প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর থেকে আমরা কি কি পেলাম?

30-March-2025 by east is rising 16

By Shafin Rahman.

চারদিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন অতিবাহিত করলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডেলিগেশন। প্রথম তিন দিনেই বাংলাদেশ চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে সমর্থ হয়েছে। এছাড়া আপনারা ইতিমধ্যেই আপনারা অবগত হয়েছেন যে- বিনিয়োগ, অনুদান ও ঋণ বাবদ চীন বাংলাদেশকে সর্বমোট 2.1 বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে। এর মাঝে ৪০০ মিলিয়ন ডলার মংলা সমুদ্র বন্দরের আধুনিকায়ন, ৩৫০ ডলার চাইনিজ ইকোনোমিক জোন ও ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন সেক্টরে কৌশলগত সহায়তায় খরচ করা হবে।

তবে চীনের সাথে হওয়া সবচেয়ে চুক্তিটি হলো ৫০ বছর দীর্ঘমেয়াদি পানি ব্যবস্থাপনা চুক্তি; তিস্তা ইস্যুটিও এই চুক্তির আওতাভুক্ত।

এই চুক্তির ফলে আমাদের নদীগুলোকে কেন্দ্র করে পেট্রোল, এসল্ট, সাপোর্ট, স্পেশাল, মাইনসুপার ফোর্স এন্ড হার্বার ডিফেন্সের সমন্বয়ে একটি সুসংগঠিত রিভারাইন ফোর্স গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

যেহেতু বঙ্গোপসাগর ফানেল আকৃতির তাই ভারত মহাসাগর থেকে উড়ে আসা মেঘ এখানে একবার প্রবেশ করলে তা আর বেরোতে পারেনা কারণ পূর্বে রয়েছে আরাকান পর্বত, আর পশ্চিমে পূর্ব-ঘাট পর্বত, আরেকদিকে ভারতের স্যাভেন সিস্টার্সের পার্শ্ববর্তী পর্বতমালা— তিনদিক থেকে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে বাংলার আকাশে ঢোকা মেঘ এখানেই প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং এখানকার নদ-নদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় নিয়মিত নদীশাসন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানি ধরে রাখতে পারলে তা বাংলাদেশকে ম্যারিটাইম শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম। আর সেই সুযোগটা আবারও তৈরি হলো প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে হওয়া পঞ্চাশ বছরের ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট চুক্তির মাধ্যমে।

এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এদেশের মানুষ আবারও পানিকে বিশ্লেষণ করবে, সমুদ্রে বের হবে, জাহাজ শিল্পের বিল্পব ঘটবে― যা একটি দেশ কখনোই চায়নি।

বাংলাদেশের ম্যারিটাইম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সক্ষমতা নিয়ে আলফ্রেড থ্রেয়ার মাহান কিংবা তার সমসাময়ী হ্যালফোর্ড ম্যাকিন্ডার, নিকোলাস স্পাইকম্যান'রা অনেক আগেই অনেক ধরনের থিওরি দিয়ে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের অসচেতন মানুষ তা কখনোই ভেবে দেখেনি। কিন্তু এবার সেই সময় ও সুযোগ- দুটোই আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

তবে শুধুমাত্র নদী বা পানি ব্যবস্থাপনাতেই সীমাবদ্ধ নেই প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর। এই সফরে চীন থেকে বাংলাদেশের জন্য বাগিয়ে নেওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ‛চাইনিজ হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানুফেক্সারিং প্ল্যান্ট এসবলিসমেন্ট'; অর্থাৎ চীনের সহায়তায় যৌথভাবে বাংলাদেশ-চীন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

এই চুক্তির ফলে এদেশের ম্যাটেরিয়াল পাওয়ারের মত কৌশলগত শিল্পের অগ্রগতি হবে। বিভিন্ন শিল্প যেমন– স্টিল ইন্ডাস্ট্রিতে মিলিটারি গ্রেড স্টিল তৈরি হবে, সিমেন্ট মিলে সুপার স্ট্রেংথ মিক্সচার ডেভেলপ অথবা পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ কেমিক্যাল তৈরির ব্যবস্থা হবে। এছাড়া মেশিন ফ্যাক্টরিগুলিতে বিশেষ কিছু প্রসেসিং ক্যাপাসিটি বসানোর ব্যবস্থা অথবা গ্লাস ফ্যাক্টরিগুলো এক্সট্রা-স্ট্রং গ্লাস উইন্ডশিল্ড তৈরি করার ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠবে। অন্যদিকে ইঞ্জিন ম্যানুফেক্সারার কোম্পানিগুলি মিডিয়াম সাইজের ইঞ্জিন তৈরির কাস্টিং এবং টেক সার্কিট বোর্ড তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে। এসব শিল্প দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়, তাই এসব ইন্ডাস্ট্রি যখন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করবে, তখন তা অটোমেটিক্যালি দেশকে ফরোয়ার্ড মুভ করাবে।

এছাড়াও নিজ দেশে হেভি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে দেশকে আমদানি-নির্ভর করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা সফল হবেনা। সুতরাং, এধরনের চুক্তির বাস্তবায়ন মানে একটি দেশ রিজিওনাল রাইজিং পাওয়ার হিসেবে আবির্ভুত হওয়া।

এব্যতীত চিকিৎসা ও ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগ, রোহিংগা ইস্যুর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিও উঠে এসেছে চীন সফরে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত সবকিছুই পজেটিভ। আর কনক্লুশনের কথা বললে “বাংলাদেশ-১ এবং বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি-০”

 

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like