ঈশ্বরের বিবর্তন


যখন মানুষ শিকারী-সংগ্রাহক সমাজ ছিল তখন প্রকৃতিপূজারী ছিল তখনকার ধর্মগুলো সব লৌকিক ধর্ম প্রত্যেক দেবদেবীই কোন না কোন প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক ছিল এছাড়াও গাছ-গাছড়া,নদী,পাহাড় এসবেরও পূজা করা হত এই সমাজে

তারপর যখন স্থায়ী গ্রাম্য কৃষিভিত্তিক সমাজের সূচনা হয় তখন সেখানে নারীদেবী মূল আরাধ্য হয় মাতৃশক্তি, ভূমিদেবী এই টাইপের দেবীর পূজা হতো এইসময়ে জমির উর্বরতা, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত দ্রব্য, সচ্ছলতা, প্রজনন এইসমস্ত কিছুর প্রতীক হিসাবে নারীদেবীই মূল দেবী হন এইসময়ের সমাজও মাতৃতান্ত্রিক ছিল এবং নারীদের প্রাধান্য ছিল

এরপর যখন নগরের বিকাশ হয়, নগরভিত্তিক সভ্যতার জন্ম হয়, নগররাষ্ট্রের বিকাশ হয়, ব্যাবসা,বাণিজ্য, শিল্প, ভাস্কর্য্য, কারীগরীবিদ্যার বিকাশ হয় তখন পুরুষদেবতার প্রাধান্য এল পৌরুষের পূজা শুরু হল, পুরুষদেবতাই মূল আরাধ্য দেবতা হল যুদ্ধ, শক্তি, সাহস, কারীগরীবিদ্যা, জ্ঞান-যুক্তি-বুদ্ধি, পৌরুষশক্তি, প্রাচুর্য্য, সমৃদ্ধি ইত্যাদির প্রতীক হিসাবেই পুরুষদেবতার পূজা হতো পুরনো মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ভেঙ্গে যায় সমাজে পুরুষের গুরুত্ব বাড়ে আস্তে আস্তে পুরুষকেন্দ্রিক সমাজ গড়ে ওঠে এইসময়ে প্রাচীন পৌরাণিক বহুইশ্বরবাদী ধর্মের জন্ম প্রত্যেক নগররাষ্ট্রের নিজস্ব পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিল

এরপর যখন জাতিরাষ্ট্র, রাজ্য, সাম্রাজ্য ইত্যাদি গড়ে ওঠে তখন একেশ্বরবাদী নিরাকার ঈশ্বরের ধর্ম গড়ে ওঠে জাতিস্বত্বার বিকাশ একেশ্বরবাদী ধর্মের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিল একেশ্বরবাদী ধর্ম সমাজে নারী পুরুষের ভূমিকা,কাজ পাকাপাকিভাবে ভাগ করে দেয় এবং সকল মানুষকে একটি সহজ সরল নির্দিষ্ট রীতিনীতি, নৈতিকবোধ,কঠোর সামাজিক নিয়মকানুনের জন্ম দেয় একেশ্বরবাদী ধর্ম উপজাতি, গোষ্ঠীবিভক্ত সমাজকে একত্রিত করে জাতি গঠন করেছিল আমরা ট্রাডিশনাল সমাজ জেন্ডার রোল বলতে যা বুঝি তার জন্মও এই একেশ্বরবাদের হাত ধরে 

এই হল ধর্মের ঐতিহাসিক বিবর্তন এর সাথে সামাজিক বিবর্তন বস্তুগত অবস্থার পরিবর্তন অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত আকাশ থেকে কোন ধর্মমত পড়েনি কিন্তু ধার্মিক ধর্মের সমালোচক উভয়েই এটা ভুলে যান

শিল্পবিপ্লবের ফলেই ধর্মহীনতা নাস্তিক্যবাদের প্রভাব বাড়তে থাকে তবে ধর্ম আর ঈশ্বরবিশ্বাস এক না ধর্ম মানে তার একটা নিজস্ব সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান,রীতিনীতি থাকবে নাস্তিকও ধার্মিক হতে পারে আবার আস্তিকও ধর্মহীন হতে পারে তাও বলা যায় মোটামুটি এই সময়তেই ধর্মের গুরুত্ব কমে প্রয়োজনীয়তা হারানো শুরু করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আজ আমরা information age এখানে পুরনো ধর্মগুলি আরো অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছে অনেক সমাজে হয়তো ভবিষ্যতে আরো নতুন কোন ধর্মমত আসতেও পারে নতুন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং তার সাথে সামাজিক কাঠামোও বদলাতে চলেছে হয়ত

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like