
কোন দেশ,কোন সমাজ তখনই উন্নতি করে যখন সে শ্রমকে সম্মান করে। শ্রমকে সম্মান করলে তবেই উন্নতি সম্ভব কারণ তাতেই মুখ্য,বুনিয়াদী কাজগুলোর সম্মান বাড়ে ফলে মানুষের সেগুলো করতে উৎসাহী হয়। ফলে নেট প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে।
যেসমস্ত কাজকে আমরা তথাকথিত ছোট কাজ বলে মনে করি আদতে সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কায়িক শ্রম থেকে শুরু করে চাষবাষ থেকে খননকার্য, এই সকলকাজই সমাজ থেকে অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলির যথাযথ সম্মান,স্বীকৃতি উন্নতির জন্যে আবশ্যক। কারণ এইসকল কাজেই বেশীসংখ্যক মানুষের উপার্জনের বন্দোবস্ত করা সম্ভব। এর ফলে বেকারত্ব কমে, আয় বাড়ে,অর্থনীতির উন্নতি হয়, জীবনযাত্রার মানও বেড়ে যায়। ফলস্বরূপ উচ্চস্তরের পেশাগুলিতে প্রতিযোগীতাও কমে এবং ইঁদুরদৌড় বন্ধ হয়। ফলস্বরূপ সেখানে কর্মীদের দরকষাকষির ক্ষমতাও বেড়ে যায়। তাতে আয় থেকে জীবনযাত্রার মান থেকে সুযোগ সবকিছু বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সার্বিকভাবে ইঁদুরদৌড় বন্ধ হবার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে ও মানুষ জীবন উপভোগ করতে পারে। এছাড়াও সৃজনশীলতার অনেক বেশী সুযোগ পাওয়া যায়।
যেখানে এইসমস্ত পেশাগুলিকে সম্মান করা হয় না সেখানে দারিদ্য,বেকারত্ব বাড়তেই থাকে এবং উচ্চশিক্ষা থেকে উচ্চস্তরের জীবিকাগুলিতে সবাই ইঁদুরদৌড়ে সামিল হয়। ফলে সেগুলির মান কমে ও সেখানে শ্রমিকদের দরকষাকষির ক্ষমতা এমনিতেই কমে যেহেতু যোগান বেশী। ফলে জীবনযাত্রার মানও হয় নিম্ন। আর সেখানেও গুটিকয়েক পদের জন্য অতিরিক্ত লোকের প্রতিযোগীতার জন্যে সুযোগ কমে। তার জন্যে নেহাত পেটের দায়েই ভৃত্যের জীবন বেছে নিতে হয়।
এবার competitive advantage এর কথাতে আসা যাক। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের প্রতিযোগীতামূলক সুবিধা থাকে এই নীল-কলারের পেশাগুলিতেই। নিম্নস্তরের পেশাতেই তারা প্রতিযোগীতাতে হারাতে পারে উন্নত দেশকে। তাই তাদেরকে বিশ্বে প্রতিযোগীতা করতে হলে এইসমস্ত পেশাতেই করতে হবে।
সর্বোপরি কাজের ছোটবড় না করলে কাজকে কাজ হিসাবে দেখলে সকল মানুষের অর্থনীতিতে যোগদান করে উপার্যন করার সম্ভাবনা বাড়বে।
পেশার উঁচুনীচু ভেদ আর্থসামাজিক কাঠামোর উপরে নির্ভর করে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশার সামাজিক স্তরে উত্থান পতন হয়েছে। স্তরবিভক্ত সমাজে নিম্নস্তরের পেশার সম্মান দেওয়া হয়না। সেখানে নিম্নস্তরের মানুষ প্রোডাক্টিভ হলেও উন্নতির সুযোগ নেই। তবে স্তরীভূত সমাজ না হলেও যে নীল-কলারের পেশার কোন সম্মান থাকবে তার কোন মানেই নেই। কোন কায়িক শ্রমিকের পেশার কোন সামাজিক সম্মান নেই কিন্তু তার সন্তান যদি কোন শ্বেত-কলারের পেশাতে ঢোকে তখন আবার তার সামাজিক সম্মান এসে গেল। অর্থাৎ মোবিলিটি থাকলেও যে পেশার সম্মান আসবে তার কোন অর্থ নেই। এর জন্যে প্রয়োজন সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন। এছাড়াও আর্থিক মোটিভেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এইসকল তথাকথিত নিম্নস্তরের পেশাতে যদি আয় বৃদ্ধি পায় তাহলে সামাজিক সম্মান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। আবার সামাজিক সম্মান বাড়লে লোকে এদিকে যেতে নিরুৎসাহিত হবেনা। ফলে এটা একটা সাইক্লিকাল প্রসেসে চলবে।
সুতরাং উন্নত হতে গেলে এই নীল-কলারের পেশা,কায়িক শ্রমের সম্মান, স্বীকৃতি অত্যন্ত জরুরী পদক্ষেপ। যারা এগুলোকে হেয় করে, নাঁক সিঁটকোয় তারা তিমিরেই পড়ে থাকবে। উপার্জনের স্কোপ বাড়ালে তবেই অগ্রগতি সম্ভব।
Author: Purandhar Khilji