
মুক্তচিন্তার অন্যতম প্রধান শর্তই হল নিজের ক্ষুদ্র কুয়োর জগত থেকে বেরিয়ে এসে সার্বিকভাবে চিন্তা করা। কারণ জগৎ এক মহাসমুদ্র। নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকলে কোনদিনই তাকে পাওয়া সম্ভব না। সার্বিকভাবে চিন্তা করতে গেলে আমাদের আগে নিজেদের বদ্ধমূল চিন্তাভাবনা,ধ্যানধারণা,প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বেড়াজাল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে হবে। যুক্তি অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। যুক্তি ছাড়া কোন চিন্তাই হবেনা। আবেগ,সংবেদনশীলতা,হুজুগ এসবের বশে কখনোই মুক্তচিন্তা করা সম্ভব না। বরং এর দ্বারা চালিত হলে মানুষ ক্রমে পশুতেই রূপান্তরিত হয়(এ নিয়ে আগেও লিখেছি, পরে আরো লিখব)।
আরো যেটা প্রয়োজন সেটা হল মোটা চামড়া অর্থাৎ অপ্রিয় সত্য হজম করার ক্ষমতা। এটা হতেই পারে আপনি এতদিন যেটা সত্য বলে জেনে এসেছেন সেটা আদতে মিথ্যা। যেটা আপনি খারাপ বলে জানতেন সেটা আদতে খারাপ না। আপনি যে প্রচলিত ন্যারেটিভটা জেনে এসেছেন সেটা ভুল হলে সেটাকে স্বীকার করাও মুক্তচিন্তার মধ্যেই পড়ে,কারণ একপেশে ন্যারেটিভের উপর ভিত্তি করে মুক্তচিন্তা হয়না। এছাড়াও প্রচলিত স্টিরিওটাইপ,জেনারালাইজেশন দিয়ে কোন চিন্তাশীল মুক্তমন তৈরী হয়না। মোদ্দা কথা হল বস্তাপচা স্টিরিওটিপিকাল ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে কোন মুক্তচিন্তা সম্ভব না।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অন্যের মতের প্রতি সহনশীলতা। আপনি যদি চান আপনার মতামতকে সম্মান করুক বাকিরা তাহলে আপনাকেও বাকিদের মতকে সম্মান করতে হবে।
এছাড়াও চিন্তাধারা সময়োপযোগী হতে হবে। 1820 এর চিন্তাভাবনা 2020 তে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। দুনিয়া ক্রমাগত এগিয়ে যায়। তাই তার সাথে মানসিকতারও অগ্রগতি লাগে।
আরো যে জিনিসটা দরকার সেটা হল non-conformity। প্রথাগত, পুঁথিগত বিদ্যার হাত ধরে কখনোই মুক্তচিন্তক হওয়া সম্ভব না কারণ সেটা ঐ প্রচলিত স্রোতের প্রবাহের সাথে ভেসে যাওয়াই হয়। সবাই বলছে তাই এটা ঠিক বা এটা জেনে এসেছি বলে এটাই ঠিক এটা কোন মুক্তচিন্তকের মানসিকতা না।
এবার কথা হল অনেকেই নিজেকে উদার, মুক্তচিন্তক বলেন কিন্তু কার্যটা করেন উল্টো।
যদি কারুর প্রচলিত ন্যারেটিভ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতেই সে চিরাচরিত আবেগী প্রতিবর্ত ক্রিয়া দেখান তাহলে সে কখনোই মুক্তচিন্তক নয়। যাদের কাছে তাদের ব্যাক্তিগত আবেগ, সংবেদনশীলতা বাস্তব, যুক্তির চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে সে কখনোই মুক্তচিন্তক না। ন্যারেটিভ, আবেগ, সংস্কার কখনো যুক্তির স্থান নিতে পারেনা। এছাড়াও বহুমানুষ পেয়ে যাবেন যে যেই আপনার কাছে যুক্তিতে হেরে গেল অমনি সে আপনার উপর shaming language, নীতিপুলিশি, ব্যাক্তি-আক্রমণ।, কুৎসা থেকে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে। এরা অবশ্যই মুক্তচিন্তক না। এরা সেই এক গতানুগতিক মানসিকতা নিয়ে চলে আর সেটা ধাক্কার সম্মুখীন হলেই তখন pavlovian reaction দেখায়। এটা তাদের ভাবনা-চিন্তার অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।
সুতরাং সমস্ত কিছুর মত মুক্তচিন্তারও নিজস্ব শর্ত ও পরিবেশ রয়েছে যার মধ্যেই সে বেড়ে ওঠে। উন্নত, স্বাধীন সমাজ তৈরী করতে মুক্তচিন্তার পরিবেশ আবশ্যক। কিন্তু তা তৈরী করার জন্যও যে prerequisites প্রয়োজন তা অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন।
Author: Purandhar Khilji