
বাঙালী হিন্দুর সঠিক বিকাশ হয়নি সে নিয়ে গত পর্বেই আলোচনা করছি।এই পর্বে আরো গভীরে যাব এবং দেখব কীভাবে বাঙালী হিন্দুর কয়েকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠেছে।
বাঙালী হিন্দু হল কূপমণ্ডুক গোষ্ঠী। ছোট্ট সংসার, পাড়া, অফিস-কাছাড়ি এই নিয়েই তার জীবন।তার ফলে এর বাহিরে সে দুনিয়া দেখতে পারেনা। এছাড়া সে সর্বদাই তার এই ক্ষুদ্রজগতে কূপমণ্ডুকের ন্যায় সীমাবদ্ধ থাকে এবং একেই দুনিয়া হিসাবে মানে। এই ক্ষুদ্র জগতের বাইরে সম্পর্ক গড়তেও সে অনিচ্ছুক। তাই বৃহৎ জগত কেউ ওয়াকিবহল থাকেনা।ফলত তার জীবনের কোন পরিবর্তন হয়না। কূপমণ্ডুক হবার কারণে অত্যন্ত সংকীর্ণমনা ও আত্মকেন্দ্রিকও হয়, ফলত এরা নিজেদের দল বাড়াতে তো পারেইনা উল্টে খেয়োখেয়ি করে আরো ছোট হয়।যদি যে কোন বাঙালী সংগঠনকে পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে তারা ক্রমাগত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ছোট ছোট দল তৈরী হচ্ছে।বাঙালী হিন্দু জুড়ে বড় হতে পারেনা, ভেঙ্গে ছোট হতে জানে। এর কারণ হিসাবে বাঙালী হিন্দুর উত্তরাধিকার ব্যাবস্থাও দায়ী, পৈতৃক সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে ক্রমাগত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হতে হতে শেষে কিছুই থাকেনা।যেহেতু তারা কূপমণ্ডুক ও জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে তাই এগুলিকে অবলীলায় স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নেয়।
যেহেতু তারা কুয়োর জগতে পড়ে থাকে তাই নিজেদের বর্তমান অবস্থা কী, কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক, কীভাবে অবস্থার উন্নতি করে যায়, দুনিয়াটা কি সেই বিষয়ে কোন বোধই গড়ে ওঠেনা।
এছাড়াও কূপমণ্ডুকতার কারণে তারা কূটনৈতিক, রাজনৈতিক জোট বা মিত্রতা গড়তে পারেনা। কে শত্রু ও কে বন্ধু এই বোধ আসেনা। কার সঙ্গে লড়া উচিত কার সঙ্গে নয়, এই বোধ না থাকার কারণে দিনের শেষে বাঙালী হিন্দু একা হয়ে যায়। আবেগে ভেসে অনেকে অগ্নিযুগের বিপ্লবী থেকে নক্সাল হতে যায় এবং দিনের শেষে তার পরিণাম আরো ভয়ঙ্কর হয়।
বাঙালী হিন্দু সংগঠিতই হতে পারেনা, তো একা লড়ে কিছু আদায় করা তো দূর, ভোগান্তি ছাড়া কিছু আসেনা।এরা কারুর সাথে সখ্যতা তৈরী না করে সবার সাথেই বৈরীতা তৈরী করে ফেলে এবং সকলের চক্ষুশূল হয়।বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করলে এটাই বোঝা যায় যে বাঙালী হিন্দুর কোন মিত্রই নেই এবং যেই সুযোগ পায় সে এসে অবলীলায় সর্বনাশ করে যায়।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাঙালী হিন্দুর পরিচয়হীনতা। কোন বাঙালী হিন্দুই জানেনা সে নিজে কে? কেউ বলবে আমি বিশ্বমানব, কেউ আগে মানবতাবাদী, কেউ হয় ভারতীয়, কেউ বিশ্বহিন্দু, কেউ রাবীন্দ্রীক বাঙালী, ইত্যাদি।অর্থাৎ বাঙালী হিন্দু নিজেই জানেনা তার পরিচয়। অথচ শত্রুর কাছে সে বাঙালী বা বাঙালী হিন্দু হিসেবেই চিহ্নিত হয় ও আক্রমণের শিকার হয়। পরিচয় না গড়ে ওঠারও মূল কারণ হল কূপমণ্ডুকতা এবং ঐতিহাসিক বিকাশ না হওয়া।ফলত নিজের ক্ষুদ্র জীবনের নাগপাশেই আবদ্ধ হয়ে থাকে ও বৃহৎ দৃশ্যটি দেখতে অক্ষম।
নানা ভাবে ও রাষ্ট্রীয় মদতে বাঙালী হিন্দুর মধ্যে চাকুরীজীবী মধ্যবিত্ত শ্রেণী উলু বনে শেয়াল রাজা হয়ে উঠেছে।এই শ্রেণীর সহযোগীতাতে বাকী বাঙালী বিশেষত পুঁজিপতি, উৎপাদক, সংগঠক শ্রেণীদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে।বাঙালী গরীবদেরকেও তুষ্ট করে তাদের উচ্চাকাঙ্খাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।তাছাড়া বাঙালী হিন্দুর অন্তর্নিহিত ঈর্ষা ও উলু বনে শেয়াল রাজা থাকার বাসনা সমস্ত সম্ভাবনাময় বাঙালীকে ধ্বংস করে দিয়েছে।ফলে আপৎকালে বাঙালীর রক্ষাকর্তার কোন উদয় হয়নি। যেহেতু এরা কূপমণ্ডুক ও তাই অকারণেই হাম্বড়া। এরা মধ্যবিত্ত জীবনটাকেই স্বর্গসুখ ভাবে।
আবার এই চাকরীজীবী শ্রেণী তো সম্পূর্ণরূপে পরনির্ভর। ফলে এরা টিকে থাকার জন্যে রাষ্ট্রের উপরেই নির্ভর।ফলত এরা রাষ্ট্রের বাধ্য ক্রীতদাস।ভারত রাষ্ট্র বাঙালীর নয় সেই বোধটাও বিকাশ হয়নি কারণ ইহাদের কাছে সরকারী চাকুরে বা আইটি কুলি হওয়ার মতো মোক্ষ আর নেই।ফলত বাঙালী হিন্দুই ভারত রাষ্ট্রের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য দেখায় যদিও ভারত রাষ্ট্র প্রথম থেকেই বাঙালী হিন্দুর পেছনে আছোলা বাঁশ দিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে তা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা আছে। ভারতের বাকী জাতিরা রাষ্ট্রের সাথে দরকষাকষি করে নিজেদেরটা বাগিয়ে নেয় কিন্তু বাঙালী হিন্দুর সেই মুরোদ নেই। এতেও বাঙালী হিন্দুর পশ্চাদপদতা বোঝা যায়।
জয়ন্ত ভাণ্ডারী বা প্রবীণ সাহনি ভারতের শাসক জাতিরই ব্যাক্তি। একজন পশ্চিম ভারতীয় জৈন ও অপরজন পাঞ্জাবী হিন্দু। কিন্তু তা সত্বেও এরা ভারতকে তুলোধোনা করতে পিছপা হয়না।অথচ বাঙালী হিন্দু রাষ্ট্রের থেকে কিছু পায় তো নিই বরঞ্চ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।তাতেও বাঙালী হিন্দুই ভারত রাষ্ট্রের প্রতি শর্তহীনভাবে সিজদা করে চলেছে এবং আজকেও কোন বাঙালী জয়ন্ত ভাণ্ডারীর হদিশ পেলামনা।
উপসংহার হিসেবে এটাই বলতে হয় যে মোটের উপর বাঙালী হিন্দু একটি পশ্চাৎপদ গোলাম জাতি এবং আদৌ স্বশাসনের যোগ্যতা যে নেই তাও বলা যায়।এই অবস্থার দ্রুত বদল হতে হবে নয় বাঙালী হিন্দুর ঠাঁই যাদুঘরেও হবেনা।অথচ মরণকালেও বোধোদয় হয়নি এবং মুষ্টিমেয় কিছু দূরদর্শী বাঙালী হিন্দু যারাই অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে তারাই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে স্বজাতির থেকে। তা সত্বেও তাদের শুভকামনা জানিয়ে আমার লেখা শেষ করলাম।
Author: Purandhar Khilji