
গণিতশাস্ত্রে ইতিহাসে বহু গণ্যমান্য ব্যাক্তিত্ব তাদের অবদান রেখে গেছেন যাদের দরুণ মানবসভ্যতার আজকের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। সেই প্রাচীনকালের পিথাগোরাস থেকে আধুনিকযুগের সূচনাকালের নিউটন, সকলের হাত ধরেই গণিতশাস্ত্র সমৃদ্ধ হয়েছে ও মানবজগতের কল্যান সম্পন্ন হয়েছে। এই গুণীদের সভাতে এক বাঙালীর নামও স্বর্ণাক্ষরে খচিত হয়ে থাকবে। সেই বঙ্গরত্ন হলেন শ্রীধরাচার্য্য(আনুমানিক 870 খ্রীষ্টাব্দ থেকে 930 খ্রীষ্টাব্দ)।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ভুরিশ্রেষ্ঠী/ ভুরশুট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা ছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত বলদেবাচার্য্য ও মাতা অচ্চোকাবাঈ। পিতার পেশা অনুসরণ করেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত, দার্শনিক এবং তার সাথে গণিতজ্ঞ।
গণিতজগতে তিনি যে অসামান্য সৃজন করে গেছেন আজ তার উপরে ভিত্তি করেই বর্তমানের গণিতজগতের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। তাঁর রচিত দুটি রচনা প্রখ্যাতঃ পাটিগণিতসার/ত্রিশতিকা(তিনশো শ্লোকে রচিত বলে এই নামকরণ) ও পাটীগণিত। পাটীগণিত বিষয়ক এই দুটি রচনাতে সংখ্যাতত্ব, গণনা, স্বাভাবিক সংখ্যা, যোগ-গুণ-বিয়োগ-ভাগের নিয়ম, ভগ্নাংশ ও তাহার গাণিতিক প্রক্রিয়া, পূরক(reciprocal) ও ভগ্নাংশে তাহার প্রয়োগ, বর্গ ও ঘনফল ও মূল, সমানুপাতের rule of three, সুদের হিসাব, অংশীদারী ব্যাবসার হিসাব, পরিমিতি ইত্যাদি নিয়ে বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে। তার আরো কিছু রচনা হল বীজগণিত, নবসতি ও ব্রহপতি।
শুধু এই নয়, গণিতজগতে তার বিশিষ্ট আবিষ্কার ও আরো কিছু অবদান আছে। তা হলঃ
এক, শূণ্যের ব্যাবহার ও তা নিয়ে বর্ণনা করেন বিশদে।
দুই, বীজগণিতকে সর্বপ্রথম পাটীগণিত থেকে পৃথক করেন ও বীজগণিতের বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে গভীরে আলোকপাত করেন।
তিন, ভগ্নাংশকে বিভাজনের জন্য বিভাজক সংখ্যার পূরক(reciprocal) দিয়ে গুণ করার এই পদ্ধতিই তাঁর আবিষ্কার।
চতুর্থ এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতিমালা ও বীজদ্বয় নির্ণয়ের সূত্র তিনিই আবিষ্কার করেন। এই সূত্র বীজগণিতে 'শ্রীধরাচার্য্যের সূত্র' নামে পরিচিত।
গণিতের ইতিহাসে এমন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও বর্তমানে তা বাঙালীর স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হয়েছে। কিন্তু বিশ্বজগতে তার গুণের সমাদর হয়েছে এবং তিনি তার সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে অমর থাকবেন এবং এইভাবেই বাঙালীর স্বর্ণযুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ থাকবে।
Author: Sayak Bhattacharya