভাষিদের নিয়ন্ত্রণে বাঙালি আছে কারণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য হিন্দিভাষিদের হাতে তাদের গড়া সাম্রাজ্য দিয়ে দেয় এবং তারা পরে সোভিয়েতের সাহায্যও পায় আবার চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন সাহায্যও পায়।

চীন যত নিজের শক্তি কায়েম করবে, হিন্দিভাষিরা ও মার্কিন সাম্রাজ্য ততো চাপের মুখে পড়বে। এই চাপ শেষ পর্যন্ত হিন্দিভাষিদের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তিও দিতে পারে।

বাঙালি যদি মুক্ত হয়ে যায় আর হিন্দিভাষিদের সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায় তখন পুরুষ ও নারীর চরিত্রও উলটে যাবে। তখন ক্ষমতাবান বাঙালি জাতিতে পুরুষের ক্ষমতা নারীর থেকে বেশি হবে আর দুর্বল হিন্দিভাষিদের মধ্যে নারীর ক্ষমতা পুরুষের চেয়ে বেশি হবে।

জাতির মতো এই তত্ত্ব শ্রেণি বিশেষেও সত্যি।

ক্ষমতাবান শ্রেণিতে পুরুষের ক্ষমতা নারীর থেকে বেশি আর দুর্বল মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে নারীর ক্ষমতা পুরুষের থেকে বেশি।

মনে রাখা দরকার যে তিনটে স্তরের কথা বলেছি সেই তিনটে স্তর লাগাতার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত।

কিন্তু ক্ষমতা ওপর থেকে নীচে নামে। তাই চীন যতো মার্কিন ক্ষমতাকে খর্ব করতে থাকবে, হিন্দিভাষীরা ততো দুর্বল হবে, বাঙালি জাতি হিসেবে ততো শক্তি দেখাবার জায়গা পাবে, বাঙালি পুরুষের ক্ষমতা ততো বৃদ্ধি পাবে। আবার বাংলার নারী পূজারী সংস্কৃতিতে বাঙালি পুরুষকে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য লড়তে হবে এবং বাঙালি সমাজে পুরুষের কণ্ঠ যতো শক্তিশালী হবে, বাঙালি সমাজ ততো বেশি শক্তি নিয়ে হিন্দিভাষিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে এবং চীনের উত্থানকে বাঙালি জাতির পক্ষে কাজে লাগাতে পারবে।

ইংরেজ পুরুষের সঙ্গে বাঙালি নারীর দরকষাকষির ক্ষমতা প্রায় শূন্য ছিল কারণ ইংরেজরা বাঙালি নারীকে সুন্দরী বলে গণ্য করতোনা।
তুর্কি পাঠানদেরও বাঙালি নারীকে দেখে আকর্ষিত হওয়ার কারণ নেই। 
হিন্দিভাষি ও বাঙালির মধ্যে বর্ণ ও দর্শনে ভিন্নতা কম আর তাই হিন্দিভাষি পুরুষ খুব সহজেই বাঙালি নারীকে দেখে আকর্ষিত হয় আর এটাই বাঙালি নারীর হিন্দিভাষি পুরুষের সাথে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জন্য বাঙালি নারীর মধ্যে প্রবণতা থাকবে হিন্দিভাষিদের বাংলার ওপর নিয়ন্ত্রণকে কায়েম রাখার। আর ঠিক এই কারণেই বাংলার হিন্দি বিরোধী সংগ্রামে বাঙালি পুরুষের নারী পূজারী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই এতো গুরুত্বপূর্ণ। 
 

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like