'লর্ড মেকলের' বাঙালি (মূলত বাঙালি হিন্দু) সম্পর্কে বিশ্লেষণ

06-August-2022 by east is rising 535

"বাঙ্গালীদের শারীরিক গঠন মেয়েলি ভঙ্গুর বলা চলে এরা বাষ্পস্নানে অভ্যস্থ নির্জনতা প্রিয় দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অশক্ত, চলাফেরা নিস্তেজ নির্জীব যুগের পর যুগ তারা বিদেশী শাসকদের দ্বারা পদদলিত হয়েছে ক্ষীণ দেহ বলে এরা সাহস রাখে না, স্বাতন্ত্র্যবোধ এদের নেই এবং এরা কখনো সত্যবাদী হয় না এদের মন দেহ অভিন্ন এরা পুরুষোচিত প্রতিরোধে অপারগ, দুর্বল দেহের জন্য অসহায়বোধ করে কিন্তু এদের নমনীয়তা চাতুর্য প্রশংসা নিন্দা উভয়ই প্রাপ্য বস্তুত ভিন্ন জলবায়ুর লোকেরা এদের যেমন ভক্তি করে, তেমনি ঘৃণা করে একটা দূর্বল জাতির আত্মরক্ষার্থে যেসব কৌশল প্রয়োজনে অবলম্বন করতে হয় তার সবগুলি এদের জানা আছে জুভেনালের সময় আওনীয়দের  কিংবা মধ্যযুগে ইহুদিদেরও এত কৌশল জানা ছিলো না মহিষের কাছে সিং-এর যে মূল্য, বাঘের কাছে থাবার যে গুরুত্ব, মৌমাছির যেমন হুল, পুরনো গ্রীক কবিতা অনুসারে নারীর জন্য সৌন্দর্য যা, বাঙালির কাছে প্রতারনা সেরকম মূল্যবান এরা লম্বা- লম্বা প্রতিজ্ঞা করে, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার সুন্দর অজুহাত দেখায়, প্রতারনা, মিথ্যা হলফ, জালিয়াতি এসব তারা আত্মরক্ষার্থে কিংবা অন্যের ক্ষতি করার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না গাঙ্গেয় নিম্নাঞ্চলের লোকদের স্বভাবই এরকম বঙ্গে কয়েক মিলিয়ন বাঙালি বাস করে অথচ এদের একজনও কোম্পানির সেনা বিভাগে নাম লেখায়নি কিন্তু সুদের ব্যবসা, পোদ্দারি এবং মোক্তারিতে প্রতিযোগিতায় কোন জাতি এদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না আবার বাঙ্গালীরা নমনীয় চরিত্রের হলেও এদের মতো নির্দয় অদম্য শত্রু অন্য কোন জাতির মধ্যে দেখা যায় না এরা মানুষের প্রতি করুণাশীল হতে জানে না স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ক্লান্তিহীনভাবে লেগে থাকতে জানে এবং বিপদের আশঙ্কা দেখা না দিলে ক্ষান্ত হয় না"

এরকম আরও গুন বচন পড়তে চাইলে আগ্রহীরা দেখতে পারেন-

Memories of the life of Warren Hastings, first Governor-General of Bengal By Lord Macle, London: 1841.

লেখক মনে করে মেকলে সাহেব ঠিকই বলেছেন মূলত বাঙালি হিন্দু সম্পর্কে। বাঙালি মুসলমানদের ধরলে চরিত্র অনেকটাই আলাদা হবে যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে মিলেও যাবে। কিন্তু লেখক মনে করে বাঙালি হিন্দুদের যে ভাল গুণগুলো মেকলে তুলে ধরেছে যেমন ব্যবসা করার ক্ষমতা বা কোন বিষয় বিপদ না থাকলে লেগে থাকার ক্ষমতা তা উনবিংশ শতকের মধ্যভাগের বাঙালি হিন্দুদের জন্যেই প্রযোজ্য। উনবিংশ শতকের শেষভাগের,  বিংশ শতাব্দীর, এবং বিশেষ করে বর্তমান সময়ের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে  ব্যবসা করার ক্ষমতা বা কোন বিষয় লেগে থাকার ক্ষমতা একেবারেই নেই। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি হিন্দু নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন ছিল এবং গায়ের জোড় ও সাহসের কমতি চাতুর্য দিয়ে ও ধৈর্য দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করত।

লেখক মনে করে বঙ্কিম চন্দ্রের লেখনীর সময় থেকে মানে ১৮৬৬ সাল থেকে বাঙালি হিন্দু নিজেদের দুর্বলতাকে রাজপুত ও মারাঠা সাহসিকতার গল্প (অধিকাংশেই যা ছিল মিথ্যা) দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছে। এভাবেই বাঙালি হিন্দু রাজপুত ও মারাঠাদের (যারা অতীতে বাঙালি হিন্দুদের লুট করতে আসত এবং শত্রু বলে অভিহিত হত) নিজেদের আরাধ্য বানিয়েছে এবং হিন্দু জাতিয়তা ও ভারতীয় জাতিয়তার দিকে গাঁ ভাসিয়েছে। গিতা পড়ে বম্ব বেঁধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে লড়াই করতে গেছে। আসলে মনে মনে নিজেকে হীন মনে করে সেই হীনতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে গেছে। সাম্রাজ্যের সাথে লড়ে স্বাধীন রাষ্ট্র বানাবার অর্থ কি তা বাঙালি হিন্দু বোঝেনি আর তাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যখন শেষ হল বাঙালি হিন্দুরা তখন উদ্বাস্তু হল আর হিন্দিভাষীদের গোলামে পরিণত হল। 

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like