আরাকান আর্মি কি বাংলাদেশের ক্ষতি করবে?

16-December-2024 by east is rising 83

লিখেছেন Shafin Rahman

আরাকান আর্মির মুভমেন্ট লক্ষ্যনীয়

সম্প্রতি দেখা গেছে, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের এলাকাসমূহ সম্পূর্ণভাবে দখল করে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের এই 180 ডিগ্রি এংগেলে মুভ দেখে বিষয়টি আমার কাছে খুব একটা সুবিধার মনে হয়নি। কারন কিছুদিন আগেই তারা মিয়ানমার নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের ট্রেনিং সেন্টার- Central Naval Diving and Salvage Deport (CNDSD) দখল করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ভারতের কালাদান প্রজেক্ট হুমকির মুখে পড়ে; যেটা মিয়ানমারের সিতওয়ে থেকে কলকাতা বন্দর ও মিজোরামকে কানেক্ট করার মাধ্যমে স্যাভেন সিস্টার্সকে রক্ষা করবে। হটাৎ সেখান থেকে সরে এসে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের এলাকাসমূহ দখল করে বাংলাদেশকে মনস্বাত্বিক চাপে রাখার বুদ্ধি কে দিলো?

জান্তার পতনের পর যখন একে একে বিদ্রোহীরা উল্লেখযোগ্য শহর ও কৌশলগত এলাকসমূহের দখল নেওয়া শুরু করে, তখন ভারতের উক্ত প্রজেক্টের কাজ প্রায় ৯০% শেষ। অর্থাৎ তখন ভারতের সামনে কোনো রাস্তাই খোলা ছিল না একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া। তাই অজিত দোভাল দ্রুত কদমে বাংলাদেশ আসেন এবং শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ আর্মি এবং নেভি যেন মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট এরিয়ায় আরাকান আর্মির জন্য কমফোর্ট জোন তৈরি না করে। কারন মাতামুহুরী ফরেস্ট এরিয়া আরাকান আর্মির জন্য একটা সেফ জোন। এখানে তাদের বেশ এক্টিভিটি আছে। বাংলাদেশের ইন্টিলিজেন্স তাদের সাথে ডিরেক্ট কানেকটিভিটি না রাখলেও নিরপেক্ষ নীতি বজায় রেখে চলে এসেছে বিগত সরকারের আমলে।

কিন্তু হাসিনার পতনের পর ভারত খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ অবশ্যই তাদেরকে কমফোর্ট জোন দেওয়া তো দূরে থাক, বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। আর তাই ভারত তার স্ট্রাটেজি চেন্জ করেছে।

যে চিনপন্থী আরাকান আর্মি ভারতের জন্য থ্রেট হয়ে উঠেছিল, কিছুদিন আগে তাদের কমান্ডার ইন চিফ Twan Mrat Naing জানিয়েছেন― তারা ভারতের কালাদান প্রজেক্টের জন্য বাঁধা সৃষ্টি করবে না।

স্বভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, কি এমন কারন যার জন্য এই পল্টি খেলো আরাকান আর্মি?

এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলেছেন মিয়ানমারের বিখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক U Pe Than

 

তিনি জানিয়েছেন- দিল্লির সাথে চিনপন্থী আরাকান আর্মির নেগোসিয়েশন হয়েছে। ভারত মিয়ানমারের চারটি উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহী গ্রূপকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর মাঝে রয়েছে― আরাকান আর্মি (AA), কাঁচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি (KIA), ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্মেন্ট (NUG) এবং নাম না জানা অন্য একটি বিদ্রোহী গ্রূপ

ভারত মূলত ফেডারেলিজমের ভিত্তিতে তাদেরকে স্বীকৃতি দেবে। অর্থাৎ যে যার অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করবে এবং প্রয়োজনে ভারতের থেকে সাহায্যও পাবে, ভারত তাদের জন্য থ্রেট হবেনা এবং তারাও ভারতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে। অর্থাৎ উইন-উইন সিচুয়েশন।

দিল্লি শুধুমাত্র চিনপন্থী বিদ্রোহী গ্রূপের সাথেই সমঝোতা করবে তাই নয়, বরং মাস্টারমাইন্ড চীনের সাথেও তারা নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা করছে। সেই উপলক্ষে আগামীকাল বা পরশু- ভারতের ন্যাশনাল সিকিয়রিটি এডভাইজার অজিত দোভাল চীন সফর করবেন। সেখানে তিনি চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

এক্ষেত্রে দ্যা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্যা ইকোনমিক্স টাইমস সহ অনেক ভারতীয় মিডিয়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে আরাকান আর্মির জন্য সেফ জোন ক্রিয়েট করছে।

ভারত যে শুধুমাত্র বিদ্রোহীদের সাথে চুপিচুপি সমঝোতা করছে তাই নয়, একইসাথে জান্তাকেও অস্ত্র সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে

বর্তমানে ভারতের মোট ২২টা কম্পানি মিয়ানমারকে অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে। ২০২২ এর নভেম্বর থেকে শুরু করে ২০২৪ এর এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের সরকারি কোম্পানি- ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড বা বিইএল মিয়ানমারে ৫ মিলিয়ন ডলারের মিলিটারি ইক্যুইপমেন্ট রপ্তানি করেছে। এইগুলি মোট ৭টা শিপমেন্টে আলাদাভাবে পাঠানো হয়েছে; যার ৩টা মিয়ানমার সরকারকে সরাসরি পাঠানো হয়েছে আর বাকিগুলির মাঝে ৩টা মেগা হিল জেনারেল ট্রেডিং এর এবং ১টা এলায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস এর হাত ঘুরে মিয়ানমার সারকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিইএল এর প্রধান শেয়ারহোল্ডার ভারত সরকার হলেও এতে মার্কিন এবং কানাডিয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যার মাঝে রয়েছে মার্কিন কোম্পানি গোল্ডমান সাক্স, বিনিয়োগ জায়ান্ট ভ্যানগার্ড ও ব্ল্যাকরক। রয়েছে কানাডা পেনশন প্ল্যান, ক্যালিফোর্নিয়া পাবলিক এমপ্লয়িজ রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট টিচার্স রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম। অর্থাৎ শুধু ভারত সরকারই নয়, ভারতের সামরিক শিল্পে বিনিয়োগকারী পশ্চিমারাও মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহের সাথে জড়িত।

পশ্চিমারা মিয়ানমারের সবকিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও মিয়ানমার ফরেইন ট্রেড ব্যাংকের উপর দেয়নি। আর এই ব্যাংক ব্যবহার করেই ওরা অস্ত্র কেনার পেমেন্ট করতে পারছে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ফেলতে বেশ ভালোই খেলছে ভারত। কারন এতে করে বাংলাদেশের সামনে নতুনভাবে একটি ফ্রন্ট উন্মুক্ত হবে এবং বাংলাদেশকে সেটা নিয়ে চাপ সামলাতে হবে।

অর্থ্যাৎ, দেখা যাচ্ছে ভুরাজনীতিতে কেউ কারো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নয়।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাইলে রাখাইনের অভ্যন্তরীণ আরাকান আর্মি বিরোধী ARSA, ANDP, RSO গ্রূপগুলিকে টেকনিক্যালি হেল্প করে ভারতকে স্মার্টলি কাউন্টারব্যালেন্স দিতে পারে।

আর ভারত যেহেতু তাদের কালাদান প্রজেক্ট এর সফলতা, অর্থাৎ স্যাভেন সিস্টার্সের নিরাপত্তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে; সুতরাং বাংলাদেশকে অবশ্যই স্যাভেন সিস্টার্সের জন্য থ্রেট হতে হবে। তবেই ভারতকে কাউন্টার দেওয়া সম্ভব হবে।

Saikat Bhattacharya
বাংলাদেশ হাত ছাড়া হওয়ায় আরাকান আর্মি বকলমে চীনের পায়ে পড়া ছাড়া ভারতের কিছু করার নেই।

আরাকান আর্মি বকলমে চীন বাংলাদেশ-এর বিরুদ্ধে কিছু করবেনা যদি না বাংলাদেশ চীন-এর বিরুদ্ধে কিছু করে।
 

কাছিন চিন আরাকান ওয়া শান সমস্ত রিবেল নেতারা চীনে থাকে

কারেন নেতারা শুধু থাইল্যাণ্ডে থাকে যারা এখনো তেমন কোনও জয় পায়নি

এন ইউ জি বা গণতান্ত্রিক নেতারা পশ্চীম-পন্থী নামে হোলেও তারা কোথাও চীনা পাইপলাইনে আঘাত হানেনি বরং বারবার বলেছে তারা চীনের বিনিয়োগের বিপক্ষে নয়

মার্কিন জুজু ভারত দেখাবে কিভাবে যেখানে মিয়ানমারের সমস্ত দলের নেতারাই চীনে থাকে?

ভারত চায় আরাকান আর্মি আঘাত করুক বাংলাদেশকে কিন্তু চীন তা করবে না

চীন চাইবে বাংলাদেশের মিলিটারিকে শক্তিশালি করতে

আর আরাকান আর্মি মার্কিনপন্থী বাংলাদেশি নেতাদের বিরুদ্ধে একটা ডাণ্ডা

মার্কিনপন্থী বাংলাদেশি নেতারা বাড়াবাড়ি করলেই আরাকান আর্মি আর চিন কুকি ব্যোম-দের নামানো হবে

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like