১৯১৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত যত বিপ্লব হয়েছে তার বুনিয়াদ ছিল শ্রেণি সংগ্রাম।
কেন?
কারণ অনেক জীবনদায়ী ঔষধ আবিস্কার হওয়ায় মৃত্যুর হার কমে যায় দ্রুত অথচ জন্ম হার একই থাকে। তাই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার বাড়ানোর জন্য। তা ছাড়া শিল্পায়ণের গতি কোন কোন দেশে ছিল খুব উচ্চ আর কোন কোন দেশে ছিল মন্থর। শিল্পায়ণে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলো বাকিদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছিল আর তাই শিল্পায়ণে পিছিয়ে থাকা সমাজেও দ্রুত শিল্পায়ণ করার চাপ আসছিল।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার চাপ আর শিল্পে পিছিয়ে থাকা সমাজের ওপর শিল্পোন্নত হওয়ার চাপঃ এই দুই চাপের ফলেই শ্রেণি সংগ্রাম হয়ে ওঠে তীব্র।
জমিদারি উচ্ছ্বেদ করে ভূমি সংস্কার করে নিজেদের আয় বাড়াতে ব্যগ্র ছিল কৃষক আর শ্রমিক দর কষাকষি করে মজুরি বাড়ানোর জন্য ব্যগ্র ছিল। কারণ কৃষক ও শ্রমিকের পরিবারে অনেক সন্তান ছিল আর তাদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক কৃষকদের কাছে।
১৯১৭-১৯৭৯ পর্যন্ত এইভাবে চলেছে।
কিন্তু ৬২ বছরের প্রচেষ্টার ফলে অনেক শুভ ফল মেনেঃ
১। মৃত্যুর হারের মতো জন্মের হারও কমে যায় ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আসে।
২। জমিদারি প্রথা ও উপনিবেশবাদ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৩। রাষ্ট্র এটা স্বীকার করে নেয় যে মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন বিনামূল্যে পাওয়া অধিকার আর তা পেলেই কেবল মানুষ বাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো জায়গায় পৌঁ...
৪। শিল্পোন্নয়নের হার গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আর তাই আয়ও বৃদ্ধি পায় দারুণ মাত্রায়
৫। পুঁজি বিশ্বায়িত হয়ে যাওয়ায় স্বল্প মজুরির দেশে চলে যেতে পারত উচ্চ মজুরির দেশ ছেড়ে আর দুনিয়া জুড়ে শিল্পোন্নয়নের মাত্রার অনেক বড় পার্থক্য থাকায় শ্রমিকের দর কষাকষির ক্ষমতা হ্রাস পায়
৬। নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ফলে সমাজের আয় বৃদ্ধি পায় ও জন্মের হার হ্রাস পায়
নারী তার যৌনতার দর কষাকষির ক্ষমতা স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে থাকে যার ফলে সাধারণ পুরুষের পক্ষে যৌনতা পাওয়া কঠিনতর হতে থেকে। এর কারণ নারী সবসময় শ্রেষ্ঠ (আয় ও রূপের দিক থেকে) পুরুষের কাছেই যাবে আর তা না পেলে নীম্ন পুরুষের কাছে না গিয়ে একা থাকাই পছন্দ করবে।
ফলে যৌনতা না পাওয়া পুরুষ ও যৌনতার যোগানদার নারী- এই দুই-এ সমাজ ভরে যায় আর তাই লিঙ্গ পরিচয় হয়ে উঠতে থাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও রাষ্ট্র মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন বিনামূল্যে দিতে গিয়ে ভোটব্যঙ্ক অনুযায়ী দান শুরু করে আর ভোটব্যঙ্কের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সমাজে উপজাতি (ট্রাইবাল) পরিচয়ের গুরুত্ব বাড়তে থাকে।
আবার পশ্চীমের দেশগুলোতে অভিবাসী বাড়তে থাকায় ও সদ্য স্বাধীন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিভিন্ন উপজাতির আভ্যিন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় উপজাতি পরিচয় গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
এভাবেই সমাজ আজ শ্রেণি পরিচয় ছেড়ে লিঙ্গ পরিচয় ও উপজাতি পরিচয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
Author: Saikat Bhattacharya