
জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ, শ্রেণী, জাতীয়তা ইত্যাদি সবকিছুই মানুষের বিভিন্ন স্বত্বা। সবকিছুরই বাস্তব বুনিয়াদ আছে এবং কোনটাই মিথ্যা না। এর মধ্যে লিঙ্গপরিচয় ব্যাতীত কোন পরিচয় স্থায়ী না। বর্ণও মিশ্রণের ফলে পরিবর্তন হতেই পারে। বাকিসকল পরিচয় পরিবর্তনশীল। সকল পরিচয়েরই বস্তুগত অবস্থানের উপর ভিত্তি করে হয়। এমনি এমনি আসেনা। বিভিন্ন সময়ে মানুষের বিভিন্ন স্বত্বা গুরুত্বপূর্ণ হয়। দুই দেশের দ্বন্দ্বে জাতীয় পরিচয় মুখ্য হয়ে ওঠে। ধর্মাচারের প্রশ্নে ধর্মপরিচয় মুখ্য হয়ে ওঠে। লিঙ্গের ইস্যুতে অবশ্যই লিঙ্গ ইস্যু মুখ্য হয়ে ওঠে। এভাবেই পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন স্বত্বার প্রাধান্য হয়।
আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই সকল স্বত্বাই একে অপরের সঙ্গে কোন না কোনভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিচ্ছিন্ন কোনটাই না। অর্থোভক্স খ্রীষ্টধর্মই রুশ জাতিস্বত্বার জন্ম দেয়। জরাথুষ্ট্রমত পারস্যের জাতিস্বত্বা প্রদান করে।আনুমানিক সপ্তদশ থেকে ঊনবিংশ শতক অবধি জাতিরাষ্ট্রের জন্ম দেয় বুর্জোয়ারা। বিংশ শতক থেকে সেই একই কাজ করে শ্রমিক,কৃষকশ্রেণী। আবার ধর্ম ও জাতি অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস ও লিঙ্গের সম্পর্ক পাল্টায়। আমরা যে ট্রাডিশনাল মনোগেমাস ম্যারেজ বলতে যা বুঝি সেটা ইউরোপে খ্রীষ্টধর্ম বিকাশের সাথে আসে। ইউরোপে ধনতন্ত্রের ক্রমাগত বিকাশের পেছনেও প্রোটেস্টান্ট সংস্কারের ভূমিকা ছিল। সুতরাং এর থেকেই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্বত্বা কীভাবে ঐতিহাসিকভাবেই একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হয়ে থেকেছে।
বৈষম্যের ক্ষেত্রেও কোন বৈষম্য অগ্রাধিকার পাবে সেটাও বস্তুগত অবস্থা, পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচার করতে হবে। যেমন আমেরিকতাতে এটা কখনোই বলতে পারিনা যে মিশেল ওবামার থেকে একটা গৃহহীন,বেকার শ্বেতাঙ্গ পুরুষ বেশী প্রিভিলেজড। বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য বেশী গুরুত্বপূর্ণ না নিজের দেশের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য বেশী এটাও বিচার্য্য। ট্রাম্প থেকে ব্রেক্সিট, শ্রেণীবিশ্লেষণ ও সাম্রাজ্যবাদ ফ্যাক্টর এইসব না দেখে ফ্যাসিস্ট দাগানো মূর্খামি। সুতরাং কোন বৈষম্যকে প্রাধান্য বেশী দেবো এটাও অনেককিছু দেখে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করব।
কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক থেকে তাত্বিক সকল বিশ্লেষক এই একই ভুল করে এসেছেন। একটি বা দুটি স্বত্বার উপর ফোকাসকরে বাকিগুলিকে গৌণ করে অবস্থার বিবেচনা না করে বারবার ভুল করেছেন।আমরা সেই ভুলের মাসুল দিচ্ছি।
সুতরাং যেকোন সঠিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক বিশ্লেষণ করতে গেলে মানুষের সবকটি স্বত্বাকেই বিচার্য্য হিসাবে ধরতে হবে।
Author: