নববর্ষ


মস্তক মোর নত তোমার সমক্ষে, হে গৌড়েশ্বর

দেড় সহস্র অব্দ পরেও তুমিই মোদের অধীশ্বর।।                                              

তোমার হাতেই সূচনা মোদের বর্ষের, তোমার হাতেই বিদায়

তবে কি না তোমাকেই মুছে দিয়াছে অবলীলায়।।

তবু আমি ভুলে যাইনি।।

যারা ভুলিয়ে দিয়েছে তাদের ক্ষমা করিনি।।

 

ভুলিনাই যে দিন তব রাজদণ্ডে বঙ্গ, রাঢ়, সমতট, বারেন্দ্র সকলে হয়েছিল একদেহে বিলীন

হিন্দুস্তান হইতে কামরূপ, তব পরাক্রমে সকল শত্রুর গরিমা হয়েছিল মলিন।।

বাংলার বুকে যেদিন ঘোর সঙ্কট

তবুও সেই আঁধার বিদীর্ণ করেছিল তোমার দাপট।।

তব পরাক্রমে, শত্রুকুল কাঁপে, ভীত হয়ে পলায়ন করে

তবুও পলায়ে কোনখানে??

তোমাতে অধিষ্ঠান করিছে স্বয়ং মহেশ্বর

ঈশ্বর শ্রেষ্ঠের বর যাহার প্রাপ্য তাহাকে বধিবে কোন অর্বাচীনে

শত্রুর কাছে কালভৈরব, মোদের কাছে সাক্ষাৎ মহেশ্বর

পুরুষোত্তম তব, দিয়েছিলে মোদের শৌর্য্য, বীর্য, ঐশ্বর্য্য

তব কারণে কৈলাশ হতে বর্ষিত হয়েছিল শশধরের বরা ভয়

হয়ে ছিলাম মোরা দৈববলে বলীয়ান, দিয়েছিল তব অভয়

করিয়াছিলে মোদের শিরমেরুসমউচ্চ, মোদের চরিত্র ছিল বজ্রসম কঠোর

তোমার ডাকে চালিয়ে দিয়েছিলাম মোদের তরবারি গঙ্গা থেকে কলিঙ্গ

কাশী থেকে কটক, সকলে হয়েছিল তব ধ্বজা তলে পদানত

চুরমার করেছিলে দর্প দাম্ভিক পূষ্যভূতির

লোলুপ কামরূপের জিহ্বা করেছিল ছিন্ন

মগধ, মিথিলা, কলিঙ্গ সকলের অরিরাজ হয়েছিলে তব

পূর্বের সমস্ত প্রতিশোধ মিটিয়ে নিয়েছিলে তব

গৌড়ভূম হয়েছিল পূণ্যভূমি তব রাজদর্পেই

সহস্র বছরধরিয়াই সেই পবিত্রভূম হয়েছিল মোদের প্রাণ, মোদের গরিমা

মোদের সহস্রবর্ষের গরিমা তব মহাসৃষ্টির অমরগাথা

দিয়ে গেছো মোদের সেই অমূল্য রত্ন যার তুলনা নাই এই জগতে কোথা

 

আজিকে সেই গৌড় শ্মশানসম

তব পবিত্রভূমি আজ শেয়াল, কুকুরেদন্তে ছিন্নবিচ্ছিন্ন

যে ইতরদের একদা মোরা করিয়াছিলাম পদানত আজ তাহারাই মোদের প্রভু

তব হস্তে যাহারা সৃষ্টি হল আজ তাহারাই তোমাকে মুছে দিয়েছে

আজিকে তব সৃষ্টি ইহয়ে গিয়াছে নির্লজ্জ, দুষ্ট, দূর্জন

তোমারি মুখে তারা দিনেদিনে লেপিছে কালিমা

তাই আজ কোন নববর্ষ নাই মোদেরনাহি কোন বঙ্গাব্দ

ভুলিয়া গিয়াছি যে এই বর্ষপঞ্জিকা তোমারই অমর সৃষ্টি

কারণ মোদের সময় সেই কবেই চলিয়া গিয়াছে

পড়ে আছে শুধু ছিটেফোঁটা উচ্ছিষ্ট

তাহার উপর হইয়া চলেছে একের পর এক অনিষ্ট

নববর্ষের নামে শুধুএ কটি দিন যে দিন যে টি যায় আর আসে আর কোমারোগীর ক্ষণিকের হৃৎস্পন্দন জাগে

আর তার মাঝেই কখনো কখনো আশার ঝিলিক জাগে যে হয়তো আবার এক দিন পারব আমরা

স্বর্গশোক থেকে আর তাই বর্ষিত হয়না দেবদিগের আশীর্বাদ

 

তথাপি ইহা সহন করিবনা হে

তব অধিষ্ঠান করিছ দেবলোকেই আমি জানি

কিন্তু এই ভ্যূলোকেই তোমার ডাক পড়িতেছে পুনরায়

পুর্নজন্ম নিয়ে নবপুরুষোত্তমের অবতারে ফিরে এসো মোদের মাঝে

তব চরণে সকল ভূমি হইবে পবিত্র

আরোহন করো সেই গৌড়ের সিংহাসন

ফিরিয়ে আনো সেই পূণ্যভূমির গরিমা

আদেশ দাও আমাদিগকে

সমরাস্ত্রে প্রস্তুত মৌরা এযুগের রুদ্রভয়ঙ্কর

পুনরায় ফিরিয়া আনিব সেই তাণ্ডব

যে দিক চাহে সেদিকে ছুটিয়ে দেব সমররথ

শত্রুর মস্তকে গাঁথিব তব বিজয়স্মারক

তব অবমাননাকারীদের হবে অশ্বত্থামার ন্যায় পরিণতি

শত্রুর রক্তে রঙ্গীন হইবে আকাশ-পাতাল-সাতসমুদ্র

শহীদ নহে, বিজয়ী হব সেদিন

তবেই ফিরিবে মোদের সেই স্বর্ণেখচিত দিন

যুগান্তে সূচনা করিব নতুন দিনের

সেই দিন সত্যই মোরা পালিব নববর্ষ

Author: Purandhar Khilji


You may also like