
হিন্দি গুজারাতি সাম্রাজ্যবাদ বাংলার (বাংলাদেশ পঃবঙ্গ ত্রিপুরা) ওপর আঘাত বাড়াচ্ছেঃ বাংলাদেশের মেধার অধিকারের আন্দোলন, সুকান্ত মজুমদার-এর পঃ বঙ্গ থেকে উত্তর-এর অংশকে আলাদা করার ডাক, নিশিকান্ত দুবের মালদা ও মুশিরদাবাদ জে্লাকে কেন্দ্রীয় শাসিত করতে বলা, সবই আসলে এক সূত্রে গাঁথা।
হিন্দি গুজারাতি সাম্রাজ্যবাদ জানে বাঙালি জাতি জনসংখ্যার দিক থেকে ৩০-৩৫ কোটি। বাংলার আছে বিশাল সমুদ্র তট যেখান থেকে বাঙালি অনায়াসে বিদেশের সাথে বাণিজ্য চালাতে পারবে এবং বিদেশি মুদ্রা আয় করতে পারবে এবং সেই মুদ্রার বলে স্বাধীন রিসার্ভ ব্যঙ্ক বানাতে পারবে যা স্বাধীন রাষ্ট্রের আধুনিক যুগে সবচেয়ে বড় বুনিয়াদ।
বাঙালি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়ে গেলে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হবে আর তা হলে গোটা গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। তাই যেভাবে হোক বাঙালিকে শেষ কর। শেষ করতে এক দিকে বাংলাদেশের সার্বভৌম সরকারকে নিয়ন্ত্রণ কর। আর অন্যদিকে পঃ বঙ্গ-এর রাজ্য সরকারকে নিয়ন্ত্রণ কর। যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পার তো নানাভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেল। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের। কিন্তু পঃ বঙ্গের রাজ্য সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই পঃ বঙ্গের যে অংশটায় বিজেপি জিতেছে অর্থাৎ উত্তরের অংশকসক আলাদা করার দাবি জানাচ্ছে।
এবার প্রশ্ন পঃ বঙ্গ-এর রাজ্য সরকার কিভাবে গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে কাজ করছে?
এক, পঃ বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনারজি তিস্তার জলের ভাগ বাংলাদেশকে দিতে রাজি নয় আর এর কারণ হল তিস্তার জলের বেশি ভাগ বাংলাদেশকে দিলে পঃ বঙ্গের উত্তর বঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সেখানকার চাষাবাদে ভয়ঙ্কর পরিণাম নেমে আসবে। গুয়াজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ চায় তিস্তার জল বাংলাদেশকে দিয়ে একদিকে তার পোষা বাংলাদেশ-এর সরকারকে স্থায়িত্ব দিতে আর অন্য দিকে পঃ বঙ্গের উত্তর বঙ্গে ভয়ানক ক্ষরা তৈরি করে সব দোষ পঃ বঙ্গ সরকারের ওপর চাপিয়ে উত্তর বঙ্গকে পঃ বঙ্গ রাজ্য থেকে আলাদা করা। উত্তর বঙ্গ আলাদা রাজ্য হলেই সেখানকার প্রশাসনে বিজেপি গেঁড়ে বসবে এবং আস্তে আস্তে বাংলা ভাষা তুলে দিয়ে হিন্দি চালু করবে। এই পথেই পূর্ব বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে বাংলাকে মুছে দিয়েছে গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ। মমতা তিস্তার জল না দিয়ে একদিকে বর্তমান বাংলাদেশের সরকারকে বিপাকে ফেলছে আর অন্যদিকে উত্তর বঙ্গকে আলাদা হতে আর শুঁকিয়ে মারতে বাঁধা দিচ্ছে।
দুই, পঃ বঙ্গ সরকার-এর প্রধান মমতা ব্যনারজি মুসলমান ভোটের ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাচনের পর নির্বাচন জিতছেন আর এর কারন পঃ বঙ্গে এখন ২০২৪ সালে মুসলমানের সংখ্যা ২০১১-এর আদম সুমার সুমারির প্রজেকশন ধরলে দাঁড়ায় ৩০%। এই সংখ্যা আগামী দশ বছরে ৩৮% হতে পারে। বাঙালি হিন্দুদের সংখ্যা অন্য দিকে বর্তমানের ৫৫% থেকে কমে ৪০%-তে নেমে আসতে পারে। হিন্দিভাষী হিন্দুদের সংখ্যা ১১% থেকে ১৭% হবে। এখানে উল্লেখ্য বিষয় হল পঃ বঙ্গে বাঙালি ও উর্দু মুসলমানেরা ভূমি পুত্র আর হিন্দি হিন্দুদের অধিকাংশই অন্য রাজ্য (মূলত রাজস্থান বিহার ইউপি থেকে আগত)। ভুমি পুত্রদের জন্মহার কমবে যদি শিল্পায়ন ও নগরায়ন দ্রুত বাড়ে আর অন্য রাজ্য থেকে আগমনও বৃদ্ধি পাবে যদি শিল্পায়ন ও নগরায়ন দ্রুত বাড়ে। অর্থাৎ পঃ বঙ্গে যদি শিল্পায়ন ও নগরায়ন দ্রুত বাড়ে তবে মুসলমানদের জন্ম হার আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত কমবে আর অন্যদিকে হিন্দিদের আগমনের হার ও তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত বাড়বে। তাই গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ চায় পঃ বঙ্গে শিল্পায়ন নগরায়ন দ্রুত হোক। কিন্তু শিল্পপতিদের হাত থেকে চাষিদের জমি বাঁচানোর আন্দলনের বলে ক্ষমতায় আসা মমতা ব্যনারজি শিল্পায়নের পথে যাচ্ছেনইনা। ফলে হিন্দিদের আগমনের গতি মন্থর হচ্ছে আর মুসলমানদের জন্মহার যতটা দ্রুত কমার কথা ২০১১ আদম সুমারির প্রজেকশন অনুযায়ী তার থেকে জন্মহার কমছে অনেক কম গতিতে।
বিজেপি হল গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের উগ্র রূপ আর কংগ্রেস হল তার নম্র রূপের মুখোশ। কংগ্রেস পঃ বঙ্গে শেষ আর বিজেপি গোটা পঃ বঙ্গে জয়ী হতে পারবেনা। লারি পূজারি বাঙালি হিন্দু ক্রমেই জনসংখ্যার দিক দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে আর বাঙালি হিন্দুর ক্ষয়ের সুযোগ বেশি তুলছে মুসলমানেরা। কিন্তু গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ চায় বাঙালি হিন্দুদের ক্ষয়ের মূল লাভ তুলুক হিন্দিরা। মমতার শিল্প করায় অনাগ্রহ ও দান-এর রাজনীতি পঃ বঙ্গে মুসলমানেদের অবস্থান হিন্দিদের তুলনায় শক্ত রাখছে। যদিও মমতার লারি কেন্দ্র করে নানা দান মুসলমান লারিকে ধর্ম বিমুখ করছে আর এর ফলে পঃ বঙ্গের মুসলমানেদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে কিন্তু হিন্দিদের থেকে তারা তুলনামূলক ভাবে সুবিধেজনক বস্থায় থাকছে। বিজেপি বুঝতে পারছে আগামী ১০ বছরে বাঙালি হিন্দু বুমার জেনারেশনটা (১৯৪৫ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে যাদের জন্ম) শেষ হয়ে যাবে আর তা বাঙালি হিন্দুদের সংখ্যার শেয়ার অনেক কমিয়ে দেবেই। মুসলমানেদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার হিন্দিদের চেয়ে পঃ বঙ্গে বেশি থাকলে (শিল্পায়ন গতি মন্থর বলে), ২০১১ সালের প্রজেকশন ধরে যত ভাবা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি হবে মুসলমানেদের সংখ্যার শেয়ার। আমার গণিত বলছে আগামী ১০ বছর পরে পঃ বঙ্গে মুসলমানেদের সংখ্যা ৩৮% নয়, হবে ৪১% আর হিন্দিদের হবে ১৫%।
মজার ব্যপার অসমের লারি পূজারি হিন্দুরাও জনসংখ্যার দিক দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু আর আসামের শিল্প সম্ভাবনা ও নগরায়ন সম্ভাবনা ভৌগোলীক কারণে অনেক কম। ফলে সেখানে মুসলমানেদের সংখ্যা ৫০%-এর কাছে পৌঁছে যাবে আগামী ১০ বোছোড় পরেই। আসামের মুখ্যমন্ত্রী একে জীবন মরণ সমস্যা বলেছেন।
গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ জানে যে বাঙালি হিন্দুর আর কোনও অস্তিত্ব থাকবেনা। স্বল্প জন্মহারর ফলে বাঙালি (ও আসামিয়া) হিন্দুদের জনসংখ্যার শেয়ার পড়তেই থাকবে এবং বয়স্কদের সংখ্যা যুবাদের সংখ্যার চেয়ে কম হবে। যার অস্তিত্বই থাকবেনা তার হিন্দুত্ব বা বাঙ্গালিত্ব কোনটাই বহন করার ক্ষমতা থাকবেনা। এর সঙ্গে যোগ করা যায় যে বাঙালি হিন্দুদের একটা বড় অংশ হিন্দি গুজারাতিদের কাছে নতি স্বীকার করে ফেলেছে। নতি স্বীকারের শেষ পর্যায়ে নেমে এসেছে কারণ এখন বাঙালি হিন্দু মেয়েরা হিন্দি গুজারাতি স্বামী পেলে বরতে যায় আর বাঙালি পরিবারগুলোও তাতে শ্লাঘা অনুভব করে। তাই গুজারাতি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ জানে যে বাঙালি হিন্দুরা বাঙ্গালিত্বের জন্য লড়াই করতে পারবেনা। কিন্তু লারি পূজারি বাঙালি হিন্দু হিন্দিদের দালাল হিসেবে পঃ বঙ্গ থেকে মুসলমান হটাতে কতটুকু সাহায্য করতে পারবে? পরের পর্বে আমরা এর উত্তর খুঁজব।
Author: Saikat Bhattacharya