
বাঙালি হিন্দু লৌহযুগেই প্রবেশ করেনি।
এরা তাম্র যুগের প্রথম দিকটার স্তরে আটকে আছে যখন কৃষি সবে শিখেছে এবং মাটির উর্বরতা ও নারীর উর্বরতাকে মিশিয়ে নারী পুজো করে।
এর একটা কারণ এটাই হয়তো যে বাংলার নগরগুলোতে যেই বাঙালিরা লৌহযূগ ও মধ্যযুগের স্তরে ছিল তারা আস্তে আস্তে তুর্কি পাঠানদের সাথে মিশে বাঙালি মুসলমান হয়ে গেছে বা ব্রিটিশ চাপে শেষ হয়ে যায়।
মনে রাখা দরকার বাংলা ও বাঙালি নামটা তুর্কি আমল থেকেই জনপ্রিয়তা পায়।
বাংলাতে অনেক জঙ্গল ছিল তুর্কি আসার আগে পর্যন্ত যা কেটে সাফ করে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তা্ন, ইরান, ইরাক ও উত্তর ভারত থেকে অনেক মানুষ এসে বাংলাতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সে সময়ে জঙ্গলের সমাজের সঙ্গে কৃষি বণিক সভ্যতার লড়াইয়ের কথা নানা গল্পের মধ্যে দিয়ে আমরা পাই যেমন মনসা বনাম চাঁদ সওদাগর এবং বন বিবি-শাহ জঙ্গালী বনাম দক্ষিণ্র রায়।
স্রেফ লোহা ব্যবহার করলেই লৌহ য্যগ আসেনা।
লোহার ব্যবহার যখন জঙ্গল কেটে সাফ করে দেয় এবং আরও বেশি জমি মানুষ কাজে লাগাতে শুরু করে কেবল তখনই লৌহ যুগ আসে। মনে রাখা দরকার জন সংখ্যার বিপুলভাবে না বাড়লে জঙ্গল কেটে আরও জমি বাড়ানোর প্রবণতা আসবেনা।
অসিরিয়াতে প্রায় খ্রিষ্ট পূর্ব ১২০০ থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ প্রথমে গোড়ে ওঠে এবং তার ফলে জনবিষ্ফোরণ হয় এবং তখনই কেবল লোহার ব্যবহার বাড়িয়ে জঙ্গল কেটে গ্রাম নগরের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ইটন বলেছেন বাংলাতে কৃষি হত কিন্তু জঙ্গল এখানকার মানুষেরা নিজেরা সাফ করে কৃষি জমি বাড়ায়নি তুর্কিরা আসার আগে পর্যন্ত কারণ এদের জন বিষ্ফোরণ হয়নি।
প্রাক তুর্কি যুগের বাঙালিদের জনবিষ্ফোরণ না হওয়াটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয় বাঙালি হিন্দু যে তাম্র যুগের প্রথম স্তরে আটকে আছে বা খুব সীমিত জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে আর তাই ওই স্তরের ওপরে যেতে পেরেছিল সামান্য কিছু মানুষ।
বিজয় সিংহ, রাজা শশঙ্ক, রাজা গোপাল, রাজা গণেশ, রাজা প্রতাপাদিত্য-এর মতো যোদ্ধা পুরুষ এই সীমিত কিছু সংখ্যার বাঙালি হিন্দু যারা তাম্র যুগের প্রথম স্তরের ওপরে উঠতে পেরেছিল।
ফলে তুর্কি শাসনে বিপুল সংখ্যক মানুষ মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে বাংলায় আসার সুযোগ পায়। এবং তারা জঙ্গল কেটে সাফ করে নিজেদের জন্য গ্রাম ও নগর বানাতে থাকে।
মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে পঞ্চদশ শতকে বাংলার গৌড় ছিল চীনের পিকিং ও দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগরের পরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর।
সীমিত কিছু সংখ্যার বাঙালি হিন্দু যারা তাম্র যুগের প্রথম স্তরের ওপরে উঠতে পেরেছিল, তারা তুর্কি পাঠান এবং শেষে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করে হয় শেষ হয়ে যায়, নয়তো নিজেরাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তুর্কি পাঠানদের সাথে মিশে গিয়ে বাঙালি মুসলমান জাতিকে তৈরি করে।
বাঙালি হিন্দুদের যেই অংশটা ইংরেজদের সান্নিধ্যে আসে তারা মূলত গ্রামের ওই তাম্র যুগের প্রথম দিকটার স্তরে আটকে ছিল।
ইংরেজদের দালালি করে কিছু কামিয়েছিল বটে কিন্তু তা ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে অক্ষম হয় এরা কারণ এদের ক্ষমতা বাড়াতে যে প্রতিষ্ঠান বানাতে হয় সেগুলো বানানোর মতো দক্ষতা ছিলনা।
যে বাঙালি হিন্দু কোন যোদ্ধা পুরুষেরই পুজো করেনা, সে কিভাবে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেতে পারে?
যে বাঙালি হিন্দুর রণনীতি ও কূটনীতি নিয়ে কোন আদি চর্চা নেই সে কিভাবে নিজের স্বার্থ বাগাবে রাজনীতি করে।
এরা দুর্গা কালি ইত্যাদি নারীদেবীর পুজো করে এবং পুরুষালী কাজকে ঘৃণা করে।
এরা যুদ্ধকে বোকামী আর কবিতা সাহিত্যকে বিশাল কিছু ভাবে।
শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিন্দু পুরুষ বললে বাঙালি হিন্দু নাম নেবে রবীন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণ, চৈতন্যদেব বা বিবেকানন্দের।
এরা বিজয় সিংহ, রাজা শশঙ্ক, রাজা গোপাল, রাজা গণেশ, রাজা প্রতাপাদিত্য-এর মতো যোদ্ধা পুরুষের নাম কদাপি করেনা।
বাঙালি হিন্দু খুব শীঘ্রই এমন ঝাড় খাবে যে হয় নিজে বদলাবে নয় শেষ হবে।
Author: Saikat Bhattacharya