
চীনের উত্থান ও মার্কিন পতন এখন বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর প্রভাব পড়ছে পণ্যের বাজার থেকে শুরু করে মুদ্রার বাজারে, অস্ত্রের বাজার থেকে শুরু করে প্রযুক্তির বাজারে। কিন্তু এর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক খুব উপেক্ষিত আর তা হল লিঙ্গ দ্বন্দ্বে এর প্রভাব।
শুনতে অবাক লাগলেও ও লিঙ্গ দ্বন্দ্ব ও মোটা দাগে লিঙ্গ বাজারে একটা জাতি কেন্দ্রিক র্যঙ্কিং থেকেই যায়। শক্তিশালি জাতির পুরুষ দুর্বল জাতির নারীর কাছে আকর্ষণীয় আর দুর্বল জাতির পুরুষ নিজের জাতির নারী এবং শক্তিশালি জাতির নারী দুজনের কাছেই উপেক্ষিত।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শক্তিশালি জাতি কাকে বলব? শক্তি বলতে কি বুঝব? এমনিতে এটা সকলের জানা যে লিঙ্গ চিন্তায় নারী ও পুরুষ উভয়েরই রূপ এবং সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রূপের মধ্য দিয়ে একজন নারী বা পুরুষের স্বাস্থ্য, বয়স, জিন, আদীম সমাজের অভ্যেসের সঙ্গে যৌন ফ্যান্টাসির যে সঙ্গতিপূর্ণ যে ভাবনা এগুলোকে বোঝা যায়। সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে একজন নারী বা পুরুষের সম্পদ দেওয়ার ক্ষমতা, বুদ্ধি, বিবেচনা শক্তি ও গোষ্ঠিগত ক্ষমতা কতোটা তা বোঝা যায়। এই দুই-এর মধ্যে একটা ভারসাম্য এনে আমরা নারী ও পুরুষের যৌন র্যাঙ্কিং করি। সাধারণত পুরুষের ক্ষেত্রে সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা-এর গুরুত্ব বেশি আর নারীর ক্ষেত্রে রূপের গুরুত্ব বেশি। ভাল ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যই আমাদের উচ্চ র্যাঙ্কিং-এর সঙ্গী নির্বাচন করার তাগিদ।
এবার দেখা যাক জাতি কিভাবে এই রূপ ও সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা-এর ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের পৃথিবীতে সমস্ত জাতিগুলোই বিশেষ ভৌগলিক অবস্থায় বাস করে। ভূগোল অনেকটাই মানুষের রূপ নিয়ন্ত্রণ করে। ইকুয়েটর-এর কাছে হলে গায়ের রঙ কালো হবে, মেরুর কাছে হলে গায়ের রঙ ফর্সা হবে। খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠাণ্ডায় হাড়ের ঘনত্ব ও উচ্চতা বেশি হবে এবং ফলে গায়ে জোড় বেশি হবে। যুগ যুগ ধরে যে যুদ্ধ হয়েছে তাতে গায়ের জোড়ের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি ছিল আর তাই হাড়ের ঘনত্ব ও উচ্চতা বেশি হলে তাকে রূপবান ও বিজয়ী হিসেবে মনে করাটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। আবার বর্তমান সমাজে শিল্পন্নত দেশগুলো্র মানুষ বেশী সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকে এবং তাদের শিক্ষাও উন্নত বেশী।
উন্নত দেশ বলতে বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ছিল পশ্চীম ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। স্বাভাবিকভাবেই শ্বেতাঙ্গ জাতিকে রূপ ও সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা দুই দিক দিয়েই শক্তিশালি ভাবা হত। তাই শ্বেতাঙ্গ পুরুষ স্বাভাবিকভাবেই অশ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু ১৯৬০-এর দশক থেকে যখন প্রথমে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও পরে শ্বেতাঙ্গিনী নারী যৌন স্বাধীনতা পেতে শুরু করলো তখন তারা কৃষ্ণাঙ্গ ও উত্তর আফ্রিকার পুরুষদের প্রতি আকর্ষিত হওয়া শুরু করল। কৃষ্ণাঙ্গ ও উত্তর আফ্রিকার পুরুষদের সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা কম কিন্তু শ্বেতাঙ্গিনী নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এসে গেছে বলে তাদের আর পুরুষের সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা নিয়ে ভাবনা কম। বরং পুরুষের রূপ-এর প্রতিই তাদের চোখ পড়ল। পুরুষদের সম্পত্তি/রোজগার/শিক্ষা কম বলে এদের যৌন দাস হিসেবেও ব্যবহার করা সহজ আর তাই শ্বেতাঙ্গিনী নারী আফ্রিকায় গিয়ে সেখানকার পুরুষদের সঙ্গ কিনতে শুরু করল। শ্বেতাঙ্গ পুরুষের প্রয়োজোন ফুরল শ্বেতাঙ্গিনী নারীর কাছে। আবার চরম নারী কেন্দ্রিক আইন শ্বেতাঙ্গ পুরুষের কাছে বিয়েটাই অলাভজনক করে ফেলল। আর তাই শ্বেতাঙ্গ পুরুষও শ্বেতাঙ্গিনী নারী নেওয়া বন্ধ করতে লাগল।
ফলে শ্বেতাঙ্গদের পূর্ব ইউরোপের অংশটা খানিকটা কম ধনী হওয়ায় পশ্চীমের শ্বেতাঙ্গ পুরুষেরা এই পূর্ব ইউরোপের শ্বেতাঙ্গিনীদের নেওয়া শুরু করে।শ্বেতাঙ্গ পুরুষ একই সময় বেশী বেশী করে পূর্ব এশিয়ার পিতাঙ্গিনী নারী নেওয়ার চেষ্টা করে। একে পীত জ্বর বলেও অভিহিত করা শুরু হয়। হয়তো অশ্বেতাঙ্গ বিশ্বের মধ্যে জাপানের শিল্পোন্নত হওয়াটা পিতাঙ্গিনী নারীকে অন্য অশ্বেতাঙ্গিনী নারীদের তুলনায় উচ্চ র্যাঙ্কিং-এর বলে মনে হওয়ার কারণ। আবার পিতাঙ্গদের বুদ্ধিমত্তা (I.Q.) বেশি হওয়াটাও শ্বেতাঙ্গ পুরুষকে আকর্ষণ করে থাকতে পারে। যাই হোক শ্বেতাঙ্গ পুরুষ পিতাঙ্গিনীদের দিকে হাত বাড়ানো শুরু করল ১৯৮০-এর দশক থেকে। পীতাঙ্গদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ জাতি হোল চীনারা। এবং তাই শ্বেতাঙ্গ পুরুষ চীনা পিতাঙ্গিনীদের নেওয়া শুরু করে।
২০০৮ সালের পর থেকে যখন চীনের উথান হয় তখন চীনা পুরুষদের মধ্যেও অনেক ধনী তৈরি হয়। আবার শ্বেতাঙ্গদের পূর্ব ইউরোপের অংশটা খানিকটা কম ধনী হওয়ায় চীনা পুরুষেরা এই পূর্ব ইউরোপের শ্বেতাঙ্গিনীদের নেওয়া শুরু করে। আবার চীনা ছেলে বেশি ধনবাম হয়ে ওঠায় অনেক পিতাঙ্গিনী নারী চীনা ধনবান পুরুষকে আকর্ষণীয় ভাবতে শুরু করে। এদিকে উপকূল আরবরাও ধনী হয়ে ওঠে এবং তারাও এই খেলায় ঢুকে পড়ে। চীনে পুরুষের নারীর তুলনায় সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে।
একদিকে পশ্চীমের নারীদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ পুরুষের প্রতি অনীহা বাড়তে থাকে আবার চীনা পুরুষ পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার বাজারে নারীদের দাম চড়িয়ে দেয়। ফলে পশ্চীমের শ্বেতাঙ্গ পুরুষ নতুন নারীর বাজার খুজতে থাকে। প্রথমে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং পরে দক্ষিণ এশিয়া অর্থাৎ মূলত ভারতের নারীদের দিকে হাত বাড়াতে শুরু করেছে শ্বেতাঙ্গ পুরুষ। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের বাকিদের থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি ফর্সা লম্বা ধনবান পাঞ্জাবী, রাজস্থানী, গুজারাতি, হরিয়ানভি মেয়েদের দিকেই শ্বেতাঙ্গ পুরুষ চোখ দেয়। ভারতের এই সব জাতির শ্রেষ্ঠ নারীরা ক্রমেই শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর ফলে পাঞ্জাবী, রাজস্থানী, গুজারাতি, হরিয়ানভি পুরুষের নিজের জাতির নারী জুটছেনা। এই সব অঞ্চলে নারীর তুলনায় পুরুষেড় সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই সমস্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
ফলে পাঞ্জাবী, রাজস্থানী, গুজারাতি, হরিয়ানভি পুরুষেরা বিহার, পশ্চীম বঙ্গ, আসাম, উরিশ্যা থেকে মেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এর জন্য বলিউড-কেও ব্যবহার করছে। এর ফলে পশ্চীম বাংলার পুরুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। রাজ্যের মেয়েদের দাম বেড়ে যাচ্ছে আর পুরুষের সম্পত্তি বাড়ছেনা। আমরা যদি চীনা বা আরব পুরুষের মতো ঘুরে দাঁড়াতে না পারি আমাদের পশ্চীম বঙ্গের পুরুষদের নিজেদের চেয়ে নীম্ন মানের নারী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোয়ালিটি আরও খারাপ করে দেবে।
Author: Saikat Bhattacharya