জুলাই বিপ্লব-কে আত্মরক্ষামূলক থেকে আক্রমণাত্বক হতে হবে

22-March-2025 by east is rising 29

যুদ্ধ দুই প্রকারঃ

১। আত্মরক্ষামূলক

২। আক্রমণাত্বক

বাঙালি মুসলমান তিতু মীর, দুধু মিয়া, ১৯০৫, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১, ২০২৪ যে যুদ্ধগুলো করেছে তার মধ্যে আত্মরক্ষামুলোক ও আক্রমণাত্বক দুই প্রকারই ছিল। প্রথম তিনটে-তে তাদের পরাজয় ঘটে, ১৯৪৭-এ তারা আধা জয় পায় আর শেষ তিনটে-তে তারা বিজয়ী হলেও আত্মরক্ষামূলক অবস্থান থেকে আক্রমণাত্বক অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। আর এখানেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

তিতু মীর ও দুধু মিয়া আঘাত হেনেছিল বাঙালি হিন্দু জমিদার-দের ওপর। ব্রিটিশরা বাঙালি হিন্দু জমিদারদের রক্ষায় নেমে অনায়াসেই তাদের দমন করতে সক্ষম হয়। তিতু মীর ও দুধু মিয়ারা কায়াকেই চিহ্নিত করতে না পেরে ছায়ার সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে পরাজিত হয়।

১৮৭০ সাল থেকে ব্রিটিশদের প্রধান দালালের জায়গাটা বাঙালি হিন্দুদের থেকে গুজারাতি মাড়োয়াড়ি-রা নিয়ে নেয়। ক্রমেই ব্রিটিশদের সাথে বাঙালি হিন্দুদের দূরত্ব তৈরি হয় যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় কার্জন রিসলের ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গে। ব্রিটিশদের উদ্যেশ্য ছিল বাঙালি হিন্দুদের পঃ অংশে হিন্দিদের কাছে সংখ্যালঘু বানানো ও পূর্বে মুসলমানদের (বাঙালি ও উর্দু) কাছে সংখ্যালঘু বানানো। তখন যদি বাঙালি মুসলমান পূর্ব অংশ পেয়ে যেত তাহলে কেবল আজকের বাংলাদেশ নয়, বর্তমান পঃ বঙ্গের উত্তরাংশ এবং গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল তাদের হত। ১৯৩৫ সালের ইণ্ডিয়া এক্ট অনুযায়ী জনসংখ্যা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠানো শুরু হলে বাঙালি মুসলমান এই বিশাল অংশ নিজেরাই দখল নিত। ১৯৪৭-এই বাঙালি মুসলমান স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়ে যেত। কিন্তু ১৯০৫ সালে বাঙালি হিন্দু জমিদারেরা বাঙালি মুসলমান অধ্যুষিত বর্তমান বাংলাদেশ ও পঃ বঙ্গের উত্তরাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ১৯৩৫ অবধি।

১৯৪৭-এ আধা জয়ের স্বাদ পায় বাঙালি মুসলমান। বাঙালি হিন্দুদের জমিদারী শেষ হয়। বর্তমান বাংলাদেশ অংশ তারা পায় এবং যুক্ত পাকিস্তানের প্রধান সংখ্যাগুরু জাতি হয়। কিন্তু ১৯০৫ সালে জিতলে যে বিশাল অংশ তাদের পাওয়ার কথা ছিল তার সামান্য অংশই তারা পায়। এছাড়াও তারা দেখে যে যুক্ত পাকিস্তানে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে তাদের পঃ পাকিস্তান বাঁধা দিচ্ছে। অথচ পঃ পাকিস্তানীরা বাঙালি মুসলমান অঞ্চলে এসে ব্যবসা করছে এবং প্রচুর মুনাফা তুলছে। পঃ পাকিস্তানীদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাঙালি মুসলমান রুখে দেয় ১৯৫২ সালে উর্দু চাপানো অস্বীকার করে। শেষে ১৯৭১-এ তারা স্বাধীন বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের সাহায্যে।

১৯৭১-এর পরেই বোঝা যায় নতুন দেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। ১৯৭৫-এ সেনা বিদ্রোহ মারফত ভারতীয় আধিপত্যবাদের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করে বাংলাদেশ। তারা মার্কিন ও ভারতের মধ্যে দর কষাকষি করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। সোভিয়েত পতনের পরে ভারত দুর্বল হয়ে গেলে বাংলাদেশ মার্কিন ও ভারতের মধ্যে আরও বেশি করে দর কষাকষি করার সুযোগ পায়। কিন্তু ২০০১ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল কায়দা আঘাত হানলে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন ভারত মৈত্রী গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দার পরে চীনের উত্থান শুরু হয় এবং চীনকে প্রতিহত করার জন্যে মার্কিন ভারত মৈত্রী আরও সুদৃঢ় হয়। এর ফলে বাংলাদেশের দর কষাকষির জায়গাটাই শেষ হয়ে যায়। মার্কিন মদতে ভারত ১৫ বছর শেখা হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে দিয়ে নির্বাচনহীন শাসন চালায় বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। হাসিনার আওয়ামী সরকারের পতন হয় এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যা ৩৬শে জুলাই বিপ্লব নামে পরিচিতি পায়।

২০২৪-এর জয় অবশ্যই সবচেয়ে বড় জয় বাঙালি মুসলমানের। কারণ ১৯৫২-তে তারা কেবল ভাষা আগ্রাসন আটকায় অর্থাৎ পুরোপুরি আত্মরক্ষামূলক। ১৯৭১-এ তারা উর্দু ব্যবসা দখল নেয় এবং স্বাধীন রাষ্ট্র পায় বটে কিন্তু তাদের নতুন রাষ্ট্র অনেকটাই ভারত নির্ভর হয়ে পড়ে। এই ভারত নির্ভরতা চূড়ান্ত রূপ নেয় ২০০১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত যখন ভারত মার্কিন মৈত্রী দৃঢ় হয়। ২০২৫-এও ভারত মার্কিন মৈত্রী বজায় আছে চীনের বিরুদ্ধে। কিন্তু আগের মতো দৃঢ় নেই। এর কারণ হল চীনের সঙ্গে সংঘাতে যেতে ভারতের অপারগতা, রুশ সমরাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভাবে চীনের সঙ্গে ভারতের এঁটে উঠতে না পারা। মার্কিন ভারত মৈত্রী একটু আলগা বলেই ২০২৪-এ বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদকে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯০৫ সালে বাঙালি হিন্দু বনাম ব্রিটিশ দ্বন্দ্বের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি বাঙালি মুসলমান। কিন্তু ২০২৪-এ মার্কিন ভারত জোট একটু আলগা হওয়ার সুযোগ পুরোপুরি নিতে সক্ষম হয়েছে তারা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ২০২৪-এর লড়াই আত্মরক্ষামূলকই রয়ে গেছে। ভারতীয় আধিপত্যকে তারা সাময়িক পরাজিত করতে পেরেছে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে এখনো আরকমণাত্বক হতে পারেনি।

ভারতীয় আধিপত্যবাদের অজস্র এসেট রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে কিন্তু বাংলাদেশ এখনো ভারতের মধ্যে কোনও এসেট বানাতে সক্ষম হয়নি। পঃ বঙ্গ ও আসাম জুড়ে বাঙালি মুসলমানের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। বাঙালি হিন্দু ও অহমীয়া হিন্দুরা জনসংখ্যায় ক্ষয়িষ্ণু, পঃ বঙ্গের শহরগুলোয় হিন্দিভাষি বনাম বাঙালি (মূলত বাঙালি হিন্দু) সমীকরণ তৈরি হয়েছে। পঃ বঙ্গে বাঙালি হিন্দু উচ্চ বর্ণ-দের রাজনৈতিক ক্ষমতা মুলত মুসলমান ভোটের ওপরেই নির্ভরশীল। পঃ বঙ্গের ব্যবসা পুরোপুরি রাজস্থানী (মাড়োয়াড়ি)-দের হাতে। বাঙালি হিন্দু মধ্য বর্ণ ও নীম্ন বর্ণ বাঙালি হিন্দু উচ্চ বর্ণের রাজনৈতিক আধিপত্যকে খর্ব করতে চাইছে। এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ভারতের ভেতরে নিজেদের এসেট তৈরি করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানদের। কেবল আত্মরক্ষামূলক চিন্তা করে বাংলাদেশে ভারতীয় এসেটের সাথে লড়াই করা যথেষ্ট নয়। আক্রমণাত্বক ভঙ্গিতে ভারতের মধ্যে নিজেদের এসেট তৈরি করা শিখতে হবে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানদের।

এছাড়াও মার্কিন ও ভারতের মধ্যে দর কষাকষির ধান্দা ছেড়ে সরাসরি চীনের সাথে জোট বেঁধে ভারতকে কোণঠাসা করার কথা ভাবোতে হবে। মার্কিন সরকার-কে বোঝাতে হবে বাঙালি মুসলমান-এর ভূরাজনীতির বাস্তবতাঃ যা হল কোনভাবেই ভারতের সাথে আপোষ সম্ভব নয়। 

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like