
আগে একটি কোউম বানিয়ে নারী পুরুষ থাকত। পুরুষ মূলত শিকার ও যুদ্ধের মতো কাজগুলো করত যাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি আর নারী বাচ্চা ধারণ লালন করত ও সবজি ফল কুড়োত অর্থাৎ এমন কাজ কাজ করত যাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম। এর কারণ একজন পুরুষ মরলে কৌমর একটা মানুষ কমবে কিন্তু একজন নারী মরলে অনেক বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হবে। তাই পুরুষকেই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে এটাই ছিল কোউমর নিয়ম। বলতে গেলে যেসব কৌমগুলো এভাবে চলতে তারা বংশ বিস্তার করতো বেশি এবিং টিকে যেত আর যারা নারী পুরুষের এই কর্মের বিভাজন করতোনা তারা বংশ বিস্তার করতে পারত কম এবং টিকে থাকতে ব্যর্থ হতো। কিন্তু পুরুষ ঝুঁকি নেবে কেন কোউমর জন্যে? পুরুষ কি পাবে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে?
পরুষকে মৃত্যু ঝুঁকি নেওয়ার বদলে কোউম দিত যৌনতার গ্যরান্টি। কোউম ঠিক করে দিত প্রতিদিন কে কার সাথে যৌনতায় মিলিত হবে। সেখানে ব্যক্তি কন্সেন্টের কোন ধারণা ছিলনা। সেখানে যৌনতা একদিকে অধিকার আর অন্যদিকে দায়িত্ব কোউম টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। যৌনতা দিয়ে নারীরা পুরুষকে কোউমতে বেধে রাখবে আর বদলে পাবে নিজেদের ও সন্তানদের বেঁচে থাকার গ্যরান্টি। বলা বাহুল্য বয়স্ক পুরুষও এই গ্যরান্টি পেত এবং তারাই অভিজ্ঞতা দিয়ে কোউম টিকিয়ে রাখার আইনগুলো বানাতো।বয়স্কা নারীরাও তাতে থাকত।
আগে সকল নারী পুরুষই বহুগামী ছিল। মায়ের নাম সবাই জানতো।বাবা কে কেউই জানতোনা।পুরুষ যৌনতা পেয়েই সুখী, তার নিজের সন্তান হতেই হবে এমন কারণ ছিলনা।
এভাবে দীর্ঘদিন চলে। এরপরে যখন জমি ও গাবাদী পশু কেন্দ্রিক জীবন শুরু হল, উৎপাদনের বৈচিত্র্য বাড়ল এবং উৎপাদন বিনিময় করে বাণিজ্য শুরু হল এবং আরও এগিয়ে মুদ্রা চালু হল তখন পুরুষ তার অর্জিত সম্পত্তি যাতে তার ঔরস জাত সন্তানই পায় সেই ব্যপারে সচেতন হয়ে উঠল। তাই নারীর গর্ভের ওপর একচেটিয়াকরণ শুরু হল। মূলত সম্পত্তিবান পুরুষেরাই গর্ভের একচেটিয়াকরণ করত এবং নারীকে স্ত্রী বানাতো। কিন্তু সম্পত্তিহীন পুরুষের গর্ভের একচেটিয়াকরণের দরকার ছিলনা আর তাই তারা কিছু অর্থের বিনিময় যৌনতা কিনত নারীর কাছ থেকে। যাদের থেকে যৌনতা কিনত তারা হয়ে গেল বেশ্যা।
সিরীয় স্ত্রী ও বেশ্যাদের পৃথক করতেই নারীর জন্য ভেইল/ঘোমটা/অবগুণ্ঠন/পর্দা আইন করা হয়েছিল। হাম্বুরাবির নগরের অভিজাত, ব্যবলনিয় বা অ্যাসেরিয় কোনো নারীই দেহ ব্যবসায় জড়িত হইতে পারত না। এবং তাদের পর্দা না করার হুকুম ছিল। কোনো দেহপসারিনী যদি পর্দা করতো তবে তাঁরে গ্রেপ্তারের হুকুম ছিল হাম্বুরাবির আইনে। বিপরীতে অন্য কোনো অভিজাত, অ্যাসেরিয় নারী পর্দার আইন অমান্য করলে তাঁর জন্যও শাস্তি ছিল।
প্রথমদিকে বেশ কিছু জায়গায় একজন নারী কখনো কারুর স্ত্রী আবার কখনো অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়লে বেশ্যা হতে পারত। অনেক শহরে আবার সুন্দরী নারীদের বহুগামীতার অধিকার বজায় থাকত এবং অর্থের বিনিময় কেবল ধনী ও সম্পত্তিবান পুরুষরাই কেবল তাদের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হতে পারতে। এদেরকে নারি শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করা হত।
অর্থাৎ এভাবে একটা র্যঙ্কিং হল নারীদেরঃ
১। নারী শ্রেষ্ঠ যারা সম্পতিবান পুরুষদের সঙ্গে উচ্চ মূল্য নিয়ে বহুগামী যৌন জীবন পালন করবে। তাদের সন্তানেরা বাবার সম্পত্তির মালিকানা পাবেনা।
২। স্ত্রী যারা সম্পতিবান পুরুষদের সঙ্গে বিনা মূল্যে একগামী যৌন জীবন পালন করবে। তাদের সন্তানেরা বাবার সম্পত্তির মালিকানা পাবে।
৩। বেশ্যা যারা গরীব সম্পত্তিহীন পুরুষদের সঙ্গে স্বল্প মূল্যে বহুগামী যৌন জীবন পালন করবে।বাবার সম্পত্তি নেই বা খুবই সামান্য আর তাই সন্তানেদের পাওয়ার সুযোগ বা আইন কোনটাই নেই।
নারীর কন্সেন্ট-এর ধারণা কিন্তু এল এখান থেকেইঃ
নারী যৌনতা দেবে কেবলমাত্র পুরুষের অর্থ পেলে অথবা সম্পত্তির ওপর তাদের সন্তানের মালিকানা পেলেই, নচেৎ নয়।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে পুরনো কোউম সমাজ-এ যৌনতা মানে অধিকার আর দায়িত্ব, আর নতুন সম্পত্তি কেন্দ্রিক সমাজ-এ যৌনতা হল অর্থ ও সম্পত্তির বিনিময় পাওয়া পণ্য। এই দুই ধারণার লাগাতার সংঘর্ষ হয়েছে। ব্যবিলনের পুরোহিতেরা অভিজাত সম্পত্তিবান ঘরের নারীদের জোড় করে মন্দীরে নিয়ে এনে দেবদাসী বানাতো। আসলে পুরোহিতেরা এই ক্ষেত্রে কৌম সমাজের যে যৌনতার ধারণা যেখানে যৌনতা মানে অধিকার আর দায়িত্ব সেই তত্ত্বে বিশ্বাসী। তাই কোন নারীর অধিকার নেই মন্দিরে আসা পুরুষদের যৌন অধিকার থেকে বঞ্চিত করার। বরং সকল নারীর দায়িত্ব মন্দিরে আসা পুরুষদের যৌনতা দেওয়া। পুরুষের সম্পত্তি আর অর্থ দেখে নারীর কন্সেন্ট তত্ত্ব সেখানে অচল। বলাই বাহুল্য মন্দিরে আসা পুরুষদের থেকে অর্থোপার্জনও ছিল পুরোহিতদের লক্ষ্য আর সুন্দরী নারী মন্দিরে দেবদাসী থাকলেই কেবল দূরদূরান্ত থেকে পুরুষরা মন্দিরে এসে অর্থ দেবে। অর্থাৎ পুরনো কোউমো সমাজের যৌন ধারণা নিয়ে অর্থোপার্জন করাই ছিল পুরহিতদের লক্ষ্য। মানে আসলে সম্পত্তিবান পুরুষদের সুন্দরী স্ত্রীদের বেশ্যা বানানোই ছিল লক্ষ্য।
সম্পত্তিবান পুরুষের ইচ্ছাই শেষমেশ জয়ী হল। সুন্দরীদের গর্ভ-এর ওপর সম্পত্তিবান পুরুষের একচেটিয়াকরণের নিদান দিল ধর্ম। স্ত্রী রত্ন আর দেবদাসী বৃত্তি বেশ্যাবৃত্তির সমতূল্য হয়ে দাঁড়ালো।বহুগামীতা হল লুকিয়ে চুড়িয়ে করার বিষয় আর একগামীতাই হয়ে গেল স্বাভাবিক ও সামাজিক। সুন্দরী নারী আর সম্পত্তিবান পুরুষ হয়ে গেল "Mate for each other"/"soul mate"/romantic/love/প্রেম। আর কুৎসিত ফেলে দেওয়া নারী হল নির্ধন সম্পত্তিহীন পুরুষের অর্থের বিনিময় পাওয়া বেশ্যা। সেখানে প্রেম নেই আছে জন্তুর মত একতা জৈবিক বিষয়।
নারীর কন্সেন্ট আসলেই সম্পত্তিহীন পুরুষদের যৌনতা হরণের দারুণ একটা যুক্তি। সুন্দরী নারীদের ওপর সম্পত্তিবান পুরুষের একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করার মোক্ষম অস্ত্র হল নারীর কন্সেন্ট।
Author: Saikat Bhattacharya