গণতন্ত্রের আসতে আসতে পতন হচ্ছে কেন?


গণতন্ত্রের আসতে আসতে পতন ঘটতে এবং গণতন্ত্রের মধ্য থেকেই স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ঘটছে এটা কোন অবাক হবার কিছু নেই, এটাই স্বাভাবিক পরিণতি গণই গণতন্ত্রকে শেষ করবে কীভাবে সেটা দেখে নেওয়া যাক

গণতন্ত্রে সকল মানুষের একটি করে ভোটাধিকার দেওয়া আছে তার সাথে আরো অনেক অধিকার দেওয়া রয়েছে যেমন বাকস্বাধীনতা, ব্যাক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকার, ব্যাক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি এবার কথা হল সিংহভাগ মানুষেই স্বাধীনতা অধীকার চান কিন্তু তা শুধুমাত্র নিজের জন্য তারা বাকস্বাধীনতা চান কিন্তু সেটা নিজের পছন্দের কথার জন্যেই মানে দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকেই শুধুমাত্র নিজের এবং নিজের গোষ্ঠীর জন্যই সমস্ত অধিকার, স্বাধীনতা ইত্যাদি চান আর বিরোধী বা প্রতিদ্বন্দ্বী বা অন্যান্যদের উপর কোন অধিকার মানেনই না বরং সুযোগ পেলেই তাদের অধিকার হরণ করে এবং জোরজুলুম খাটায় এছাড়াও কোন অপছন্দের কথা শুনলে বা বিরোধীমত শুনলেই তাকে নানাভাবে কন্ঠরোধ করার চেষ্টা চলে এই সেন্সরশিপ কালচার গণতন্ত্রে একদম বাধাধরা এতে বাকস্বাধীনতার কোন মানেই থাকেনা কারণ সবাইকেই সেই যদি একই প্রচলিত ভাঙ্গা ক্যাসেট বাজাতে হয় তো বাকস্বাধীনতা এমনিতেই শেষ কারণ অপ্রিয়, অপছন্দের মতামতকে রক্ষা করার জন্যেই এই আইন এই political correctness এর কালচার গণতন্ত্রের ইতি ডেকে আনবে আরেক হ্যাপা হল এই নুনূভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া আমি মুখ খুললে কারুর না কারুর নুনূভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হবেই আর তারা সদলবলে চড়াও হবে এতে তো সেই জঙ্গলরাজত্যের might is right চিন্তাই চলে এল গণতন্ত্র এমন একটা খোরাকের পর্যায়ে চলে গেছে যে প্রতি মুহূর্তেই কোন কারুর না কারুর কোন না কোন ভাবাবেগে আঘাত লাগছে সব ফেলে এখন ভাবাবেগ,অনুভূতি নিয়ে পড়েছে এবং এতে প্রাপ্তবয়স্করাও দেখা যাচ্ছে শিশুসুলভ আচরণ করছে এছাড়াও এই নুনুভূতিতে আঘাত লেগে খাপ বসানো থেকে নিত্যনতুন দাঙ্গা,খুনখারাপি,ভাঙচুর এসব করা হচ্ছে এবং এগুলোর সারাসরি জাস্টিফিকেশন দেওয়া হচ্ছে সেই তথাকথিত ব্যাক্তিস্বাধীনতার ঝাণ্ডাধারীরাই অর্থাৎ মানুষের পাশবিকপ্রবৃত্তিকে সরাসরি চাগাড় দিয়ে মানবসভ্যতাকে সেই প্রাগৈতাহাসিক যুগে ফেরানো হচ্ছে ন্যায়বোধের কোন স্থানই নেই আর গণতন্ত্রে, পুরো আবেগে আর পাশবিক প্রবৃত্তিতে একটা ফেসবুকের কমেন্ট কোন যুক্তিতে অপরাধ হয় অথচ খুন,ধর্ষণ,দাঙ্গা এসব হয় না? আইনের শাসন ন্যায়বোধকেই তো তালানিতে বিসর্জন দেওয়া হল এতে এছাড়াও এখন যত রাজ্যের সভ্যতাবিরোধী ভাবনার আঁতুরঘর গণতন্ত্র প্রযুক্তিবিরোধিতা থেকে শুরু করে পুরুষবিদ্বেষ সমস্তকিছুর আঁতুরঘর এখন গণতন্ত্রগুলি এছাড়াও গণতন্ত্র আরো একটি সুন্দর কাজ করে গেছে সবাইকেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তারা কোন না কোনভাবে ভিক্টিম, তাদের সব সমস্যার জন্য দায়ী অন্য কেউ এবং তারা সব একেকটা সোনার টুকরো এতে একদিকে তৈরী হয়েছে entitlement syndrome আরেকদিকে তৈরী হয়েছে victim mindset একদিকে খালি দাও দাও, ঘ্যানঘ্যানে-প্যানপ্যানে ছিঁচকাদুনে মার্কা মানসিকতা অপরদিকে সব দোষ অন্যের উপর চাপানো, দায় এড়ানো, অন্যের সাফল্যকে ঈর্ষা করা এছাড়াও কথায় কথায় আঘাত পাওয়া, অল্পকিছুতেই ভেঙ্গে পড়া, সারাক্ষণ কাঁদুনি গাওয়া ইত্যাদি তো আছেই এসব মিশিয়ে এক অদ্ভুত জীব তৈরী হচ্ছে যারা আজীবন শিশুই থেকে যাবে এবং চিরকালই পরনির্ভর থাকবে এরা না পারবে সম্পর্ক গড়তে, না পারবে নিজের জীবন গোছাতে, না পারবে পরিবার গড়তে আর শিশুদের তো প্রাপ্তবয়স্কদের সিস্টেম চলবে না, তাদের জন্য বরাবরই এক বড় অভিভাবকের দরকার এতেই এক godfather এর উদয় হবে যে হবে স্বৈরশাসক মজাটা এখানেই

Political correctness, censorship, snowflake culture এর ফলে মুখ ফুটে কেউ সত্য কথা বলবে না তার ফলে অসৎতা, মিথ্যেবাদীতার সংস্কৃতির জন্ম দেবে এইজন্যে কেউ কাউকে বিশ্বাস করবে না তাই শেষমেষ সবাই সেই bada baap এর উপরেই আস্থা রাখবে মানুষের যখন মূল্যবোধ, ন্যায়বোধ হারাবে তখন কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বিচার করার জন্যেও সেই big daddy এর দরকার পড়বে আর যখন might is right এর জঙ্গলরাজত্ব চলবে তখন প্রাকৃতিক নিয়মেই যে যোগ্যতম সবচেয়ে শক্তিশালী সে বিজয়ী হবে এবং তার শাসন কায়েম করবে এটাই প্রকৃতির সবচেয়ে মজার খেলা, সবাই প্রবৃত্তির বশে অন্যের উপর বলপ্রয়োগ করতে যায় কিন্তু ভাবেনা যে বাকিরাও তখন তার উপর একই কাজ করতে পারেহাজার লোকের হাজার একটা অনুভূতি, সবার অনুভূতি রক্ষার দ্বায়িত্ব নিতে হয় যদি তাহলে আর কোন কাজই হবে না তাতে পুরো সিস্টেমটাই ধ্বসে যাবে তাই একটা কমন গাইডলাইন রাখতে হবে আর সেটাও প্রতিষ্ঠা করবে উনিই আর সর্বোপরি শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক বানানোর জন্যও তো সেই অভিভাবকের দরকার নাকী!!সেটাও স্বৈরশাসক করবে এবার বলুন যার উপর এতগুলো বাড়তি দ্বায়িত্ব সে কেন চরম ক্ষমতা ভোগ করবে না!! অবশ্যই করবে আর তাতেই জন্ম নেবে স্বৈরতন্ত্রের

আরেকটা বিষয় হল একবিংশ শতাব্দীতে পুঁজির সঙ্গে উদারবাদের সংঘাত। চীনের বিশাল বাজারকে উপেক্ষা করতে রাজি নয় পশ্চিমী পুঁজি আর তাই চীনে উদারবাদী গণতন্ত্র আছে কি নেই তা নিয়ে তারা চিন্তিত নয়। আবার স্বল্প জন্মহারের ফলে পুঁজি একদিকে কম শ্রমিক পাবে আর অন্যদিকে কম ক্রেতা পাবে। ফলে পুঁজি চাইবে স্বল্প জন্মহারের সমস্যা থেকে বের হতে। আর তাই পুঁজি নারী স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করতে চাইবে। চীনে উদারবাদী গণতন্ত্র নেই বলে চীনকে মেনে নিতে পারছেনা উদারবাদী গণতান্ত্রিকরা আবার নারী স্বাধীনতা খর্ব করাও তারা মানতে রাজি নয়। ফলে পশ্চিমী দুনিয়ার মধ্যেই পুঁজি বনাম উদারবাদী দ্বন্দ্ব বাড়ার সম্ভাবনা। এর ফলেও গণতন্ত্র খুব শীঘ্রই ধ্বংসের মুখে পড়তে চলেছে। এখানে এই দুই লেখা আরেকবার দেখে নিলে সুবিধে হবে পাঠকেরঃ http://www.eastisrising.in/view-news/45 ও http://www.eastisrising.in/view-news/40 ।

Author: Purandhar Khilji


You may also like