সাধারণত বাংলাদেশে কেন সৌদির ১ দিন পরে ইদ ?

10-April-2024 by east is rising 161

সৌদি পশ্চিমে, মাঝে বাংলাদেশ, পূর্বে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।

প্রশ্নঃ-সৌদির সাথে আমাদের চাঁদ সময়ের পার্থক্য ২১ ঘন্টা, সৌদির সাথে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার চাঁদ সময়ের পার্থক্য প্রায় ২২ ঘন্টা। তবুও তারাই আগে চাঁদ দেখে, বাংলাদেশ পরে কেন?

উত্তরঃ- চন্দ্রবর্ষ: চাঁদের পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে গড়ে প্রায় ২৯.৫৩ দিন। ফলশ্রুতিতে চন্দ্রমাস হয় ২৯ বা ৩০।

মজার ব্যাপার হল, চন্দ্রমাস নির্দিষ্ট নয়। ফলে মুসলিমদেরকে রমজান ও ঈদ পালন করতে চাঁদ দেখতে হয়। এই অনির্দিষ্টতার কারণে চন্দ্রবছরও আলাদা হয়। কোন বছর ৩৫৪, আবার কোন বছরে ৩৫৫ দিন হয়। অর্থাৎ এটি গ্রেগরীয় বা সৌরবর্ষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অনন্য এবং এখানেও সূর্যের কোনো কাজ নেই । যদিও চন্দ্রবর্ষে সূর্য ডোবার পর নতুন দিন গণনা শুরু হয়। অর্থাৎ রাত আগে আসে, তারপর দিন।

আসা করছি বিষয় দুটো পরিষ্কার। তবে এবার মূল বিষয়ে আলোচনা করা যাক।

সময়ের বিশাল তারতম্য:

শুরুতে যেই প্রশ্নটা ছিল সেটাই আবার আলোচনা করি। হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা এগিয়ে। এতে বরং বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা আগে চাঁদ দেখবে। কিন্তু তা তো হয়ই না, উল্টো সৌদি আরবে একদিন আগে রমজান, ঈদ শুরু হয়ে যায় সাধারণত।

এর উত্তরের সঙ্কেত উপরে খানিকটা দিয়েছিও। সমস্যা হল, আমরা সৌর ও চন্দ্রের হিসেবকে মিলিয়ে ফেলি। সৌর হিসেবে সৌদি আরবের সাথে আমাদের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘণ্টা হলেও চন্দ্রের হিসেবে সৌদি আরব ও আমাদের পার্থক্য ২১ ঘণ্টার! কি, অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা। এটা কীভাবে হল, বুঝতে পারছেন না নিশ্চয়ই?

চলুন জেনে নিই বিষয়টা।

পৃথিবীর গতির কথা তো জানিই। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরে চলেছে প্রতিনিয়ত। যার আহ্নিক গতি বলি। গতিটা সহজে বোঝা যাবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক বা অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ (Anti Clockwise) বললে। চাঁদ তো ধীরে ধীরে আবর্তন করছে। ফলশ্রুতিতে প্রতিদিন পশ্চিম দেশ সবার আগে চাঁদের উন্মোচন দেখতে পায়। আমরা তো জানিই, সূর্যোদয় হয় পূর্ব থেকে? তবে চাঁদের ক্ষেত্রে উল্টো। যদিও চাঁদ পূর্বে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়, তবুও পশ্চিমারা চাঁদের আলো সবার আগে পায়।

কেন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলেও অন্য দেশে দেখা যেতে দেরি হতে পারে। কেননা খালি চোখে চাঁদকে দেখতে হলে চন্দ্র আর সূর্যের মাঝে ১০.৫ ডিগ্রি কোণ থাকতেই হবে এবং যে পরিমাণ দূরত্ব অর্জন করলে এই কোণ তৈরি হবে, সে পরিমাণ যেতে যেতে চাঁদের ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। এ কারণেই আজ আমেরিকাতে চাঁদ দেখা গেলেই যে বাংলাদেশেও দেখা যাবে, সেটা ভুল ধারণা। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই কোণ অর্থাৎ ১০.৫ ডিগ্রি অর্জন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাবে না। একই বিষয় সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। এই সংকট কোণকে ইলঙ্গেশন (Elongation) বলে। তাই চাঁদের বয়স কত সেটা আদৌ আসল কথা নয়, সেই কোণ হয়েছে কিনা সেটার উপর নির্ভর করে চাঁদ দেখা যাবে কিনা।

ফলে আমরা সৌদি আরব থেকে ৩ ঘণ্টা সূর্যের হিসেবে এগিয়ে থাকলেও, চাঁদের হিসেবে ২১ (২৪-৩=২১) ঘণ্টা পিছিয়ে আছি। ২১ ঘণ্টা প্রায় ১ দিন। অর্থাৎ আমরা প্রায় একদিন পিছিয়ে আছি। সেজন্যই সৌর বছরের হিসেবে একদিন পরে চাঁদ দেখি। তবে চন্দ্র বছরের কথা বললে আমরা সবাই একই দিনে ইদ/রোজা করি। তাই কারো এমনটা ভাবার কিছু নেই যে সবাই ভিন্ন দিনে রমজান বা ইদ পালন করে; সবাই একই দিনেই পালন করে। কিন্তু সেটা যদি ইংরেজি বর্ষপঞ্জি দিয়ে যাচাই করেন, সেটা নিতান্তই বোকামি হবে। শেষ কথা হল, চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী পুরো পৃথিবীর সকলেই একই দিনে রমজান, ইদ পালন করে। শুধু টাইমজোন (Timezone) আলাদা বলে এমনটা মনে হয়।

Copied from...

Abubakar Siddique Addayee

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like